somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তত্বাবধায়ক সরকার যদি আর ২ বছর থাকত তাহলে ডিজিটাল বাংলাদেশ হতে ২০২১ না, ২০১০ এই হয়ে যেত

০৭ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ১১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিভাবে ? দেশের তথাকথিত শিক্ষিত ও সচেতন লোকজন তো কোন কালেই তথ্যপ্রযুক্তির খবর রাখে না, রাখলে গত প্রায় বিশ বছর ধরে গণতান্ত্রের নামে ইজারাতান্ত্রীক সরকারগুলো এই দেশের জনগণের মুক্তির অন্যতম ও সবচেয়ে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা টেলিকমিউনিকেশনকে বিশ্ব অন্যতম পশ্চাদপদ অবস্থায় রাখতে পারতো না।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বা তথ্যপ্রযুক্তির বাংলাদেশ গড়ার কাজটি দেশের জনগণকেই করতে হবে। সরকারের কাজ শুধু তথ্যপ্রযুক্তির অবকাঠামো গড়ে ওঠার নীতিমালাগুলো গ্রহন করা। গেল তত্ববধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসেই এই কাজগুলো যথা সম্ভব করার চেষ্টা করেছিল।

১. তত্ববধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসেই আগের জোট সরকারের আমলের ১ মেগাবিট ব্যন্ডউইথের সরকারী দাম ১ লক্ষ ২৭ হাজার থেকে নামিয়ে শুধু ২৭ হাজার টাকা করেছিল।

২. প্রায় ২০ বছর সময় নষ্ট করে ২০০৬ সালে বাংলাদেশ প্রথম বারের মত যে সাবমেরিন ক্যবলে সংযুক্ত হয়েছিল তত্বাবধায়ক সরকার আসার আগ পর্যন্ত সেই ক্যবলে বাংলাদেশের ব্যন্ডউইথের পরিমান ছিল ৭.৬ জিবিপিএস। তত্বাবধায়ক সরকার তার দুই বছরে এই পরিমান দুইবার আপগ্রেড করে ৪৪.৬ জিবিপিএস এ নিয়ে আসে এবং তৃতীয় আপগ্রেডেশনের সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করে যায়। যা হলে এখানে সামান্য খরচে আরও ৯৬ জিবিপিএস যোগ হয়ে প্রায় ১৫০ জিবিপিএস হতো। এই আপগ্রেডেশনের কাজ ২০০৯ সালের জুন মাসে শুরু হয়ে ২০০৯ এর ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল, আজ ২০১১ সালে হয়তো আরও যোগ হতো। অথচ আমাদের তথা কথিত গণতান্ত্রীক সরকার ক্ষমতায় এসেই এই আপগ্রেডেশনের কাজ স্থগিত করে দেয়।

৩. যে ওয়াইম্যক্স ব্রডব্যন্ড কমিউনিকেশন অনুমোদন অন্যান্য দেশের সরকার ২০০০ সাল থেকেই দেয়া শুরু করে, ভারত দেয় ২০০৪ সালে তত্বাবধায়ক সরকার আসার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ এ বিষয়ে কোন চিন্তা ভাবনাই করেনি। তত্ববধায়ক সরকার তার ক্ষমতাকালে ওয়াইম্যক্স নীতিমালা গ্রহন এবং লাইসেন্স রোল আউট করে যায়।

৪. থার্ডজেনারেশন মোবাইল নেটওয়ার্ক বা ৩জি যা পৃথিবীর অন্যান্য দেশ ২০০১ সাল থেকে রোল আউট শুরু করে গেল জোট সরকার এ বিষয়ে কোন কাজই করেনি। তত্বাবধায়ক সরকার এই ৩জি এর সমস্ত কাজ সম্পন্ন করে যায় যা বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার ৩ মাসের মধ্যে রোল আউট করার পর্যায়ে ছিল। শুধুমাত্র পলিটিকেল সরকার সিদ্ধান্তটি নিক এজন্য তারা রেখে যায়। আর বর্তমান ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ক্ষমতায় আসার প্রথম দিন থেকে বলে আসছে ৬ মাসের মধ্যে ৩জি লাইসেন্স ওপেন করা হবে। আজ আড়াই বছর কিন্তু ছয় মাস শেষ হয়না।

৫. অপটিক ক্যবল নেটওয়ার্কঃ পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো ৭০ এর দশকে শুরু করে উন্নয়নশীল দেশগুলোও যেখানে ৯০ এর দশকেই অপটি ফাইবার ন্যাশনাল ব্যাকবোন গড়ে তোলে সেখানে গত তত্বাবধায়ক সরকারের আগ পর্যন্ত দেশে এক ইঞ্চি ক্যবল স্থাপন করা হয়নি। তত্বাবধায়ক সরকার তার ক্ষমতার শেষের দিকে অপটিক এ্যাট হোম নামের একটি কোম্পানীকে লাইসেন্স দিয়ে কাজটি শুরু করে যায় যা গত আড়াই বছরে মাত্র ৪৬ কিলোমিটার ক্যাবল স্থাপন করে যদিও সারাদেশ ৫৬ হাজার বর্গ কিলোমিটার।

