আজ নিশীথিনীর মন ভালো নেই । সকাল থেকে ঘুম থেকে উঠার পরেই তার কেমন অস্থির অস্থির লাগছে । মাঝে মাঝে এমন দিন আসে কিছুই ভালো লাগে না । নিশীথিনী ঠিক করলো আজ সারাদিন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবে । কাউকে সাথে নিবে না । একা একা ঘুরতেই তার বেশী ভালো লাগে । সকালবেলা গোছল করে, চোখে কাজল দিয়ে, সুন্দর একটা নীল শাড়ি নিশীথিনী বের হয়ে গেল বাসা থেকে । নীলক্ষেত গেলো দুই একটা বইয়ের দোকান ঘুরলো । তারপর নিউ মা্র্কেট গিয়ে বার্গার আর কোক খেয়ে নিল । নিশীথিনী ভাবছে এখন কোথায় যাবে ? ভাবতে ভাবতে সে একটু গুন গুন করে গান গেয়ে নিল- 'পথ যে এখনো বাকি, জানি নাতো আমি কে, কারো কিছু হই কিনা, এই এক ভাবনায় সারাদিন...' ।
নিশীথিনী বসে আছে ধানমন্ডি লেকে । তার আশে-পাশে আরো অনেক মানূষ । সে খুব মন দিয়ে আশে পাশের সবার কর্মকান্ড দেখছে । কিন্তু তার পাশে যে একটা অচেনা ছেলে বসে আছে সেদিকে লক্ষ্য নেই । নিশীথিনী অনেকক্ষন পর ছেলেটিকে লক্ষ্য করে । ছেলেটি আপন মনে বাদাম খাচ্ছিল । ছেলেটির দিকে তাকিয়ে নিশীথিনী বলল- এত জায়গা থাকতে আপনি আমার পাশে এসে বসেছেন কেন ? ছেলেটি একটূ হেসে বলল- ম্যাডাম আমি আপনার পাশে এসে বসিনি, আপনি আমার পাশে এসে বসেছেন । আমি আধা ঘন্টা ধরে এখানে বসে আছি । আপনি তো আসলেন মাত্র । নিশীথিনী ধমক দিয়ে বলব- চুপ আর একটা কথা না । বদ পোলা ।
সময় দুপুর ১২ টা । আকাশ মেঘলা । লেকের দিকে আপনারা যদি ভালো করে তাকান তাহলে দেখতে পারবেন নিশীথিনী আর বদ পোলাটা নৌকায় করে ঘুরছে । নৌকা দুলছে, নিশীথিনীর ভয় করছে- তাই সে ছেলেটার একটা হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে । বদ ছেলেটা বলল- কোনো ভয় নেই, আমি আছি । তখন নৌকাটা যাচ্ছে জাহাজ ব্লিলিং এর পাশ দিয়ে । বদ পোলাটার কাঁধে মাথা রেখে নিশীথিনী বলল, আমার গান গাইতে ইচ্ছা করছে ! বদ ছেলেটা বলল গাও ! নিশীথিনী গাইলো- " আমি তোমার কোন অনন্ত ছায়ায়- শুয়ে আছি, শুয়ে রবো, আমি তোমার কাছ থেকে বহু দূরে- তবু ছায়ায় মতো তোমার মাঝে শুয়ে আছি, জেগে আছি, বসে আছি...'।
সময় দুপুর ২ টা । নিশীথিনী বলল আমার খুব ক্ষুধা পেয়েছে । বদ পোলাটা একটা রিকশা ঠিক বলল, চলো স্টার হোটেলে যাই । রিকশায় করে ১০ মিনিট সময় লাগবে । সেখানকার বিরানী টা খুব ভালো হয় । নিশীথিবী বলল- তুমি কি করে বুঝলে আমার বিরানী খেতে ইচ্ছা করছে ! বদ পোলাটা কিছু না বলে একটু হাসলো । বদ পোলাটা আজ একটা সাদা শার্ট আর জিন্স পড়েছে । পায়ে কেডস । মাথার চুল গুলো এলোমেলো, মনে হয় কখনোই চুল আচড়ায় না । তারা দুই জন মিলে খুব আনন্দ করে খেলো । খাওয়া শেষে নিশীথিনী বলল- শোনো, আমি ঘুমাবো । তুমি বসে থাকবে, আমি তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাবো । কোনও ডিসর্টাব করবে না । বদ পোলাটা বলব আচ্ছা ।
