থ্রীজি-3G হচ্ছে "থার্ড জেনারেশন মোবাইল টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক", আর বাংলাদেশে আমরা আজ ২০১০ (২০১২) সালেও যে ধরনের মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছি একে অন্তত দশ বছর আগের ২.৫জি/(জিপিআরএস-GPRS) বা ২.৭৫জি/(এজ-EDGE) নেটওয়ার্ক দাবি করা হয়।একে থ্রীজিতে আপগ্রেড করতে মোবাইল অপারেটরগুলির সরকারের অনুমোদন লাগবে, কারন থ্রীজির জন্য যেই তরঙ্গ ব্যবহার করতে হবে তার জন্য সরকারকে ফি দিয়ে সেই নির্দিষ্ট তরঙ্গ ট্রান্সমিশন ও নেটওয়ার্ক তৈরীর লাইসেন্স পায়, যে তরঙ্গ রাষ্ট্রিয় প্রাকৃতিক সম্পদ, যা বিশের সকল দেশে তথা সকল গ্রামে সমান, আমরা ব্যবহার করি আর না করি।গত সাড়ে তিন বছর যাবৎ ডিজিটাল বাংলাদের হেডকোয়ার্টার তথা ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনাদয় দেই দিচ্ছি করে সেদিন বলছে, আমাদের প্রস্তাবিত থ্রীজি নীতিমালায় এরকম এক মেগাহার্স তরঙ্গের নিলামের সর্বনিম্ন দর ধরা হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা।সর্বোচ্চ ডাকে ৪টি লাইসেন্সে প্রাথমিক নেটওয়ার্কের জন্য শুরুতে ১০ মেগাহার্স করে তরঙ্গ বরাদ্দ নিতে হবে।লিশে যেমন বলে লেখাপড়া তর *** দিয়া ভইরা দিমু, ৩জি তেমনি জনগণের *** ভইরা দিব নে।
২০০১ সালের মে মাসে জাপানে বিশ্বের প্রথমকমার্শিয়াল থ্রিজি নেটওয়ার্ক চালু হওয়ার পরবর্তী দুই তিন বছরের মধ্যেই বিশ্বের ধনী দেশগুলোর সরকার মোবাইল অপারেটরদের নেটওয়ার্ক ৩জিতে আপগ্রেড করার চাপ দেয়-কোথাও কোথাও বিনামূল্যে নেটওয়ার্ক সম্পন্ন করার সময় বেঁধে দেয়।কেননা যেই ব্রডব্যান্ডের জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করে অপটিক ক্যবলে স্থির লোকেশনে সংযোগ নিতে হতো তা মোবাইলে, বাতাসের ভেতর দিয়ে পাওয়ার দুয়ার পাওয়া ছিল এই শতকের অন্যতম আবিষ্কার যা জনগণ ও রাষ্ট্রকে অলটাইম এক সূত্রে গেথে সর্বচ্চ স্বচ্ছ প্রশাসন, বিনোদন, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, শিক্ষা স্বাস্থ সহ অসংখ্য আশির্বাদ ঘরে ঘরে পকেটে পকেটে পৌছে দিতে পারে এই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের রাস্তায়।এদিকে ২০০৬ থেকে ২০০৭ সালের দিকে এসে এসব ৩জি আপগ্রেড করে আরও বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন ৩.৫জি বা ইউনিভার্সাল মোবাইল টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম - UMTS, হাই স্পীড ডাউনলিংক প্যাকেট এ্যাক্সেস'HSDPA তে আপগ্রেড করেছে।বহু দেশ এরই মধ্যে ফোরজি-4G নেটওয়ার্ক স্থাপন করেফেলছে।এ বছর যুক্তরাষ্ট্রে ফাইভজি-5G পরীক্ষা করার পরিকল্পনা আছে।
শুধু যে ধনী দেশেগুলিতেই মোবাইল নেটওয়ার্কের এই আাপগ্রেডেশন হচ্ছে তাই নয়, থ্রীজি তে আপগ্রেডেশনের এই অনুমোদন আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলো সহ তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশ দেশের সরকার ২০০৮ সালের মধ্যে দিয়ে দিয়েছে।যেমন ৯ জুলাই ২০০৮ সালে বার্মায়, ৬ মে ২০০৮ সালে ভুটান, মে ২০০৭ নেপালে, জানুয়ারী ২০০৮ পাকিস্তান, ফেব্রুয়ারী ২০০৮ মালদ্বীপ, ৭ মার্চ ২০০৮ উগান্ডা, জুন ২০০৬ শ্রীলংকা, ২৮ এপ্রিল, ২০০৯ মঙ্গোলীয়া, অক্টবর, ২০০৯ ভারত উল্লেখযোগ্য।
দেখা যাক থ্রীজি বাংলাদেশের কতটুকু ও কখন থেকে অপরিহার্য ছিল ? ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ছারা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া দূরে থাক বরং ডিজিটাল বাংলাদেশের কাজ আরাম্ভ করার আগেই যার ব্যবস্থা করা ফরজ ছিল তা হলো ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট।মূলত গণ ব্রডব্যন্ড ছাড়া কেউ যদি ডিজিটাল সোনার বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখা তবে বুঝতে হবে সে মিথ্যা কথা বলছে।