somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী - রাজাকার/আল-বদরদের হাতে নির্বাপিত হলো যে প্রাণ (বাংলা উইকি থেকে জীবনী)

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ সকাল ১০:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর জামাত-শিবির-রাজাকার কর্মীদের হাতে গঠিত আল-বদর বাহিনী বাংলার সূর্য সন্তানদের, বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ করে নিয়ে যায়। তালিকা ধরে ধরে হত্যা করে তারা বাংলার এই বুদ্ধিজীবীদের। এই ঘটনার ৩৭তম বার্ষিকীতে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছি সেই সব শহীদ বুদ্ধিজীবীদের, আর বুকভরা ঘৃণা পোষণ করছি রাজাকার আল-বদর, আর তাদের ছানাপোনাদের উদ্দেশ্যে।

বাংলা উইকি থেকে তুলে ধরছি এই শহীদ বুদ্ধিজীবী মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর জীবনী । এই জীবনী নিবন্ধটির উপরে কাজ করেছেন অর্ণব জাহিন, বেলায়েত, ও মুজতবা।

--

মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী (২২শে জুলাই, ১৯২৬ - ১৪ই ডিসেম্বর, ১৯৭১) ছিলেন মননশীল প্রবন্ধকার, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষক, শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষ লগ্নে পাকিস্তান সেনাবাহিনী, রাজাকার , ও আল-বদর বাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের অংশ হিসাবে তিনি অপহৃত ও পরে শহীদ হন।

১ ব্যক্তিজীবন

মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী বর্তমান বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ববঙ্গের) নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার খালিশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা বজলুর রহমান চৌধুরী ও মা মাহফুজা খাতুন। তিনি মাত্র নয় বছর বয়সে পিতাকে হারান। তাঁর মা মামলায় জয়লাভ করে তাঁদের পরিবারের সম্পত্তি রক্ষা করেন। ফলে মোফাজ্জল, তাঁর দুই ছোট ভাই এহতেশাম হায়দার ও লুতফুল হায়দার এবং ছোট বোন রওশন আখতার রাজিয়ার পড়াশোনা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়। তাঁর শৈশব ও কৈশোর কাটে মামার আশ্রয়ে। ১৯৫৬ সালে সৈয়দা তাহমিনা মনোয়ারা নুরুন্নাহার-কে বিবাহ করেন। তাঁদের ঘরে ১৯৬৪ ও ১৯৬৭ সালে যথাক্রমে সুমন ও শোভন নামে দুই ছেলে হয়।

২ শিক্ষা ও কর্মজীবন

মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী নোয়াখালীর সোনাপুরের আহমদিয়া হাই ইংলিশ স্কুল থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন ও মেধা তালিকায় ৪র্থ স্থান লাভ করেন। ১৯৪৪ সালে তিনি ঢাকা কলেজ (তৎকালীন ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ) থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিয়ে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান লাভ করেন। এরপর তিনি কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে বাংলায় (সম্মান) ভর্তি হন। কিছুদিন পর এই কলেজ ত্যাগ করে কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজে ইংরেজি অনার্স পড়া শুরু করেন। কিন্তু বাংলা বেশি ভালবাসতেন বলে শান্তিনিকেতনে চলে যান ও সেখানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস অনুসারে বাংলা (সম্মান) পড়তে থাকেন। ১৯৪৬ সালে তিনি নন-কলেজিয়েট পরীক্ষার্থী হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় অংশ নেন ও প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। এ সাফল্যের জন্য তাঁকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় "সুরেন্দ্রনলিনী স্বর্ণপদক" প্রদান করে। পরে ১৯৫৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁকে আবারও স্যার আশুতোষ গোল্ড মেডেল দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়, কেননা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ১০০ বছরের ইতিহাসে তাঁর মত এত বেশি নম্বর পেয়ে কেউ বাংলা (সম্মান)-এ ডিগ্রী অর্জন করেনি। ১৯৪৬-১৯৪৭ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যায়ে মাস্টার্স পড়া শুরু করেন। ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্র-ভবনের বৃত্তি লাভ করে সেখানে ফিরে যান ও ১৯৪৮ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রবীন্দ্রনাথের জীবন ও সাহিত্য নিয়ে গবেষণা করে "সাহিত্যভারতী" উপাধি অর্জন করেন। পরবর্তীতে ১৯৫৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন।