লেকের দক্ষিণ দিকটার এসে একটা বেঞ্চে এসে বসল ওরা । নিশীথিনী বদ পোলাটার কোলে মাথা রাখল । নিশীথিনী বলল- এই আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দাও । এই, তুমি না কবিতা জানো ! একটা কবিতা শুনাও । বদ পোলাটা আস্তে আস্তে আবৃত্তি করলো- "ঘাস, তুমি নেবে আমাকে ? ঘাসফুল, নেবে ? খেলায় ?/ আমি দিন ফুরিয়েছি ঘুরে ঘুরে মেলায়, আমার যা কিছু নাও/ এসেছি তোমার কাছে বড় অবেলায়/ তুমি যদি ছুড়ে ফেলো হেলায়/ ভাসিয়ে দাও নিরুদ্দেশে ভেলায়/ আমি ফিরে তোমার কাছেই যাবো-শতবার নিজেকে হারাবো ।" নিশীথিনী সত্যি সত্যি গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো । বদ পোলাটা এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে নিশীথিনীর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে ।
এক ঘন্টা বিশ মিনিট পর নিশীথিনীর ঘুম ভাঙ্গল । নিশীথিনী বদ পোলাটার দিকে তাকিয়ে বলল- এই ছেলে তোমার নাম কি ? কি অবাক ব্যাপার দেখো, তোমার সাথে নৌকায় করে ঘুরলাম, দুপুরে এসাথে খেলাম, তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমালাম আর তোমার নামটাই জানা হয়নি ! নিশীথিনী উত্তরের অপেক্ষা না করেই বলল- চলো চা খাবো । আজ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে চা খাবো । তোমার আপত্তি নেই তো ? বদ পোলাটা দুই দিকে মাথা নাড়ল । ৩২ নম্বর এর কাছে রাস্তায় দাড়িয়ে ওরা চা খেলো । বদ পোলাটা সিগারেট ধরাতে গেলেই নিশীথিনী কঠিন গলায় মানা করলো - অসম্ভব আমি যতক্ষন তোমার কাছে আছি নো সিগারেট । ছেলেটি বলব- আচ্ছা ।
এখন বিকেল ৫ টা । আপনারা যদি ভালো করে লক্ষ্য করেন, তাহলে দেখতে পাবেন, নীল শাড়ি পরা মেয়েটার পাশে বদ পোলাটা আছে । বদ পোলাটার হাত ধরে ধরে হাটছে নিশীথিনী । নিশীথিনীর দুই হাত ভরতি কাচের চুড়ি । তার মাথার চুল আর শাড়ির আঁচল বাতাসে উড়ছে । শীত কালে তারাতাড়ি সন্ধ্যা হয়ে যায় । তারা হাঁটতে হাঁটতে এক সময় জারুল গাছের নিচে এসে দাঁড়ায় । তখন সূর্য ডুবে গেছে । নিশীথিনী বলল- একটা সি এন জি ঠিক করে দাও, বাসায় যাবো । ছেলেটা বল-আচ্ছা । বদ পোলাটা তখন নিশীথিনীর অনুমতি নিয়ে, দুই হাত দিয়ে নিশীথিনীর কোমর জড়িয়ে ধরে এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে ঠোঁটে একটা চুমু খেলো । নিশিথিনী এক আকাশ ভালোবাসায় ডুবে গিয়ে বলল- ''যেদিকে যেতে বল যাবো। নিজেকে হারাবো । কাছে থেকো । একটি শর্তই শুধু- ভালোবেসো - এই বলেই নিশীথিনীর চোখ থেকে দু'ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল ।
আজকের মতো ওদের কাহিনী শেষ । এখন আপনাদের বলি- নিশীথিনীর নাম নিশিথীনি নয়, আর বদ পোলাটার নাম বদ পোলা নয় । নিশিথিনীর নাম হচ্ছে- হিমি আর বদ পোলাটার নাম হচ্ছে - গুল্লু । সেই পরিচিত নাম । পরিচিত মানূষ । পরিচিত গল্প । When night is almost done.// and Sunrise grows so near// That we Can touch the spaces// It's time to smooth the hair .
আলোচিত ব্লগ
মা
মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।
অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।
একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প
তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে
ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন
জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।
সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন