প্রশ্নঃ ০১. সম্প্রতিক সময়ে তথ্য মন্ত্রণালয় গণমাধ্যম নীতিমালা প্রণয়নের একটি উদ্যোগ করেছে। এ উদ্যোগ সম্পর্কে আপনার মতামত কী? আপনার মতে গণমাধ্যম নীতিমালা (Media Policies) কি
অনুগ্রহ করে বলবেন কি?
উত্তরঃ তথ্যের অবাধ প্রবাহই সুশাসন প্রতিষ্ঠার একটি অন্যতম প্রধান উপাদান। অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করতে গণমাধ্যমই একই ভাবে অন্যতম শক্তিশালী ও বাস্তব মাধ্যম। মানুষের দোড়গোড়ায় তথ্য প্রবাহকে কে প্রবাহিত করার সহায়ক গণমুখি একটি গণমাধ্যম নীতিমালা প্রণয়নের উদ্দোগ্য প্রশংসনীয়।
প্রশ্নঃ ০২. বাংলাদেশের গণমাধ্যম নীতিমালার প্রয়োজন কেন?
শরীরের শিরা, উপ-শিরা যেমন- মানব দেহের প্রতিটি কোষে জীবনি শক্তি পৌঁছে দেয় তেমনি গণমাধ্যম সমাজ, প্রশাসন, দেশ ও বিদেশের তথ্য প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়। তাই গণমুখি অবাধ গণমাধ্যম নীতিমালা যেকোন রাষ্ট্রের জন্য আবশ্যক।
উত্তরঃ স্বাধীনতার চল্লিশ বছরে একটি সুদূরপ্রসারি গণমাধ্যম নীতিমালার প্রয়োজন অনেক আগেই ছিল কেননা এদেশের গণমাধ্যম/প্রচারমাধ্যম আজও মূলত চলছে গণবিমুখ, উপনিবেশিক ও পাকিস্তানের আমলের নিয়মনীতি ও বিভিন্ন গণবিরোধী রিতি ও নির্দেশের আলোকে। তাই ২০১০ সালে এসে তথ্য প্রযুক্তি ও ভিশন ২০২১ কে সামনে রেখে একটি গণমাধ্যম নীতিমালা প্রণয়নে...... সমাজের বিভিন্ন স্তরে, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া সহ সম, বিভিন্ন স্টেক হোল্ডার, সর্বপরি ওয়েবসাইট ভিত্তিক ব্যাপক জনগণের অংশগ্রহণ ও মতামতের ভিত্তিতে একটি গণমুখি গণমাধ্যম নীতিমালা যথাশিঘ্রীই সম্পন্ন করা উচিত।
প্রশ্নঃ ০৩. বাংলাদেশের বর্তমান গণমাধ্যমগুলো কিভাবে পরিচালিত হচ্ছে? এখানে কোন নীতিমালা অনুসরণ করা হচ্ছে বলে আপনি মনে করেন কি?
উত্তরঃ বাংলাদেশের বর্তমান গনমাধ্যমগুলো সেই উপনিবেশ আমলের মানসিকতা, অভ্যাস ও নিয়মনীতিতেই চলছে। সেই সাথে পাকিস্তান আমলের পরিমার্জিত, পরিবর্ধিত ও নানা এডহক সিদ্ধান্তের দাড়া ও প্রভাবে পরিচালিত হচ্ছে। স্বাধীনতা উত্তর গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণকারী মস্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানসমূহ সেই পুরনো আচার আচারণ, আইন কানুন ও সে সমস্ত আইন কানুনের উপর ভিত্তি করে সমাজের সুবিধাভোগী অংশের স্বার্থ রক্ষা করে কিছু নতুন নতুন নিয়মকানুন যুক্ত হলেও আমাদের গণমাধ্যম পরিচালনায় গণমুখি কোন উপাদান আগেও যেমন ছিল না বর্তমানেও তেমনি নাই।
প্রশ্নঃ ০৪. গণম্যাধম বা সাংবাদিক সমাজের একজন প্রতিনিধি হিসেবে আপনি কি ধরণের গণমাধ্যম নীতিমালা প্রত্যাশা করেন?
উত্তরঃ গণমাধ্যম প্রতিনিধি হিসেবে আমি মনে করি অবাধ সংবাদ প্রবাই পারে জনগণের কাছে প্রকৃত সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য পরিবেশন করতে। প্রচার মাধ্যমের সংখ্যাগত ও গুনগত সকল প্রতিবন্ধকতা/জটিলতা দূর করে গণমানুষকে যে কোন বিষয়ে সত্য ও সঠিক তথ্য পাওয়ার পরিবেশ তৈরী করা সরকারের কাজ। প্রকৃত পক্ষে অবাধ তথ্য প্রবাহই বিকৃত ও মিসগাইডিং তথ্য পরিবেশন করার সুযোগ থাকবে না।
প্রশ্নঃ ০৫. বর্তমান সরকার গণমাধ্যম নীতিমালা (Media Policies) তৈরির উদ্যেগ নিয়েছে। এ ব্যাপারে গণমাধ্যম জগতের বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে সরকার গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে রাখতেই এ নীতি মালার কথা ভাবছে। আপনি এ ব্যাপারে কি মনে করেন?
