somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গুজবের দিন শেষঃ মুক্ত আকাশে আমরা মুক্তির ঘুড়ি উড়াবো।

০৬ ই জুন, ২০১০ বিকাল ৩:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক অনেক দিন আগের কথা। দূর এক দেশের এক গ্রাম। সে গ্রামে সেদিন সকালে করিম তার ক্ষেতে কাজ করছিল। তখন পাশ দিয়ে যাচ্ছিল পাশের গ্রামের দাই-মা জুলেখা বিবি।
করিমঃ কি দাই এত সকালে কই থাইক্কা আইতাছ ?
জুলেখাঃ করিম বাই কিছু হুন নাই ? আমগ রাজার গরে তো ভোর রাইতে একটা সন্তান অইছে।
করিমঃ খুবই বালা খবর ! তা কি অইছে ছাওয়াল না মাইয়া ?
জুলেখাঃ অইছে তো মাইয়া, তয় খুবই কালা অইছে।
করিম ক্ষেতের কাজ শেষ করে বাড়ি গেল। তার বউ কে খবর টা দিল।
করিমঃ হুনছ নি বউ, রাজার ঘরে মাইয়া অইছে, কালা কুচকুইচ্চা একটা মাইয়া।
করিমের বউঃ তাই নাহি, তা তুমি বাড়িত থাইক্কো আমি নদীত যাই পানি আনতে।
এই বলে করিমের বউ নদীর ঘাটে চলে গেল এবং সেখানে পেল তার সখি ফুলমতি কে।
করিমের বউঃ এই ফুলমতি এদিক আয়, খবর হুনছসনি রানীর ঘরে কাউয়ার লাহান কালা একটা মাইয়া অইছে।
ফুলমতি ঘাট থেকে ফিরে গিয়ে তার জামাইরে খেতে বসিয়ে তাকেউ খবরটা দিল।
ফুলমতিঃ দেশের খবর হুনছ রাহনি ? রাজার ঘরে কাইল রাইতে একটা কাউয়া অইছে, সারাদেশ জানে আর তুমি ঘুমাও।
ফুলমতির স্বামী খেয়ে দেয়ে হাটে গেল বীজ কিনতে। সেখানে পেল তার গ্রামের আরও কয়জনকে।
ফুলমতির জামাইঃ তুমরা খবর হুনছ ? রানীর ঘরে তো কাউয়া অইতাছে আর উইরা উইরা যাইতাছে, গ্রামের সবাই দেখতাছে।
তখন ভীরের মধ্যে থেকে একজন বলে উঠলো, তাই তো কই আমার দুকানের পুব পাশের বট গাছটায় ইট্টু পরে পরে একটা একটা করে এত কাউয়া কইথনে আইতাছে ?
তার কথা শুনে হাটের সবাই গেল সেই গাছের তলায় রাজার সন্তান দেখতে। কেউ কেউ দোকান থেকে বিস্কুট মোয়া কিনে গাছের উপর বসে থাকা কাকা গুলিকে খাওয়ানোর চেষ্টাও করল, শত হউক কাকগুলি তাদের রাজারই সন্তান, কেউ কেউ দুঃখে দীর্ঘশ্বাসও ফেললো। তো এই হলো গুজবের বেড়ে উঠার গল্প। তথ্য মানুষের কান থেকে মুখে, মুখ থেকে আবার কানে যেতে যেতে সরলিকরন হয়, ডিসটর্ট হয়।

গতকাল সকালের দিকে ঢাকা শহরকেও অনেকে গুজবের শহর বলার চেষ্টা করেছে। আমার মত অনেকে ঢাকা শহর থেকে অনেক দূরে থেকে টিভিতে নেটে এই গুজবের প্রকৃত ঘটনাগুলো দেখেছি, ফলো করেছি। তা চলুন দেখা যাক কি রকম ছিল বিষয়গুলো।

ঢাকা শহরে গতকাল চার পাঁচটা বিল্ডিং হেলে পরেছে, ফেঁটে গেছে এমন খবর ছিল মিডিয়াতে। মিডিয়ার বইরেও হয়তো কয়েকট ছিল। অনেকেই চারদিকে গুজব, ডিজিটালের কুফল ইত্যাদী কমেন্টও করেছে। তবে আমাদের কাছে মিডিয়ার বিষয়টা ভালো লেগেছে, এতে যদি আমাদের মিডিয়ার সুফল সম্পর্কে চোখ কিছুটা খোলে।

