somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

[ভুলে যাওয়া নাটকগুলি] হুমায়ুন আহমেদের ঈদের বিশেষ নাটক একদিন হঠাৎ (১৯৮৬) - ডাউনলোড লিঙ্কসহ

০৫ ই অক্টোবর, ২০১১ সকাল ৮:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
পোস্ট উৎসর্গঃ ব্লগার ছাইরাছ হেলাল



বাংলাদেশ টেলিভিশনের ঈদের হাসির নাটক কালচারকে জনপ্রিয় করেন আমজাদ হোসেন। ১৯৭৫-৭৬ সালের দিকে এক ঈদের নাটকের জন্য তিনি জব্বর আলী নামে এক ধান্দাবাজ ব্যবসায়ীর চরিত্র সৃষ্টি করেছিলেন। প্রথম নাটকই অসাধারন জনপ্রিয় হওয়ায় এরপর বহুবছর ঈদ মানেই ছিল জব্বর আলীর হাস্যরসাত্মক নাটক। প্রতিবছর ঈদের আগমুহুর্তে জব্বর আলী একটা নতুন ধরনের দুই নম্বরী ব্যবসা শুরু করতেন, প্রথম দিকে প্রচুর অর্থাগমন হলেও নাটকের শেষ দিকে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যেতেন এবং ঈদ কাটত জেলের ভিতর। ৮৪-৮৫ সাল পর্যন্ত অব্যহত ছিল জব্বর আলী তথা আমজাদ হোসেনের জয়যাত্রা। এরপর একসাথে দু'টো ঘটনা ঘটে - প্রথমত, জব্বর আলীকে রিপিটেটিভ হতে থাকায় এটি আকর্ষন হারায়, এছাড়া একটু চড়া সুরের বলে শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেনীর মন জোগাতে পারছিল না। দ্বিতীয় ঘটনা, বাংলা সাহিত্য এবং টেলিভিশন নাটকে হুমায়ুন আহমেদ নামক নক্ষত্রের আবির্ভাব হয়। ঈদের বিশেষ নাটকের আকর্ষন হুমায়ুন আহমেদের দিকে কেন্দ্রীভূত হয়।

একদিন হঠাৎ খুব সম্ভব হুমায়ুন আহমেদের প্রথম ঈদের নাটক। প্রযোজক মুস্তাফিজুর রহমানের সাথে তার টেলিভিশন ধারাবাহিকের ইতিহাসে মোড় ঘোরানো নাটক এইসব দিনরাত্রি তখন মাত্র শেষ হয়েছে। এমন রমরমা সময়েই এই জুটি আবার ফিরে এল ঈদের বিশেষ নাটক নিয়ে।

স্বচ্ছল ডাক্তার ফরিদ (কাজী খুরশিদুজ্জামান উৎপল) স্ত্রী সোমা (ডলি জহুর), ছোট বোন মিলা (অরুনা বিশ্বাস), ছেলে কাজল (অভি) এবং বদমেজাজী বাবাকে (আরিফুল হক) নিয়ে বাস করেন। এছাড়া ফরিদের মধ্যবয়স্ক, অবিবাহিত এবং কিঞ্চিত পাগলাটে স্বভাবের মামাও (আলী যাকের) স্থায়ীভাবে এই পরিবারের সাথেই থাকেন। বাবাকে প্রচন্ড ভয় পান ফরিদ, ফলে সংসারের চাবিকাঠি এখনও বাবার হাতেই এবং বাবাও প্রায়ই নানারকম অদ্ভুত নিয়মকানুন জারি করেন। এসব নিয়ে সোমা প্রচন্ড বিরক্ত।

ট্রাকে চাপা পড়ে মারা যেতে পারে এই ভয়ে ফরিদের বাবা তার নাতির স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেন। এর বদলে তার জন্য একটা মাস্টার (হুমায়ুন ফরিদী) ঠিক করেন যে বাড়িতেই থাকবে আর প্রথাগত শিক্ষার পরিবর্তে সার্বক্ষনিক কাজলকে প্রাচীন ভারতীয় গুরু-শিষ্য পদ্ধতিতে পড়াশোনা করাবে।

