সামুতে যারা আমাকে চিনেন তারা অনেকেই জানেন “অন্যের জন্যে” নামে আমার খুব ছোট্ট একটা প্রকল্প আছে। আমি আমার গ্রামের কিছু ছেলেমেয়ের “একাডেমিক অভিভাবকত্ব” গ্রহন করে প্রকল্পটি শুরু করেছিলাম প্রায় দেড় বছর আগে। আমার প্রেরনা, উদ্দেশ্য আর ওদের কথা জানিয়ে সামুতে একটা পোষ্ট দিয়েছিলাম সে সময়। আমার সেই স্বপ্নের প্রকল্পটি আর একটু প্রসারিত হয়েছে; অনেকদিন থেকেই ভাবছি আপনাদের সাথে শেয়ার করব। কিন্তু দেশের এই ডামাডোলের মধ্যে এই বিষয়ে পোষ্ট দিতে বিব্রত বোধ করছিলাম। এখন মনে হচ্ছে, এই ডামাডোল মনে হয়না খুব তাড়াতাড়ি থামবে। তাই আজই আমার প্রকল্পের কিছু কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।
প্রথমে আমার প্রকল্প সম্পর্কে একটু ধারনা দিই। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য আমার আশেপাশের মানুষগুলো যারা আমার আত্মীয় নন তাদের জন্য কিছু করা। কিন্তু মানুষের জন্য কিছু করতে যে অর্থ প্রয়োজন সেটা আমার কাছে ছিল না। তাই আমি টাকা গোছান শুরু করলাম; প্রতি মাসের বেতন পেলে খুব সামান্য কিছু টাকা একটা খামে করে তুলে রাখতাম। এমাউন্টটা প্রথমে খুব ছোট ছিল, বেতন বাড়ার সাথে সাথে এই টাকাটাও একটু একটু করে আমি বাড়িয়েছি । আমি ভেবে দেখলাম, সংসারে তো সব-ই দিই -সংসারের চাহিদার সীমানা নেই। প্রথম যখন নাম মাত্র বেতনে চাকুরী শুরু করেছিলাম তখন সংসারে যতটুকু অভাব ছিল, এখন তার থেকে মাসিক আয় প্রায় ২০/২৫ গুন বেড়েছে কিন্তু অভাবের পরিমান সেই একই রকম রয়ে গেছে
এখন ওরা নতুন ক্লাশে উঠেছে; সবাই ভাল ফলাফল করেছে সেটা বলা যাবে না, তবে এই বৃত্তির জন্য ওদের মধ্যে কিছুটা হলেও পড়াশুনার প্রতিযোগিতা এসেছে। সেটা বুঝতে পারলাম এবার বৃত্তির জন্য ছাত্রছাত্রী বাছায় করতে গিয়ে। এবার টার্গেট ছিল ১০/১১ জন কে বৃত্তি দিব, কিন্তু অনুরোধের ঢেকি গিলতে সেই সংখ্যা ১৫ তে দাড়িয়েছে।
যদিও ওদের চিনবেন না, তারপরও ওদের নাম আর পড়াশুনা সম্পর্কে একটু শুনুনঃ
মোঃ শফিয়ার রহমান, এইচ এস সি (পরীক্ষার্থী)
সৈরভ রায় , দশম শ্রেনী
ফারহানা খাতুন , অষ্টম শ্রেনী
মোঃ ফয়সাল হোসেন , ভোকেশনাল (১০ম শ্রেনী)
ইতি খাতুন , অষ্টম শ্রেনী
সোনিয়া খাতুন , নবম শ্রেনী
রাজু মৃধা , ভকেশনাল (১০ম শ্রেনী)
সুমি খাতুন , অষ্টম শ্রেনী
টোকন মৃধা , এইচ এস সি (পরীক্ষার্থী)
ইতি খাতুন (২) , নবম শ্রেনী
রাসেল , দশম শ্রেনী
তরিকুল ইসলাম , ভোকেশনাল (এস এস সি পরীক্ষার্থী)
মোঃ আবু তালহা , হাফেজী
মোঃ আজিজ মুন্সি , হাফেজী
মোর্তজা মৃধা , দশম শ্রেনী
রেজাল্ট খারাপ করার কারনে গতবারের ২/৩ জন বাদ পড়েছে; বাকীরা এবার থেকে শুরু। ওদের বই কেনা বাবদ এককালীন কিছু টাকা এবং প্রতি মাসে বৃত্তি হিসাবে ক্লাশ অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দেওয়া হচ্ছে। উপরে “একাডেমিক অভিভাবকত্ব” কথাটা ব্যবহার করেছি এই জন্য যে আমি শুধু টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে দায়িত্ব শেষ করছি না; মাঝে মাঝে ফোন করে ওদের পড়াশুনার খোঁজ খবর নিই, অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করি, ওদের কথা শুনি ...। আপাতত প্রবাসে থেকে এর চেয়ে বেশী করা সম্ভব হচ্ছে না; দেশে ফিরলে ওদের সাথে আরো ঘনিষ্ট যোগাযোগ রাখার ইচ্ছা আছে।