৬. কমিউনিটি রেডিওঃ তথ্য যোগাযোগের সবচেয়ে সহজলভ্য ও বিনা পয়সার মাধ্যম রেডিও। যেই কমিউনিটি রেডিও বাংলাদেশের দরিদ্র গ্রমীন জনপদের জন্য অন্যতম গণমাধ্যম হতে পারে। যেই কমিউনিটি রেডিও পৃথিবীতে প্রথম যাত্রা শুরু করে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরপর, ১৯৪৬ সালে গেল তত্বাবধায়ক সরকার আসার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোন সরকার চিন্তা ভাবনাও করেনি। ২০০৮ সালে তত্ববধায়ক সরকার সেই কমিউনিটি রেডিও নীতিমালা গ্রহন ও সারাদেশে প্রতিটি উপজেলায় অন্তত একটি কমিউনিটি রেডিও স্থাপনের জন্য দরখাস্ত আহবান করে যায়। বর্তমান সরকার সেই দরখাস্ত থেকে আড়াই বছরে মাত্র ১৪ টি লাইসেন্স প্রদান করলে আজও এই মাত্র ১৪ টির ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ সহ আনুসাংঙ্গীক কাজ শেষ করেনি এবং আজও একটিও অন এয়ার আসতে পারেনি।

৭. টেরেস্টারিয়াল টেলিকাস্টঃ বাংলাদেশে এই মুহুর্তে ২টি ফুল মাউন্টেড ভিএইচএফ আছে যার একটি বিটিভি ব্যবহার করছে অন্যটি জানেন ২০০০ সালে একুশে টিভি ব্যবহার করেছিল যা জোট সরকার এসে বন্ধ করে দেয়। আজও বাংলাদেশের ৯০% জনগণের একমাত্র গণমাধ্যম টেলিভিশন। তবে ঢাকা, জেলা শহর ও কিছু উপজেলা সদরের আনুমানিক ৪ থেকে ৫ কোটি জনগণ সেটেলাইট টিভি দেখতে পায় বাকি ১০ কোটি লোক বাধ্য হয়ে একমাত্র টেরেস্টারিয়ল/বিটিভি দেখে। টেরেস্টারিয়াল টেলিকাস্টে যেখানে এক কলে দেশের ১৫ কোটি জনগণের কাছে পৌছানো যায় বিষয়টি অনুধাবন করে তত্ববধায়ক সরকার টেরেস্টারিয়াল টেলিকাস্টে আরও চ্যানেল দেয়ার নীতিগত কাজ সম্পন্ন করে যায় যা বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার প্রথম দশ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেয় এবং টেরেস্টারিয়াল টেলিকাস্ট শুধুমাত্র বিটিভিরই থাকবে এমন আইন করে।

আরও অনেক কিছু বলার ছিল, ভিওআইপি ইকমার্স ইত্যাদী সহ অনেক ইস্যূ নিয়ে। আজ আর বললাম না। তবে বর্তমান সরকার গত আড়াই বছরে যা করেছে তা হলো দলীয় কন্ট্রাটরদের দিয়ে দুই আড়াই লাক্ষ কম্পিউটার কিনেছে, শতশত কোটি টাকার কম্পিউটার ডিভাইস সার্ভার ইত্যাদী কিনেছে। ডিস্ট্রিক ওয়েব পোর্টালের বানাতে শত কোটি টাকা খরচ করছে।

তাই বলছি আর যাই হউক তত্বাবধায়ক সরকার যদি আর ২ বছর থাকত তাহলে আর যাই হোক ডিজিটাল বাংলাদেশ হতে ২০২১ না, ২০১০ এই হয়ে যেত। প্রকৃত পক্ষে এই কাজগুলো হতে ৫ বছরের বেশি সময় লাগার কথা না কারন বাংলাদেশে ডিজিটালাইজেশনে পৃথিবীর সবচেয়ে পেছনের দেশ তাই একে নতুন করে কিছু আবিষ্কার করতে হবে না, শুধু অন্য দেশ দশ বছর আগে যা করেছে তা আজ করতে হবে। তবে এও ঠিক বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ইজারাদার সরকারগুলো ২০৫০ সালেও দেশের মানুষকে ডিজিটালাইজেশনের স্বাধীনতা দেবে না।

প্রচারেঃ (BAB) ব্যন্ডউইথ আন্দোলন বাংলাদেশ

এই দিকে এই ইন্টারনেট নিয়ে সরকার বছরের পর বছর কি করছে দেখেন এই পোষ্টে
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ১১:২৬
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×