প্রকৃত বিষয় হলো ঢাকা শহরে কাল নতুন করে কোন বিল্ডিং হেলে যাওয়ার মত কিছু হয়নি এবং ফাটলও ধরেনি। ঢাকায় আগে থেকেই অসংখ্য বিল্ডিং অসংখ্য ফল্ট নিয়ে দাড়িয়ে আছে। সারা ঢাকা ঘুরলে কয়েক শত হাইরাইজ বিল্ডিংই পাওয়া যাবে যেগুলো ডানে, বাঁয়ে, সামনে বা পিছনে হলে আছে। এছারাও আরও হাজার টাইপের প্রবলেমও পাওয়া যাবে অগুণিত ইমারতে।

তাহলে প্রশ্ন হলো আমরা জানি না কেন ? আর কাল এগুলি জানলাম কি ভাবে ? হ্যাঁ এটা একটা প্রশ্ন হতে পারে।

কাল যেহেতু মিডিয়া এবং আমাদের সবার এ্যাটেনশন ঐদিকে ছিল তাই এই কয়েকটা বিল্ডিং দৃষ্টি আকর্ষন করেছে মাত্র। আমরা সারাদেশের শহরের মানুষেরা ঘটনগুলোর সাথে তৎক্ষনাত কানেকটেড হয়েছি, টিভিতে লাইভ দেখেছি, ইন্টারনেটে পর্যবেক্ষন করেছি। এত মানুষের একসাথে সমস্যাগুলোর সাথে যুক্ত হওয়ায় সংগে সংগে সমাধানের পথও সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য যে কয়টা হেলে পরার খবর মিডিয়াতে দেখেছি এছারাও আরও কেয়েকটা হয়তো আবিষ্কার হয়েছে এবং সে তথ্যগুলো মোরের দোকান পর্যন্ত এসে শেষ হয়ে গেছে কোন প্লাটফর্ম না পেয়ে। আরও দুই তিন দিন যদি এই এ্যাটেনশনটা ধরে রাখি তবে প্রতিদিন অন্তত আরও পাঁচটা থেকে দশটা করে বিল্ডিং পাশের টাকে হ্যালো বলছে শুনতে পবো। কিন্তু তা হবে না কারন আমদের দৃষ্টি বড় চঞ্চল।

এখন দেখি এগুলো মিডিয়াতে আসায় আমাদের লাভ হয়েছে না ক্ষতি হয়েছে ? গত কাল সন্ধার মধ্যেই দেখলাম এ্যাক্সপার্ট কমিটি কনকর্ড টাউয়ারকে নিরাপদ ঘোষনা করেছে এবং সেখানকার বাসিন্দারা স্ব-স্ব গৃহে ফিরে গেছে। সারাদেশের শহরের মানুষকে টিভি চ্যানেল গুলো বিষয়টি লাইভ নিশ্চত করেছে। তাহলে দেখা যায় বিষয়টা ভালো হয়েছে দুই ভাবে। ১. মিডিয়া থাকাতে গুজবগুলো ছরাতে পারেনি কারন ঘটনাগুলো আমরা সবাই তৎক্ষনাৎ লাইভ দেখে নিশ্চত হয়েছি যে, না বিল্ডংগুলো ধপাস করে পাশের টার উপর পরেনি, এক জায়গায় ফাটল ধরেছে বা একটু হেলে পরেছে মাত্র। ২. মিডিয়া থাকাতে সবাই মিলে সমস্যা চিহ্নিত করন ও সমাধানের পথ তড়িৎ নিশ্চিত করন সম্ভব হয়েছে। যা সরকারের সংশ্লিষ্ট অথরিটির একার পক্ষে করা লোকবল সম্পদ ও দুর্নিতির কারনে পাহাড় ঢেলে সরানোর মত অবাস্তব কাজা তা মিডিয়া দিয়ে আমরা মুহূর্তে কত সহজে করে নিয়েছি।

