না পড়ে মাইনাস দিলে পরে লজ্জ্বা পাবেন, যদি থাকে ! সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের এক চিঠিতে সকল বেসরকারী টিভি চ্যানেলকে বিটিভির সংবাদ প্রচার করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ব্রিলিয়ান্ট একটা কাজ হয়েছে। আমি কাজটিকে স্ট্রংলি সাপোর্ট করছি কারন আমাদের শহরের স্বচেতন মানুষের দেখা ও জানা উচিত দেশের আশি শতাংশ মানুষকে বাধ্য হয়েই কি দেখতে হয় ? দেশের সর্বোচ্চ ২ কোটি মানুষ স্যাটালাইট চ্যানেলের কভারেজে আছে, বাকি জনগনকে কেবল মাত্র বিটিভিই বাধ্য হয়ে দেখে।
আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে নব্বুই এর দশক জুরে শহুরে সমাজে বিটিভির স্বায়ত্ত্ব শাসন সহ এর পরিবর্তনের একটা আন্দোলন ছিল। তখন একে সাহেব বিবি গোলামের বাক্স সহ নানা নামে ডাকতাম, লিখতাম, আলোচনা করতাম কারন তখন আমাদের সবাইকেই শুধু বিটিভিই দেখতে হতো। পরে নব্বুই এর দশকের শেষে যখন প্রাইভেট চ্যানেল গুলো আসা শুরু হলো তখন নিজেদের স্বার্থ পুরন হওয়ায় সিভিল সমাজে এই দাবি ও আন্দোলন টা শেষ হয়ে গেছে। আমরা আজ একবারও ভাবি না আমাদের আশি শতাংশ মানুষকে এখনও শুধু বিটিভিই বাধ্য হয়েই দেখতে হচ্ছে।
এবার হিসাবটি একটু মিলিয়ে দেইঃ এক জরিপে বলে দেশের ৯০% জনগনের টেলিভিশন এ্যাক্সেস আছে। তথ্যটা ঠিক আছে তব এর সর্বোচ্চ ২০ ভাগ স্যাটলাইট টিভি দেখে বাকিরা শুধু বিটিভি। উদাহরনঃ সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলা, জনসংখ্যা দুই লাখ পঁচিশ হাজার, উপজেলা সদরে ১৫০০ ডিস টিভি কানেকশন আছে যাতে হাজার বিশেক মানুষ স্যাটালাইট টিভিগুলো দেখে। অর্থাৎ ১০%, বাকি দুই লক্ষ বাধ্য হয়ে শুধু বিটিভি দেখে। এদেশে ৪৮১ টি উপজেলা আছে। এর মধ্য ঢাকার আশেপাশে বিশ থেকে পঁচিশটি উপজেলা বাদ দিলে বাকিগুলির বাস্তবতা তথৈবচ। অর্থাৎ দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ তাদের কষ্টার্জিত পয়সায় কেনা টেলিভিশনে শুধু বিটিভি এবং ভিসিডি কিনে সারাদিন ডিপজলের বাংলা সিনামা দেখছে। সেখানে ডিপজল ডায়লগ দিচ্ছেঃ আইজ এইহান তান্ডব অইবো, আইজ এইহান মা মেয়ে এক সাথে রেপ হইবো
এরকম পরিস্থিতির কারন টেরেষ্টারিয়াল টেলকাস্ট আইন করে শুধু মাত্র বিটিভির জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। তার মানে অন্য কোন চ্যানেল ট্যারেস্টারিয়াল টেলিকাস্ট করার অনুমতি নাই। আপনাদের মনে থাকবে ২০০০ সালে একুশে টিভিকে টেরেস্টারিয়াল অনুমতি দেয়া হয়েছিল আর তখন ছয় মাসেই আমাদের আপাময় জনগন সেটিকে খুবই পছন্দ করেছিল। পরে তা বাতিল করা হয়। এবং বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশ সরকার ক্ষমতায় আসার প্রথম সপ্তাহেই তত্বাবধায়ক সরকারের শেষে দিকে ইনিসিয়েট হওয়া তথ্য মন্ত্রনালয়ের একটা ফাইলের নিষ্পত্তি করেছে এরকমঃ "টেরেষ্টারিয়াল টেলিকাস্ট শুধুমাত্র বিটিভির জন্য সংরক্ষণ করা হলো।
এবার একটু ছবি বিনোদনঃ চলুন রামপুরা টিভি ভবনের ভেতরের কিছু ছবি দেখি।
বিটিভি সম্পর্কে কিছু মূল্যবান তথ্য
১. বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনের ভেতর মশায় ভরা। কোন রুমে এক জায়গায় এক মিনিট দাড়ালেও অন্তত ৫ টা মশার কামোড় খেতে হবে। একজনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, স্যার এত মশার মধ্যে আপনারা টকশো দেন কি ভাবে ? স্যার বললো, ইয়েস, একদিন তো আমি হাত দিয়ে এভাবে একটা ধরে ফেলে সারাক্ষন বসেছিলাম।
২. সরকার বিটিভি কে গত বছর ১৩ কোটি টাকা বাজেট দিয়ে ছিল। এবছর ১৫ কোটি।
৩. অবশ্যই নানা অনিয়মের পরও, গত বছর বিটিভি আয় করেছে ১০০ কোটি টাকা এবং বরাবর তাই করে।
৪. বিটিভি এখনও যে সবযন্ত্র পাতি দিয়ে চলে তা পৃথিবীর দরিদ্রতম দেশও অন্তত ২০ বছর আগে ফেলে দিয়েছে।
৫. টিভি স্টেশনের মূল বিষয় হলো রেকর্ড, বিটিভি এখনও তার অনুষ্ঠান বেটাক্যাম স্যালুলয়েড ফিতায় ধারন করে। এবং এক একটি ক্যাসেট ২০০ বার রিইউজ করা হয়।
৭. বিটিভির মোট জনবল ১২০০
মন্তব্যঃ এই বিশাল সেটআপের সাথে শুধু একটু আধুনিকতার ছোয়া দিলে এই মাধ্যমটি আমাদের কত বিশাল একটি ডিজিটাল এ্যাক্সেস হতে পারে তা আমরা কল্পনাও করতে পারি না।
কত টাকা লাগবে বিটিভি আধুনিকায়নে ? কয় হাজার কোটি ?
আজ যদি এর ৩০% শেয়ার মার্কেটে চলে আসে, দুই দিনে পাবলিকে ঐ টাকা দিয়ে দেবে।
সেই সাথে বিটিভি হয়ে উঠবে পাবলিকের গনমাধ্যম। বছরে একশ কোটি টাকা না এক হাজার কোটি টাকা আয় করবে।
এবার চলুন গ্রামের মানুষের টিভি দেখা দেখিঃ
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ৮:৫২