শুরুটা কৈশোরে, স্কুল ম্যাগাজিনের জন্য
ছবি আঁকা দিয়ে। তিনি সেখানে
বিশ্বযুদ্ধে স্বদেশপ্রেমীদের স্বদেশপ্রেমের
চিত্র আঁকতেন। আসলে ভুল বললাম। আঁকার একদম
শুরুটা তারও আগে। খুব ছোটবেলায়
প্রতিবেশী একজন ডাক্তার তাকে ছবি এঁকে
দেয়ার জন্য পারিশ্রমিক দিয়েছিলেন।
ছবিটা ছিলো ডাক্তারের ঘোড়ার।
তারপর থেকে নিজে আঁকিবুকি করলেও
কোথাও চিত্রকর্ম ওইভাবে প্রকাশের সুযোগ
হয়নি। অভাবের তাড়নায়ই বোধহয় বালক বয়সে
তিনি সংবাদপত্র ডেলিভারের কাজ
করতেন। কাজের সময়টা বেশ তাক লাগানো!
ভোর সাড়ে চারটা থেকে বিকাল চারটা
পর্যন্ত প্রায় সাতশ গ্রাহককে সংবাদপত্র
ডেলিভার করতেন, প্রতিদিন! এই কাজটা
তিনি ছয় বছর করেছিলেন। কৈশোরে স্কুল
ম্যাগাজিনের জন্য ছবি এঁকে দিলেন
কিছুদিন। অতঃপর ষোল বছর বয়সে তার ইচ্ছা
হলো আর্মিতে যাবেন। এজন্য স্কুলও ছেড়ে
দিলেন। কিন্তু চাইলেই তো আর আর্মিতে
যাওয়া যায় না! অপ্রাপ্ত বয়সের কারনে
আর্মিতে তার জায়গা হলো না। জীবিকার
তাগিদে শেষমেশ এ্যাম্বুলেন্সের
ড্রাইভারের কাজ করলেন। কিন্তু সেখানেও
কপালপোড়া! চাকরিটা বেশিদিন ঠিকলো
না। এবার ঠিক করলেন, নাহ! নিজের আর্ট
প্রতিভা নিয়েই ক্যারিয়ার গড়তে হবে। তখন
একবার ভাবলেন, অভিনেতা হওয়া যাক! পরে
ভাবনাটা বাতিল করে রাজনীতিক
ব্যাঙ্গচিত্র এঁকে পেট বাবাজিকে ঠান্ডা
করার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু সিদ্ধান্ত
নিলেই তো হবে না! কাজ তো পেতে হবে!
কেউ কাজ দিলে হয়! কেউ তাকে কাজ
দিলো না। এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভিং কিংবা
কার্টুন আর্ট, কোনো কাজই তিনি পেলেন
না। অবশেষে তার বড় ভাইয়ের সহযোগিতায়
একটা স্থানীয় স্টুডিওতে পার্টটাইম ছোট
একটা চাকরি পেলেন। কিন্তু সেটাও
কিছুদিনের জন্য। স্টুডিও এর মেয়াদ শেষ হলো
এবং তিনি আবারও বেকার। তখন ভাগ্যক্রমে
এক কার্টুনিস্টের সাথে তার পরিচয় হলো।
কার্টুনিস্ট মশাই তার দুঃখ এবং স্বপ্ন দুটাই
বুঝলেন। দুজনে মিলে একটা নিজস্ব
কমার্শিয়াল আর্টের কম্পানী দিলেন।
কম্পানী! খুলতে তো যে কেউ পারে! কিন্তু
দাঁড় করাতে তো টাকা পয়সা লাগবে!
অগত্যা টাকা জমাতে কোম্পানি বন্ধ করে
অন্যের স্টুডিওতে আবার কাজ করতে হলো।
অবশেষে মোটামুটি টাকা জমিয়ে নিজের
কোম্পানিতে ফিরে এলেন এবং অনেক
কাঠখড় পুড়িয়ে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয়
এ্যনিমেশন কার্টুন, মুভি, গেমসের প্রতিষ্ঠান
"ডিজনি ব্রাদারস" প্রতিষ্ঠিত হলো। ও হ্যাঁ!
যার কথা বলছিলাম তার নাম, "ওয়াল্ট
ডিজনি"। নামের ডিজনি শব্দটাই আসলে
তার প্রাপ্তিটা অনেকখানি বলে দেয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১৫ ভোর ৫:২৪