এটা কোন বোকা মেয়ের প্রশ্ন নয় । এগুলো কমিউনিজম বা নাস্তিকরা যারা রাশিয়ার খয়রাতে চলে তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য এগুলো অবিষ্কার করেছে । এগুলো প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর রয়েছে ।
১। আল্লার ইচ্ছাতেই যদি সবকিছু হয় তবে মানুষের পাপপূণ্যও তার ইচ্ছাতেই হয়। আল্লার ইচ্ছাতেই যদি মানুষ পাপ-পূণ্য করে তবে মানুষের অপরাধ কোথায়? জন্মের আগেই ভাগ্য নির্ধারিত হলে মানুষের করণীয় কি?
উত্তর ।প্রশ্নঃ সৃষ্টিকুলের কি কোন ক্ষমতা আছে? প্রকৃতপক্ষে তাদের কি কোন ইচ্ছা স্বাধীনতা আছে? হ্যা, মানুষের ইচ্ছা-স্বাধীনতা আছে, অভিপ্রায়-বাসনা আছে, পছন্দ - অপছন্দের ক্ষমতা আছে। কিন্তু তা আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে নয়। আল্লাহর বানীঃ
"তোমরা যা কিছু চাও,তা আল্লাহর ইচ্ছার মধ্যেই হয়ে থাকে।"(সূরা-দাহরঃ৩০
কিভাবে এটা সম্ভব?
একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে । উদাহরণটা হল বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ ও বিদ্যুৎ গ্রাহকের ভূমিকা । বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে, তেমনি বিদ্যুৎ গ্রাহক ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখেন । কিন্তু দায় ব হন করতে হবে বিদ্যুৎ গ্রাহকের । মাস শেষে যখন হাজার টাকার বিদ্যুৎ বিল আসল তখন কর্তৃপক্ষকে এই বলে দোষ দেয়া চরম বোকামী হবে যে তারা কেন বিদ্যুৎ সরবরাহ করল, তারা ইচ্ছা করলে আমার বিদ্যুৎ খরচ কমাতে পারত ।
তারা ইচ্ছা করলে বিদ্যুৎ খরচ সরবরাহ নিয়ন্তন করে আপনার খরচ কমাতে পারত এটা যেমন ঠিক , তেমনি আপনি ও সাশ্রয়ী হয়ে বিদ্যুৎ খরচ কমাতে পারতেন । আর খরচের এই দায়ভার ব হন করবেন গ্রাহক, কর্তৃপক্ষ নয় । কেননা এই ক্ষেত্রে গ্রাহকের ইচ্ছা ও কর্মদায়ী ।
তাই মানুষের ভালো -মন্দ আমলের ব্যাপারে ও এটা বলা যায় যে, আল্লাহ ইচ্ছা করলে মন্দটা করত না । আবার করার জন্য মানুষই দায়ী- তার ইচ্ছা শক্তি প্রয়োগের জন্য ।
আল্লাহ চাইলে আমাদের পৃথিবীতে না পাঠিয়ে, জান্নাত-জাহান্নাম দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি একথা প্রমান করবেন যে, কে তার বাধ্য, কে অবাধ্য এরপর শাস্তি দিবেন। মানুষের কাজ হল চেষ্টা করা । মহান আল্লাহর বাণীঃ অর্থঃ "যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন তোমাদের পরিক্ষা করবার জন্যে-কে তোমাদের মধো কর্মে উত্তম ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল ।" (সূরা মূলক-২)
কেননা প্রতিটি মানুষ জান্নাতে যেতে চায় এবং মানুষের একথা জানা নাই যে, তার তাকদীরে কি লিখা আছে জান্নাত নাকি জাহান্নাম ?
না জানা বিষয়ের নির্ভর করে কোন ভালো কাজ ছেড়ে দেয়া কি বুদ্ধিমানের কাজ ??
পরিক্ষায় পাশ করবে না ফেল করবে এটা অজানা থাকা সত্তে ও মানুষ অনেক কষ্ট করে পরিক্ষা দেয় পাস করার আশায় । অপারেশন সাকসেস হবে কি হবে না অজানা থাকা সত্তে ও মানুষ অপারেশন করায় রোগ মুক্তির আশায় । কোন কাজের ফলাফল অজানা থাকার অজুহাতে ছেড়ে দেওয়া কি বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে ? হতে পারে না । আর জান্নাত -জাহান্নামের স্রষ্টা যখন বলে দিয়েছেন এটা জান্নাতের পথ এটা জাহান্নামের পথ তখন তা বিশ্বাস করে আমল করতে অসুবিধা কোথায় ?
