কয়েকদিন আগে সামুর সকল ব্লগারদের কাছে বন্ধুত্বের দাবী নিয়ে অনুরোধ করেছিলাম, একজন ব্লগার হিসাবে দায়িত্বশীল আচরণ করার । সেটি ছিল মূলত ব্লগার হিসেবে নিজের সম্মান রক্ষার এবং এই প্রিয় প্লাটফর্ম রক্ষার তাগিদে। আজ আবার একই অনুরোধ করছি – কিন্তু আজকের অনুরোধ নিজের জীবন এবং নিজের মাতৃভূমি রক্ষার জন্য।
প্রবাসে এমন এক নিরাপদ দেশে বসবাস করছি যেখানে নিজের বাচ্চার গায়ে হাত তোলার অপরাধেও পুলিশের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। যত নিরাপদেই থাকি না কেন এ দেশ তো আমার নয়, আমার সব পড়ে আছে তো সেই আমার বাংলাদেশে!
এ-কি শুরু হলো দেশে?? প্রতিবার ভয়ে ভয়ে পত্রিকার পাতায় চোখ বুলায়, মৃত্যুর খবর গুলো এক নিঃশ্বাসে পড়ে যায় ... তারপর একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি! নাহ! লাশের মধ্যে আমার স্বজন কেও নেই ... !!! কিন্তু এই স্বস্তির নিঃশ্বাস আর কতদিন ফেলা যাবে?? খুব ভয় হয় ... হঠাত কখন না পত্রিকায় দেখি আমার কোন প্রিয়জনের রক্তাক্ত মুখ!!
খুব অসহায় লাগে! খুব ক্ষুদ্র একজন মানুষ আমি!! এই মারামারি খুনোখুনি চোখ বুঝে সয়ে যাওয়া ছাড়া আমার কিছুই করার নেই। হাজার চিৎকার করলেও কোন পক্ষের সামান্যতম গুরুত্ব পাওয়ার সম্ভবনা নেই! তাই তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলে লাভ নেই!!! কিন্তু এই ব্লগে ৪ বছরের বেশী ব্লগিং করি! তোমোদাচি (বন্ধু) নাম দিয়ে সবার বন্ধু হতে ছেয়েছি, হাজার মতের অমিল হলেও কখনও কাওকে বাজে কথা বলেছি বলে মনে পড়েনা। এই ব্লগের সবার প্রতি কিছুটা হলেও অধিকার আছে। সেই বন্ধুত্বের অধিকার নিয়েই অনুরোধ করছি ...
খুব খারাপ একটা সময় পার করছে আমাদের দেশটা! আপনি একজন ব্লগার! সুতরাং একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় আপনি একজন শিক্ষিত এবং সচেতন মানুষ! কিন্তু সেই সাথে আর একটা জিনিষ আপনার কাছে অবশ্যই আশা করব, আপনি এদেশের একজন দায়িত্বশীল নাগরিক! দেশের এই সংকটময় অবস্থায় আপনি এমন কোন কাজ করবেন না যে সেই সংকট কমার বদলে আরো ঘনীভূত হয়। আমরা আবেগী জাতি, আবেগ অবশ্যই সবার মধ্যে থাকবে। কিন্তু সেই আবেগ প্রকাশভঙ্গি একজন রাস্তার টোকাই এর যা হবে একজন শিক্ষিত বিবেকবান মানুষের তা হবে না। যে মানূষ গুলো এই বিংশ শতাব্দীতে এসে বিশ্বাস করে চাঁদে কোন মানুষের মুখের ছাপ দেখা যায়, তাদের আবেগের বহিঃপ্রকাশ আর একজন শিক্ষিত-সচেতন মানুষের তা কখনও এক হতে পারে না। তাহলে ঐ অশিক্ষিত হুজুকে মানূষ গুলোর সাথে আপনার আর কোন পার্থক্য কোথায়??
