somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

[সর্বশেষ দেখিত চলচ্চিত্র] Platoon (১৯৮৬)

১৮ ই জুলাই, ২০১১ ভোর ৪:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আইএমডিবি রেটিং - ৮.২/১০ (বর্তমান অবস্থান - ১৪৫)
আমার রেটিং - ৯/১০

Platoon ছবিটা আমি প্রথম দেখেছিলাম ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের মুভি অফ দ্য উইকে। সেসময় প্রতি শুক্রবার রাত ৯টা থেকে মুভি দেখানো হত। শুধু মাসের শেষ শুক্রবার দেখানো হত পূর্ন দৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি আর অন্যান্য শুক্রবারগুলিতে হলিউডি ছবি। বিটিভির বাজেট খুব কম থাকার কারনে বাংলা, ইংরেজী প্রায় সব ছবিই হত সাদাকালো অর্থাৎ অনেক পুরোনো। ইংরেজী ছবি তাও কালেভদ্রে দু'একটা রঙিন দেখেছি, কিন্তু বাংলা মূলধারার কোন রঙিন ছবি আমি বিটিভিতে দেখেছি বলে মনে করতে পারি না (১৯৯২ সাল পর্যন্ত, তারপরের খবর আমি জানি না!)।

Platoon ছবিটা এইদিক দিয়ে অনেক ব্যতিক্রম। একে তো এটা রঙিন ছবি। ছবিটা দেখানোর অনেক দিন আগে থেকেই এর প্রোমো দেখানো হত। প্রোমো দেখেও বোঝা যেত যে এটা বেশ বড় বাজেটের একটা যুদ্ধের ছবি। সেসময় বিশ্বচলচ্চিত্র বা বিশ্বমানের যেকোন কিছুতেই আমাদের প্রবেশ এত সীমাবদ্ধ ছিল যে এরকম একটা যুদ্ধের ছবি দেখানো হবে এটা ভাবতেই শিহরিত ছিলাম। আমরা জানতামও না যে এটা তার মাত্র এক বছর আগেই মুক্তি পেয়েছে এবং সে বছরই (১৯৮৭) শ্রেষ্ঠ পরিচালক এবং শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র সহ চারটা শ্রেনীতে অস্কার পেয়েছে। ছবি শুরু হওয়ার আগে বিটিভির ঘোষক সম্ভবত এই তথ্যগুলি দিয়েছিলেন, কিন্তু একটা যুদ্ধের ছবি দেখার ব্যাপারটাই আমাদের কাছে মূল আকর্ষন ছিল। অস্কার-ফস্কার নিয়ে আমরা সেইকালে মাথা ঘামাতাম না, খুব একটা জানতামও না। এত সাম্প্রতিক আর এত বড় একটা ছবি বিটিভি তখন কিভাবে জোগাড় করেছিল, এটা আমার কাছে এখন এক বিষ্ময়!

শেষ পর্যন্ত ছবি দেখে আমি এতই মুগ্ধ হয়েছিলাম যে সেই মুগ্ধতা আজকে ২৪ বছর পরও চোখে লেগে ছিল। দু'দিন আগে আবার এই ছবিটার সন্ধান পেয়ে সেই মুগ্ধতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। একটু ভয়ে ছিলাম এই ভেবে যে এত বছর পর আমার মানসিকতা আর রুচির যে পরিবর্তন হয়েছে, তাতে এই ছবিটা আবার দেখলে সেই ভাললাগাটা নাকি নষ্ট হয়ে যায়! ১৯৮৭ সালে আমি মিঠুন চক্রবর্তীর হিন্দি মুভির বিশাল ভক্ত ছিলাম, এখন এগুলি আমাকে পয়সা দিলেও দেখব না।

