somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিন্দু থেকে গড়া সিন্ধু - আমার উইকি অভিজ্ঞতা - ১

১৬ ই জুন, ২০০৮ রাত ৩:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
ট্রোলপ্রদত্ত খেতাব


উইকিপিডিয়ার বিভিন্ন ট্রোলদের (অর্থাৎ বিশৃংখলা সৃষ্টিকারীদের) কাছ থেকে পাওয়া খেতাব গুলো টুকে রাখিনি। তবে বাঙালী বলে পাকিস্তানীদের গালি, আবার বাংলাদেশের নিবন্ধে প্রোপাগান্ডা অপসারণ করাতে ভারতীয়দের গালি - সবই খেয়েছি মনের আনন্দে।

উইকিপিডিয়াতে লেখালেখি চালানোতে বেশ মানসিক শক্তি লাগে। প্রতিনিয়ত বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে এসব ট্রোল ইউজারেরা এসে তাদের বাঁদরামী চালিয়ে যাবে, আর তাদের প্রাপ্য গালাগাল তাদের দিতে পারবেন না, শিষ্টাচার রক্ষা করে চলতে হবে। ট্রোলদের ব্যান হওয়ার নিয়ে চিন্তা নাই, প্রাণখুলে গালি দিয়ে যাবে। সেসব গালি সহ্য করে যারা টিকে থাকে, তাদের চামড়া মোটা হয়েই চলে।

উইকিপিডিয়ার নিয়মকানুন না জেনে হিজিবিজিভাবে সম্পাদনা করতে গিয়ে অনেকেই বাধাপ্রাপ্ত হলেই ক্ষেপে যান। সামহয়ারইনব্লগেও বেশ কয়েকজন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাগ ঝেড়েছেন, একজন তো মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে তাঁর "ধারণা" বিষয়ক অসংলগ্ন কিছু লেখাকে কেনো সাজিয়ে গুছিয়ে পেশ করতে বলা হলো, সেই রাগেই গোটা কয়েক পোস্ট, আর আমাকেও বেশ কিছু উপাধি দান করে বসলেন।

তবে সব কিছু ছাড়িয়েছিলো এক রোহিঙ্গা ট্রোল। বর্মীদের অত্যাচারে রোহিঙ্গারা অনেক কষ্টে আছে। তাদের ইতিহাস নিয়ে প্রায়ই বর্মী ট্রোলেরা হাবিজাবি ঢোকাতে চেষ্টা করে। আমি বেশ কিছু সময়ে এসব বর্মী ট্রোলদের প্রোপাগান্ডা সরিয়েছি, কিন্তু রোহিঙ্গা ট্রোলের রাগ সেটার জন্য না ... রাগ হলো "মাঘ" মাসের উপরে নিবন্ধটি কেনো মাঘ মাসের উপরে ... কেনো এটা মগদের উপরে না। উদ্ভট মনে হলেও সৌদী আরব নিবাসী রোহিঙ্গা ট্রোল কেনো মাঘ নিবন্ধটিতে মাঘ মাসের কথা আছে এই নিয়ে গালাগালির পর্যায়ে চলে গিয়েছিলো।

হিন্দুত্ববাদীদের কাছে মুসলিম উইকিপিডিয়ান, আর ইসলামী মৌলবাদী টাইপদের কাছে ভারতপন্থী - এই সব উপাধির কথা নাহয় বাদই দিলাম।

উইকিপিডিয়া, নাকি পত্রিকা?


পুরানো ঢাকার ছবি তুলতে গিয়েছিলাম বেলায়েত আর রাজিবুলের সাথে। খান মহম্মদ মির্ধার মসজিদের কাছে গিয়ে দেখি, ওটা তালা মারা। খালি জুম্মার নামাজের সময় বা অন্য বিশেষ ক্ষণেই নাকি ওটা খোলা হয়। কিন্তু ছবি তুলতে হলে ভেতরে যাওয়া দরকার। মসজিদের কেয়ারটেকার গোছের কাউকে পেয়ে বলা হলো উইকিপিডিয়ার জন্য ছবি তুলবো.. বিশ্বকোষ বলেও বিশেষ কাজ হলো না, বরং "উইকিপিডিয়া কি খায় না পিন্দে" টাইপের চাহনী পেলাম। অবশেষে "পত্রিকাতে দেয়া হবে" বলাতে কাজ হলো, ভিতরে গিয়ে বেশ অনেক ছবি তুলতে পারলাম।

লালবাগ দুর্গের ভিতরে গিয়ে হাম্মামখানার ভিতরের ছবি তুলার সময় অবশ্য অন্য ব্যাপার, যে মহিলা গাইড ওখানে ছিলেন, রীতিমত তেড়ে এলেন, ভিতরের কোনো ছবি তোলা যাবে না বলে ঝাড়ি দিলেন ব্যাপক। আমি একটু বেকুব চেহারার বিদেশীর ভান করলাম ... তাতে কাজ হলো, বাংলাদেশীরা ভবনের ছবি তুললে আপত্তি, কিন্তু বিদেশীদের ক্ষেত্রে সাত খুন মাপ :(


ছবি চান? কত টাকা দেবেন?

উইকিপিডিয়া তথা ইন্টারনেটে বাংলাদেশের ছবি বেশ কম। এজন্য ছবি চেয়ে আহবান জানিয়েছিলাম। প্রচুর সাড়া পেলাম, অনেকেই মুক্ত লাইসেন্সে দান করলেন তাদের তোলা ছবি। কিন্তু সবাইকে ছাড়িয়ে গেলো এক "ফটোগ্রাফার"। ইমেইল করে জানালেন, এশিয়াটিক সোসাইটির বাংলাপিডিয়া থেকে শুরু করে অনেক নামকরা জায়গায় তিনি ফটো সাপ্লাই করেছেন। এখন শুনতে পেয়েছেন উইকিপিডিয়া নামের কীযেনো একটাতেও এরকম একটা চান্স আছে। তাই দর কষাকষি করতে ইমেইল করেছেন, ছবি প্রতি কত দেয়া হবে জানতে চান!!

কী আর বলবো, ছবি চেয়ে আহবানে পরিষ্কার করেই বলা ছিলো উইকিপিডিয়া কী এবং সেখানে ছবি মুক্তভাবে দেয়ার মাজেজা কী। এর পরেও ছবি বিক্রেতা ফটোগ্রাফার মহোদয়ের হয়তো মনে হয়েছিলো, টু-পাইস কামানো যাবে এখান থেকে।


অবশ্য আমাদের আর লাগেনি এনার সাহায্য। ইন্টারনেটে বিভিন্ন দেশী বিদেশী মানুষকে অনুরোধ করে তাঁদের কাছ থেকে অনেক ছবি পেয়েছি। এক জার্মান ভদ্রলোক বাংলাদেশে প্রায়ই যেতেন এনজিওর কাজে। তাঁকে অনুরোধ করে শহীদ মিনারের সুন্দর একটা ছবি পেয়েছি, যা উইকিপিডিয়ার প্রথম পাতাতেও এসেছে।

অভিজ্ঞতা থেকে যা টের পেয়েছি, "বিশিষ্ট ফটোগ্রাফার" গোছের কারো কাছে দেশের ছবি চাওয়া পুরোই নিরর্থক। "আমি কী পেলাম বিনিময়ে" এরকম মানসিকতা নিয়ে যারা বসে থাকেন, তাদের কাছে ছবি চাওয়ার বদলে আম-জনতাকে বললেই অনেক ভালো কাজ হয়।

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০০৮ দুপুর ২:২৫
৩৮টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×