ঢাকা শহরের জ্যামটা অর্ধেক কমিয়ে আনা সম্ভব। হুম সম্ভব। অল্প কিছু নির্বোধ লোকের জন্য লম্বা সময় জ্যামে বসে থাকতে হয়। আমি জানি এবং বুঝি ঢাকা শহরটা খুবই ছোট, মানুষ বেশি। রাস্তা ঘাটও চওড়া নয়। তারপরও আমি বলব জ্যাম অনেকখানি কমিয়ে আনা সম্ভব। জ্যাম কমানোর জন্য সরকারের কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারি লোকজনের অবহেলার কারনে ভোগান্তি বেশি হয়। এবং যারা ঢাকা শহরে ট্র্যাফিক কন্টোল করে তাদের মানসিকতা অনেক উন্নত হতে হবে। সৎ থাকতে হবে। যে গাড়ি রাস্তায় চলার সময় নিয়ম মানবে না তাকে- তাকে ৫০০ টাকা জরিমানা না করে ৫০০০ টাকা জরিমানা করতে হবে। যদি টাকা না দেয় তাহলে দশ দিন জেল। এখানে দায়িত্বরত পুলিশের সৎ ভাবে ডিউটি করতে হবে। পুলিশ যেন পাঁচ শ' টাকা ঘুষ নিয়ে নিয়ম ভঙ্গ করা গাড়িকে ছেড়ে না দেয়। এইভাবে সরকারের অনেক আয় হবে। আর যারা একবার জরিমানা দিবে- তারা আর ইহজীবনে নিয়ম ভঙ্গ করবে না। বিদেশে এই নিয়ম গুলো খুব কড়া। তাই কেউ নিয়ম ভঙ্গ করে না। নিয়ম কানুন মেনে চললে জ্যাম অনেকখানি কমে যাবে।
রাস্তার যানজটের সমস্যার সমাধান, যারা এসি রুমে বসে থাকেন- যারা ভিআইপি বা প্রোটোকল নিয়ে চলাফেরা করেন তারা জ্যামের কোনো সমাধান করতে পারবে না। জ্যামের কারন গুলোর সঠিক সমস্যার সমাধান করতে পারবে সাধারন মানুষ। যারা কর্মের খাতিরে সারাদিন বাইরে বাইরে থাকেন। তাদের জিজ্ঞেস করলেই যানজট নিরসনের সঠিক সমাধান পাওয়া যাবে। কারন তারা প্রতিদিনের ভূক্তভোগি। ফুটপাতের দোকান পাট সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। পুলিশ যেন টাকা খেয়ে- ফুটপাতে দোকান দিতে না দেয়। যত্রতত্র গাড়ি পারকিং করে রাখা সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। উল্টো রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। বাইকওয়ালাদের অস্থিরতা বেশি। তারা ফাঁকফোঁক দিয়ে চলে যেতে গিয়ে গিট্টু লাগিয়ে দেয়। তাদেরও কঠোরভাবে আইনের আওতায় আনতে হবে। ফুটপাতের উপর হোন্ডা উঠিয়ে দেয়!! এখন থেকে, ছোটেবেলা থেকেই প্রাইমারী স্কুল লেভেলে সচেতন থাকার পাঠ নিতে হবে। শিক্ষকরা সচেতন থাকার শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভাবে বুঝিয়ে দিবেন। তখন আর কেউ হোন্ডা নিয়ে কেউ ফুটপাতে উঠে যাবে না। ছোটবেলার শিক্ষাই আসল শিক্ষা।
যারা বাস গাড়ি চালায় তাদের খুব দক্ষ হতে হবে। দক্ষতা অর্জন ছাড়া যেন কেউ লাইসেন্স না পায়। অদক্ষ ড্রাইভাররা যানজট তৈরি করে। অনেক সময় দেখা যায়- কর্তবরত ট্রাফিক ফুলিশ আর সার্জন তারা মিলে মিশে মোবাইলে কথা বলছে অথবা খোশ গল্পে মেতে আছে। আর এদিকে লম্বা যানজট লেগে গেছে। দায়িত্বরতরা যেন তাদের দায়িত্ব অবহেলা না করে সেদিকে সরকারকে কঠোর হতে হবে। ঢাকা শহরের প্রতিটা গলির মুখে আজকাল সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাজার বসে যায়। এই বাজার বন্ধ করতে হবে। এইসব গলির মুখের বাজারের প্রতিটা দোকান থেকে পুলিশ প্রতিদিন