ছবিটা এবার দেখে বরং প্রথমবারের চেয়ে আরও বেশি ভাল লেগেছে। ১৯৮৭ এর আমার সদ্য তরুন চোখ শুধু কম্ব্যাট পোষাক পড়া ইউএস আর্মির বিশাল বিশাল মেশিনগান হাতে অ্যাকশনই দেখেছে, কিন্তু এবার কিছুটা পরিপক্ক চোখ ছবির ভেতরে ঢুকে এর অন্তর্নিহিত ভয়ংকর সৌন্দর্যটাও উপভোগ করতে পেরেছিল।

প্রথমেই একটা বিষয় বলে নেয়া ভাল যে এটা প্রচলিত গল্পভিত্তিক ছবি না। ছবিটা বানানো হয়েছে প্রায় ডকুমেন্টারি স্টাইলে যুদ্ধকালীন ভিয়েতনামের নানান ঘটনা দিয়ে। ডকুমেন্টারির মত এখানেও নেপথ্য ধারাবর্ননা চলতে থাকে যা আসলে মূল চরিত্র টেইলারের (Charlie Sheen ) দাদীর কাছে লেখা চিঠি। এইসব ছোটখাট ঘটনার মধ্যে দিয়ে একটা হালকা কাহিনী আছে, তবে সেটা খুব গুরুত্বপূর্ন না। ঘটনাগুলিই গুরুত্বপূর্ন।



ছবির শুরু হয় টেইলারের ভিয়েতনাম আসার মধ্য দিয়ে এবং শেষ হয় তার চলে যাওয়া দিয়ে। টেইলার আমেরিকার এক স্বচ্ছল পরিবারের সন্তান। যুদ্ধ শুরু হবার যৌবনের টানে এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সে কলেজ ছেড়ে দিয়ে আর্মিতে নাম লেখায়। কিন্তু আসার এক সপ্তাহের মধ্যেই তার মোহভঙ্গ হয়। সে উপলব্ধি করে, সৈন্যরা কোন আদর্শ বা দেশপ্রেমের জন্য যুদ্ধ করছে না। দেশে তেমন কোন কাজ নাই, তাই ভিয়েতনামে এক বছর খেটে কিছু পয়সা উপার্জনই তাদের লক্ষ্য। ফিরে গিয়ে আবার কোন ফ্যাক্টরিতে কাজ শুরু করবে। এরা ভিয়েতনাম নিয়ে আদৌ চিন্তিত না এবং জানেও না আসলে কি হচ্ছে। ভিয়েতনামের জঙ্গলের অবর্ননীয় দুর্ভোগ আর পদে পদে মৃত্যুর আশংকাকে কিছু সময় ভুলে থাকার জন্য এদের বেশিরভাগ বেছে নিয়েছে মাদকের আশ্রয়।



যে টেইলারকে আমরা ছবির প্রথম অংশে দেখেছি এক সহজসরল গোবেচারার ভূমিকায়, খুব কাছ থেকে দেখা সহযোদ্ধার নির্মম মৃত্যু তার ভেতরের পশুপ্রবৃত্তিকেও জাগিয়ে তোলে। ভিয়েতনামি গ্রামে ঢুকে অস্ত্র এবং বিদ্রোহি খোঁজার নামে গত কয়েক সপ্তাহের ভয়াবহ যন্ত্রনার ঝাল সে মেটাতে থাকে অসহায় গ্রামবাসীদের উপর। ছবির এক পর্যায়ে সৈন্যরা কার্যত দুইভাগ হয়ে যায় সার্জেন্ট বার্নস (Tom Berenger ) ও সার্জেন্ট এলাইয়াস (Willem Dafoe ) এর নেতৃত্বে। বার্নস ধ্বংসাত্বক মনোভাবের, হিংস্র, অসামরিক ভিয়েতনামিদের প্রতি কোন দয়া প্রদর্শনে প্রবল অনীহা, এমনকি নিজেদের কেউও তার কথা অমান্য করলে সে তার প্রতি চরমতম নিষ্ঠুরতা দেখাতে দ্বিধা করে না। এলাইয়াস ঠিক তার উলটো, সে আক্রমন করে শুধু অস্ত্রধারীদের উপর, নিরীহ গ্রামবাসীকে অত্যাচার করতে রাজি না। বাকি ছবি হচ্ছে এই দুই আদর্শের সংঘাত। এর চেয়ে বেশি আর বলতে চাই না, কারন তাহলে পাঠক কাহিনীসুত্র পেয়ে যাবেন যা ছবি দেখার মজা নষ্ট করবে। শুধু এইটুকু বলি - Expect the unexpected।

