ইদানিং একটা কথা শোনা যাচ্ছে- 'দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে'। কথাটা কিন্তু মিথ্যা না। এই কথাটার সাথে অনেক আবেগ, শ্রম আর ভালোবাসা মিশে আছে। আমাদের বিক্রমপুরে একটা কথা আছে- 'গাইতে গাইতে গায়েন' মানে একজন গায়ক গাইতে গাইতে (চর্চা করতে করতে) নামকরা গায়ক হয়ে যায়। তেমনি- 'দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে' বলতে বলতে আমরা একদিন সত্যিই উন্নয়নের মহাসড়কে পৌঁছে যাবো। তখন আমরা দরিদ্র দেশ গুলোকে সাহায্য করবো। বেশির ভাগ মানূষের স্বভাবই হলো নিন্দা করা। নিন্দা করতে-করতে তারা আর ভালো কিছু খুঁজে পায় না। তখন ভালো কাজ করলে নিন্দা করে। এই নিন্দার কারনে ভালো কাজ বাঁধাগ্রস্ত হয়। কাজেই আমাদের আশাবাদী মানুষ হতে হবে। দেশকে ভালোবাসতে হবে। কর ফাঁকি না দিয়ে, দায়িত্ব মনে করে নিয়মিত কর দিতে হবে। তাহলে দেশ দ্রুত উন্নয়ন হবে। আর দেশ উন্নয়ন হলে তা তো আমরাই ভোগ করবো।
ভেবে দেখুন, একসময় ঢাকা থেকে বাগেরহাট যেতে সময় লাগতো- ২/৩ দিন। আর আজ ঢাকা থেকে বাগেরহাট যেতে সময় লাগে ৫/৬ ঘন্টা। আমার বিক্রমপুরের কথা বলি- বাস, তারপর ইঞ্জিন চালিত নৌকা, তারপর তিন মাইল পথ পায়ে হেঁটে, শেষে ভ্যান গাড়ি। সব মিলিয়ে ৫ ঘন্টার বেশি সময় লাগতো। আর এখন বাবু বাজার ব্রিজে উঠলে এক ঘন্টা লাগে। তার মানে দেশে উন্নয়ন হচ্ছে। রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ, কালভারট হচ্ছে। প্রচুর হচ্ছে। রাস্তা ঘাট এত পরিমানে হচ্ছে যে- কোনো গ্রামে গেলে আজকাল আর কাঁচা রাস্তা তেমন একটা চোখে পরে না। মাইলের পর মাইল রাস্তা পাকা। যাতায়াত করে আরাম পাওয়া যায় আবার দেখতেও ভালো লাগে। আজকাল আর বাঁশের সাঁকো খুজেও পাওয়া যায় না। কি সুন্দর মাটির রাস্তা গুলো পাকা হয়ে গেছে- গাড়ি নিয়ে তর তর করে চলে যাওয়া যায়। প্রতিটা কৃষক উন্নত মানের যন্ত্রপাতি দিয়ে চাষবাস করে। ফলন বাড়ছে। একবার ভেবে দেখুন, ছোট্র একটা দেশ কিন্তু কখনও খাবারের অভাব হয় না। বাজারে গেলে মনটা খুশিতে ভরে যায়- সব রকমের তরিতরকারি আছে। এই যে এত বড় বন্যা গেল- তারপরও কোনো কিছুর অভাব নাই। অবশ্য এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ। তারা হয়তো নানান ধরনের সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা না হলে অভাব দেখা দিত। তবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আছে- তারা বাজারে নকল পণ্য দিয়ে ক্রেতাদের ঠকায়।
