somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চতর শিক্ষা - রেকমেন্ডেশন লেটার নিয়ে বিভ্রান্তি

১৫ ই মার্চ, ২০১২ দুপুর ১২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রে ভর্তির আবেদনের অপরিহার্য অংশ হলো রেকমেন্ডেশন লেটার বা সুপারিশপত্র। সাধারণত প্রত্যেক আবেদনকারীকে অন্তত ৩টি রেকমেন্ডেশন লেটার জমা দিতে হয়। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর পড়ালেখা বা গবেষণার মান সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্যই এই চিঠিগুলো চাওয়া হয়, আর এগুলো সাধারণত এই শিক্ষার্থীকে চেনেন, এমন শিক্ষকেরা দিয়ে থাকেন। যেমন, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শেষে বিদেশে আবেদন করা শিক্ষার্থীরা সাধারণত যেসব শিক্ষকের ক্লাস করেছেন, বা থিসিস করেছেন যাদের সাথে, তাদের কাছ থেকে রেকমেন্ডেশন লেটার নেন।

ভর্তির ক্ষেত্রে এহেন সুপারিশের গুরুত্ব বেশ ভালোই। কারণ কাগজে পত্রে, জিপিএ এর দশমিক শূন্য এক পয়েন্টের ব্যবধান থাকা দুজন ছাত্রের পার্থক্য করা বেশ কঠিন। এক্ষেত্রে এই শিক্ষার্থীকে কাছ থেকে দেখেছেন, এমন কারো মূল্যায়ন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই মাস্টার্স বা পিএইএচডি পর্যায়ে ভর্তির সময়ে আবেদন প্যাকেজের চিঠিপত্রের অংশটি বেশ ভালো করে দেখা হয়।

কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের পাঠানো রেকমেন্ডেশন লেটারে বেশ কিছু গুরুতর সমস্যা থাকে। এই কারণে অন্য অনেক দেশের কম মেধার ছাত্রদের কাছে ভর্তিযুদ্ধে পিছিয়ে পড়তে হয় বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের অনেক সময়েই। চলুন, এক এক করে দেখা যাক, কী কী গুরুতর ভুল করে থাকেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা -


(১) নিজের সুপারিশ নিজেই লেখা


এটা আসলে শিক্ষার্থীদের দোষ না, বরং বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটা বড় রকমের দোষ। ছাত্রদের কেবল পড়ানোই তাদের কাজ না, বরং তার সাথে সাথে ছাত্রদের মূল্যায়নটাও যে শিক্ষকের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, সেটা অনেকেই মনে রাখেন না। ফলে কোনো শিক্ষকের অতি পরিচিত, এমনকি সেই শিক্ষকের অধীনে থিসিস করা ছাত্রটিও যখন রেকমেন্ডেশন লেটারের জন্য যায়, তখন ভাব দেখানোর সুযোগ পেয়ে শিক্ষক নানা রকম ঝামেলা করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ব্যাপারটি হলো, ছাত্রকেই নিজের সুপারিশ নিজেকেই লিখে আনতে বলা।

নানা সময়ে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু ছাত্রদের সুপারিশ পড়তে গিয়ে খেয়াল করেছি, এই বিদঘুটে প্রবণতাটা দক্ষিণ এশীয় মানে বাংলাদেশ ভারত পাকিস্তান নেপাল এসব দেশেই বেশি চালু, দুনিয়ার অন্য অধিকাংশ জায়গার শিক্ষার্থীদের সুপারিশপত্র তারা নিজেরাই লিখে বসে না। কিন্তু বাংলাদেশের অনেক শিক্ষকই সময় নেই এই অজুহাতে ছাত্রকে ড্রাফ্ট লিখে আনতে বলেন, আর তার পর নিজে কিছু যোগ বিয়োগ বা মতামত পেশ না করেই স্বাক্ষর করে দেন।

