আমি জানতে চাই- আমাকে কেন পৃথিবীতে পাঠানো হলো? আমি তো পৃথিবীতে আসতে চাইনি। বাবা মাকে আমি ছোট বেলা'ই প্রশ্ন করেছিলাম- আমাকে দুনিয়াতে আনলে কেন? উত্তরে মা-বাবা বলল- তোমাকে আল্লাহ পাঠিয়েছেন। প্রতিটা মানূষকেই আল্লাহ দুনিয়াতে পাঠান। এখন আমার প্রশ্ন, আল্লাহ আমাকে কেন দুনিয়াতে পাঠালেন? তার উদ্দেশ্য কি? তার দেখানো পথে চলা কি সম্ভব? আর যদি দুনিয়াতে পাঠালেনই তাহলে ইউরোপের কোনো দেশে পাঠালেন না কেন? কেন একটা দরিদ্র দেশে পাঠালেন? উন্নত দেশে পাঠালে সমস্যা কি ছিল? অথবা বাংলাদেশের সেরা ধনীর ঘরেই পাঠাতেন। জন্মের আগে তো কোনো পাপ করিনি- তাহলে কেন আমার প্রতি এত অবিচার করা হলো?
পৃথিবীতেও আমার কষ্ট, আবার ধর্ম মতে মৃত্যুর পরও না জানি কত শাস্তি অপেক্ষা করে আছে। চারদিকে পাপের সরঞ্জাম ছড়ানো ছিটানো আর ধর্ম বলছে পাপ করো না। মৃত্যুর পর হূর পাবে। আমি তো কখনও মৃত্যুর পর হুর বা সুখ-ভোগ বিলাস চাইনি। এইসব কিছু জীবিত অবস্থায় পৃথিবীতেই চেয়েছিলাম। পৃথিবীতে যদি আমাকে পাঠানোই হলো তাহলে আমি কেন আমার ইচ্ছা মতোন চলতে পারব না? কেন আমাকে কোরআন হাদীসের ভয় দেখানো হবে? আমি মৃত্যুর পর বেহশত চাই না। আমি এই পৃথিবীতেই সব কিছু চাই। ধর্ম কি শুধু মানূষকে ভয়ই দেখায়? মৃত্যুর পর কবরে আযাব! হাশরের ময়দানে বিচারের পর কয়েক শ' বছর ধরে শাস্তি। সূর্য থাকবে এক হাত মাথার উপরে। আমি তো পৃথিবীতে আসতে চাই নাই। আল্লাহর ইচ্ছায় এসে এখন, হাজার নিয়ম কানুন আর কষ্ট আবার মৃত্যুর পরও নাকি শাস্তি আছে।
একজন শিশু মা'র পেট থেকে বের হয় প্রতিবন্ধী হবে, জন্ম অন্ধ হয়ে বা পঙ্গু হয়ে আবার আর একজন মা'র পেট থেকে বের হয়- সুন্দর হাত-পা, মুখ-চোখ নিয়ে। যে বাচ্চাটা প্রতিবন্ধী হয়ে দুনিয়াতে আসলো তার পাপ কি? কথিত আছে সব কিছু তো আল্লাহর ইচ্ছাই ঘটে। একজনের কোটি কোটি টাকা। সামান্য চুল কাটাতে যায় মালোশিয়া আর একজনের টাকা'ই নেই। তিনবেলা ঠিকভাবে খেতেও পায় না। এটা কেমন ইনসাফ? একজন চলে পাজারো গাড়িতে, আর একজন অভাবের কারনে ত্রিশ টাকার পথ রোদ বৃষ্টি গায়ে মেখে হেটে যায়। একই পৃথিবীতে কত নিয়ম। আফ্রিকার এক দেশে খাবার নেই, চারদিকে শুধু মরুভূমি আর মরুভূমি। আবার ইউরোপের একদেশে এত শস্য হয়েছে যে রাখার জায়গা নেই, তাই জাহাজে করে সবজি গুলো সমুদ্রে ফেলে দিতে হয়। এক হিসেবে দেখা যায়- হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ আর খ্রিস্টানের চেয়ে- যারা মানবতাবাধী তারাই ভালো মানুষ। আমার বন্ধু জোসেফ প্রায়ই বলে- পৃথিবীতে মানব ধর্মই সবচেয়ে বড়।
কিছু ভন্ড ধার্মিক আছে এরা বলে,
# পৃথিবী টা স্বল্প সময়ের জন্য। (এই জন্যই তো আমাকে পাপ করতে হবে। পৃথিবীর আসল মজাই তো পাপে। মৃত্যুর পর যা হবে-হবে তখন দেখা যাব। এই স্বল্প সময়ের জন্য তো আমি আসতে চাইনি। আমাকে পৃথিবীতে এনে ঝামেলায় ফেলে দিলেন।)
# পৃথিবীতে আপনাকে পাঠানো হয়েছে পরীক্ষার জন্য। (আমি পরীক্ষা দিতে চেয়েছি? আমি বলেছি আমি পরীক্ষা দিতে চাই, আমাকে পৃথিবীতে পাঠাও? ধরে বেঁধে যা মন চায় তাই করছেন!! মনে করেন বাড়ির লাইক আমি, এখন আমার যা ইচ্ছা ভাড়াটিয়াদের সাথে তাই করবো।)
# ইহুদীরা কোরআন রিচার্জ করে ল্যাপটপ, মোবাইল, ইন্টারনেট, ফেসবুক, ভাইবার, ওভেন ইত্যাদি সব বানিয়েছে। (তোরা [মুসলিম] আবিস্কার করলি না কেন? ওদের আবিস্কার করা জিনিস তোদের ব্যবহার করতে লজ্জা করে না? আবার চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলিস?)
