somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

[ইতিহাসের এই দিনে] শহীদ রুমী এবং তার সহযোদ্ধারা পাকবাহিনীর হাতে ধরা পড়েন (২৯শে আগস্ট, ১৯৭১)

২৯ শে আগস্ট, ২০১১ দুপুর ২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



/* এই পোস্ট ঢাকা অপারেশনের ইতিহাস বা একাত্তরের দিনগুলি বইয়ের রিভিউ না।*/

শাবাশ বাংলাদেশ, এ পৃথিবী
অবাক তাকিয়ে রয়!
জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার
তবু মাথা নোয়াবার নয়।

জাহানার ইমামের একাত্তরের দিনগুলি মুক্তিযুদ্ধের উপর রচিত প্রথম বই তো অবশ্যই নয়, এমনকি এটি কোন পূর্নাঙ্গ ইতিহাসের বইও নয়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সর্বাধিক পঠিত বই বোধহয় অনায়াসেই দাবি করা যায়।টা প্রথম প্রকাশিত হয় '৮৬ সালের একুশে বইমেলায় এবং প্রকাশের সাথে সাথেই তুমুল জনপ্রিয় ও আলোচিত হয় (ধন্যবাদ ব্লগার কাঊসার রুশোকে প্রকাশসালটা নিশ্চিত করার জন্য)। এক মায়ের সহজ-সরল ভাষায় লেখা তার শহীদ পুত্রের স্মৃতিচারন আর তার ফাঁকে ফাঁকে যুদ্ধকালীন সময়ের দমবন্ধকরা পরিবেশের বর্ননা পাঠকসমাজ সাদরে গ্রহন করে নেয়। জাহানারা ইমাম উপাধি পান "শহীদ জননী"।

বইটা পড়েননি, শিক্ষিত সমাজে এমন মানুষ বিরল। তবুও একটা সংক্ষিপ্ত বর্ননা দিয়ে সবার একবার স্মৃতিকে ঝালিয়ে নিতে চাই। এটা মূলত লেখিকার ৭১ সালের পয়লা মার্চ থেকে আঠারই ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের ব্যক্তিগত দিনপঞ্জি। বই প্রকাশের আগে অবশ্য তিনি তার আসল দিনপঞ্জিটার কিছু কাঁটাছেড়া করেছেন। সদ্য ইন্টারমিডিয়েট পাস বড় ছেলে রুমী বাবা-মায়ের অনুমতি নিয়ে তাদের সহযোগিতায়ই ৭ই মে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেবার জন্য রওনা হন। কিছু সমস্যার কারনে আবার ১১ই মে ফিরে আসতে বাধ্য হলেও শেষ পর্যন্ত পাকাপাকিভাবে ১৪ই জুন চলে যান। মুক্তিবাহিনীর হাইকমান্ড ঢাকাতে অব্যহত গেরিলা আক্রমন চালানোর সিদ্ধান্ত নিলে ঢাকার মুক্তিযোদ্ধার বিরাট গ্রুপ আগস্ট মাসের দিকে রাজধানীতে প্রবেশ করে।রুমীও এই গ্রুপের সাথে ৮ই আগস্ট ঢাকা ফিরে নিজেদের বাড়িতেই ওঠে। অনেকগুলি ছোটবড় অপারেশনের মাধ্যমে পাকবাহিনীর জন্য যথেষ্ট ভোগান্তি সৃষ্টির পর দূর্ভাগ্যক্রমে রুমী এবং বিভিন্ন স্থানে অবস্থানকারী তার দলের বহু মুক্তিযোদ্ধা ২৯শে আগস্ট রাতে প্রায় একই সময় ধরা পড়ে যায়। রুমীর সাথে তার বাবা এবং ছোট ভাই জামীকেও ধরে নিয়ে যায়, তবে ৩১ তারিখেই তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। ৩০ তারিখ দুপুরে তারা শেষবার রুমীকে দেখেছিল। এরপর রুমীর আর কোন খবর পাওয়া যায়নি। ছেলে হারানোর শোক রুমীর বাবা শরীফ সাহেব খুব বেশি সহ্য করতে পারেননি। স্বাধীনতার ঠিক আগমুহুর্তে ১৩ই ডিসেম্বর তিনি মারা যান।