“অন্যের জন্যে” প্রকল্পে শিক্ষা বৃত্তি ছাড়াও গত ৪/৫ মাস আগে কিছু মানূষকে বিনা সুদে ঋণ দেওয়ার একটা কাজ হাতে নিয়েছি। উদ্দেশ্য, আমার টাকা ব্যবহার করে কেও যদি তার আর্থিক অবস্থা একটু উন্নত করতে পারে! ইতিমধ্যে দু’জনকে ভ্যান গাড়ী কিনে দিয়েছি, একজনকে মাছ মারার জন্য জাল কিনে দিয়েছি আর একজন কে সবজীর ব্যবসা করার জন্য কিছু টাকা দিয়েছি। ওরা প্রতি সপ্তাহে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা ফেরত দেয়, মুল টাকা ফেরত শেষ হলে জিনিষটা তার হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে জাল ওয়ালা তার টাকা শোধ করে দিয়েছে। সে আবার তার ছেলেকে একটা ভ্যান কিনে দেওয়ার আবদার করেছে (আবদার অলরেডি গৃহীত
যাই হোক, এই প্রকল্প এখন পর্যন্ত বলার মত তেমন কিছু করতে পারেনি কিন্তু আমার স্বপ্ন অনেক বড়! যদিও আমার সাধ্য খুব কম কিন্তু আমি এটিকে অনেক দূর নিয়ে যেতে চাই। এক সময় মনে হতো টাকাটাই মনে হয় সবচেয়ে বড় বাঁধা। এখন হাতে এই প্রকল্পে খরচ করার মত যথেষ্ট টাকা আছে কিন্তু খরচ করতে পারছিনা। পিঁপড়ার মত একটু একটু করে জমান টাকাতো দু’হাতে উড়িয়ে দিতে পারিনা! ইফেক্টিভ উপায়ে এই টাকাটা মানুষের কল্যাণে লাগাতে চাই। আসলে নিজে উপস্থিত না থেকে এই ধরনের কাজে সাফল্য পাওয়া খুব কঠিন। তাছাড়া যদিও এটা এখন পর্যন্ত চ্যারিটি হিসাবে আছে, প্রকৃতপক্ষে আমি চ্যারিটি করার পক্ষপাতী নই। চ্যারিটির সীমাবদ্ধতা থাকে আমি এটাকে আরো বৃহত্তর অবস্থানে নিয়ে যেতে চাই। আমি যদিও এই টাকাটা আমার ব্যক্তিগত কাজে কখনও খরচ করব না, কিন্তু আমি এটা চাই যে আমার ইনভেস্টমেন্ট ব্যবহার করে মানূষ তাদের অবস্থা উন্নত করুক এবং এটারও প্রসার হোক। অনেকটা ডঃ ইউনুসের “সামাজিক ব্যাবসা”র মত। কিন্তু মাথায় তেমন ভাল আইডিয়া নেই। ব্লগার বন্ধুদের যদি এমন কোন অভিজ্ঞতা বা ভাল কোন আইডিয়া থেকে থাকে তাহলে তা শেয়ার করলে যারপরনাই কৃতজ্ঞ থাকব। এই পোষ্ট দেওয়ার আসলে এটাই মূল উদ্দেশ্য। মানুষের জন্য কিছু কিছু করার জন্য ভাল কিছু কার্যকরী আইডিয়া চাই।
এই পোষ্ট দেওয়ার অবশ্য অন্য একটা উদ্দেশ্যও আছে। আমার এই উদ্যোগ দেখে যদি কেও অনুপ্রাণিত হয়ে অনুরুপ কিছু শুরু করে সেটাও হবে আমার জন্য বড় পাওয়া। বিশ্বাস করুন, আপনি যদি আপনার ইনকামের ১% বা তার থেকেও কম টাকা মানুষের জন্য ব্যয় করেন তাহলে যে সুখ পাবেন তা সংসারের জন্য বাকী ৯৯% ব্যয় করেও পাবেন না। জাস্ট শুরু করে দিন ... ... ... দেখবেন ভাল লাগবে!
সবাই ভাল থাকবেন!
আমার প্রকল্পের জন্য দোয়া করবেন!!
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:০১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