এই ছবির পরিচালক Oliver Stone নিজেও ভিয়েতনামে যুদ্ধ করেছেন এবং এই ছবির অনেক কিছুই তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ফসল। Stone এর বেশিরভাগ ছবিই রাজনৈতিক বা কোন বিতর্কিত বিষয় নিয়ে নির্মিত। তার ছবিগুলি হয়ত Scorsese বা Spielberg মত বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করেনি কারন তার ছবিতে সাধারন দর্শকদের জন্য বিনোদনের খোরাক কম থাকে। কিন্তু তার একটা সুনির্দিষ্ট ভক্তশ্রেনী আছে। যেমন এই ছবিতেও তিনি ইউএস আর্মিকে গ্ল্যামারাইজড করে দর্শককুলের সহানুভুতি পাওয়ার চেষ্টা করেননি, বরং তার আসল রুপ এবং যুদ্ধকালীন বর্বরতাকেই তুলে ধরেছেন। Platoon ছবিকে বেশিরভাগ সমালোচক তার সেরা কাজ বলে মনে করেন।


Elizabeth Taylor এর কাছ থেকে Platoon এর জন্য অস্কার গ্রহন করছেন Oliver Stone।

এই ছবির পোস্টারটার একটা বিশেষত্ব আছে। সাধারনত ছবির প্রধান চরিত্রের ছবিই থাকে পোস্টারে। এই ছবির পোস্টারে কিন্তু আছে একজনেরই ছবি, পার্শ্ব অভিনেতা সার্জেন্ট এলাইয়াস। দু'হাত তুলে যেন ঈশ্বরের কাছে আশ্রয় চাইছেন বা শান্তি প্রার্থনা করছেন।

১৯৮৬ সালে Johnny Depp ছিলেন একেবারেই আনকোরা একজন অভিনেতা। পরিচালক তাকে এই ছবির মূল চরিত্রে নিতে চেয়েছিলেন কিন্তু নতুন একজনের উপর এত গুরুত্বপূর্ন একটা ছবি চাপিয়ে দিতে সাহস পাননি। শেষ পর্যন্ত Depp একটা Blink and miss (এই কথার সরল বাংলা হচ্ছে, খুব ছোট আধ-এক মিনিটের চরিত্র) ধরনের চরিত্র করেন। আগে থেকে জানা না থাকলে ছবিতে তাকে খুঁজে পাওয়াই অসম্ভব।


Johnny Depp এর Platoon অভিজ্ঞতা

Platoon আর দশটা হলিউডি যুদ্ধছবির মত ইউএস আর্মির মহানুভবতা বা সাফল্যের কাল্পনিক গল্পগাঁথা না। বরং এটা তাদের ৩০০ বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে লজ্জাজনক অধ্যায় ভিয়েতনাম যুদ্ধের ব্যর্থতার ও ভয়াবহতার ছবি। এটাই এই ছবিকে বিশিষ্ট করে তুলেছে।


ভাল কোয়ালিটি

http://stagevu.com/video/aukjfrpwfbok

বেশ ভাল কোয়ালিটি

http://www.fileserve.com/file/xtMVNZy
http://www.fileserve.com/file/bgyZJZ9
http://www.fileserve.com/file/ySKpnAF
http://www.fileserve.com/file/WUWvmFf
http://www.fileserve.com/file/BrBSz2h
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১১ ভোর ৫:০৯
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×