somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তোমোদাচি - অন্যের জন্যেঃ ওদের কথা অনেকদিন বলা হয় না, আজ একটু বলি???

১২ ই মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সামুতে যারা আমাকে চিনেন তারা অনেকেই জানেন “অন্যের জন্যে” নামে আমার খুব ছোট্ট একটা প্রকল্প আছে। আমি আমার গ্রামের কিছু ছেলেমেয়ের “একাডেমিক অভিভাবকত্ব” গ্রহন করে প্রকল্পটি শুরু করেছিলাম প্রায় দেড় বছর আগে। আমার প্রেরনা, উদ্দেশ্য আর ওদের কথা জানিয়ে সামুতে একটা পোষ্ট দিয়েছিলাম সে সময়। আমার সেই স্বপ্নের প্রকল্পটি আর একটু প্রসারিত হয়েছে; অনেকদিন থেকেই ভাবছি আপনাদের সাথে শেয়ার করব। কিন্তু দেশের এই ডামাডোলের মধ্যে এই বিষয়ে পোষ্ট দিতে বিব্রত বোধ করছিলাম। এখন মনে হচ্ছে, এই ডামাডোল মনে হয়না খুব তাড়াতাড়ি থামবে। তাই আজই আমার প্রকল্পের কিছু কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।

প্রথমে আমার প্রকল্প সম্পর্কে একটু ধারনা দিই। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য আমার আশেপাশের মানুষগুলো যারা আমার আত্মীয় নন তাদের জন্য কিছু করা। কিন্তু মানুষের জন্য কিছু করতে যে অর্থ প্রয়োজন সেটা আমার কাছে ছিল না। তাই আমি টাকা গোছান শুরু করলাম; প্রতি মাসের বেতন পেলে খুব সামান্য কিছু টাকা একটা খামে করে তুলে রাখতাম। এমাউন্টটা প্রথমে খুব ছোট ছিল, বেতন বাড়ার সাথে সাথে এই টাকাটাও একটু একটু করে আমি বাড়িয়েছি । আমি ভেবে দেখলাম, সংসারে তো সব-ই দিই -সংসারের চাহিদার সীমানা নেই। প্রথম যখন নাম মাত্র বেতনে চাকুরী শুরু করেছিলাম তখন সংসারে যতটুকু অভাব ছিল, এখন তার থেকে মাসিক আয় প্রায় ২০/২৫ গুন বেড়েছে কিন্তু অভাবের পরিমান সেই একই রকম রয়ে গেছে ;) তাই ‘আর্থিক সবচ্ছলতা এলে অন্য মানুষের জন্য কিছু করব’ এই যুক্তির কোন ভিত্তি নেই। সে প্রায় ৫ বছর আগের কথা, দিনে দিনে আমার হাতে এখন ভাল একটা এমাউন্ট জমা হয়েছে। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে দেশে গিয়েছিলাম, তখন ৭ জন ছাত্রছাত্রীর পড়াশুনার খরচ দেওয়ার মাধ্যেমে এই প্রকল্প বাস্তবে শুরু করেছিলাম।

এখন ওরা নতুন ক্লাশে উঠেছে; সবাই ভাল ফলাফল করেছে সেটা বলা যাবে না, তবে এই বৃত্তির জন্য ওদের মধ্যে কিছুটা হলেও পড়াশুনার প্রতিযোগিতা এসেছে। সেটা বুঝতে পারলাম এবার বৃত্তির জন্য ছাত্রছাত্রী বাছায় করতে গিয়ে। এবার টার্গেট ছিল ১০/১১ জন কে বৃত্তি দিব, কিন্তু অনুরোধের ঢেকি গিলতে সেই সংখ্যা ১৫ তে দাড়িয়েছে। ;)
যদিও ওদের চিনবেন না, তারপরও ওদের নাম আর পড়াশুনা সম্পর্কে একটু শুনুনঃ

মোঃ শফিয়ার রহমান, এইচ এস সি (পরীক্ষার্থী)
সৈরভ রায় , দশম শ্রেনী
ফারহানা খাতুন , অষ্টম শ্রেনী
মোঃ ফয়সাল হোসেন , ভোকেশনাল (১০ম শ্রেনী)
ইতি খাতুন , অষ্টম শ্রেনী
সোনিয়া খাতুন , নবম শ্রেনী
রাজু মৃধা , ভকেশনাল (১০ম শ্রেনী)
সুমি খাতুন , অষ্টম শ্রেনী
টোকন মৃধা , এইচ এস সি (পরীক্ষার্থী)
ইতি খাতুন (২) , নবম শ্রেনী
রাসেল , দশম শ্রেনী
তরিকুল ইসলাম , ভোকেশনাল (এস এস সি পরীক্ষার্থী)
মোঃ আবু তালহা , হাফেজী
মোঃ আজিজ মুন্সি , হাফেজী
মোর্তজা মৃধা , দশম শ্রেনী

রেজাল্ট খারাপ করার কারনে গতবারের ২/৩ জন বাদ পড়েছে; বাকীরা এবার থেকে শুরু। ওদের বই কেনা বাবদ এককালীন কিছু টাকা এবং প্রতি মাসে বৃত্তি হিসাবে ক্লাশ অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দেওয়া হচ্ছে। উপরে “একাডেমিক অভিভাবকত্ব” কথাটা ব্যবহার করেছি এই জন্য যে আমি শুধু টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে দায়িত্ব শেষ করছি না; মাঝে মাঝে ফোন করে ওদের পড়াশুনার খোঁজ খবর নিই, অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করি, ওদের কথা শুনি ...। আপাতত প্রবাসে থেকে এর চেয়ে বেশী করা সম্ভব হচ্ছে না; দেশে ফিরলে ওদের সাথে আরো ঘনিষ্ট যোগাযোগ রাখার ইচ্ছা আছে।

