somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

আপনি কেন চাকরি করছেন?

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমার পরিবার।

ভদ্র মহিলা চাকরি করেন। যদিও তাকে কেউ চাকরি করতে বলেন নি। তার চাকরি না করলেও কোনো সমস্যা নাই। তার স্বামী বড় চাকরি করেন। অনেক টাকা মাইনে পান। সংসারে কোনো অভাব নেই। উনি চাকরি করেন কারন, উনার কাছে চাকরি করাটা একটা ফ্যাশন। বেশ আধুনিক সাঁজা যায়। বান্ধবীদের কাছে উঁচু থাকা যায়। ঘর সংসার করতে হয় না। স্বামীর সাথে উঁচু গলায় কথা বলা যায়। অনলাইন থেকে ফালতু শপিং করা যায়। শ্বশুর বাড়ির লোকজনদের সাথে ভাব দেখা যায়। চাকরি করে উনি নানান তাল বাহানা করতে গিয়ে- নিজের মেয়ের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করছেন না। এখন বাইরের দুনিয়া'ই তার কাছে ভালো লাগে। যে মহিলা নিজের মেয়ের প্রতি সব দায়িত্ব পালন না করে, বাইরের দুনিয়া নিয়ে মেতে থাকতে চায়- সে অবশ্যই নির্বোধ।

লেখার খাতিরে ভদ্র মহিলার নাম ধরে নিলাম- সুলতানা। সুলতানার স্বামী একদম সহজ সরল ভালো মানূষ। পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। তিনি গাড়ি-বাড়ি সবই করেছেন। আমি এই পরিবারটিকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। সবাইকেই চিনি জানি এবং বুঝি। সুলতানা'র বাচ্চাটা মাশাল্লাহ খুব কিউট। আর কি ভদ্র। কি যে সুন্দর করে কথা বলে! কিছু দিন আগে স্কুলে ভরতি হয়েছে। বাবা- মা দুইজনেই সারাদিন অফিসে। এখন বাচ্চাটার হয়ে গেছে কষ্ট। আমি নিজের চোখে দেখেছি, বাচ্চাটা স্কুল থেকে এসে এতিমের মতো ঘুরাঘুরি করে। ঠিকভাবে খাওয়া হয় না, ঘুম হয় না, গোছল হয় না। দিনের পর দিন একই অবস্থা। এর মধ্যে মেয়ের বাবা মা অফিস থেকে ফিরে মেয়েকে ধমক দেয়, খাওনি কে? ঘুমাও নি কেন? গোসল করনি কেন? একদিন দেখি মেয়ের মা মেয়েকে চড় থাপ্পড় দিচ্ছে। ক্ষিপ্ত মেজাজে চোখ মুখ কুঁচকে মেয়েকে গালমন্দ করছে। আমি দৌড়ে গেলাম মেয়েকে বাঁচাতে। নির্বোধ মহিলা বুঝে না- সে যদি আজ বাসায় থাকতো, তাহলে মেয়েটির সময় মতো খাওয়া, গোসল, ঘুম সবই হতো। মেয়েটির চাচা, মামা বা নানা-নানীর পক্ষে সম্ভব না মায়ের মতো করে গোসল খাওয়া আর ঘুম পাড়াতে। মেয়েটিও তাদের কাছে সাচ্ছন্দবোধ করে না। কিন্তু সুলতানা এসব কিছুই বুঝতে চায় না।

মেয়ের বয়স ৪/৫ বছর হবে (আমার মেয়ের বয়সই)। খুব লক্ষ্মী একটা মেয়ে। আমার ইচ্ছা করে মেয়েকে নিজের কাছে এনে রাখি। মেয়েটার কি অপরাধ আমি ভেবে পাই না। একজন মা ঘরে না থাকলে- ছোট একটা বাচ্চা মেয়ে কিভাবে পারে খেতে, গোসল করতে, ঘুমাতে? আমি বুঝি না সুলতানার চাকরি করার কি ধরকার? যদি এমন হতো সুলতানা অভাবী তাহলে একটা কথা ছিল। আসলে কিছু মেয়ে আছে বাহিরমূখী। এরা বিয়ের আগেও প্রতিদিন কোনো না কোনো উছিলায় বাইরে যায়, বিয়ের পরও যায়, এমনকি বাচ্চা হলে, বাচ্চার দেখা শোনার ভার কাজের লোকের কাছে দিয়ে বাইরে যায়। কি এত মজা বাইরে? আমি অনেক মাকে দেখেছি বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে- যতই ভালো চাকরি হোক ছেড়ে দেয়। বাচ্চার হওয়ার পর সব ধ্যান-জ্ঞান থাকে বাচ্চাটিকে ঘিরে। আর সুলতানা- আছে চাকরি নিয়ে। চাকরিতে এত মজা? নিজের মেয়ের চেয়ে বড় চাকরি? আমার ধারনা, সুলতানার স্বামী অতিশয় ভদ্রলোক। তাই ঘরে অশান্তি হবে বলে চুপ করে থাকেন। শুক্র শনি দুই দিন তিনি বাসায় থাকেন- এক মুহূর্তের জন্য বাইরে যান না। মেয়েকে আগলে রাখেন। মেয়েটাও সারাক্ষন বাবার কাছে থাকে। কত যে গল্প করে বাপ আর মেয়ে। দেখতে বড় ভালো লাগে।