তথ্য প্রবাহ, মিডিয়া বিষয়টা আসলে এরকমই, আমরা যদি তথ্যের প্রবাহকে শৃংখল মুক্ত করতে পারি তাহলে এভাবেই দেশের অসংখ্য সমস্যা অসংখ্য মানুষের চোখের সামনে চলে আসবে। আর তখন সমস্যা সমাধানে সরকারের একা কাজ করতে হবে না। দেশের অসংখ্য মানুষ সেই সমস্যাগুলোর সাথে সংযুক্ত হওয়া, ফলো করার কারনেই কাজগুলি সহজে চিহ্নিত হবে ও অনেক অনেক সহজে সমাধান হয়ে যাবে।

আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি, সেখানে মা যেমন চাওয়ার আগেই তার সন্তানকে খাওয়ায়, সরকারকে ঠিক সেই ভাবেই তথ্যের অবাধ প্রবাহ/প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে ১৬ কোটি মানুষের জন্য। তখন আমাদের শস্যের চেয়ে বেশি (হাজার হাজার) সমস্যাগুলো এই গরীব দেশের অপ্রতুল জনবল ও সম্পদের সরকারের একার থাকবেনা হয়ে যাবে ১৬ কোটির মানুষের। হয়ে যাবে সহজ, খুলে যাবে কোটি কোটি না খোলা জানালা। মুক্ত তথ্যই আমাদের মুক্তির একমাত্র মহাঔষধ, মুক্ত তথ্যেই মুক্তি।

চলুন দেখি উপরের গল্পটা অবাধ তথ্য প্রবাহের আধুনিক জীবনের ভার্সান টা কেমন হবে ?

ছোট রাজ্য সফিক একজন স্কুল শিক্ষক, স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছে। পথে দেখা হলো পাশের বাড়ির ডাক্তার মেয়েটির সাথে।
সফিকঃ কিরে পিংকি মোবাইল হাতে নিয়ে কি দেখতে দেখতে রাস্তায় হাটছিস ? গাড়ির নিচে পরবি তো।
পিংকিং: সফিক ভাই হাসপাতালের ওটি থেকে আসছি। শুনেছ তো কিছুক্ষন আগে আমাদের রাজা মেয়ের বাবা হয়েছে ? মোবাইলে ঐ রাজকুমারীর ছবিই দেখছি। দেখতো আমার মনে হয় মেয়েটা একটু কালো হয়েছে !
সফিকঃ কই দেখিতো ? হ্যাঁ আমারও মনে হয় বড় হলে আরও ময়লা হবে।
সফিক বাড়ি গিয়ে তার বউকে খবরটা দিল।
সফিকঃ কইগো শুনেছ রাজা তো মেয়ের বাপ হয়ে গেল, মেয়েটা দেখলাম তোমার মত কালো হয়েছে।
সফিকের বউঃ তোমরা আর মানুষ হলে না। এই যে দেখে যাউ টিভিতে দেখাচ্ছে। বাচ্চাটা কত সুন্দর ফুটফুটে হয়েছে, দেখো বড় হলে অনেক সুইট হবে।
সফিকঃ কউ দেখি ? হ্যাঁ তাইতো কত সুন্দর লাগছে আমাদের রাজকুমারী কে, গিলি-গিলি পু-পু, সফিক টিভি স্ক্রীনেই আদর করলো ছোট্ট রাজকুমারী কে।

অতপর সেই রাজ্যে রাজা রানী ছোট্টো রাজকুমারী সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকিল।

ধন্যবাদ এতটা সময় দিয়ে পড়ার জন্য।

দ্রষ্টব্যঃ কালকের ঢাকার ঘটনায় কেবলমাত্র শহরের লোকেরাই সংযুক্ত ছিল কারন আমাদের গ্রামের ১২ কোটি মানুষের কাছে বিটিভি ছারা আর কারও যাওয়ার অধিকার প্রকৃত পক্ষে আইন করেই বন্ধ করে রাখা আছে। টেরেষ্টারিয়াল টেলিকাষ্ট ইজ প্রিজার্ভড ফর বিটিভি ওয়ানলী। আর এটা দিয়ে তথ্যের মুক্তি সম্পূর্ন অবাস্তব ও অলীক।

মুক্ত আকাশে আমরা মুক্তির ঘুড়ি উড়াবো। (সময় থাকলে দেখবেন)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১০ বিকাল ৩:৫৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×