গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সোয়া ৩টায় আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের ট্রাস্ট ক্যাবের ট্যাক্সিতে কারওয়ান বাজার থেকে উত্তরা এসে নামলেন ওবায়দুল ইসলাম। মিটারের দিকে তাকিয়ে দেখেন- ভাড়া উঠেছে ৬১২ টাকা। ভাড়া দিতে দিতে একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলতে লাগলেন, ‘এটা কি মগের মুল্লুক? ১৫-১৬ কিলোমিটার পথ আসতেই এত টাকা দিতে হলো? বিপদে না পড়লে আর এ ক্যাবে উঠব না।’
গতকাল নতুন ট্যাক্সিক্যাবের অধিকাংশ যাত্রীর মন্তব্য ছিল প্রায় একই রকম। বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে গতকাল নতুন ক্যাব নামলেও তা খুঁজে পাওয়া ছিল দুষ্কর। দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত উত্তরা, বারিধারা, গুলশান, বনানীসহ বেশ কিছু এলাকা ঘুরে মাত্র চার-পাঁচটি ট্যাক্সি চোখে পড়েছে। রাজধানীজুড়েই নতুন ট্যাক্সিক্যাব নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে ছিল কৌতূহল। একটি ক্যাব দাঁড়ালেই দেখার জন্য হলেও ঘিরে ধরছিল লোকজন।
উত্তরা থেকে মতিঝিলে ২২ কিলোমিটার দূরত্বে লোকাল বাসের ভাড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা। বিআরটিসির এসি বাসে যাওয়া যায় ৫৫ টাকায়। সিএনজি অটোরিকশার এ পথের ভাড়া ৩০০ টাকার মধ্যে। অথচ নতুন ট্যাক্সিক্যাবে যেতে হলে লাগবে ৭৬৫ টাকা। একবার এ ট্যাক্সিতে আসা-যাওয়া করলে দিতে হবে এক হাজার ৫৩০ টাকা, যা মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে কোনো মতেই সম্ভব নয়। বিমানবন্দর থেকে মালিবাগ যাওয়ার উদ্দেশ্যে তমা ট্যাক্সিক্যাবের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন নাদিম হোসেন। ভাড়ার হার শুনে ট্যাক্সিতে না উঠে তিনি চলে যান অটোরিকশার খোঁজে। নাদিম বলেন, ‘যা শুনলাম, তাতে আর এ ট্যাক্সিক্যাবে ওঠার ইচ্ছা নেই। সিএনজি অটোরিকশায় তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়ায় যেতে পারব। এ ট্যাক্সি আমাদের মতো মধ্যবিত্তের জন্য নয়।’
বনানীতে ঢাকা মেট্রো-প-১৪-৫৭০২ নম্বরের ট্যাক্সিতে যাত্রাবাড়ীর উদ্দেশে যাত্রী হিসেবে উঠে বসেছিলেন দুজন। চালক সুমন হাওলাদার প্রথম ট্রিপ পেয়েছেন বলে বেশ খুশিই হয়েছিলেন। ভাড়ার হার বলতেই দুই যাত্রীই যেন দৌড়ে নেমে যান। প্রথম যাত্রী হওয়ায় চালক সুমন বেশ অনুরোধ করছিলেন নেমে না যেতে। কিন্তু কোনোভাবেই এ দুই যাত্রী ট্যাক্সিতে যেতে নারাজ। যাত্রীদের একজন আশফাকুর রহমান বললেন, ‘চালকের সঙ্গে কথা বলে মনে হলো ৭০০-৮০০ টাকার নিচে ভাড়া উঠবে না। আমার কাছে আছেই হাজারখানেক টাকা। এই টাকা দিয়ে যেতে হবে, আবার ফিরে আসতে হবে। ট্যাক্সিতে গেলে মহাবিপদে পড়ে যাব।’ তমা কন্সট্রাকশনের ঢাকা মেট্রো-প-১৪-৫৬৯৪ ক্যাবের চালক ইউসুফ রাজ বলেন, ‘প্রথম প্রথম ভাড়া নিয়ে একটু সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। অনেক যাত্রীই যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করছে। ভাড়া শুনেই চলে যাচ্ছে। আর আমাদের কথা শুনিয়ে যাচ্ছে। আমাদের কী করার আছে? আমরা মাসে ১০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি নিয়েছি। আয় যা হয় সব কম্পানির। প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা কাজ করতে হবে।’
তবে কেউ কেউ স্বস্তির কথাও জানিয়েছেন। গুলশান-২ নম্বর থেকে পল্টনের উদ্দেশে নতুন ট্যাক্সিতে স্ত্রীকে নিয়ে উঠেছিলেন ব্যবসায়ী আশরাফ হোসেন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভাড়াটা একটু বেশি। কিন্তু বেশ কিছুদিন যাবৎ কোনো ট্যাক্সিই ছিল না। যে গরম পড়েছে, সিএনজি অটোরিকশায় যাওয়া-আসা করতে করতে হাঁফিয়ে উঠেছিলাম। কোনো কিছুই না থাকার চেয়ে এটা পেয়ে ভালো লাগছে। আর নতুন গাড়িগুলো মিটারে চলছে। ভাড়া নিয়ে দরকষাকষি করতে হচ্ছে না, এটাও ভালো দিক।’
বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, টয়োটা কম্পানির প্রিমিও, এলিয়ন, এক্সিড ও প্রভোক্স ব্র্যান্ডের নতুন ট্যাক্সিগুলো জাপান থেকে আমদানি করা হয়েছে। দেড় হাজার সিসির হলুদ রঙের গাড়িগুলো ২০১২ থেকে ২০১৪ সালে তৈরি হয়েছে। বিআরটিএর ব্যয়-বিশ্লেষণ থেকে জানা গেছে, প্রতিটি ট্যাক্সির দাম পড়েছে ১৮ লাখ টাকা।
সংগ্রহ ঃ কালের কণ্ঠ