এসব স্বরচিত সুপারিশপত্র কিন্তু পড়েই বোঝা যায়, ছাত্রটির হাতেই লেখা এটা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে আমার অভিজ্ঞতা অল্পদিনের, কিন্তু এতেই এটুকু বুঝতে পারি, কোন চিঠি কার লেখা। নিজের সম্পর্কে সুপারিশ লিখতে গিয়ে স্বভাবতই শিক্ষার্থীরা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বিশাল প্রশংসা করে থাকে, যেটা দেখে বোঝা যায় কে লিখেছে এটা। অথবা চিঠিতে অপ্রচলিত জটিল ইংরেজি শব্দের বহুল ব্যবহার দেখলেও এটা বোঝা যায় (সেটা আবার জিআরই পরীক্ষার জন্য খটোমটো শব্দ শেখার কুফল!)।

বলাই বাহুল্য, এহেন স্বরচিত সুপারিশপত্রের স্থান হয় আস্তাকুড়েই। আক্ষরিক অর্থে না, তবে এরকম লেখা দেখেই বোঝা যায়, আর সেই ছাত্রটির আবেদনে এটা বড় রকমের নেতিবাচক প্রভাব রাখে।

কাজেই শিক্ষককে অনুরোধ করুন, চিঠিটা যাতে তিনিই লিখেন। পাতার পর পাতার দরকার নেই। শিক্ষকের নিজের লেখা আধা পাতার চিঠিই স্বরচিত বিশাল সুপারিশের চাইতে অনেক বেশি কাজ দেবে।

(২) একই সুপারিশ কপিপেস্ট করে একাধিক ছাত্রের ব্যবহার করা।

এটা হতে পারে দুইভাবে। অনেক সময় শিক্ষকেরা নিজে একই চিঠি সব ছাত্রকেই কেবল নাম পাল্টে দিয়ে থাকেন। অথবা ছাত্ররা নিজেরা ইন্টারনেট বা সিনিয়রদের কাছ থেকে নমুনা যোগাড় করে বেশি না পাল্টে একই লেখা ব্যবহার করে ফেলে। এখন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি একই বাংলাদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষার্থী একই রকম চিঠি পাঠায়, তাহলে সমস্যাটা কোথায় বুঝতে পারছেন তো? নকলের দায়ে এদের আবেদনপত্র একেবারে পত্রপাঠ বাতিল করা হতে পারে। কাজেই কোনো অবস্থাতেই এরকম কপিপেস্ট যাতে না হয়, তার দিকে খেয়াল রাখবেন।

(৩) অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে সুপারিশ করা

ধরা যাক, শিক্ষক নিজেই লিখেছেন চিঠিটি। এরকম ক্ষেত্রেও সমস্যা কম না। বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরই এরকম চিঠি কীভাবে লিখতে হয়, বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। ফলে তারা হয় গৎবাঁধা কথা লিখেন (অমুকে আমার অতি পরিচিত, খুবই ভালো ছাত্র, অত্যন্ত মেধাবী, আমার ক্লাসে এ প্লাস দিয়েছি ওকে - এরকম)।

অথচ ভর্তি কমিটির লোকজন আসলে কিন্তু অন্য কিছু জানতে চায়। যেমন, এই ছাত্রটি কি অধ্যবসায়ী? বিশেষ কী গুণ আছে যা আলাদা করবে তাকে অন্যদের চাইতে? জেনারেল টাইপের কথার চাইতে এখানে গুরুত্বপূর্ণ হলো নির্দিষ্ট করে বলা এই ছাত্রটির ব্যাপারে। দরকার হলে বিশেষ কোনো ঘটনার কথা বলা (যেমন, অমুক প্রজেক্টে এই ছাত্র বেশ ইন্টারেস্টিং উপায়ে সমাধান করেছে, অথবা তমুকের অধ্যবসায় খুব ভালো, তাকে অমুক সময়ে তমুক প্রজেটে যা দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো, সব সময় মতো করেছে)।

বিশেষ কিছু পয়েন্ট আসলে ভর্তির সময়ে খুব ভালো কাজ দেয়। যেমন, ছাত্রটি কি অধ্যবসায়ী? কিংবা পরিশ্রমী? শিখতে আগ্রহী? হাতে ধরে শেখাতে হয়না, নিজেই শিখে নিতে পারে (সেল্ফ স্টার্টার) ইত্যাদি। ছাত্রের জিপিএ নিয়ে রচনা লেখার চাইতে এরকম গুণাবলীর কথা লেখাটাই আসলে অনেক বেশি ইতিবাচক প্রভাব রাখবে।