এক সময় প্রাইমারী স্কুলের সংখ্যা খুব কম ছিল। দুই তিন গ্রাম পাড় হয়ে স্কুলে যেতে হতো। আর এখন বলা চলে প্রতিটা গ্রামে প্রাইমারী স্কুল আছে। বই গুলোও ফ্রি পাওয়া যায়। অনেক দরিদ্র বাবা মা'ও সচেতন হয়েছেন- তারা এক আকশ আগ্রহ নিয়ে তাদের ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন। আমার ভাবতে খুবই ভালো লাগে যে দেশ দিন দিন সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসাতেও দেশ অনেক দূর এগিয়েছে- বিশেষ করে সরকারি হাসপাতাল গুলো। খুবই অল্প টাকায় দেশের মানুষ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন। আমি নিজে ত্রিশ টাকা দিয়ে বড় এক ডাক্তারের কাছে গেলাম। ডাক্তার খুব ভালো ওষুধ দিলেন। রোগ থেকে মুক্তি পেলাম। সরকারি হাসপাতালের মান এত উন্নত হয়েছে যে- বিদেশ থেকে লোকজন এসে চিকিৎসা নিয়ে যাচ্ছে। শুধু চিকিৎসা না, ওষধও ফ্রি পাওয়া যায়। তবে আমি ফ্রি ওষুধ নিই না। ওষুধ কেনার টাকা আমার আছে। চিকিৎসা পেতে যেন মানূষের বেগ পেতে না হয়- তার জন্য গ্রামে গ্রামেও অনেক সরকারি স্বাস্থ্য ক্লিনিক করা হয়েছে। সর্বপোরি দেশের সব নাগরিককে সরকার সচেতন করতে পেরেছে। এখন একজন রিকশাওয়ালাও এক টাকা দিয়ে কিনে এক গ্লাস ফিল্টার পানি খান। সরকারের লোকজন বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিশুদের পোলিও টিকা'র দিচ্ছে। বিটিভিতে সচেতন মূলক অনুষ্ঠান প্রতিদিন প্রচারিত হচ্ছে।
সরকার চেয়েছেন দেশকে ডিজিটাল করতে। তারা সেই পথেই এগিয়ে যাচ্ছে। এখন ঢাকা শহরের প্রতিটা বাড়িতে ডিজিটাল মিটার লাগানো হয়েছে। লম্বা লাইন ধরে সময়ের অপচয় করে এখন আর বিদ্যুৎ বিল দিতে হবে না। ঢাকা শহরকে বদলানোর কাজ অলরেডি শুরু হয়ে গেছে। গুলশান বনানী ইত্যাদি এলাকার ফুটপাত গুলো কি সুন্দর হয়েছে। রাস্তা গুলোও কি সুন্দর! কোথাও খানাখন্দ নেই। ভাঙ্গা নেই। অন্যান্য এলাকার ফুটপাত উন্নয়নের কাজ চলছে। জলাবদ্ধতার জন্য দারুন সব প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে। মৌচাক বাংলামটর ফ্লাইওভার দিয়ে তো গাড়ি চলাচল শুরু করে দিয়েছে। এখন বাংলামটর মোড় থেকে রাজারবাগ মোড় আসতে সময় লাগে ২/৩ মিনিট। আর কয়েক মাস আগে সময় লাগতো- দেড় ঘন্টা। কাজেই বলা যায়- দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে। তবে আমি একটা ব্যাপারে স্পষ্ট বলতে চাই- সরকার গ্রামের উন্নয়নের জন্য যত টাকা বরাদ্দ দেয়, সে সব টাকা উন্নয়নের কাজে ব্যবহার হয় না। ধরুন, সরকার একটা গ্রামের তিন মাইল রাস্তা পাকা করার জন্য টাকা দিল, কিন্তু সরকারী প্রতিষ্ঠানের কিছু অসৎ কর্মচারী আধা মাইল রাস্তা পাকা করে, বাকি টাকা তারা নিজেরা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়ে নেয়। এই কিছু দুষ্টলোকদের জন্য উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে।
