somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

পেঁচা

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মধ্যযুগে ইউরোপে পেচা দেখলেই অশুভ মনে করে পুড়িয়ে মারা হত।পৃথিবীর যে কোনো প্রাণীর চেয়ে বেশি দৃষ্টি শক্তির অধিকারী হলো পেঁচা।শীতের আধার রাতে টু-হুইট-টু-হুউ শব্দ শুনে অনেকেই বুঝতে পারে পেঁচা ডাকছে।সারা পৃথিবী জুড়ে ১৭০ ধরণের বিভিন্ন প্রজাতির পেঁচা দেখা যায় যাদের অধিকাংশই রাতের বেলা বের হয় শিকারের জন্য।পেঁচাদের দৈহিক বৈশিষ্ট্যের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো ওদের বড় বড় গোল দুটো চোখ।মাথা ঘুরিয়ে এরা প্রায় পুরোপুরি পেছনের দিকে তাকাতে পারে। একারণেই এক জায়গায় চুপটি করে বসেই ওরা চারদিকে নজর রাখতে পারে। দিনের আলো এই বড় বড় চোখের পেঁচা সইতে পারে না, একারণই বেচারা পেঁচা রাতের পাখি খেতাব পেয়ে গেল। পেঁচা এক মারাত্মক শিকারী পাখি। বেশির ভাগ পেঁচারই লম্বা ও ধারালো নখর আছে। পাখা দুটো বেশি না দুলিয়েই এরা উড়তে পারে।একবার যখন তার শিকারকে খুঁজে পায় অমনি সে বাঁকানো নখড়ের থাবা নিয়ে নেমে আসে শিকার ধরতে। ওদের খাবারে তেমন কোন বাছবিচার নেই। ক্ষুদে ইঁদুর, শুয়োপোকা, ঢোরা সাপ, ব্যাঙ ইত্যাদি ।

"পেঁচা পারেনা প্যাঁচাল- জানেনা প্যাঁচ, মানুষের সাথে অমিলটা এখানেই- মরা-বাঁশের মাথায় বসে, রাত-জাগা-পেঁচা, এসবই বুঝি ভাবে!" দিনের বেলায় গভীর জঙ্গলে কিংবা গাছ-গাছালির ঘনপাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকে। এরা মানুষের কোনো ধরনের ক্ষতিই করে না বরং ইঁদুর খেয়ে উপকার করে। তারপরও এরা মানুষের কাছে অপয়া হিসেবে পরিচিত।স্ট্রিগিফর্মিস বর্গভূক্ত এই পাখিটির এখনও পর্যন্ত প্রায় ২০০টি প্রজাতি টিকে আছে।কুমেরু, গ্রীনল্যান্ড এবং কিছু নিঃসঙ্গ দ্বীপ ছাড়া পৃথিবীর সব স্থানেই প্যাঁচা দেখা যায়। বাংলাদেশে ১৭টি প্রজাতির পেঁচা আছে ।মূলত নিঃসঙ্গচর। এরা গাছের কোটর, পাহাড় বা পাথরের গর্ত বা পুরনো দালানে থাকে।পেঁচা দূরবদ্ধদৃষ্টি আছে ফলে এরা চোখের কয়েক ইঞ্চির মধ্যে অবস্থিত কোন বস্তু পরিস্কারভাবে দেখতে পায় না।শ্রবণশক্তি খুব প্রখর। শুধু শব্দ দ্বারা চালিত হয়ে এরা নিরেট অন্ধকারে শিকার ধরতে পারে। সামান্য মাথা ঘুরালে পেঁচা অনুচ্চ শব্দ যেমন ইঁদুরের শষ্যদানা চিবানোর আওয়াজও শুনতে পায়।

ভিন্ন প্রজাতির পেঁচার ডাক ভিন্ন রকম। ডাকের ভিন্নতা অনুযায়ী বাংলায় বিভিন্ন প্যাঁচার বিভিন্ন নামকরণ হয়েছে। যেমন: হুতুম পেঁচা (Bubo bengalensis), ভূতুম পেঁচা (Ketupa zeylonensis), লক্ষ্মী পেঁচা (Tyto alba), খুঁড়ুলে পেঁচা (Athene brama), কুপোখ পেঁচা (Ninox scutulata), নিমপোখ পেঁচা (Otus lepiji) ইত্যাদি। কেনিয়ার কিকুয়ু উপজাতিগোষ্ঠী বিশ্বাস করে যে, পেঁচা মৃত্যুর আগমনের কথা জানিয়ে দেয়। যদি কেউ একটি পেঁচা দেখে কিংবা তার আওয়াজ শোনে তাহলে সে মৃত্যুমুখে পতিত হবে। প্রচলিত বিশ্বাসবোধে পেঁচাকে মন্দ ভাগ্য, শারীরিক অসুস্থতা অথবা মৃত্যুর প্রতিচ্ছবি হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রাচীনকাল থেকেই এই বিশ্বাস অদ্যাবধি প্রচলিত রয়েছে।



