somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

ধাবমান কালো চোখে আলো নাচে (৪)

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১৮৭৬ সালে করাচিতে এক দুষ্ট বালকের জন্ম হয়। এবং ৭৬ বছর বয়সে দীর্ঘদিন যক্ষা রোগে ভূগে- দেশ ভাগের পরের বছর মারা যান। এই দুষ্ট বালকই পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা। নাম তার মুহাম্মদ আলি জিন্না। পাকিস্তানের লোকজন তাকে কায়েদে আযম বা মহান নেতা হিসেবে সম্মান করে। তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করে মাথায় সব সময় টুপি পড়ে থাকতেন, পরে এই টুপি জিন্না টুপি নামে পরিচিতি পায়। পাকিস্তানের জাতির পিতা ‘কায়েদে আযম’ এর প্রতি দেশটির জনগণের রয়েছে অগাধ শ্রদ্ধা। দেশের বিভিন্ন অফিস-আদালত, হাসপাতাল, স্কুল কলেজ সবখানেই পাওয়া যাবে তার ছবি। মুসলিম দেশ হলেও এতে কোন কার্পণ্য রাখেনি পাকিস্তানিরা।

লন্ডন থেকে লেখাপড়া শেষ করে জিন্না সাহেব বোম্বেতে এসে আইনপেশা শুরু করেন। সে সময় সারা বোম্বেতে তিনি একাই ছিলেন- মুসলিম ব্যারিস্টার। তার ভাগ্য ভালো ছিল। ১৯০৭ সালের মধ্যে তিনি একজন দক্ষ আইনজীবি হিসেবে খ্যাতি পেয়ে যান। অনেকেই মনে করেন- খ্যাতি পাওয়ার প্রধান কারণ হলো- নিজের উপর তার ছিল অগাধ বিশ্বাস। একবার ইংলন্ডে আইন পড়াকালীন সময়ে তিনি মনস্থিরও করে ফেলেছিলেন রসকষহীন আইন পাঠ ছেড়ে একটি শেক্সপেরিয়ান নাট্যদলের সাথে যুক্ত হয়ে নাট্যমঞ্চে অভিনয় শুরু করবেন।

মুলত ১৮৯৬ সালে ভারতের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে মুহাম্মদ আলী জিন্নার রাজনৈতিক জীবণ শুরু হয়। তিনি জন্ম দিয়েছিলেন দ্বিজাতি তত্ত্বের, যে তত্ত্ব কেবল ধর্মকে সম্বল করে হাজার মাইলের ব্যবধানে জন্ম দিয়েছিল একটি রাষ্ট্রের। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ নিজের রাজনৈতিক জীবনে কখনোই এক চিন্তাচেতনা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাননি। ব্যক্তি হিসেবে তাঁকে পরিপূর্ণ সফল মানুষ কোনোভাবেই বলা যায় না। তিনি সাংসারিক জীবনে সাফল্যের মুখ দেখেননি। ভালোবেসে বিয়ে করে তিনি তাঁর স্ত্রীকে অবহেলা করেছিলেন। তাঁর স্ত্রী একপর্যায়ে তাঁর থেকে আলাদা হয়ে যান। রোগে ভুগে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন অপরিণত বয়সে। সেই স্ত্রীর গর্ভে জন্ম নেওয়া সন্তানও যে বাবার দৃঢ় অনুসারী ছিল—এ কথা জোর দিয়ে বলা যাবে না।

প্রথমবার মাত্র ১৫ বছর বয়সে জিন্নাহ বিয়ে করেছিলেন মায়ের চাপে পড়ে। কনের নাম ছিল এমি বাঈ। পরে ১৯১৮ সালে তিনি নিজের পছন্দে বিয়ে করেছিলেন পার্সি সম্প্রদায়ের মেয়ে রতন বাঈকে। ১৫ বছর বয়সে বিয়ে দেওয়ার ‘ক্ষোভে’ তিনি তাঁর মায়ের সঙ্গেও কোনো সম্পর্ক রাখেননি। মায়ের কনের সঙ্গে তিনি থাকেননি, মৃত্যুর সময়ও তাঁর গর্ভধারিণী মা জিন্নাহকে পাশে পাননি। জিন্নাহ সাহেব অবশ্যই শিয়া মুসলমান ঘরে জন্ম নেন। এবং কোনোদিন কোনো ধর্ম পালন করেননি। তার স্ত্রীও মুসলমান ছিলেন না। তিনি নামাজ পড়তেন না। মদ ও শুয়োরের মাংস নিয়মিত খেতেন। এবং কিন্তু মাথায় থাকত তার প্রিয় টুপি।