নাবী(সাঃ)বলেনঃ " তোমরা আমল করে যাও, কেননা প্রত্যেক মানুষকে যে জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তার জন্য সে ধরণের কাজ সহজ করে দেয়া হয়েছে।" (বুখারী ও মুসলিম)
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বিবেক দিয়েছেন। দিয়েছেন দেখা ও শোনার ক্ষমতা। এগুলোর মাধ্যমে আমরা ভাল-মন্দের মাঝে পার্থক্য করতে পারি। এমন লোককে কি বিবেকবান বলা যেতে পারে, যে চুরি করবে আর বলবে এটা আল্লাহ আমার উপর লিখে দিয়েছেন? এরূপ কথা বললে ও লোকেরা তাকে কিন্তু ছেড়ে দিবে না। তাকে শাস্তি দেবে। তাকে বলা হবে এই অপরাধের বিনিময়ে আল্লাহ তোমার জন্য শাস্তি ও লিখে রেখেছেন। অতএব তকদীর দিয়ে দলীল পেশ করা বা ওযর পেশ করা কোনটাই জায়েয নয়; বরং এটা তাক্বদীরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা। আল্লাহ বলেনঃ "মুশরিকরা আপনার কথার উত্তরে বলবে, আল্লাহ যদি চাইতেন আমরা শিরক করতামনা, বস্তুতঃ এবাবেই তাদের পূর্ব যুগের কাফেররা(রাসূলদেরকে) মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল।" (সূরা আনআমঃ১৪৮)
প্রথম কয়েকটা প্রশ্ন তাকদীরের বিষয়ে, তাকদীরের ভালো মন্দ আল্লাহর পক্ষ থেকে হয় প্রতিটি মুসলিমের অবশ্যকীয় বিশ্বাস , নাবী ( সাঃ ) এরশাদ করেছেন "আল্লাহ তায়ালা আসমান ও যমিন সৃষ্টি করার ৫০হাজার বছর আগে সৃষ্টি জগতের তক্বদীর লিখে রেখেছেন।"(মুসলিম)
মানুষের কাজ হল চেষ্টা করা ও তার সন্তুষ্টি মত কাজ করা ।
ইচ্ছা এবং সন্তুষ্টির মধো ও পার্থক্য রয়েছে, আল্লাহ তায়ালা মানুষকে তার সন্তুষ্টিমত কাজ করার আদেশ দিয়েছেন । ছোট একটি উদাহরন দিলে বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে । যেমন এক ব্যক্তির ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়ল। চিকিৎসক বললেন তার পেট অপারেশন করতে হবে । অপারেশন ছাড়া অন্য কোন পথ নেই । এখন বেচারা অপারেশন করাতে রাজি নয় । এ কাজে সে সন্তুষ্ট নয়, তবুও সে অপারেশন করিয়ে থাকে । এমনকি এ কাজের জন্য ডাক্তারকে টাকা পয়সা দেয় । অতএব দেখা গেল এ অপারেশনে তার ইচ্ছা পাওয়া গেল কিন্তু সন্তুষ্টি পাওয়া যায়নি । অপারেশন করাতে সে ইচ্ছুক, রাজি নয়। দেখা গেল ইচ্ছা ও সন্তুষ্টি দু'টো আলাদা বিষয়। অনেক সময় ইচ্ছা পাওয়া যায় সন্তুষ্টি পাওয়া যায় না। কিন্তু যেখানে সন্তুষ্টি পাওয়া যায় সেখানে ইচ্ছা অবশ্যই থাকে । তাই সকল কাজ মানুষ আল্লাহর ইচ্ছায় করে ঠিকই কিন্তু তার সন্তুষ্টি ও রেজামন্দি অনুযায়ি করে না । বিভ্রান্তি তখনই দেখা দেয় যখন 'ইচ্ছা' দ্বারা 'সন্তুষ্টি' বুঝানো হয়। লম্বা করলামনা এই ভেবে যে, পাঠকদের হয়তো অনিহা সৃষ্টি হবে ,
তবে তাকদিরে বিশ্বাসের উপকারিতা হচ্ছে যে, মানুষ যখন সকল প্রকার চেষ্টা ও পরিশ্রম করার পর পরাজিত ও ব্যর্থ হয় তখন তার মধো হতাশা দেখা দেয়না । যখন বিপদে পড়ে তখন ধৈর্য হারা হয়না। সে মনে করে আমার চেষ্টা তো আমি করেছি যার কারণে আমি ছাওয়াব পাব । আমার কাজ হল চেষ্টা করা দেয়নে ওয়ালা হলেন আল্লাহ । আর পরিশ্রম করার পর যা পায় তার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে যে, আমি তার মেহেরবাণীতে পেয়েছি।
আর যারা তাকদীরে অবিশ্বাস করে তারা চেষ্টা ও পরিশ্রমের পর যখন পরজিত হয়, তখন তার মধো হতাশা দেখা দেয় । আর চেষ্টা ও পরিশ্রমের পর যদি সে সফল হয় তখন সে একটা ফেরাউন হয়ে যায় ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