ফরিদের বাবা তার পাগলাটে শ্যালককে একেবারেই সহ্য করতে পারেন না। তার দৃঢ় বিশ্বাস শ্যালকের মাথা খারাপ এবং তিনি তাকে তালাবন্ধ করে রাখার সিদ্ধান্ত নেন।

কাজলকে স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য মাস্টার একদিন তাকে মিরপুর চিড়িয়াখানায় ছেড়ে দিয়ে আসে যাতে সে নিজেই পথঘাট চিনে ফিরে আসতে পারে। এই ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ফরিদের বাবা মাস্টারকেও মামার সাথে একই ঘরে তালাবন্ধ করে রাখেন। দুই ঘন্টা থানা-পুলিশ, হাসপাতাল সব খোঁজাখুজির পর কাজল নিজেই বাড়ি ফিরে আসে।

এর ফাঁকে ঘটতে থাকে অসংখ্য মজার ঘটনা।

এই নাটককে হুমায়ুন আহমেদের মাস্টারপিস বলা যায়। ঈদের নাটকের মূল উদ্দেশ্য মানুষকে হাসানো আর এই কাজে নাটকটা ছিল দারুন সফল। আমজাদ হোসেনের জব্বর আলী সিরিজের সবচেয়ে বিখ্যাত "ট্যাকা দেন, দুবাই যামু" (নাটকের নামটা ভুলে গেছি, কেউ মনে করিয়ে দিতে পারবেন?) ছাড়া আর কোন ঈদের নাটক এতটা জনপ্রিয় হয়নি। যদিও এটা হুমায়ুন আহমেদের নাটকের কমন ফরমেটের উপরই করা হয়েছে। তার তৈরী করা কিছু চরিত্র আছে, যেগুলি আরও বহুবার বিভিন্ন জায়গাতে ব্যবহার করেছেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই নাটকের বছর দু'য়েক পর তার দ্বিতীয় ধারাবাহিক বহুব্রীহি প্রচারিত হয় যেখানে এই নাটকের মামা এবং বয়স্কা কাজের বুয়া চরিত্র দু'টি হুবহু নিয়ে আসা হয়েছিল এবং একই অভিনেতা-অভিনেত্রীই (আলী যাকের এবং মাহমুদা খাতুন) সেই চরিত্র দু'টি করেছিলেন। আবার এর কয়েক বছর পর তিনি 'বিবাহ' নামে আরেকটি ঈদের নাটক করেছিলেন যেখানে এই নাটকের মাস্টারের মত একটা বোকাসোকা চরিত্র ছিল এবং হুমায়ুন ফরিদীই সেই চরিত্রটি করেছিলেন। কিন্তু সেসময় হুমায়ুন আহমেদ নতুন ছিলেন বলে তার পুনরাবৃত্তির ঝোঁক তখনও ধরা পড়েনি। সবশ্রেনীর দর্শক প্রান খুলে হেসেছে নাটক দেখে।

বিটিভির নাটকে নানা সীমাবদ্ধতার কারনে প্রযোজকের ভূমিকা খুব বেশি থাকে না। মুস্তাফিজুর রহমান একটা দুর্দান্ত স্ক্রিপ্ট পেয়েছেন এবং চরিত্রগুলিতে একদম সঠিক অভিনেতাদের কাস্ট করতে পেরেছিলেন। একটা ব্যাপারেই অভিযোগ করা যায়, শ্বশুরের ছেলে-বৌমার শোবার ঘরে একাধিকবার দুম করে ঢুকে যাওয়াটা চোখে লাগছিল। প্রযোজক সতর্ক হতে পারতেন।