জিন্না সাহেবের ছোট বোন ফাতেমা জিন্না- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দন্ত চিকিৎসায় ডিগ্রি লাভ করার পর তিনি তার বড় ভাই মুহাম্মদ আলি জিন্নাহর সহকর্মী ও উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করা শুরু করেন। ফাতেমা জিন্নাহ ১৯২৩ সালে বোম্বেতে একটি ডেন্টাল ক্লিনিক চালু করেন। আজও পাকিস্তানে তাকে ভাইয়ের সহকর্মী হিসেবে তাকে সম্মান করা হয়। ভাইয়ের মৃত্যুর পর তিনি নিজেকে রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিলেন। ফাতেমা জিন্নাহ তার ভাই মুহাম্মদ আলি জিন্নাহর উপর একটি অসমাপ্ত জীবনী লিখেছেন। এটি ১৯৮৭ সালে কায়েদে আজম একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়।

১৯৪৭ সালে মুসলমানরা পেয়েছে পাকিস্তান আর হিন্দুরা পেয়েছে ইন্ডিয়া। স্বাধীনতা সহজে পাওয়া যায়, কিন্তু শাসন পরিচালনা করা, গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রবর্তন করার জন্য প্রয়োজন হয় জ্ঞানের এবং এই জ্ঞান সহজ লভ্য নয়। এক একজন মানুষ এক একরকম ভাবে। তবে প্রত্যেকেই, মনে হয়, একটা জায়গায় একই রকম ভাবে। তা হল, দেশভাগ না হলেই ভাল হত। জিন্নাহ যে উপমহাদেশের রাজনীতিতে ক্রমশ প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছেন, তার একটা বড় কারণ তার রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তিটাই ছিল দুর্বল। নিজে ব্যক্তিগতভাবে ছিলেন পাশ্চাত্য শিক্ষিত অসাম্প্রদায়িকমনা মানুষ। কিন্তু ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রদর্শন এবং সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতির অনুসারী ছিলেন। জিন্না দক্ষিন এশিয়ার সম্ভবত সব থেকে জটিল রাজনৈতিক চরিত্র।

মানুষকে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, জাতি, দেশ, জাতীয়তা, লিঙ্গ, ভাষা ইত্যাদি অনেক কিছু দিয়ে বিভাজিত করা যায়। ধুর্ত কিছু মানুষ এই বিভাজন থেকে সবসময়ই ফায়দা লুটার চেষ্টা করে। সময়-সুযোগে পুরুষ-নারী, জমিদার-প্রজা,আসামি-বাঙালি, ইরাকি-কুর্দি সব ধর্মের-দেশের-লিঙ্গের-জাতির-গো্ত্রের-ভাষার একদল মানুষ অপর একদল মানুষের কাছে নির্যাতিত হচ্ছে বা নির্যাতন করছে। এভাবে মানুষকে যতদিন না স্বার্থের কারণে বিভাজন বন্ধ হচ্ছে, যতদিন না আইনে-শাসনে-রাজনীতিতে-অর্থনীতিতে-সামাজিকতায় মানবিক পরিচয়টি প্রাথমিক বিবেচ্য বলে বিবেচিত হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত এ ধরনের হানাহানি বন্ধ করা যাবে না।

১৯৪৮এ মহম্মদ আলি জিন্না ঢাকার মাটিতে দাঁড়িয়েই, বাঙ্গালির ভাষা পরিচয় ও সাংস্কৃতিক অভিমানকে কিছুমাত্র গুরুত্ব না দিয়ে ঘোষণা করে দিলেন ‘উর্দু এবং শুধু মাত্র উর্দুই’ হবে পাকিস্তানের একমাত্র সরকারী ভাষা। বলা বাহুল্য ঐদিনই মহম্মদ আলি জিন্না তার সাধের পাকিস্তানের অঙ্গচ্ছেদ ও একটি পৃথক রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখার বীজ পুঁতে দিলেন। তাই ভাষার জন্য প্রাণ দিতে হয়েছিলো বাঙালিকে। বাংলা ভাষার জন্য ঝরেছিল বুকের তাজা রক্ত। অথচ সেই বাংলা ভাষার বিরুদ্ধাচরণকারী জিন্নাহ’র কবরেই টগবগ করছে বাঙালির প্রাণের ভাষা বাংলা। সেই সব দুঃখ দিনের কথা একটু একটু করে বলা হবে।

(ধারাবাহিক উপন্যাস।)

প্রথম পর্ব

দ্বিতীয় পর্ব

৩য় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:১৩
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×