এসে টাকা নিয়ে যায়। পুলিশ টাকা না নিলে তারা রাস্তায় দোকান বসাতো না। এতে গলিত ভেতরের জ্যাম অনেকটাই কমে যেত। আমরা হায়-হুতাশ করি, কি জ্যাম, এই জ্যাম আর ভালো লাগে। বিদেশ কি ভালো যানজট নাই। ভেবে দেখুন এই জ্যাম কিন্তু বিদেশ থেকে লোক এসে তৈরি করে দিয়ে যায়নি। এই জ্যাম আমরাই তৈরি করি। কাজেই এই জ্যামের সমাধান আমাদের'ই করতে হবে। ঢাকা শহরের সব মানুষ মিলে যদি সিদ্ধান্ত নেয় জ্যামের বিরুদ্ধে- তাহলে জ্যাম কমে যাবে। নিয়ম কানুন মেনে চললে, পুলিশ যদি ঘুষ না খায়। নতুন প্রজন্মের কথা ভেবে হলেও- আমাদের একত্রিত হতে হবে।
একটা প্রতিষ্ঠানে অনেক লোক কাজ করে। প্রতিষ্ঠানের সবাই যদি যার যার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে- তাহলে প্রতিষ্ঠান দ্রুত উন্নতি লাভ করে। ঠিক সেভাবেই ঢাকা শহরে যারা বাস করেন- তারা যদি নিয়ম ভঙ্গ না করে তাহলে ঢাকা শহরে জ্যাম থাকবে না। অথবা বলা যায় অনেকখানি জ্যাম কমে যাবে। আরেকটা ব্যাপার পেট্রোল পাম্প গুলো খুব যানজট তৈরি করে। তেল বা গ্যাস নিতে আসা গাড়ি গুলো লম্বা লাইনে পড়ে। পাম্প গুলোর ভিতরে জায়গা নেই। কাজেই অসংখ্য গাড়ি রাস্তায় লম্বা লাইনে দীর্ঘক্ষন থাকে। চিকুন রাস্তা- লেগে যায় লম্বা জ্যাম। এমন একটা নিয়ম করা উচিত গ্যাস বা তেল নেওয়ার জন্য রাত ১০ টার পর পাম্পে যেতে হবে। তাহলে জ্যাম থেকে কিছুটা লাঘব পাওয়া যাবে। ঢাকা শহরের রাস্তায় বের হলেই- চারদিকে তাকালে দেখা যায় সবাই অস্থির ভাবে ছোটাছুটি করছে। পথচারীরাও অস্থির। যারা গাড়ি চালাচ্ছে তারাও অস্থির। সবাই ব্যস্ত। কারো মধ্যে একটু শান্ত ভাব দেখি না। চার রাস্তার মোড়ে কিছুক্ষন দাড়ালেই বিকট হর্ন এর শব্দ মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে যায়। রিকশাওয়ালা গুলোও বেশ সৃষ্টি করে। গ্রাম থেকে এসেই রিকশা চালাতে শুরু করে। জানে না কোনো নিয়ম কানুন। ফলাফল জ্যাম।
বিভিন্ন কাজের বাহানা দিয়ে প্রতি বছর রাস্তা ভাঙ্গা হয়। একবার ওয়াসা ভাঙ্গে, একবার তিতাস ভাঙ্গে এবং একবার সিটি কর্পোরেশন ভাঙ্গে। এভাবে দেখা যায় সারা বছর'ই সরকারের লোকজন কোনো না কোনো কাজে রাস্তা ভাঙছে। ভাঙ্গা রাস্তার কারনে রাস্তায় লম্বা জ্যাম হয়। কাজেই সরকারের সব দফতরের সাথে বসে একবারেই যেন তিতাস, ওয়াসা বা সিটি কর্পোরেশন সবার কাজ সবাই সম্পাদন করে ফেলে। তাতে ভোগান্তি কম হবে। এই শহরটা আমাদের। কাজেই শহরটা সুন্দর রাখার দায়িত্ব শুধু সিটি কর্পোরেশনের না, আমাদের সবার। আমি বিশ্বাস করি শহরের প্রতিটা নাগরিক যদি সচেতন হয়- তাহলে শহরের অনেক সমস্যার সমাধান সম্ভব। নিয়ম ভাঙলেই জরিমানা অব্যহত রাখলে- নিয়ম মানার একটা প্রবনতা তৈরি হবে। কিছু দিন আগে দেখা গিয়েছিল- যারা ওভার ব্রীজ থাকা স্বত্তে রাস্তা দিয়ে পাড় হচ্ছে, তখন ম্যাজিস্ট্রেট তাদের জরিমানা করছে। এটা খুব ভালো একটা কাজ হয়েছে। এরকম সব ক্ষেত্রে জরিমানা করলে শহরের জনগন ভালো হয়ে যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৭