somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‎রক্তের‬ ‪হোলিতে‬ ‪সিক্ত‬ ‪কলোসিয়াম‬ (তথ্য মুলক পোস্ট)

২১ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রত্নতত্ত্বের শহর রোম, শান্তির শহর রোম। কলোসিয়ামের কারণে রোম নগরীকে রক্তের আর হত্যার শহর বলেও ডাকা হতো এক সময়। লাখো রাজবন্দি, যুদ্ধবন্দি, ক্রীতদাস আর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অসহায়দের রক্তে সিক্ত কলোসিয়ামের মাটি, প্রতিটি ধূলিকণা।

অদ্ভূত কাঠামোর ইমারতটির প্রতিটি ইট-কাঠ-পাথরে মিশে আছে নিহতদের অন্তিম নিঃশ্বাস। বিশ্ব সপ্তমাশ্চর্যের একটি এটি।

৭০-৭২ খ্রিস্টাব্দে এটির নির্মাণ কাজে হাত দেন ফেরিয়াস বংশের সম্রাট ভেসপাজিয়ান। মূলত জনসভা ও নাট্য উৎসবের জন্য ইমারতটি তৈরি করিয়েছিলেন তিনি। নাম রেখেছিলেন এমফি-থিয়েটারিয়াম ফেভিয়াম।
সাত বছরে তিনতলা পর্যন্ত নির্মাণের সময় তার আকস্মিক মৃত্যু হয়। এরপর ক্ষমতায় বসেন তারই পুত্র টাইটাস। পৃথিবীর নিষ্ঠুরতম সম্রাটদের একজন ছিলেন তিনি।

৮০ খ্রিস্টাব্দে এমফিথিয়েটারের বাকি কাজ সম্পন্ন হয় তারই হাত ধরে। পাশাপাশি ভবনটি নতুন করে নকশাও করেন তিনি। পরিবর্তিত নকশায় হাইপোজিয়াম নামে মাটির নিচে নির্মাণ করা হয় বেশ কিছু ট্যানেল। এখানে যুদ্ধের মাধ্যমে বলি দেওয়ার জন্য রাখা হতো হাজারো পশু, দাস ও দন্ডপ্রাপ্তদের। তবে বাবার দেওয়া নাম পাল্টে কলোসিয়াম রাখেন টাইটাস।

রক্ত-পিপাসু রোম সম্রাটদের বিকৃত আনন্দের খোরাক যোগাতে গিয়ে কত মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এই বধ্যভূমিতে, ইতিহাস তার সঠিক হিসাব রাখেনি। শুধু মানুষই নয়, কলোসিয়ামের মাটিতে অজস্র্র বন্য জীবজন্তুর রক্তও মিশে আছে।

সম্রাটদের নির্দেশে রাজকোষের অর্থে সেই সময় এক ‘বিশেষ খেলার জন্য উত্তর আফ্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমদানি করা হতো হাজারে হাজারে হাতি, গন্ডার এবং সিংহ। ভল্লুকের সঙ্গে হাতি, হাতির সঙ্গে বুনো মহিষ বা গন্ডারের সঙ্গে হাতির লড়াই দেখত হাজারো বিশ্ব সম্ভ্রান্তরা।
পশুদের মৃত্যুবেদনার হুংকারের সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে ফেটে পড়ত পুরো গ্যালারি। কলোসিয়ামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৯ হাজারেরও বেশি পশুর প্রাণ গিয়েছিল।

তবে দীর্ঘদিন পশুর লড়াই আর এগুলোর করুণ মৃত্যু দেখতে দেখতে একঘেয়েমি বোধ করেন সম্রাট টাইটাস। পশুর স্থলে মানুষে-মানুষে লড়াইয়ের ধারণা এলো তার মনে। আর পশুর খেলা বন্ধ করে, শুরু করা হলো মানুষের রক্তের হলি খেলা। শুরু হলো মানুষের মৃত্যুর করুণ ও বীভৎস কাহিনী।

প্রথমে যুদ্ধবন্দিদের মরণপণ লড়াই শুরু। যতক্ষণ না দুইজনের একজনের মৃত্যু হতো, ততক্ষণ পর্যন্ত চলত দ্বৈত-লড়াই। কিন্তু ‘মাত্র’ একশোটি খেলা দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল টাইটাসের। এরপর হঠাৎ করেই একদিন বদ্ধ উন্মাদ হয়ে যান তিনি। বন্ধ হয়ে যায় এই খেলা।
লম্বা বিরতির পর ৬৪ খ্রিস্টাব্দে ব্রুটাস ভ্রাতৃদ্বয় ফের চালু করেন ‘ঐতিহ্যবাহী’ ওই খেলা। তারা ‘গ্ল্যাডিয়াস’ (খাটো তরবারির) লড়াই চালু করেন। লড়াইকারীদের বলা হতো গ্ল্যাডিয়েটর। লড়াই চলাকালে কোনো এক গ্ল্যাডিয়েটর আহত হয়ে পড়ে গেলে উল্লাসে ফেটে পড়ত পুরো কলোসিয়াম।

মৃত্যু ভয়ে ভীত, ক্ষত-বিক্ষত গ্ল্যাডিয়েটর রেওয়াজ অনুযায়ী বা হাত তুলে সম্রাটের করুণা প্রার্থনা করত, প্রাণভিক্ষা চাইত। মঞ্জুর করা না করা সম্পূর্ণ তার মন-মেজাজের ওপর নির্ভর করত। সম্রাটের বাম হাতের বুড়ো আঙুল আকাশ নির্দেশ করলে অপর গ্ল্যাডিয়েটর বুঝে নিত- তাকে ছেড়ে দাও। কিন্তু ভূমি নির্দেশ করার অর্থ, শেষ করে দাও।

রোমের দুর্ধর্ষ শাসক জুলিয়াস সিজার এখানে বসেই ৩০০ গ্ল্যাডিয়েটরের লড়াই উপভোগ করেন। আর সম্রাট ট্রাজান উপভোগ করেন পাঁচ হাজার দ্বৈত-যুদ্ধ। খিস্টানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান হতো এ কলোসিয়ামে। সেখানে ভ্যাটিকানের সর্বোচ্চ খ্রিস্টান ধর্মগুরুরা উপস্থিত থাকেন। অংশ নিতেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যত রক্ত ঝরেছে, তার চেয়ে অনেক বেশি রক্ত ঝরেছে রোমের কলোসিয়ামের এক চিলতে মাটিতে।

তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া, রাইজিং বিডি .কম,পাঠশালা ফেসবুক ফেনপেজ।
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×