# পবিত্র কোরআনে সব সমস্যার সমাধান আছে। (তাহলে বিশ্ব যুদ্ধে এত মানূষকে হত্যা করা হলো কেন? কোনআন দিয়ে এর সমাধান করা হলো না কেন? এইডস এর ওষুধ আবিস্কার হচ্ছে না কেন? ডাক্তাররা এত এত বই না পড়ে শুধু কোরআন পড়ে ডাক্তার হচ্ছে না কেন?)
# সব কিছু আল্লাহর ইচ্ছায় হয়। (সব যদি আল্লাহর ইচ্ছায়ই হয়- তাহলে আমি হাত পা নিয়ে চুপ করে বসে থাকি। পরিবারের এক মাত্র কর্মক্ষম ব্যাক্তি স্ট্রোক করে মারা যায়, পরিবারের অন্য সদস্যরা সমুদ্রে নিমজ্জিত হয়। রোহিঙ্গাদের এই অবস্থা- চোখে দেখে সহ্য হয় না। খুব কষ্ট হয় আমার। প্রভু কিভাবে সহ্য করছেন- এত অবিচার, অনাচার? একটা প্রশ্ন দুনিয়াতে খারাপ কাজ গুলো কার ইচ্ছায় হয়?)
# মুসুল্লিরা বলেন নামাজ পড়তেই হবে। (তোমরা যারা নামাজও পড়ছো, আবার ভন্ডামিও করছো, ঘুষ খাচ্ছো, মসজিদ থেকে বের হয়েই কুৎসিত ভাবে মেয়েদের বুকের দিকে তাকিয়ে থাকো। তর্কে জেতার জন্য কথায় কথায় কোরআন হাদীস নিয়ে আসো)। বর্তমান সময়ের- বেসিক্যালি মানুষ হচ্ছে অস্থির প্রকৃতির, এবং স্বভাবগত ভাবেই ক্ষমতালোভী ও অলস প্রকৃতির। সুতরাং মানুষের কাছ থেকে absolute good বের করে আনা কখনই সম্ভব নয়।
হে প্রভু কেন একটা শিশুকে এ পৃথিবীতে এনে এত কষ্টের স্বীকার হতে হবে? শিশুটি তো পৃথিবীতে আসতে চায়নি। আমার কথাই বলি- প্রতিটা দিন আমাকে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয়। মৃত্যুর পরও আছে হাশর, বিচার শাস্তি। কেন? কেন? কেন? আর যদি পরকালের আশায় সারাক্ষন ধর্ম-কর্ম নিয়েই থাকি তাহলে কাম-কাজ, লেখা-পড়া, ঘর-সংসার, আনন্দ-বিনোদন কখন করবো? হে প্রভু আমার আর ভালো লাগে না- তোমার এই নোংরা পৃথিবীতে। সমস্ত পৃথিবী আজ স্বার্থের বেড়াজালে বন্দি। সমাজ ভাববাদের অন্ধকারে নিমর্জ্জিত। আলোর একান্ত অভাব। শুধু নক্ষত্রের আলোয় পৃথিবী আলোকিত হয় না, জ্ঞানের আলোরও প্রয়োজন আছে। আজ পৃথিবীটা এমন হয়ে দাড়িয়েছে- কোরআন হাদীসের দেখানো পথে চললে- না খেয়ে থাকতে হবে, হায়াত থাকতে মরে যেতে হবে। আমি যদি না থাকতাম তাহলে এত প্যারা আমাকে নিতে হতো না। মৃত্যুর পরের ঝামেলায়ও আমাকে যেত হতো না। আমাকে জোর করে, আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে- এই ঝামেলায় ফেলা হলো।
(বড্ড অগোছালো আর খাপছাড়া লেখা মানেই আমার লেখা। সবাই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। লেখায় ভুলভাল যা করি তা শুধরে দিতে সহযোগিতা করবেন। সবাই ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন।)
"তোমাকে নিয়ে যে ছোট খাটো তামাশা করেছি ক্ষমা করো,হে বিধাতা,
আমাকে নিয়ে যে তোমার বিরাট ঠাট্রা ক্ষমা করে দেবো আমিও তা"।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৮