somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গুগল কথন ৬ - প্রযুক্তির স্রোতে অবগাহন (সমাপ্ত)

১০ ই নভেম্বর, ২০০৭ রাত ৮:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গুগলপ্লেক্সের প্রধান ক্যাফেতে প্রতিদিন দুপুরে বা বিকেলে যেতাম ... ওখানকার ৫ রকমের বিভিন্নদেশী খাবারের স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে। এই ক্যাফেটার নাম "চার্লি'স ক্যাফে" ... জানতে চেয়েছিলাম একদিন, চার্লিটা কে? জানলাম, চার্লি ছিলো গুগলের প্রথম বাবুর্চি। যখন গুগলের মোট কর্মী সংখ্যা দশ বিশ জন, তখন যোগ দেয়া চার্লি বেতনের বদলে গুগলের কিছু শেয়ার পেয়েছিলো। যখন স্টক মার্কেটে গুগল শেয়ার ছাড়লো বছর কয়েক আগে, ততদিনে সেই সব শেয়ারের দাম হয়েছে কয়েক মিলিয়ন ডলার। সেই মিলিয়নিয়ার চার্লি আজ গুগল থেকে অবসর নিয়ে নিজের রেস্তোঁরা খুলতে পেরেছে, কিন্তু তার নাম রয়ে গেছে।

গুগলে কাজের পালা শেষ হয় আগস্ট মাসের মাঝামাঝি। তিনটা চমৎকার মাস সেখানে কাটাবার পর বুঝতে চেষ্টা করলাম, কেনো গুগল এতো প্রচন্ড সফল হয়েছে দুনিয়ার সেরা সব প্রোগ্রামারদের আকর্ষণ করতে। শুধু তিনবেলা মজাদার খাবার নিশ্চয় এর কারণ না ... অথবা গুগলের মহামূল্যবান শেয়ার/স্টকও প্রধান কারণ হতে পারে না। সিলিকন ভ্যালির অনেক কোম্পানিরই স্টক/শেয়ারের দাম তর তর করে বাড়ে। তাহলে ব্যাপারটা কী?

ভেবে চিন্তে যেটা মনে হলো, গুগলের প্রধান সাফল্যের পেছনে রয়েছে মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, আর কর্মীদের কাজ করার অশেষ স্বাধীনতা দেয়া। এখানে সবাই সপ্তাহে একটা পুরো দিন পায় নিজের ইচ্ছা মতো কোনো কিছু নিয়ে কাজ করার। সেটা গুগলের কাজে আসুক বা না আসুক, কোনো সমস্যা নেই। এমনকি অন্য কাজের ডেডলাইন থাকলেও সপ্তাহে ঐ এক দিন সবাই পাবেই। আরো দেখেছি, পারস্পরিক সম্মান দেয়া। দেশে থাকতে দেখতাম, কোম্পানির মালিক তো বটেই, অফিসের বড়কর্তা তাদের অধীনস্ত সবাইকে "তুমি" বলে সম্বোধন করছে, আর অন্য সবাই বড়কর্তাদের হুজুর-সালাম দিয়ে চলেছে। কিন্তু গুগলে যেদিন ক্যাফের সাধারণ কর্মীদের খাবার লাইনে আমার ঠিক সামনে গুগলের প্রতিষ্ঠাতা সের্গেই ব্রিনকে অন্য সবার মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম, তখন বুঝলাম এখানে পদমর্যাদার জোর খাটানো নেই। অফিসে গ্রুপের মিটিং থেকে শুরু করে সর্বত্র এটা অনুভব করেছি ... তিন মাসের জন্য আসা শিক্ষানবিশ ইন্টার্ন বলে আমার মতামতকে কেউ অবজ্ঞা করেনি, বরং যুক্তিসঙ্গত মতামত, অভিমত - এসব সবাই যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে নিয়েছে।