কেননা ডিজিটাল বাংলাদেশে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের পরে ব্রডব্যন্ড হবে জনগণের অন্যতম মৌলিক অধিকার।ব্রডব্যন্ড নেটওয়ার্কের জন্য পৃথিবীতে সাধারনত তিন ধরনের অবকাঠামো ব্যবহার হচ্ছে, ১. অপটিক ফাইবার ক্যাবল, ২. ওয়াইম্যাক্স, ৩, থ্রীজি-3G মোবাইল নেটওয়ার্ক।এর মধ্যে যদিও থ্রীজি-3G থার্ড জেনারেশন মোবাইল টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক হলেও এর মোবাইল ভিডিও কলের চেয়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিবহনের ক্ষমতা বাংলাদেশের জন্য আশির্বাদ।কেননা, এখানে সেই আদিকালের, সারাদেশে সর্বোচ্চ ১০% অঞ্চলে, কপার তাড়ের টেলিফোনি সিস্টেম সম্পর্কে ধারনা ও আস্থা আমাদের হাতের উল্টো পিঠের মত স্পষ্ট।এই রকম একটা সিসটেমকে সহসাই আমরা অপটিক ফাইবার ক্যাবল দিয়ে রিপ্লেইস করে ফেলবো এবং একদিন জেলা, উপজেলা হাওড়, বাওড় ও পাহাড়ে জালের মত অপটিক ক্যাবল নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে দেব, গণতান্ত্রীক কমিউনিকেশন দেব সেরকম স্বপ্ন দেখা ঘুমের মধ্যেও উচিত হবে না।এবং আমাদের বাস্তবতা হলো মোবাইল নেটওয়ার্ক ছাড়া অন্য কোন নেওয়ার্কে যেকোন লোকেশনে ব্রডব্যান্ড দেয়া আগামী প্রায় ১০০ বছরেও অবাস্তব।
২০০০ সালে জাপানে প্রথম চালু হওয়া তাড়বিহীন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিবহনে ওয়াইম্যাক্স-Wimax বাংলাদেশে ২০০৮ সালে আসলেও আমরা ওয়াইম্যাক্স-Wimax লাইসেন্স দেয়ার সময়ই কৃষকে সোনার ডিম দেয়া হাঁস কে একবারেই জবাই করে দিয়ে পৃথিবীর সর্বোচ্চ মূল্যে লাইসেন্স বিক্রি করে ওয়াইম্যাক্স অবকাঠামো গড়ে ওঠা অংকুরেই ধ্বংস করেছি যার ফলাফল স্বরুপ গত প্রায় ৫ বছরেও এই ওয়াইম্যাক্স শুধু ঢাকার মানুষের কাছেই পৌছুতে পারছে না।তাহলে এই ব্রডব্যেন্ড সুনামগঞ্জের শাল্লায় পৌছাতে পুরো একবিংশ শতাব্দী লেগে যাবে ! অবশ্য শাল্লার মত দরিদ্র এলাকায় এর না যাওয়াই ভালো, মোবাইলই তাদের জন্য যথেষ্ট।আমরা বরং এখন লাইসেন্স ফ্রি ওয়াইম্যাক্স ঘোষনা করলে এই প্রযুক্তিআমাদের কিছুটা কাজে লাগবে
তাহলে দেখা যায় আমাদের সবেধন নীলমনি, বাস্তবতা হলো মোবাইল নেটওয়ার্ক ছাড়া অন্য কোন নেওয়ার্কে যেকোন লোকেশনে ব্রডব্যান্ড দেয়া আগামী প্রায় ১০০ বছরেও অবাস্তব।যেমন এই মুহর্তে আমি জিপি এজ ব্যবহার করছি।তাহলে বুঝুন আমাদের ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটির অবস্থা। অন্যান্য দেশ যেখানে থ্রীজি, ওয়াইম্যাক্স, অপটিক ক্যাবল সবগুলো পথেই তাদের ন্যাশনাল ব্রডব্যান্ড বেকবোন গড়ে তুলেছে সেখানে আমাদের ইউজার এন্ডে ব্রডব্যান্ড দেয়ার এক মাত্র মাধ্যম ৩জি।
বাংলাদেশে ৩জির উপযুক্ত সময় ছিল ২০০৬ সালের মে মাসে বাংলাদেশ যখন প্রথমবারের মত সিমিউই - ৪ সাবমেরিন ক্যবলে ৮ জিবিপিএস সংযোগ গ্রহন করে।তখন সংঙ্গে সংঙ্গে আমরা থ্রিজি দিয়ে দিলে ১৯৯৩ সালে সাবমেরিন ক্যবলে সংযুক্ত না হয়ে দেশের যে ক্ষতি হয়েছিল তা সর্বোচ্চ তিন বছরে কভার হয়ে যেত।অথচ শুধু ব্রডব্যান্ড না থাকার কারনে সেদিন থেকে আমাদের এত অত্যাবশ্যকীয় ব্যান্ডউইথের দশভাগের এক ভাগ ব্যবহার হচ্ছে আর বাকিটুকু অব্যবহৃত থাকছে।যেমন এই মুহুর্তে দেশের ১৬৪ জিবিপিএস ব্যন্ডউইথের মাত্র ২২ জিবিপিএস ব্যবহার করছি, বাকিটুকু মন্ত্রনালয় ভিওআইপিতে ব্যবহার করছে, যার সবটাই দুর্নীতি দৈনিক ৫০কোটি টাকার।
গণ ব্রডব্যন্ড ছাড়া কেউ যদি ডিজিটাল সোনার বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখায় তবে বুঝতে হবে সে মিথ্যা কথা বলছে। সে শেখ হাসিনা বললেও মিথ্যা বলছে। যদি তাই হয় তবে তিনি গত দুই বছরেও কেন থ্রীজি দিলেন না, যে থ্রীজির বিষয়ে ২০০৮ সালেই কেয়ারটেকারসরকার সব কাজ শেষ করেগিয়েছিল ? কেন ? কোথায় তার সমস্যা ?
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১২ দুপুর ২:১৩