এ ধরনের একটা কাল্ট বই থেকে কালজয়ী নাটক বা সিনেমা তৈরী হতে পারত। কিন্তু দূর্ভাগ্য আমাদের যে তেমন কেউ সেই চেষ্টা করলেন না। খুব সম্ভব ৯৬ সালে বা তার আশেপাশে বিটিভিতে বইয়ের প্রথম কিছু অংশ নিয়ে একটা সাপ্তাহিক নাটক নির্মান করা হয়। শহীদুজ্জামান সেলিম রুমী চরিত্রে অভিনয় করেন। একে তো নাটকটা ছিল বইয়ের খন্ডিতাংশ, তার উপর ৯৬তে সেলিমের বয়স ছিল ৭১এ রুমীর বয়সের প্রায় দ্বিগুন। এছাড়া দুর্বল নির্মানশৈলীর কারনে দর্শকের বিরক্তি উৎপাদন ছাড়া এই নাটকের তেমন কোন সাফল্য নাই।

মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রুমী কোন সারির ছিলেন সেটা আমি জানি না। যুদ্ধ শেষে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে তিনি কোন পদক/উপাধি পাননি। স্বাধীনতা যুদ্ধের ৩০ লক্ষ শহীদের মধ্যে কতজন সরাসরি মুক্তিযোদ্ধা সেটাও আমার জানা নাই। শুধু আলোচনার সুবিধার্থে আন্দাজ করে নিচ্ছি সংখ্যাটা ৫০ হাজারের মত। এই অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা শহীদের মৃত্যুদিবস বা গ্রেফতার দিবস মনে রাখা বাস্তবে সম্ভব না। তাহলে এই ২৯শে আগস্টের তাৎপর্য কি? স্বাধীনতার ১৫-১৬ বছর পর অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনে ব্যর্থতা আর দালাল-রাজাকারদের পূনর্বাসন ও ক্ষমতার শীর্ষে আরোহনের পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার যখন প্রায় মৃত্যু ঘটছিল, সেই সময় রুমীর এই কাহিনী আমাদেরকে তীব্র একটা ঝাঁকুনি দিয়ে মনে করিয়ে দিয়েছিল আমাদের পূর্বপ্রজন্মের আত্মত্যাগ, সাহসিকতা আর দেশপ্রেমের কথা। রুমী এখন আর একজন ব্যক্তি নন, তিনি একটা প্রতীক। যেসব মুক্তিযোদ্ধা ধরা পড়ে ভয়াবহ টর্চারের মুখোমুখি হয়েছিলেন বা টর্চারের ফলে শহীদ হয়েছেন, তাদের সবার প্রতীক হয়ে উঠেন রুমী। আজকের এই দিনটাকে স্মরন করার মাধ্যমে আমরা তাদের সবাইকে একযোগে সম্মান জানাতে পারি।

পুনশ্চঃ একই বছর বা কাছাকাছি সময়েই শফিক আহমেদের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় "একাত্তরের ঘাতক ও দালালরা কে কোথায়" (প্রকাশের অল্পদিনের মাথায় নিষিদ্ধ ঘোষিত)। এই বইতে দালালের তালিকায় ৭১ সালে রোকেয়া হলের প্রভোস্ট আখতার ইমামের নাম আছে। নামের মিল থাকার কারনেই হোক অথবা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শিবিরের চক্রান্তেই হোক, গুজব ছড়ায় যে এই আখতাম ইমাম জাহানারা ইমামের মা। অনেকেই এটা বিশ্বাস করতেন, যারা বিশ্বাস করতেন না তাদের মধ্যেও একটু দ্বিধা ছিল। একাত্তরের দিনগুলি বইটাতে জাহানারা ইমামের মায়ের কথা বহুবার উল্লেখ আছে, বর্ননায় একজন সাধারন গৃহবধু বলেই মনে হয়। খুব দুর্বল সংবাদপত্র বা অন্যান্য গনমাধ্যমগুলি এই গুজবের সত্যতা যাচাইয়ের কোন চেষ্টা করেনি। অনেক পরে নব্বই দশকের শুরুর দিকে কোন এক পত্রিকায় এই গুজবকে সম্পূর্ন ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করা হয়।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১১ ভোর ৬:১৩
৪১টি মন্তব্য ৪১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×