আর রেকন্ডেশন লেটারের আরেকটা বড় ভুল হলো শিক্ষার্থীর সম্পর্কে বাগাড়ম্বর ধাঁচের কথা লেখা। যদি শিক্ষক একাধিক ছাত্রের বেলাতেই লিখেন যে, তাঁর দেখা সেরা ১০% ছাত্রের মধ্যে এই ছাত্রটি পড়ে, তবে সেই শিক্ষকের সুপারিশের মান সম্পর্কেই প্রশ্ন উঠতে পারে। বলার দরকার নেই, এরকম রেকমেন্ডেশনে বরং হিতে বিপরীত হয়।


(৪) অনলাইনের বদলে প্রিন্ট করা রেকমেন্ডেশন লেটার পাঠানো


ভর্তির সময়ে এক এক বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার হাজার আবেদন পড়ে। এক সাথে এতো আবেদন গ্রহন করতে গিয়ে ভর্তি অফিসের কর্মীদের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়, আর প্রায়ই আবেদন প্যাকেজের নানা ডকুমেন্ট হারিয়ে যায়। অসম্পূর্ণ আবেদন প্যাকেজ অনেক ক্ষেত্রে আমলেই নেয়া হয় না, বাতিল করে দেয়া হয় যাচাইয়ের আগেই।

এসব ঝামেলা এড়াতে অনেক জায়গাতেই এখন অনলাইন আবেদনের রীতি চালু হয়েছে। রেকমেন্ডেশনের ক্ষেত্রেও অনলাইন, মানে ইমেইল বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে রেকমেন্ডেশন দেয়ার সুযোগ থাকে। ছাপানো রেকমেন্ডেশনের খাম হারিয়ে যাওয়ার ঝামেলা এড়াতে হলে অবশ্যই শিক্ষকদের বলবেন, অনলাইনে রেকমেন্ডেশন পাঠাতে।

(৫) শিক্ষকেরাই কি কেবল সুপারিশ দিতে পারে?


না, অন্যদের থেকেও নেয়া যাবে, তবে তার মানে এই না যে মামা-চাচা, কিংবা যার তার থেকে নেয়া চলবে সুপারিশ। উদাহরণ দেই, যারা স্নাতক পাশ করে চাকুরি করছেন, তারা আবেদনের সময়ে নিজের সুপারভাইজর বা বসের রেকমেন্ডেশন নিতে পারেন। নানা সফ্টওয়ার কোম্পানিতে যারা কাজ করছেন তারা কেমন কাজ করছেন, তার বর্ণনা আসলে তাদের বসরাই ভালো দিতে পারবে। তবে খেয়াল রাখবেন, রেকমেন্ডেশনে যাতে আপনার কাজের মূল্যায়ন নিয়ে গোছানো কথা লেখা হয়, সেটা যাতে সুপারিশকারী মাথায় রাখেন।

---------



আশা করি এই লেখাটি যুক্তরাষ্ট্রে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা পড়বেন এবং তাঁদের শিক্ষকদেরকেও পড়াবেন। বাংলাদেশের তথা দক্ষিণ এশিয়ার শিক্ষার্থীদের আবেদনপত্রের রেকমেন্ডেশন লেটারের অংশটি নানা কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাত্তা দেয়া হয়না, বড় কারন হলো স্বরচিত কিংবা ভুলভাল কথায় ভর্তি সুপারিশ।

কেবলমাত্র রেকমেন্ডেশন লেটারের জোরে অন্য অনেক দুর্বলতাকে কাটিয়ে ওঠা যায়, আবার বাজে রকমের রেকমেন্ডেশন লেটারের কারণে ভালো ছাত্রদেরও ভর্তির সমস্যা হতে পারে।

এই সিরিজের আগের লেখা

যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা - প্রফেসরদের ইমেইল করবেন কীভাবে?

যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চতর শিক্ষা - ফান্ডিং এর সোনার হরিণ

যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা - পিএইচডি নাকি মাস্টার্স

যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চতর শিক্ষা - কীভাবে লিখবেন স্টেটমেন্ট অফ পারপাস
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১২ বিকাল ৩:৪৯
৩৮টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×