১৯৪৯ সালের নভেম্বরে মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী শান্তিনিকেন্তন ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন ও রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা কেন্দ্রে পাণ্ডুলিপি রচয়িতা (script writer) হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৫০ সালে জগন্নাথ কলেজে প্রভাষক পদে যোগ দেন। তিনি এসময় সেন্ট গ্রেগরিজ কলেজ (বর্তমান নটরডেম কলেজ)-এও খন্ডকালীন অধ্যাপনা করেন। ১৯৫৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন।

১৯৫৭ সালে তিনি ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ (School of Oriental and African Studies)-এ ভাষাবিজ্ঞান অধ্যয়নের জন্য বৃত্তি লাভ করেন। সেখানে দুই বছর গবেষণা করার পর কথ্য বাংলার শব্দের ছন্দোবিজ্ঞানের ওপর একটি অভিসন্দর্ভ লেখেন, কিন্তু তাঁর গবেষণার ধরন তৎকালীন মার্কিন ধারার ভাষাবৈজ্ঞানিক গবেষণাপন্থার অতিমাত্রায় অনুসারী ছিল বলে এই অভিসন্দর্ভটি প্রকাশের জন্য গৃহীত হয়নি। পরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বাংলা একাডেমী থেকে এটি প্রকাশ করা হয়।

১৯৬৪ সালে মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভাষাবিজ্ঞান পড়ার উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করেছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত তাঁর এ চেষ্টা সফল হয়নি।

১৯৭০ সালে কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ড রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে গবেষণার স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে সংবর্ধনা দেয়। একই বছরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা রীডার (পরবর্তীতে এ পদের নাম বদলে সহযোগী অধ্যাপক করা হয়) পদে নিযুক্ত হন।

৩ মৃত্যু

১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর আল-বদর বাহিনী তাঁকে তাঁর কনিষ্ঠ ভাই লুতফুল হায়দার চৌধুরীর বাসা থেকে অপহরণ করে। এর পর তাঁর আর কোন খবর পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয় ঐ দিনই তাঁকে হত্যা করা হয়।

৪ গ্রন্থ ও রচনাবলী

* Some Supra-Segmental Phonological Features of Bengali (1959). Unpublished thesis. School of Oriental and African Studies. London.

* Colloquial Bengali (1963 and 1966). Bangla Academy. Dhaka.

* বাংলা বানান ও লিপি সংস্কার (১৯৬২)। ঢাকা।

* রবি পরিক্রমা (১৯৬৩)। ঢাকা।

* সাহিত্যের নব রূপায়ণ (১৯৬৯)। ঢাকা।

* রঙীন আখর (১৯৬৩)। ঢাকা।

এছাড়াও জীবদ্দশায় তাঁর প্রচুর অপ্রকাশিত রচনা ছিল। এগুলো সাহিত্য-বিষয়ক গবেষণা, ব্যক্তিগত ও সৃষ্টিশীল রচনা, শিক্ষা ও সংস্কৃতি, বাংলা ভাষা, চিঠি ও ভাষাবিজ্ঞান - এ ছয়টি ভাগে ঢাকার বাংলা একাডেমী থেকে ভাষাবিজ্ঞানী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান কর্তৃক সঙ্কলিত ও সম্পাদিত মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর রচনাবলী শিরোনামে তিন খন্ডের বই আকারে ১৯৭৮, ১৯৮২ ও ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত হয়।

৫ পুরস্কার ও সম্মাননা

* গবেষণায় বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৭১)

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ সকাল ১০:১৩
১৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×