somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নূহ (আঃ) সময়ের মহা প্লাবণটি সারা দুনিয়াতেই সংগঠিত হয়েছে নাকি একটি নির্দিষ্ট স্থানে সংগঠিত হয়েছে ????

৩০ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পৃথিবীর প্রাচীনতম একেশ্বরবাদী ধর্ম ইহুদী ধর্ম।ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থ হলো মুসার শরীয়ত বা তোরাহ(তৌরাত/পেন্টাটেক/ওল্ডটেস্টামেন্ট আদিপুস্তক/পুরাতন নিয়ম)।মোট পাঁচটি গ্রন্থের সমাহার এই তোরাহ।এর প্রথমটি হলো জেনেসিস বা সৃস্টিতত্ব।এই জেনেসিসেই নোয়াহ‘র [নূহ (আ) এর হিব্রু নাম] সময়ে সংঘটিত মহা প্লাবণের বর্ণনা আছে।জেনেসিসের বর্ণনা অনুযায়ী নোয়াহ হলেন এডাম [আদম (আ)] এর দ্বাদশ অধ:স্তন পুরুষ।তাঁর সময়ে পৃথিবী পাপ ও অবাধ্যতায় ছেয়ে গেলে পৃথিবীব্যাপি এই বন্যার ঘটনা ঘটে।খ্রীস্টান সম্প্রদায়ও ওল্ডটেস্টামেন্ট বিশ্বাস করে(সাথে ওদের অতিরিক্ত আছে নিউ টেস্টামেন্ট)।জুডিও, খ্রীস্টান লোকের কাছে সমগ্র পৃথিবী ব্যাপি এই মহাপ্লাবণ একটি সন্দেহাতীত সত্য ঘটনা।

সেমেটিক ধর্মগুলির মধ্যে নবীনতম ধর্ম ইসলাম।ইসলামের পবিত্রগ্রন্থ কোরআনেও নূহ(আ)এর আমলের সেই প্লাবণের বর্ননা আছে।বাইবেলে নুহের জমানার প্লাবণ পৃথিবীব্যাপি বলা হলেও কোরআনে তেমন কোন সুনির্দিস্ট কথা বলা নাই।শুধু বলা আছে গজবটি নাজিল হয়েছিল নুহ(আ)এর কওমের ওপর তারই (নূহ আ) বদদোয়া স্বরুপ।
কোরআনের ৭১নং সুরার শিরোনাম নূহ।এইসুরার বিষয়বস্তু- নুহ(আ) কর্তৃক কওমের অবাধ্যতা ও পাপাচারের বর্ণনা করে মহান আল্লাহর দরবারে গজব নাজিলের আবেদন(আয়াত:১-২৮)।এই সুরায় প্লাবণের বর্ণনা নেই।
কোরআনের একটা বৈচিত্র হলো একটি বিষয় নানা স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা। মহাপ্লাবনও তার ব্যতিক্রম নয়।মহা প্লাবনের বর্ণনা আমরা সর্বপ্রথম পাই কোরআনের ৭নং সুরা আরাফের ৫৯-৬৪ নং আয়াতে।এছাড়া বিস্তারিত বর্ননা আছে ১০নং সুরা ইউনুস(আয়াত:৭১-৭৪),১১নং সুরা হুদ(আয়াত: ৩৬-৪৯), ২৩নং সুরা মুমিনুন(আয়াত ২৩-৪২), ২৫নং-সুরা ফুরকান(আয়াত :৩৭),২৬নং সুরা শুআরা (আয়াত:১০৫-১২২),২৯ নং সুরা আনকাবুত(আয়াত: ১৪-১৫),৫৪ নং সুরা কমর(আয়াত:৯-১৬),৬৯ নং সুরা হাক্কা (আয়াত: ১১-১২)।


ধারাবাহিকভাবে বর্ণিত এসকল আয়াতগুলি থেকে প্রতীয়মান হয় যে,কোন জাতি যখন স্রস্টার অবাধ্যতায় লিপ্ত হয় তখন তিনি তাদের শাস্তি স্বরুপ গজব নাজিল করেন।যেহেতু মুহাম্মদ(স) পূর্ববর্তী সমস্ত নবী/রাসুলগনের দায়িত্ব ছিল কেবল মাত্র তাঁদের নিজের কওমের মানুষদের আল্লাহর রাস্তায় ডাকা,তাই স্বভাবতই আলোচ্য মহাপ্লাবনও কেবল নুহ(আ) এর কওমের ওপরই নাজিল হয়েছিল।পৃথিবীতে তখন আরও জাতি/কওম থাকাই স্বাভাবিক।আর তাই ধরে নেয়া যায় প্লাবনের ঘটনাটি ছিল স্থানিক বা আঞ্চলিক।সমগ্র পৃথিবী ব্যাপি নয়।


আধুনিক নৃ-বিজ্ঞানও কোরআণের এই ধারনাকে সমর্থন করে।যাযাবর মানুষ প্রথম যখন কৃষিবৃত্তির উদ্ভাবন করে, তখন তারা সমতলে বসতি স্থাপন করে।কৃষিভিত্তিক প্রাচীনতম মানুষের সন্ধান পাওয়া যায় মেসোপটেমিয়ার টাইগ্রীস-ইউফ্রেটিস নদী অববাহিকার দোয়াব অঞ্চলে ও মিশরের নীল নদের অববাহিকায়।শীতকালে এ অঞ্চলে মুষলধারে বৃস্টিপাত হয়,বসন্তে পাহাড়ে জমে থাকা বরফ গলতে শুরু করে।প্রাচীনকালে এই সময়টাতে টাইগ্রীস-ইউফ্রেটিস নদীতে বন্যার তান্ডব চলত।টাইগ্রীস-ইউফ্রেটিস নদীর সর্বগ্রাসী বন্যার বিষাদময় ঘটনাবলী যুগযুগ ধরে মানুষের মুখে মুখে বর্ণিত হয়ে এসেছে।বন্যাকে ঘিরে সৃস্টি হয়েছে কল্প কাহিনী,উপকথা,ও পৌরানিক উপাখ্যান।ব্যবিলন অঞ্চলের পুরাণ “গিলগামেশের কাব্যে”ও আমরা তেমন বন্যার বর্ণনা পাই।মিশরীয় পুরাণে এমন কোন বন্যার বর্ণনা পাওয়া যায় না।তাই আমরা বলতে পারি টাইগ্রীস-ইউফ্রেটিস বেস্টিত দোয়াব অঞ্চলই হয়তবা ছিল নুহ(আ) এর কওমের বাসস্থান যেখানে সর্বগ্রাসী বন্যা সব ধূয়ে মুছে একাকার করে দিয়েছিল।

লিখাটি লিখতে সাহায্য নিয়েছি কাজি মাহমুদ রুমনের
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:৪১
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×