অভিনয়ের কথা বলতে গেলে এক নম্বরে আসবে হুমায়ুন ফরিদী। এক কথায় বলা যায় - আউটস্ট্যান্ডিং। ফরিদীর অভিনয় জীবনকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় - শুরু থেকে '৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ টেলিভিশনে, '৯০ থেকে ২০০০ পর্যন্ত সিনেমায়, এই সময় তিনি টিভিতে আসা প্রায় ছেড়ে দেন এবং ২০০০ থেকে বর্তমান মূলত প্রাইভেট প্রডাকশনে। সন্দেহাতীতভাবে তিনি তার উজ্জ্বলতম সময় কাটিয়েছেন ৯০ এর আগে বাংলাদেশ টেলিভিশনে। গত ৮-১০ বছর ধরে সিনেমা ছেড়ে আবার টেলিভিশনে প্রচুর কাজ করছেন। এই সময়কার কাজগুলি দেখে মনে হয়েছে, ১০-১২ বছরের সিনেমার ক্যারিয়ার তার অভিনয় প্রতিভা পুরোপুরি নষ্ট করে দিয়েছে। তার অভিনয়ের সেই ধার আর দেখা যায় না। যাই হোক, আশির দশকে তার প্রচুর দুর্দান্ত পারফর্মেন্সকে মাথায় রেখেও বলতে হবে, একদিন হঠাৎ নাটকটা তার সবচেয়ে ভাল কাজগুলির অন্যতম।

হুমায়ুন ফরিদীর পর আসবে আলী যাকের এবং আরিফুল হকের কথা। আলী যাকের তার অভিনয় প্রতিভার প্রতি সুবিচার করেননি কখনোই। নাটকে যতটুকু সময় দিতেন, মঞ্চেই দিয়েছেন বেশি। টিভি নাটকে তাকে দেখা যেত খুব কম। যারা মঞ্চে তার 'নূরুলদিনের সারাজীবন' বা 'দেওয়ান গাজীর কিসসা' দেখেছেন, তারা জানেন যে কি জাদু তিনি দেখাতে পারেন! এই নাটকেও তিনি ছিলেন অসাধারন। আরিফুল হক আর আলী যাকেরের লাভ অ্যান্ড হেইট দৃশ্যগুলিতে তাদের দুর্দান্ত পারফর্মেন্স প্রানসঞ্চার করেছে।

ডলি জহুরের মত অভিনেত্রীকে ঠিকমত ব্যবহার করা হয়নি। নাটকে তার কাজ ছিল খুব সীমিত। উৎপল, অরুনা বিশ্বাস ঠিকঠাক। অন্যান্য সহঅভিনেতারা ভালই। অভি প্রযোজক মুস্তাফিজুর রহমানের ছেলে। সেই সুবাদে ওই সময় তাকে প্রায়ই টিভিতে দেখা যেত। বাবার পরিচয় দিয়ে শিল্পচর্চা বেশিদিন করা যায় না। একটু বড় হবার পর আর তাকে দেখা যায়নি। নাটকে একটা ফুটফুটে বাচ্চা প্রয়োজন ছিল, সেই প্রয়োজন সে মিটিয়েছে। এর বেশি তাকে নিয়ে বলার তেমন কিছু নাই।

একদিন হঠাৎ নাটকের অভাবনীয় সাফল্যের কারনে হুমায়ুন আহমেদ-মুস্তাফিজুর রহমান জুটি পরের বছর এর সিক্যুয়েল তৈরী করেন। সিক্যুয়েলের নাম 'যার যা পছন্দ'। যদি কখনো সৌভাগ্যক্রমে হাতে পাই, তখন এর গল্প করা যাবে।

ডাউনলোড লিঙ্ক



প্রিন্ট খুব ভাল না।

------------------------------------------------------------------------------
ব্লগার ছাইরাছ হেলালকে আমার খুব পছন্দ। শিল্পমনা মধ্যবয়স্ক এই মানুষটার মধ্যে একটা সাত্ত্বিকভাব আছে। সবার বন্ধু হয়ত উনি হতে পারেননি, কিন্তু তার শত্রুও নাই। মাঝে মাঝে ইচ্ছা হয়, তার মত হই! এছাড়া তার যে জিনিসটা আমার খুব ভাল লাগে সেটা হচ্ছে তার সামনে আমি নিজেকে কমবয়সী ভাবার সুযোগ পাই।

যাই হোক। ভাল থাকবেন হেলাল স্যার আর অনেক দোয়া করবেন আমার জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:১৪
৮৭টি মন্তব্য ৭৭টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×