কর্মীদের অজস্র সুবিধা দেয়া, তিনবেলা রাজভোগ খাওয়ানো, কনফারেন্স বাইকে আড্ডা - এসবের মাধ্যমে মানুষ অফিসে বসে থাকছে সারাদিন, তা সত্যি, কিন্তু আসল কাজের উদ্দীপনা আসছে কাজের পরিবেশ, আর নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে দেয়ার সুযোগ পাওয়ার মধ্য দিয়ে। আর সেই সাথে মজা করার অসংখ্য সুযোগ তো আছেই ... দুই দিন পর পরই অফিসের সবাই হই চই করে ঘুরে বেড়াতো বিভিন্ন স্থানে। আমার এই তিন মাসের মধ্যেই ৪টা অফিস পিকনিক হয়েছে ... আর অন্য সময় একেবারে স্কি-করার ট্রিপ থেকে শুরু করে আরো অনেক চমৎকার অফ-সাইট ট্রিপ হয়ে থাকে। প্রতি সপ্তাহের শুক্রবারের কোম্পানি মিটিং এর কথা আগেই বলেছি ... সেটাও এক বিশাল পার্টি। আর গুগলে কাজ করে নানা দেশের নানা ধর্মের লোকজন ... সবার জন্যেই সব রকম ব্যবস্থা রয়েছে। চীনা আর কোরীয় খাবারের উপরে আলাদা আলাদা একটা করে ক্যাফে তো আছেই, আর সেই সাথে বিভিন্ন উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন হয় মূল ক্যাফেতেও। আমি থাকার সময় ভারতের ৬০তম জাতীয় দিবস উপলক্ষে চার্লি'স ক্যাফেতে বিশাল খাবার দাবারের আয়োজন হলো। আবার শুক্রবারে মুসলমান কর্মীদের জন্য বিশেষ হালাল খাবারের ব্যবস্থা দেখেছি। শুনেছি, রমজান মাসে ক্যাফে গুলোতে ইফতারের ব্যবস্থাও করা হয় মুসলমানদের জন্য।

গুগলের কর্মী সংখ্যা আজ ছাড়িয়ে গেছে ১০ হাজারের উপরে। তবে একটু মন খারাপ হলো এটা ভেবে, শিশির, সবুর, আর অল্প দুই-একজন ছাড়া এখানে বাংলাদেশী কর্মী নেই বললেই চলে। অথচ বাংলাদেশে প্রতিভার অভাব নেই। যে কয়দিন কাজ করেছি, মনে হয়েছে, এখানে কাজ করার মতো যোগ্যতা বাংলাদেশের অনেক প্রতিভাবান প্রোগ্রামারের রয়েছে। আমি আশাবাদী ... ভবিষ্যতে, বছর কয়েক পরেই গুগলে বাংলাদেশের আরো অনেক প্রাণবন্ত মুখের আবির্ভাব ঘটবে। ভারতের বাঙ্গালোর, দিল্লী, আর হায়দরাবাদের মতো বাংলাদেশেও গুগলের গবেষণাকেন্দ্র স্থাপিত হবে।

---

অনেক মজার, অনেক স্মৃতির শেষে গুগলে কাজের পালা শেষ হলো আমার আগস্টের ১৭ তারিখে। শেষের দুই তিন দিন আমাদের বিদায়ী অনুষ্ঠানে কেটে গেলো, আমার হোস্ট রিচার্ড আর ব্রায়ানের সাথে পুরো অফিসের সবাই মিলে ঘুরতে যাওয়া হলো বিভিন্ন স্থানে। একেবারে শেষ দিনে গুগলপ্লেক্সকে বিদায় জানাতে বেশ খারাপ লাগছিলো। তবু জীবনের গান চলতেই থাকে, ঘুরতে থাকে প্রযুক্তির স্রোতে গুগলের কর্মীদের অবগাহন, এগিয়ে চলে পৃথিবী।

(ছবিতে, শেষ দিনের পিকনিকে আমার সহকর্মী রিচার্ড ও ব্রায়ানের সাথে আমি, কোনো এক সকালে আমার অগোছালো ডেস্ক, আর গুগলপ্লেক্সের চত্ত্বর]

(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০০৭ রাত ৮:৪১
৬০টি মন্তব্য ২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×