অনেকের ব্লগে আবেগের অতিরঞ্জন দেখে অবাক হই! নিজের পরিচয় গোপন রেখে ব্লগে লেখা যায় বলে এটাকে পাবলিক টয়লেটের দেওয়াল বানিয়ে ফেলছেন, যা ইচ্ছা তাই লিখছেন! দয়া করে ভুলে যাবে না, কিছু মুখে বলা আর লেখার মধ্যে কিন্তু অনেক পার্থক্য। মুখের কথা অবস্থা বুঝে পাল্টিয়ে ফেলা যায়, কিন্তু কোন কিছু লেখা হলে সেটা কিন্তু দলিল হয়ে যায়! আর প্রযুক্তির এই আধুনিক যুগে আপনার আসল পরিচয় বের করে ফেলা কিন্তু কোন ব্যাপারই নয়। দেশের সম্মানিত নাগরিকদের সম্পর্কে সমালোচনা করার সময় খেয়াল রাখা উচিৎ সেটা শালীনতা অতিক্রম করছে কি না।
এতদিন ব্লগ সম্পর্কে সাধারন মানূষ বা সরকারের তেমন ধারনা ছিল না; কিন্তু এখন ব্লগের প্রতি সবার নজরদারী অনেক বেশী। সুতরাং ব্লগ এখন চ্যাংড়াবাজির জায়গা নয়! এখানে যা কিছু লিখছেন তার দায়িত্ব নেওয়ার সাহস নিয়ে লিখুন! এখন বাতাস একদিকে বইছে বলে গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসাবেন না, খেয়াল রাখবেন বাতাস সবসময় একই দিকে বয় না! দয়া করে এটাকে কোন থ্রেড হিসাবে নিবেন না; বন্ধু হিসাবে বন্ধুকে সতর্ক করছি মাত্র।
আপনি একজন ব্লগার! এটা এখন আর তুচ্ছ কোন বিষয় নয়! আপনার কোন লেখা বা মতামত এখন লক্ষ মানূষ কে প্রভাবিত করতে পারে। আপনি খেয়াল রাখুন আপনার মতামত প্রকাশে অন্যের আবেগ কে নগ্ন ভাবে আক্রমন করল কি না। ব্লগে উস্কানি দেওয়া থেকে বিরত থাকুন! দেশে এখন খুব সেন্সেটিভ অবস্থা বিরাজ করছে। সব রাজনৈতিক দলগুলো যার যার মত রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। আমরা আমজনতা হচ্ছি দাবার গুটী। কিন্তু আপনিতো একজন সচেতন মানূষ! আপনি কেন হুজুকে মাতবেন??
আপনার উস্কানিতে যদি কোথাও আগুন লাগে, কারো বুকে যদি গুলি বিধে, কোন নির্দোষ সংখ্যালঘুর বাড়ি যদি ভাংচুর হয় ... সে দায়িত্ব কিন্তু আপনি এড়াতে পারে না! আর সারাদেশে যদি আগুন লাগে আপনি দেশে থাকুন আর না থাকুন সে আগুনের আঁচ থেকে আপনি কিন্তু বাঁচতে পারবেন না। এই যে এত গুলো লাশ পড়ল, তা কিন্তু সব জামাত শিবিরের না। বরং এর মধ্যে সাধারন মানুষের লাশই বেশী। এই লাশের মিছিলে আপনার স্বজনের লাশ যে যুক্ত হবে না সেটা কেও বলতে পারেন না। তাই লাশ নিয়ে ব্যঙ্গ করবেন না। সকল অপমৃত্যু কে সমান সহানুভূতি দিয়ে অনুভব করার চেষ্টা করুন! নিজের দলের লাশ হলে তাকে শহীদের মর্যাদা দিবেন আর ভিন্নমতের কেও মরলে মিষ্টি বিতরণ করবেন- এই মনুষ্যত্বহীন পশুর আচরণ করা থেকে নিজে বিরত থাকুন এবং অন্যকে বুঝান। নইলে দেখবেন একদিন আপনার ছোড়া বিদ্বেষের বলি হবেন আপনার প্রিয়জন!
ব্লগে উসকানি দেওয়া থেকে নিজে বিরত থাকুন অন্যকে বিরত রাখুন!!
আবার সেই একই আহ্বান জানাব, আসুন ব্লগার শব্দ টিকে একজন দায়িত্ববান নাগরিকের প্রতিশব্দ হিসেবে সাধারণ মানুষের মাঝে পরিচিত করি।
সবাই সাবধানে থাকবেন! নিরাপদে থাকবেন!!
শুভ ব্লগিং!!!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




