somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

ধাবমান কালো চোখে আলো নাচে (৩)

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকাল ৭ টা। হাজী শারাফত আলীর ছেলে মন খারাপ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন। রাতে তার ভালো ঘুম হয়নি। তার ভাই বোনদের কথা মনে পড়লেই তিনি আকাশের দিকে তাকান। ছোটবেলা থেকেই তিনি জানেন- তার বাবা-মা, ভাই বোন ওই আকাশেই থাকেন। তার পরিবারের সবাই তাকে আদর করে চেগা মিয়া বলে ডাকতেন। বারা মা মরে যাবার পর চেগা মিয়া চাচা ইবরাহিম এর কাছে চলে যান। চেগা মিয়া অসহযোগ আন্দোলন করে প্রায় এক বছর জেল খাটলেন। ১৯২৫ সালে তিনি জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার জমিদার শামসুদ্দিন মহম্মদ চৌধুরীর মেয়ে আলেমা খাতুনকে বিবাহ করেন। স্ত্রীর সাথে চেগা মিয়ার দিনের পর দিন দেখা হয়, কথা হয় না। আসলে যারা মানুষকে ভালোবাসেন তারা নিজের ঘর সংসারের কথা খুব একটা মনে পড়ে না। দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য তারা নিজেদের উৎসর্গ করে দেন।

চেগা মিয়া তার স্ত্রীকে খুব ভালোবাসতেন। চেগা মিয়া যেখানেই যেতেন- একদল মানুষ তাকে সব সময় ঘিরে থাকত। ঘিরে থাকা মানূষ গুলো চেগা মিয়াকে অসম্ভব ভালোবাসেন। সবাই ভালোবেসে চেগা মিয়াকে ডাকত- লাল মাওলানা নামে। অনেকে লাল মাওলানার কাছ থেকে পানি পড়া নিতে আসতো। চেগা মিয়া অর্থাৎ লাল মাওলানা এক আকাশ আগ্রহ নিয়ে কিছুক্ষন বিড় বিড় করে পানিতে ফু দিতেন। সেই পানি পড়া খেয়ে নাকি অনেকেই উপকার পেতেন। দূরদুরান্ত থেকে গ্রামের সহজ সরল মানুষ তার কাছে পানি পড়া নিতে আসেন। তার সাদা দাড়ি, মাথায় টুপি আর সূফি চেহারার কারনে- খুব সহজেই তিনি মানুষের মনে স্থান পেতেন। একদিন এক স্কুল শিক্ষক তার কাছে এসে বললেন- আপনি একজন অদ্ভুত মানুষ! এই সমাজে আপনার মতো মানুষ আমাদের খুব বেশি দরকার। মাওলানা শিক্ষককে বললেন, পৃথিবীর মজলুম মানুষ সবাই এক, তারা যেখানেই বাস করুক। শিক্ষক তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, আমি মনে করি একজন মুজিব আর একজন ভাসানীর মাঝে বড় পার্থক্য রয়েছে, আপনার রাজনৈতিক গ্রুমিংটা হয়েছে অনেকটাই একক ভাবে, আসামের জঙ্গলে। একারণে একদিকে আপনি চীনের লাল মাওলানা, অন্যদিকে আপনি মুরিদদের পানিপড়াও দিচ্ছেন, এমন জটিলভাবে চলেছে আপনার রাজনৈতিক দর্শন।

১৯২৯ সালে আসামের ধুবড়ী জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের ভাসান চরে লাল মাওলানা কৃষক সম্মেলন আয়োজন করেন। তারপর থেকে তার নাম রাখা হয় 'মাওলানা ভাসানী'। কিন্তু বাঙ্গালীদের কাছে তিনি 'মজলুম জননেতা' নামে বেশি পরিচিত। মজলুম নেতার পুরো নাম আবদুল হামিদ খান ভাসানী। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস এর ভাষণ শুনে ভাসানী রাজনীতিতে অণুপ্রাণিত হন। 'বাঙ্গাল খেদাও' আন্দোলনে বাঙ্গালীদের সাহায্য করার জন্য তিনি বারপেটা, গৌহাটিসহ আসামের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে বেড়ান এবং গ্রেফতার হোন। গ্রেফতার হওয়ার পর অনেক শিক্ষিত বাঙ্গালীকে বলতে শোনা গেছে- ভাসানী রাজনীতি বহুলাংশেই উদ্ভ্রান্ত ও বিভ্রান্তিমুলক। কিছু দুষ্টলোক সব জাগায়ই থাকে। তাদের কাজই হচ্ছে সংঘাত তৈরি করা।