মেয়েটার বাবা প্রতিদিন অফিস থেকে এসেই মেয়েকে পড়াতে বসায়। আর তখন মেয়ের মা সুলতানা বান্ধবীদের সাথে মোবাইলে ফালতু কথা বলে। ছুটির দিনও সুলতানা মেয়েকে সময় দেয় না। সেদিন সে যায় পার্লারে, মার্কেটে আর বান্ধবীদের বাসায়। সুলতানা প্রায়ই বলেন বান্দবী ছাড়া লাইফ ইমপসিবল। সুলতানা চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে সব মনযোগ মেয়ের দিকে দিচ্ছে না কেন? যদি সে মেয়েকে স্কুলে দিয়ে আসলো, নিয়ে আসলো। স্কুল থেকে ফেরার পর নিজের হাতে গোসল করিয়ে দিল, খাইয়ে দিলো। কোলে করে ঘুম পাড়িয়ে দিল। বাচ্চা মেয়েটা তো এটাই চায়। মেয়েটিকে এতটুকু দিতে সুলতানার সমস্যা কি? কেন সুলতানা চাকরির জন্য এত অস্থির? সুলতানা মেয়ের জন্য এখন নিয়ম করে দিয়েছে, একদিন সে থাকবে তার দিদার কাছে, একদিন নিনা'র কাছে, একদিন চাচীর কাছে, একদিন ঘরের বুয়ার কাছে। কিন্তু মেয়ে এদের কারো কাছেই থাকতে চায় না। সুলতানা মানূষ হিসেবে খারাপ না। আধুনিক, রুচিশীল, শিক্ষিতা। তার হাতের রান্নাও বেশ ভালো। আমি সুলতানাকে বুঝাতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। সে উলটো আমাকে ময়না বুঝ দিয়ে দিল। আমার মেয়ে আমার কলিজার টুকরা। আমার দুনিয়া। ইত্যাদি ইত্যাদি।

মায়ের মতো করে ছেলে মেয়েকে আর কেউ পালতে, ভালোবাসতে পারে না। তা একেবারেই সম্ভব না। কোনো দিনও সম্ভব না। আমার মেয়েকে আমি যেভাবে আদর-মায়া-মমতা আর ভালোবাসা দিয়ে বড় করবো তা কি অন্য কেউ পারবে? আমার মতো করে- সম্ভব? মা যখন তার ছেলে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে, এর চেয়ে শান্তি দুনিয়াতে আর কিছুতে নেই। চাচা মামা খালু নানী দাদী ইত্যাদি লোকজন যত ভালোবাসা নিয়েই আদর ভালোবাসা দেখাক- মা'র মতো সম্ভব নয়। কাজেই সুলতানা তার মেয়েকে নানীর কাছে রাখুক, দাদীর কাছে রাখুক, মামা বা চাচার কাছে রাখুক- তাতে কোনো লাভ নেই। মায়ের ভালোবাসা মায়া মমতা আর কারো পক্ষে সম্ভব নয়। কিছুতেই না। মায়ের মতো করে নানা নানী, চাচা মামা বা অন্য কেউ পারবে না। হয়তো তারা অনেক ভালোবাসবে কিন্তু এই ভালোবাসায় মেয়ের কোনো উন্নতি হবে। আমি মনে করি, সুলতানা ভুল করছে। তার চোখে রঙ্গিন চশমা। সুলতানার উচিত চাকরি ছেড়ে দিয়ে মেয়ের দিকে সম্পূর্ণ মনযোগ দেয়া। মেয়েকে সময় দেয়া। তাহলেই মেয়ের ভবিষ্যত সুন্দর হবে। মা কাছে থাকলে, মেয়ের সময় মতো খাওয়া হবে, গোসল হবে, ঘুম হবে, লেখা পড়া হবে। আর এগুলো সব হলেই মেয়ে এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে বড় হতে পারবে। যে সমস্ত বাবা মা ছেলে মেয়েদের ছোটবেলা থেকেই সময় দেয় না, সেসব বাবা মা'র সন্তানরাই দুষ্ট হয়। ছেলে মেয়ে একবার বেলাইনে চলে গেলে- হাজার কান্না কাটি করেও লাভ নেই।

নিজের কথা একটু বলি- আমি অফিস থেকে ফিরে দৌড়ে বাসায় চলে যাই। কোথাও এক মিনিট সময় নষ্ট করি না। বন্ধু বান্ধন আত্মীয় স্বজন কারো কাছে যাই না। আমার মাথায় একটা চিন্তাই থাকে, কখন বাসায় যাবো, মেয়েটাকে দেখবো। সুরভি আর আমার মেয়েটা আমার অপেক্ষায় আছে। যদিও সারাদিনে অনেক বার তাদের সাথে মোবাইলে কথা হয়। আমি যেমন অফিস শেষে অস্থির হয়ে থাকি, কখন বাসায় যাবো, প্রিয় দু'টা মুখ দেখবো। জড়িয়ে ধরবো। তারা আমার চেয়ে বেশি অস্থির হয়ে থাকে। তাদের এক নজর দেখলেই আমার সারাদিনের কষ্ট ক্লান্তি সব পানি হয়ে যায়। খুব শান্তি। খুব আনন্দ।

(বিঃ দ্রঃ আমি কি এই লেখাটা সুলতানা কে পড়তে দিব?)
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:০৮
৪১টি মন্তব্য ৩৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×