খুঁড়ুলে পেঁচা বাংলাদেশে সুলভ আবাসিক পাখি। দেশের সব অঞ্চলে পাওয়া যায়। আবাদি জমি, চা-বাগান, গ্রাম, শহর, নগর ও লোকালয়ে বিচরণ করে। সচরাচর জোড়ায় ও পারিবারিক দলে থাকে। রাতের আবছা আলোয় উড়ে এসে শিকার ধরে। খাদ্য তালিকায় আছে উড়ন্ত পোকা, টিকটিকি, ছোট পাখি।খুঁড়ুলে পেঁচার শরীরে বাদামি তিলওয়ালা দাগ থাকে। দৈর্ঘ্যে ২০ সেন্টিমিটার। মাথার পালক বাদামি। গলা সাদা, চোখ ফ্যাকাশে থেকে সোনালি হলুদ। ঠোঁট সবুজ, পা ও পায়ের পাতা অনুজ্জ্বল হলদে-সবুজ।প্রজনন সময় নভেম্বর থেকে এপ্রিল। ডিম সাদাটে, সংখ্যায় তিন-পাঁচটি। ২৫ দিনে ডিম ফোটে। ৩০ দিনে ছানাদের গায়ে পালক গজায়।শীতের শেষে ছোট কান পেঁচা বাংলাদেশ ছেড়ে উত্তরে মধ্য ও উত্তর এশিয়ায় চলে যায় গরমকাল কাটানোর জন্য। সেখানেই তারা বাসা বাঁধে। এরা মাটির ওপর বাসা করে চার থেকে ১৪টি ডিম দেয়। স্ত্রী পাখি ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়। প্রায় ১২ দিন তা দেওয়ার পর বাচ্চা ফোটে। বাচ্চারা এক মাসের মধ্যে উড়তে শেখে। তত দিনে আবার শীতকাল চলে আসে। আর যথারীতি ওরা আবার আশ্রয়ের সন্ধানে আসে আমাদের দেশে

কালীপ্রসন্ন সিংহের 'হুতোম পেঁচার নকশা' বইটির নাম আমাদের সবারই কমবেশি জানা। চারদিকের ঘোর দুর্যোগ-দুর্বিপাকের মধ্যেও হুতোম পেঁচারা সরব থাকে। নির্জন রাতে ক্রমাগত ডেকে যাওয়ার মধ্য দিয়ে অভয়বার্তা প্রচার করে এরা। বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন সাহসী মানুষ তখন স্বস্তি পায় এই ভেবে যে গভীর সংকটের মধ্যেও প্রাণিকুল বেঁচে রয়েছে। কালীপ্রসন্নও তাঁর গদ্যরীতিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে প্রতীক হিসেবে হুতোম পেঁচা নামটিকেই বেছে নিয়েছিলেন।'হুতোম পেঁচা খুব বড় আকারের শক্তিশালী ধরনের একটি পাখি। এরা অনেক বড় বড় প্রাণী শিকার করতে পারে। হরিণশাবক পর্যন্ত ধরে নিয়ে যেতে পারে এরা। বিশ্বে ১৯ প্রজাতির হুতোম পেঁচা রয়েছে। তবে বাংলাদেশে মাত্র দুই প্রজাতির হুতোম পেঁচা পাওয়া যায়।

বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী বইয়ে বলা হয়েছে, রাতের অন্ধকারে পেঁচার দৃষ্টিশক্তি অত্যন্ত প্রখর। মানুষের দৃষ্টিশক্তির চেয়ে শত গুণ বেশি। পূর্ণচন্দ্রলোকে মানুষ যেমন দেখতে পায়, পেঁচারা অন্ধকারে নক্ষত্রের আলোকেই তেমন দেখে থাকে। এদের চোখে রয়েছে বিশেষ ধরনের অনুভূতিশীল রেটিনা, যার ফলে গভীর অন্ধকারে এরা স্বচ্ছভাবে দেখতে পারে। পেঁচার চোখ সাধারণ পাখির মতো মাথার পাশে বসানো নয়। এদের চোখ দুটো সামনের দিকে ঠোঁটের কাছাকাছি স্থাপিত।নিশাচর পাখি বলেই এটি সহজে কারো চোখে পড়ে না। সারা রাত খুঁজে বেড়ালে ভাগ্যক্রমে কেবল এদের দেখা পাওয়া সম্ভব। তীব্র খাদ্য সংকটের কারণে আমাদের দেশ থেকে হুতোম পেঁচারা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।'

বাংলাদেশের ১৬ প্রজাতির পেঁচা দেখা যায়, এর মধ্যে একটিমাত্র প্রজাতিই পরিযায়ী এবং এর দেখা মেলে শীতকালে। এ পাখি পেঁচাদের মধ্যে শুধু পরিযায়ীই নয়, এটিই দেশের একমাত্র দিবাচর পেঁচা। এরা দিনের বেলায় খোলা জায়গায় পোকামাকড় শিকার করে বেড়ায়। খোলা মাঠে বসেই বিশ্রাম নেয়। এ অদ্ভুত পেঁচার ইংরেজি নাম Short-eared Owl আর বৈজ্ঞানিক নাম Asio flammews।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×