somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

[ভুলে যাওয়া নাটকগুলি] শেকড় (১৯৮৫-৮৬) - ডাউনলোড লিঙ্কসহ

০৩ রা এপ্রিল, ২০১১ ভোর ৬:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শেকড় নাটকটি বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছিল ১৯৮৫-৮৬ সালের দিকে। এত পুরোনো নাটকের লেখক, প্রযোজক বা চরিত্রগুলির নাম আর এই মুহুর্তে মনে করতে পারছি না। তাই কাহিনী বর্ননায় আমি অভিনেতাদের নামই উল্লেখ করব।

আবুল হায়াত সমাজে একজন সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি। তার তরুনী কন্যা লুৎফুন্নাহার লতার সাথে প্রেম হয় তারিক আনাম খানের। আবুল হায়াত এবং তার স্ত্রী দিলারা জামান দুজনই এই সম্পর্কের বিরোধিতা করেন কারন তারিক আনামের পারিবারিক অবস্থা খুব ভাল না। লতার পক্ষে ওকালতি করার জন্য হায়াত সাহেবের খালা (এই চরিত্রটা কে করেছিলেন মনে করতে পারছি না, খুব সম্ভবত শহীদ মুনীর চৌধুরীর স্ত্রী লিলি চৌধুরী) তাদের বাড়িতে এসে হায়াত দম্পতিকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তারিককে নিয়ে তাদের সমস্যা না থাকলেও তারিকের পরিবারের সাথে তাদের পরিবারের সামাজিক মানমর্যাদা মেলে না বলে তারা আপত্তি জানায়। তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে খালা হঠাৎ বলে উঠেন, বৌমা, তোমার স্বামীর নিজের পারিবারিক অবস্থাও তোমার বিবেচনা করা উচিত। আবুল হায়াত এবং দিলারা জামান দুজনই অবাক হন কারন হায়াত সাহেবের বাবাও সমাজে খুবই প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি। তারা খালাকে এধরনের মন্তব্যের কারন জানতে চাইলে খালা তাদের বলেন যে হায়াত সাহেব তার বোন এবং দুলাভাই এর পালক সন্তান যেটা গত ৫০ বছরে কেউ কোনদিন জানতে পারেনি।

হায়াত সাহেব প্রচন্ড শকড হন। পরদিনই তিনি তার বৃদ্ধ পালক বাবার (এই অভিনেতার নাম মনে নাই) সাথে দেখা করে পুরো ঘটনা জানতে চান। তার বাবা তাকে জানান যে তার স্ত্রী তাকে খুব ছোট অবস্থায় নিয়ে এসেছিল, আসল বাবা-মার পরিচয় উনি জানেন না, তবে কোন গ্রাম থেকে নিয়ে এসেছিল সেটা বলতে পারবেন।

হায়াত সাহেব সেই গ্রামে গিয়ে আসল বাবা-মাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। ৫০ বছর আগের এক বাচ্চার বাবা-মার খোঁজ পাওয়া খুব সহজ না। খুঁজতে খুঁজতে তার সাথে পরিচয় হয় এক রগচটা পাগলাটে বুড়ো আবুল খায়েরের সাথে যিনি আবার এককালে ডাকাত ছিলেন। আবুল খায়েরের বাড়িতে তাকে রাত্রিবাসও করতে হয়। আবুল খায়ের খুবই খেপাটে ধরনের মানুষ। কথাবার্তার মধ্যে বেশ কয়েকবারই উনি হায়াত সাহেবকে দা দিয়ে কেটে ফেলার ভয় দেখিয়েছেন, আবার ডাব কেটেও তাকে খাইয়েছেন। এই কথাবার্তার মধ্যেই হায়াত সাহেব আবিষ্কার করেন যে আবুল খায়েরই তার বাবা।

এরপরের দৃশ্য, লতা আর তারিক আনামের সুখী দাম্পত্য জীবন। নাটক শেষ।

আমাকে যদি টেলিভিশনের নাটকে অলটাইম বেস্ট অ্যাকটিং পারফর্মেন্সের একটা ছোট্ট লিস্ট বানাতে বলে, এই নাটকে আবুল খায়েরের অভিনয়কে আমি এক নম্বরে রাখব। ব্যপ্তিকাল হিসেবে তার চরিত্রটা খুব বড় নয়। কিন্তু এর মধ্যেই কি ভয়াবহ সুন্দর কাজ তিনি করেছেন, সেটা না দেখলে বলে বোঝানো সম্ভব না। আর আবুল হায়াতও তার সাথে পাল্লা দিয়েছেন সমানে সমান। রাতভর যখন তাদের কথোপথন চলছিল, খায়ের সাহেব কাঁদতে কাঁদতে বর্ননা করছিলেন যে কিভাবে তার বাচ্চাটা হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল আর সেই বর্ননা শুনে অসহায় হায়াত সাহেব আস্তে আস্তে বুঝতে পারছিলেন যে এই লোকই তার শেকড়, কি সুদক্ষ পরিচালনা, কি সুনিপুন লেখনী, কি টানটান উত্তেজনা আর অভিনয়ের কথা আর কি বলব। ২৫-২৬ বছর আগের এই দৃশ্যটা এখনও চোখে ভাসে।

অন্যান্য চরিত্রগুলির খুব বেশি সুযোগ ছিল না। কিন্তু সবাই মোটামুটি তাদের নিজেদের কাজ ভালভাবেই করেছেন।

আপডেটঃ বহুদিন ধরে এই নাটকটা খুঁজছিলাম। এই পোস্ট যখন দেয়া হয়, তখন আমার কাছে নাটকটা ছিল না। প্রায় ২৪-২৫ বছরের পুরোনো স্মৃতি থেকে এই রিভিউ লেখা হয়েছিল। অতি সম্প্রতি নাটকটা খুঁজে পেয়েছি - (দুঃখের বিষয় যে শেষের আধা-এক মিনিট কোনভাবে বাদ পড়ে গেছে)

ডাউনলোড লিঙ্ক



সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ৩:৪৪
৭৯টি মন্তব্য ৫৭টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×