“অন্যের জন্যে” প্রকল্পে শিক্ষা বৃত্তি ছাড়াও গত ৪/৫ মাস আগে কিছু মানূষকে বিনা সুদে ঋণ দেওয়ার একটা কাজ হাতে নিয়েছি। উদ্দেশ্য, আমার টাকা ব্যবহার করে কেও যদি তার আর্থিক অবস্থা একটু উন্নত করতে পারে! ইতিমধ্যে দু’জনকে ভ্যান গাড়ী কিনে দিয়েছি, একজনকে মাছ মারার জন্য জাল কিনে দিয়েছি আর একজন কে সবজীর ব্যবসা করার জন্য কিছু টাকা দিয়েছি। ওরা প্রতি সপ্তাহে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা ফেরত দেয়, মুল টাকা ফেরত শেষ হলে জিনিষটা তার হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে জাল ওয়ালা তার টাকা শোধ করে দিয়েছে। সে আবার তার ছেলেকে একটা ভ্যান কিনে দেওয়ার আবদার করেছে (আবদার অলরেডি গৃহীত ;)) আবদার গৃহীত না হওয়ার কারণ নেই, কারন এই প্রকল্প যিনি চালাচ্ছেন তিনি আবার কাওকে ‘না’ বলতে পারেন না। ;) দয়ার সাগর এক মহিলা! আমি তো মাঝে মাঝে এখান থেকে কিছু টাকা পাঠিয়ে আমার দায় মুক্ত হই, কিন্তু এই কাজের সমস্ত ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয় এই মহিলাকে। উনিও ব্যাপক উৎসাহে এই কাজ করে যাচ্ছেন সম্পূর্ণ বিনা পারিশ্রমিকে। উনি আর কেও নন, আমার মা; আমার সব চেয়ে বড় অনুপ্রেরণা!

যাই হোক, এই প্রকল্প এখন পর্যন্ত বলার মত তেমন কিছু করতে পারেনি কিন্তু আমার স্বপ্ন অনেক বড়! যদিও আমার সাধ্য খুব কম কিন্তু আমি এটিকে অনেক দূর নিয়ে যেতে চাই। এক সময় মনে হতো টাকাটাই মনে হয় সবচেয়ে বড় বাঁধা। এখন হাতে এই প্রকল্পে খরচ করার মত যথেষ্ট টাকা আছে কিন্তু খরচ করতে পারছিনা। পিঁপড়ার মত একটু একটু করে জমান টাকাতো দু’হাতে উড়িয়ে দিতে পারিনা! ইফেক্টিভ উপায়ে এই টাকাটা মানুষের কল্যাণে লাগাতে চাই। আসলে নিজে উপস্থিত না থেকে এই ধরনের কাজে সাফল্য পাওয়া খুব কঠিন। তাছাড়া যদিও এটা এখন পর্যন্ত চ্যারিটি হিসাবে আছে, প্রকৃতপক্ষে আমি চ্যারিটি করার পক্ষপাতী নই। চ্যারিটির সীমাবদ্ধতা থাকে আমি এটাকে আরো বৃহত্তর অবস্থানে নিয়ে যেতে চাই। আমি যদিও এই টাকাটা আমার ব্যক্তিগত কাজে কখনও খরচ করব না, কিন্তু আমি এটা চাই যে আমার ইনভেস্টমেন্ট ব্যবহার করে মানূষ তাদের অবস্থা উন্নত করুক এবং এটারও প্রসার হোক। অনেকটা ডঃ ইউনুসের “সামাজিক ব্যাবসা”র মত। কিন্তু মাথায় তেমন ভাল আইডিয়া নেই। ব্লগার বন্ধুদের যদি এমন কোন অভিজ্ঞতা বা ভাল কোন আইডিয়া থেকে থাকে তাহলে তা শেয়ার করলে যারপরনাই কৃতজ্ঞ থাকব। এই পোষ্ট দেওয়ার আসলে এটাই মূল উদ্দেশ্য। মানুষের জন্য কিছু কিছু করার জন্য ভাল কিছু কার্যকরী আইডিয়া চাই।

এই পোষ্ট দেওয়ার অবশ্য অন্য একটা উদ্দেশ্যও আছে। আমার এই উদ্যোগ দেখে যদি কেও অনুপ্রাণিত হয়ে অনুরুপ কিছু শুরু করে সেটাও হবে আমার জন্য বড় পাওয়া। বিশ্বাস করুন, আপনি যদি আপনার ইনকামের ১% বা তার থেকেও কম টাকা মানুষের জন্য ব্যয় করেন তাহলে যে সুখ পাবেন তা সংসারের জন্য বাকী ৯৯% ব্যয় করেও পাবেন না। জাস্ট শুরু করে দিন ... ... ... দেখবেন ভাল লাগবে!

সবাই ভাল থাকবেন!
আমার প্রকল্পের জন্য দোয়া করবেন!!
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:০১
৩৬টি মন্তব্য ৩৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×