বাঙ্গালীদের অপমান করে এক প্রকার গলা ধাক্কা দিয়ে আসাম থেকে বের করে দিচ্ছে- এই ব্যাপারটা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না, তাই তিনি মাও সে তুং থেকে শুরু করে আমেরিকার প্রসিডেন্ট সহ অনেক কাছে চিঠি লিখে সহযোগিতা চাইলেন। দুঃখজনক ব্যাপার হলো কেউই তখন সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলেন না।
আসামের কারাগারে ভাসানী সাহেবকে দেখতে যান ওমর আলী। কিন্তু ওমর আলীকে ভাসানীর সাথে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। ওমর আলী করুন গলায় ডিউটি অফিসারকে বললেন, আমার স্ত্রী সরলা বিবির দুই ভরি গহনা আপনি নিয়ে যান- তবু ভাসানীর সাথে একবার দেখা করতে দেন। ডিউটি অফিসার নারায়ন চন্দ্র দুই ভরি গহনা রেখে দিয়ে ওমর আলীকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিলেন। আর বললেন, ভাগো হিয়াসে। তোম বাঙ্গালী হো। ওমর আলী তখনও জানতেন না, চিরদিনের জন্য আসাম ছেড়ে চলে যাবেন এই শর্তে ১৯৪৭ সালের শেষের দিকে তাকে মুক্তি দেয়া হবে।
ওমর আলীর মনে করেন ভাসানী সাহেব একজন শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী। বিতর্কের উর্ধে একজন মানুষ। যিনি দেশের স্বার্থে কাজ করবেন। তাই তাকে প্রতিটা বাংলী এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে মনে রাখবে চিরজীবন। ক্ষমতাবিমুখ রাজনীতির এক মহান পুরুষ ছিলেন মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। তার সমতুল্য আর কে আছে? ওমর আলী চোখের পানি মুছে মনে মনে এক মহান সত্য ভাবলেন- মাওলানা ভাসানীকে বাদ দিয়ে ইতিহাস রচনা সম্ভব নয়।

ওমর আলী আগামীকাল সকালে স্ত্রীকে নিয়ে আসাম ছেড়ে চলে যাবেন। স্ত্রীর গর্ভে তার প্রথম সন্তান। আসাম ছেড়ে চলে যেতে দুঃখে তার কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে। এখানে তিনি এবং তার স্ত্রী সরলা ভালোই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। দেশের হর্তা-কর্তারা নির্বোধ হলে দুঃখের আর শেষ থাকে না। আজ ওমর আলীর ভাসানীর একটা কথা খুব বেশি মনে পড়ছে- আসাম আমার, পশ্চিমবঙ্গ আমার ত্রিপুরাও আমার। এগুলো ভারতের কবল থেকে ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের স্বাধীনতা ও মানচিত্র পূর্ণতা পাবে না।

( প্রায় তিন বছর আগে দেশ ভাগ, ভাষা আন্দোলন আর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটা উপন্যাস লিখতে শুরু করেছিলাম। দুই পর্ব লিখে শেষ করলাম, প্রিয় সামু ব্লগে পোষ্ট করলাম। তারপর লেখা আর কিছুতেই এগোয় না। দিনের পর দিন যায়। মাসের পর মাস। বছরের পর বছর। মাথার মধ্যে লেখা সাজিয়ে লিখতে বসি- কিন্তু এক লাইনও লিখতে পারি না। আজ অফিস ছুটি। স্ত্রী বাসায় নেই। হঠাত কি হলো-৩য় পর্বটা লিখে ফেললাম।)
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৩৫
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×