প্রায়ই ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় লটারির টিকিট বিক্রি করতে দেখা যায়। কিন্তু আজ পর্যন্ত কাউকে দেখিনি যে লটারি জিতেছে। আপনারা কি দেখেছেন? ত্রিশ লক্ষ টাকা, গাড়ি ফ্ল্যাট ইত্যাদি। ঈদ বা পূজা উপলক্ষ্যেও লটারি হয়। লটারি মানেই কি ঠকবাজি? প্রতারনা? জীবনে কতবার লটারি কিনেছেন, কখনো জেতেননি। তবু ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় আবার কিনেছেন। আসলে আমাদের সবারই প্রয়োজন টাকার। একসাথে একটা বড় অংকের টাকা পেলে মন্দ হয় না। জীবনের অনেক সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। তাই আমরা বার বারই লটারি কিনি। কিন্তু লটারি মেলে না। আমরা তখন ভাগ্যের দোষ দেই।
যদি কেউ লাখ-লাখ টাকার লটারি যদি কেউ জিত যায়! তাহলে তিনি কী করতে পারেন? আটটা-পাঁচটার চাকরিকে একঝটকায় ছেড়ে দিতে পারেন, বাড়ি কিনতে পারেন, গাড়ি কিনতে পারেন, হীরের গয়না কিনতে পারেন, বিদেশে ঘুরতে যেতে পারেন…. আর? বসের মুখে প্রস্রাবও করতে পারেন! ঈদের সময় বড় বড় মার্কেটেও এখন লটারি করে। মার্কেটের মধ্যে সুন্দর একতা গাড়ি সাজিয়ে রাখে। আরও অনেক পুস্কারও আছে। কেনাকাটা করলে টিকিট দেয়। বলা হয় ড্র হবে ঈদের পর। এই গাড়ি আর অন্যান্য পুরস্কার কে বা কারা পায় কোনো দিন দেখলাম না।
আন্তজাতিক লটারিও আছে যেমন- ইউরমিলিয়ন্স, পাওয়ারবল (লটারি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় লটারিগুলোর মধ্যে অন্যতম), ব্রিটিশ লটারি, মেগা মিলিয়ন্স (লটারির সর্ববৃহত জ্যাকপটের পরিমান ছিল ৬৫৬ মিলিয়ন ডলার) ইত্যাদি। আমাদের দেশে আর্তমানবতার সেবামূলক কার্যক্রমের জন্য তহবিল সংগ্রহে ৩টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে শর্তসাপেক্ষে জাতীয় পর্যায়ে লটারি অনুষ্ঠানের অনুমতি দিয়েছেল অর্থমন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি)। কিন্তু এই লটারি গুলো কোনো দিন কি কেউ পেয়েছে? আমি শুনিনি বা দেখিওনি।
বেকার আর হতাশগ্রস্ত লোকেরাই লটারির টিকিট সবচেয়ে বেশী কিনেন। এই কিছুদিন আগে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবার স্বার্থে চালু হল ‘বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি হাসপাতাল লটারী বিক্রি করেছিল। প্রথম পুরস্কার ছিল ১টি ফ্ল্যাট অথবা নগদ ৩০ লাখ টাকা। শুনেছি আগষ্ট মাসে লটারির ড্র হয়েছে। সেই লটারি কে পেল? লটারি দ্র'র পর সব পত্রিকা দেখলাম কিন্তু কোনো খোজ খবর পেলাম না। বিক্রিত টিকেটের লটারি ও লটারি অনুষ্ঠানের ২ মাসের মধ্যে পুরস্কার হস্তান্তর করা এবং উৎসে কর ও মূসক লটারি অনুষ্ঠানের ৯০ দিনের মধ্যে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হয় এবং এই নিয়ম না মানলে জাতীয় লটারি নীতিমালা, ২০১১ এর ৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী উক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা রয়েছে।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে মসজিদের ইমামরা বলেন- ভাই লটারি হলো ভাগ্য পরীক্ষা আর এটি শিরকের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তাআলা শিরকের গোনাহকে কখনোই ক্ষমা করেন না। আপনার উচিত এই পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা। লটারি জুয়ার পর্যায়ভুক্ত। সুতরাং পুরষ্কারের লোভে তার টিকেট কেনা হারাম, তার পুরষ্কারও হারাম। আর হারাম দিয়ে কোন ভাল কাজের প্রতিযোগিতা করা প্রস্রাব দিয়ে পায়খানা ধোওয়ার মতো। আর যদি আপনি লটারি জিতে যান এবং কিছু টাকা মসজিদে দিতে চান তখন হুজুররা হাসি মুখে আপনার টাকা নিবে। এবং আপনার জন্য স্পেশাল দোয়ার ব্যবস্থা করবে।
এবার আসি আসল কথায়- গত এক দশকে আর্ত মানবতার সেবায় আয়োজিত লটারির অন্তত ২৫ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তা ও লটারি এজেন্ট-আয়োজকের যোগসাজশে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে লটারি অনুমোদন নিয়ে তা বিক্রি করে দিচ্ছে চিহ্নিত একটি চক্র। লটারির টিকিট বিজি প্রেসে ছাপানোর কথা থাকলেও তা বাইরের প্রেসে ছাপানো হয়। রাজনৈতিক নেতারা আর মন্ত্রনালয়ের আমলারা মোটা টাকা ঘুষ নিয়ে এসব লটারির অনুমতি দেয়।আর পুরষ্কারের টাকাটা তো কোনদিন কেউ পেয়েছে বলে শুনিনি। সাধে কি আর আমরা দুনিয়াতে সবচাইতে দুর্নীতিবাজ দেশ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৫৮