সুপ্রিম কোর্টের প্রাঙ্গণে গ্রীক দেবী থেমিসের ভাস্কর্য নিয়ে প্রধান মন্ত্রীর এতো হিন্দোল কেন দেখা যাচ্ছে? থেমিসের ভাস্কর্য দিয়ে ন্যায় বিচারের প্রতীকী তুলে ধরা হয়েছে, এতটুকো কি তার জন্য বোধগম্য হয়নি? প্রশ্ন আসতে পারে পরের সংস্কৃতি নিয়ে আমাদের এতো হিন্দোল কেন, “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ” নামটা কি কারো অজানা? গণতন্ত্র তো প্রথম গ্রীসে প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্লিসথেনিস, সলোন এবং পেরিক্লিস এদের নেতৃত্বে প্রথম গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। কোথায়, গণতন্ত্রের বেলায় তো কেউ বলেনি এটা পরের সংস্কৃতি? ন্যায় বিচারের ধারণা গ্রীস থেকেই প্রথম পাওয়া যায়। গ্রীকদের ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী তারা থেমিসকে ন্যায় বিচারের দেবী মনে করেন। তাই ন্যায় বিচারের প্রতীকী হিসেবে গ্রীক দেবী থেমিসের ভাস্কর্য অনেক বিচারালয়ের প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হয়। এটার বেলায় কেন তা পরের সংস্কৃতি বলা হচ্ছে?
কারণ ইসলাম ভাস্কর্য এবং কোন জীবের ছবি স্বীকার করে না, তার জন্য কি বলা হয়নি? হ্যা তার জন্যই বলা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে গণভবনে এক বৈঠকে কওমি মাদ্রাসাগুলোর শীর্ষ প্রতিনিধি ও হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফী সহ অনেক আলেম ছিলেন। আলেমগণরা সুপ্রিম কোর্টের প্রাঙ্গণে গ্রীক দেবী থেমিসের ভাস্কর্য ভেঙ্গে সরিয়ে ফেলার দাবী উত্থাপন করে। প্রধান তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন,“প্রধান বিচারপতির সঙ্গে খুব শিগগিরই বসব। আপনারা ধৈর্য ধরেন, এটা নিয়ে হৈ চৈ করা নয়। আমার উপর আপনারা এটুকু ভরসা রাখবেন। এটায় যা যা করা দরকার আমরা তা তা করব।”
তা হলে সাংবিধানিক অসাম্প্রদায়িকতার বিষয়টি গেল কোথায়?
তিনি আরও বলেন, “আমি নিজেও এটা পছন্দ করিনি। বলা হচ্ছে এটা নাকি গ্রিক মূর্তি… আমাদের এখানে গ্রিক মূর্তি আসবে কেন? আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এটা এখানে থাকা উচিৎ না। এটা কেন করা হল? কারা করল? কীভাবে, জানি না।”
সাথে তিনি থেমিসের ভাস্কর্যকে বাঙ্গালী পোশাক নিয়ে ও প্রশ্ন তোলেন,“গ্রিকদের পোশাক ছিল এক রকম। এখানে আবার দেখি শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে। এটাও হাস্যকর হয়েছে।”
তার প্রশ্নের উত্তর আমি দিচ্ছি, তার পছন্দ করা না করা নিয়ে আমাদের রাষ্ট্র চলবে না, রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রের চালিকা শক্তি সংবিধান রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সংবিধানের অবস্থা এখন পাবলিক টয়লেটের মতই। যখন যার যেভাবে ইচ্ছা হয়ে, ব্যবহার করে চলে যায়। আর বাঙ্গালী সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্য তৈরির জন্য শাড়ি পরানো হয়েছে কিনা তা জানি না, তবে নারীদের তেঁতুল উপাধি যেন আর না পেতে হয় সেদিক থেকে নির্মাতা হয়তো আগে ভেবে দেখে ছিল। তবে শাড়ি দিয়ে আমাদের বাঙ্গালী সংস্কৃতির সামঞ্জস্য করে প্রদর্শন করা হয়েছে।
গণতন্ত্র যদি ভালোর দলে হয়, তবে ন্যাবিচার কেন নয়? গণতন্ত্র পরের সংস্কৃতি থেকে তুলে আনতে পারলে, ন্যায় বিচারের প্রতীকী নিয়ে এতো মাথা ব্যাথা কেন?
প্রকৃত একটা সত্য এটাই যে, সত্য ও সততাই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ সংস্কৃতি।
প্রধানমন্ত্রীর এমন প্রতিশ্রুতি আলেমগণদের দেয়ার কারণ হয়তো এই যে, মৌলবাদকে মদদ দিয়ে ক্ষমতা বেশি দিন অবধি টিকিয়ে রাখা সম্ভব। সংবিধানে উল্লেখিত অসাম্প্রদায়িকতা হয়তো উনি ভুলেই গিয়েছে। তাই মৌলবাদকে মদদ দেয়া তার পক্ষে অস্বাভাবিক কিচ্ছু না! এই প্রসঙ্গে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেছেন, “হেফাজত আজকে যেভাবে বলছে, তাতে মনে হচ্ছে এটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নয়, মনে হচ্ছে এটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র।”
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৫:০৪