somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

প্রথম পরিচয়

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সুরভি'র সাথে আমার প্রথম পরিচয়ের গল্পটা কি আপনাদের বলেছি?

একেবারে হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসে নায়ক নায়িকার যেভাবে প্রথম পরিচয় হয়- আমাদেরও সেভাবে পরিচয় হয়। ঘটনাটা খুলেই বলি- গ্রীস্মের এক মধ্যদুপুরে আমি টিএসসিতে বসে আছি। কাঁধে ক্যামেরার ব্যাগ। তখন আমি দৈনিক যুগান্তর আর সমকাল পত্রিকায় কন্ট্রিবিউটর হিসেবে কাজ করি। যাই হোক, হঠাৎ আমার চোখ পড়লো- এক মেয়ে আইসক্রীম কিনে রাস্তার টোকাইদের খাওয়াচ্ছে। লাল, নীল, সবুজ ললিপপ আইসক্রীম। একজন-একজন করে নিজের হাতে সবাইকে আইসক্রীম দিচ্ছে। ছোট ছোট বাচ্চাদের চোখে মুখে এক আকাশ আনন্দ খেলা করছে। আমার মনে হলো- এর আগে এত যত্ন নিয়ে, এত ভালোবাসা নিয়ে কেউ কাউকে আইসক্রীম কিনে দেয়নি। দৃশটা এত ভালো লাগলো। আমি মুগ্ধ হয়ে দেখছি!

আমি সুরভি'র কাছে গিয়ে বললাম- আমাকেও একটা আইসক্রীম কিনে দিন। আজ খুব গরম পড়েছে। সুরভি আমাকে একটা সবুজ রঙের আইসক্রীম কিনে দিল। বলল- সবুজ আমার প্রিয় রঙ। সুরভি'র মন মানসিকতায় আমি মুগ্ধ! কি সুন্দর একটা নীল শাড়ি পড়েছে, চোখে মোটা করে কাজল দিয়েছে, দুই হাত ভরতি কাঁচের চুড়ী, মাথা ভরতি চুল। আমি বললাম, আপনিও একটা আইসক্রীম নিন। সুরভি খুব সহজ সরল গলায় হেসে বলল- বাসায় যাওয়ার ভাড়া ছাড়া আমার কাছে আর কোনো টাকা নেই। আমি বোকার মতো বলে বসলাম- আসুন আমারটা থেকে দু'জন মিলে ভাগাভাগি করে খাই। সুরভি হেসে ফেললো। সুরভি'র হাসি দেখে আমি আর একবার মুগ্ধ হলাম!

পরের দিনের ঘটনা।
আমি বরিশাল যাচ্ছি এক বিয়ের অনুষ্ঠানে ছবি তুলতে। (তখন খুব বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি তুলে বেড়াতাম।) ছেলেপক্ষ আমাকে ভাড়া করে নিয়ে যাচ্ছে, বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি তোলার জন্য। (পরে জেনেছি সুরভি'র কাজিনের বিয়ে) লঞ্চের নাম কীর্তনখোলা- ৩। রাত আট টায় লঞ্চ ছাড়লো। আমাকে একটা কেবিন দেয়া হয়েছে। কেবিনে শুয়ে বই পড়ছি- বঙ্কিমের 'বিষবৃক্ষ'। রাত ১১ টায় একজন এসে আমাকে খাবার দিয়ে গেল। বাসার রান্না করা খাবার। রাত একটায় 'বিষবৃক্ষ' শেষ হলো। তারপর হাতে নিলাম- 'নক্সী কাঁথার মাঠ'। কি মনে করে, বইটা রেখে - কেবিন থেকে বাইরে এসে দাড়ালাম, উদ্দ্যেশ্য কিছুক্ষন কীর্তনখোলা উপভোগ করবো। ডেকে দাঁড়িয়ে আছি। বেশ অন্ধকার। কতক্ষন দাঁড়িয়ে ছিলাম জানি না- হঠাৎ অন্ধকারে দেখি একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটি সুরভি!! আমরা দু'জনেই অনেকক্ষন চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু ভিতরে ভিতরে কি আমাদের অনেক কথা হয়ে যায়নি? কৃষ্ণপক্ষের রাত, সাথে মাতাল হাওয়া! বাতাসে সুরভি'র চুল আমার গায়ে এসে পড়ছে।

তিন দিন পর বরিশাল থেকে ঢাকা ফিরলাম। এই তিন দিন সুরভি'র সাথে আমার একটাও কথা হয়নি। এবং তার একটাও ছবি তোলা হয়নি। শুধু চোখে চোখ! চোখ দিয়েও যে কত কথা বলা যায়- আমি আগে জানতাম না। যাই হোক, ঢাকা ফেরার পরের দিন লাল মাটিয়া কলেজের সামনে সুরভি'র সাথে আবার দেখা। একেই বলে কাকতালীয়। আমি প্রচন্ড অবাক!! কেন বার বার দেখা হচ্ছে মেয়েটির সাথে? আমি যদি আজ লাল মাটিয়া না এসে, যদি কাটাবন যেতাম তাহলে সেখানেও কি দেখা হতো? তার মানে আল্লাহ'র ইচ্ছায় দেখা হচ্ছে। আমার কিছু একটা করতে হবে। আমি লাফ দিয়ে সুরভি'র সামনে গিয়ে বললাম- আপনার মোবাইল নম্বর দেন। কেন আমাদের বারবার দেখা হচ্ছে- বুঝেন না? আমাদের নিয়ে ঈশ্বরের অন্যরকম একটা পরিকল্পনা আছে। আমি মনে করি, সেই পরিকল্পনায় আমাদের অংশ গ্রহন করা দরকার। সুরভি হেসে ফেলল- হাসি দেখে আমি আবারও মুগ্ধ হলাম!

নাম্বার নিয়ে খুশি মনে বাসায় ফিরলাম। কিন্তু ফোন আর করতে পারি না। হাতে মোবাইল নিই কিন্তু ফোন আর করা হয় না। একটা দ্বিধা, এক আকাশ সংশয়। হয়তো কিছুটা লজ্জাও থেকে থাকবে। মনে মনে বলি- সুরভি একটা ফোন দাও। প্লীজ একটা ফোন দাও। তারপর আমি তোমাকে একশ' টা ফোন দিব। এইভাবে সাত দিন পার হয়ে গেল। সুরভি আর ফোন দেয় না। তখন হঠাত মনে পড়লো- আরে ... সুরভি'র কাছে তো আমার নাম্বার নেই। সুরভি কিভাবে আমাকে ফোন দিবে? সুরভি আমার নাম্বার নেয় নি। হায় হায়- কি বোকা আমি!! কি নির্বোধ আমি!! নিজের ওপর নিজের খুব রাগ হলো। সাথে সাথে সুরভিকে ফোন দিলাম। সুরভি বিষন্ন কন্ঠে বলল- এতদিন পর আমাকে মনে পড়লো?
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৩৫
৩৭টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×