উত্তরঃ বিভিন্ন মহলের এ ধরণের ধারণা একেবারে অমূলক নয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের অতীত অভিজ্ঞতাই এরূপ ধারণা পোষণে সাহায্য করে। তাই গণমাধ্যম নীতিমালার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা প্রণয়নের আগে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব সমাজের বিভিন্ন স্তরে, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া, বিভিন্ন স্টেক হোল্ডার, সর্বপরি ওয়েবসাইট ভিত্তিক জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ ও মতামত গ্রহণ নিশ্চিত করে একটি গণমুখি গণমাধ্যম নীতিমালা যথাশিঘ্রীই সম্পন্ন করা উচিত।
প্রশ্নঃ ০৬. জনগন ও গণমাধ্যমসংশ্লিষ্ট সকলের স্বার্থ রক্ষা করে একটি গণমাধ্যম নীতিমালা তৈরির জন্য এ মুহূর্তে সরকারের কী করণীয় আছে বলে মনে করেন?
উত্তরঃ গণমাধ্যম নীতিমালা প্রস্তুতের পূর্বে প্রথমেই আমাদের উচিত হবে বর্তমানে তথ্য প্রবাহের ক্ষেত্রে যেসমস্ত প্রতিকুলতা বিদ্যমান আছে, সরকারী লাইসেন্সিং, রেগুলেটরিও গোষ্ঠী স্বার্থ রক্ষায় উপস্থিত উপাদানগুলি চিহ্নিত করা এবং গণমানুষের স্বাধীনতা খর্ব করে এরকম সকল নিয়মনীতি বাতিল করে জনগণের মতামতের সাপেক্ষে একটি গণমুখি নীতিমালা প্রণয়ন করা। একই সাথে দেশের ইন্ট্রিগ্রেটেড অংশ হিসেবে সেনাবাহিনীসহ সকল সামরিক বেসামরিক বাহিনী ও সংস্থা, আদালতে গণমাধ্যমের অবাধ প্রবেশধীকারের বিষয়টি নীতিমালায় অবশ্যই থাকা প্রয়োজন।
প্রশ্নঃ ০৭. গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা ক্রমাগতভাবে কর্পোরেট হাউসগুলো নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে এবং এর ফলে জনস্বার্থ উপেক্ষিত হতে পারে বলে কোন কোন মহল থেকে আশংকা করা হচ্ছে। আপনি কি মনে করেন গণমাধ্যম নীতিমালা প্রণীত হলে গণমাধ্যমে জনস্বার্থ সংরক্ষিত এবং জনআগ্রহ প্রতিফলিত হবে?
উত্তরঃ উপনিবেশিক ও পাকিস্তান আমল থেকে চলে আসা মৌলিক নিয়মনীতিগুলোই দেশের গণমাধ্যমগুলোকে কিছু গোষ্ঠী বা কর্পোরেট হাউজের কুক্ষিগত করে দিচ্ছে। তাই গণমাধ্যমকে কেবল কিছু কর্পোরেট হাউজগুলো নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করার জন্য স্থানীয় পর্যায়ে গণমাধ্যমের কর্মকাণ্ড পরিচালনার স্বাধীনতা স্থানীয় পর্যায়েই দিতে হবে। এর মধ্যে লোকাল রেডিও, লোকাল টেলিভিশন, টেরিস্টোরিয়াল টেলিভিশন সকলে প্রবেশ অধিকারসহ ইন্টারনেটকে এদেশের গরীব মানুষের সামর্থ্যরে বিষয়টি বিবেচনায় রেখে পৃথিবীর সর্বনিু মুল্যে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যা কিনা বর্তমানে পৃথিবীর সর্বচ্চ মূল্যে বাংলাদেশের জনগণ ব্যবহার করছে। সেই সাথে তথ্য প্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগের ব্যাপক ব্যবহার ও প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার জন্য সরকার কর্তৃক আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নিয়ে মানুষকে তথ্য প্রাপ্তিতে তাদের সামথ্য অনুযায়ী স্বাধীনতা দিতে হবে।
দ্রষ্টব্যঃ উত্তরগুলো দয়া করে আরও ইম্প্রুভ করে দিন।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০১০ সকাল ৯:৪৯