কেউ দয়া করে ভাববেন আমি আওয়ামীলীগকে সাপোর্ট করছি। আমি রাজনীতি করি না। কাজ করি, ভাত খাই। কাজ না করলে আওয়ামীলীগ এসে আমার ঘরে খাবার দিয়ে যাবে না। আবার ভাববেন না, আমি বিএনপিকে ছোট করছি। যারা দেশের জন্য কাজ করে তারা সবাই আমার কাছে সম্মানিত। তবে সহজ সরল সত্য কথা হলো- কোনো দল দেশের জন্য বেশী কাজ করে, কোনো দল কম কাজ করে। কোনো দল বেশী দুর্নীতি করে, কোনো দল কম দুর্নীতি করে। এখন আমাদের বেছে নিতে কোন দল আমাদের জন্য (দেশের জন্য) মঙ্গলকর। তবে আমি মনে করি একটা দল পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকলে- তাদের দ্বারা সব রকম উন্নয়ন সম্ভব নয়। অনেক উন্নয়নের জন্য- তাদের লম্বা সময় ক্ষমতায় থাকা দরকার। তাহলে কাজের ধারাবাহিকতা অব্যহত থাকে। উন্নয়নের ধারা অব্যহত থাকে। আমাদের ভাগ্য ভালো গত কয়েক বছর আমরা দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হইনি। একজন রাজনীতিবিদকে সারাদিন ব্যস্ত থাকতে হয়। তারা তাদের পরিবারকেও সামান্য সময় দিতে পারেন না। তারা নিজেকে দেশ আর দেশের মানূষের জন্য নিজের জীবন বিসর্জন দেন। তারা যদি দেশের উন্নতির জন্য দিন রাত কাজ করে যাচ্ছেন। তারা যদি শুধু নিজের কথা ভাবতেন- তাহলে ইউরোপ গিয়ে সুখবিলাস করতেন। আসলে শুধু রাজনীতিবিদ না, আমাদের দেশের বেশির ভাগ লোকই ভালো।
তারপরও বলি, ছোট একটা দেশ। জনসংখ্যা বেশি। নানান সমস্যা তো থাকবেই। দেশে বেকারের সংখ্যাও অনেক। লন্ডন আমেরিকায়ও বেকার লোক আছে। আমি বলল- হতাশ হলে চলবে না। দুষ্টলোকদের মুখে লাথি মেরে দেশ কিন্তু একটু একটু করে ঠিকই এগিয়ে যাচ্ছে। ভেবে দেখুন- কত গুলো টিভি চ্যানেল, কত গুলো মার্কেট। এগুলো কিন্তু উন্নয়নের উদাহরন হিসেবে ধরা যেতে পারে। মানুষ কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। ব্যবসা করার সুযোগ পাচ্ছে। এই সরকার ব্যবসা বান্ধব সরকার। শপিংমল গুলোতে দেখা যায় মানূষের ভীড়। মানুষ দুই হাত ভর্তি করে কেনাকাটা করছে। অরথ্যাত মানূষের হাতে টাকা আছে। দামী রেস্টুরেন্টে গেলে দেখবেন- মানুষ গিজ গিজ করছে। বসার জায়গা পাওয়া যায় না। খাবার অর্ডার দেয়ার পরও আপনাকে অনেকক্ষন বসে থাকতে হবে। কাজেই মানুষ কাজ করে, কাজের বিনিময় টাকা পায়। শেষে তারা শপিং করে, এবং ভালো মন্দ খাওয়ার জন্য বড় বড় রেস্টুরেন্টে যায়। পরিবারপরিজন নিয়ে ভালোই আছে। তবে, আমি মনে করি, শিক্ষাখাতে বর্তমান সরকারের খুব বেশি মনযোগী হওয়া দরকার।
অনুরোধঃ ভদ্র সেজে থাকবেন না, ভদ্র হওয়ার চেষ্টা করুন। এতে হয়ত অনেক কিছুই পাবেন না, কিন্তু একটা জিনিস অবশ্যই পাবেন, আর সেটা হলো মানসিক শক্তি।
(কৌতূহল থেকে একটা প্রশ্ন করি- সামু ব্লগে প্রান আর এফ এল, ইউনিলিভার ইত্যাদি বিজ্ঞাপন দেখছি। এই বিজ্ঞাপন থেকে কি সামু ব্লগ টাকা পায়? পেলে কত টাকা পায়? কোন প্রতিষ্ঠান কত দেয়? মাস হিসাবে? যদি কেউ জানেন, তো আমাকে জানাবেন। অন্য কোনো কারন নেই। জাস্ট কৌতূহল।)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৫২