বিয়ের সময় সব ছেলেরাই সুন্দর মেয়ে খোঁজে। সুন্দর মেয়ে বিয়ে করতে চায়। শুধু ছেলে না, ছেলের মা-বাবা, আত্মীয় স্বজন সবাই সুন্দর মেয়ে খোঁজে। ব্যাপারটা আমার কাছে খুব হাস্যকর লাগে। খুব অল্প সংখ্যাক মেয়ে দেবী প্রতিমার মতো সুন্দর হয়। আমাদের দেশের সব মেয়ে সুন্দর না। কেউ কালো, কেউ মোটা, কেউ বেটে, কেউ রুক্ষ, কেউ বেশি শুকনা, কারো নাক বোচা ইত্যাদি নানান সমস্যা। শেক্সপিয়ার তার 'ম্যাকবেথ' এ বলেছেন- সুন্দরী মেয়েদের মধ্যে সততা আশা করা ভুল।
একটা গল্প বলি- মেয়েটির নাম রুপা। রুপা খ্রিস্টান। একটা নামকরা পার্লারে কাজ করে। আট ঘন্টা ডিউটি। ১৩ হাজার টাকা বেতন পায়। মেয়েটি অনার্স করেছে বাংলায়। দরিদ্র পরিবারের সন্তান। ছোটবেলায় রুপার একবার কঠিন অসুখ করে, ছয় মাস পর অসুখ ছেড়ে যায় কিন্তু তারপর থেকে রুপা মোটা হতে থাকে। এখন তার ওজন এক শ' সতের কেজি। দেখতে তথাকথিত সুন্দরী নয়। ছেলেরা দেরীতে বিয়ে করলে সমস্যা নাই কিন্তু মেয়েদের দেরীতের বিয়ে দিলে নানান সমস্যা হয়। একটা বয়সের পর মেয়েদের আর বিয়ে খুব একটা হয় না। এরকম বিয়ে না হওয়া মেয়েদের সংখ্য অনেক।
রুপা একটা ছেলের সাথে প্রেম করলো প্রায় চার বছর। ছেলেটা বেকার। নাম- রাজু। ছেলেটা মুসলিম। হাজার বার লক্ষ বার চাকরির চেষ্টা করেছে। খুব ছোট একটা পদের চাকরি জোটাতে বারবার ব্যর্থ হয়েছে। ছেলেটা দরিদ্র বাবার সন্তান। অনেক গুলো ভাই বোন, সবারই একই অবস্থা। ছোট্র একটা বাসায় সবাই গাদাগাদি করে থাকে। ছেলেটার ইচ্ছা একটা চাকরির পেলেই বিয়ে করবে রুপাকে। এদিকে রুপার বাবা মা রুপার জন্য ছেলে দেখছে। যেহেতু রুপা দেখতে সুন্দর না। তার উপর আবার খুব মোটা। গায়ের রঙ কালো। কাজেই ভালো ছেলে পাওয়া যাবে না। যা দুই চারজন আসছে সব বয়স্ক লোক, মাথা টাক। রুপা কেন সুন্দর না এই জন্য রুপার বাবা-মার এক আকাশ কষ্ট।
ঠিক এই রকম অবস্থায় রুপা বেকার ছেলেটাকে বিয়ে করে ফেলল। রুপার বাবা মা রুপাকে বাসা থেকে বের করে দিল। রাজুর বাবা মা বলল- বিয়ে করেছো, ভালো করেছো। এইবার চড়ে খাও। আমার বাসায় তোমাদের জায়গা নাই। রুপা আর রাজু পড়লো ভয়াবহ বিপদে। এই রুপা আর রাজু শীতের মধ্যে খিলগাও রেল লাইনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। দুইজন'ই শীতে কাঁপছে। তাদের সাথে কোনো টাকা নেই। দুপুর থেকে তারা না খাওয়া। মাসের শেষ। মেয়েটার কাছে অল্প কয়েকটা টাকা ছিল- তা দিয়েই বিয়ের কাজ শেষ করা হয়েছে। এখন দু'জন কি করবে, কোথায় যাবে কিচ্ছু জানে না।
এই রুপাকে আমি চিনি না। তবে এই রুপা যখন ছোট ছিল- তখন আমি তাকে চিনতাম। আমাদের এলাকায় একটা টিনসেড বাড়িতে ভাড়া ছিল। কি সুন্দর কাঁধে স্কুল ব্যাগ নিয়ে, মাথায় দুইটা ঝুটি করে স্কুলে যেত। এই মেয়ের আজ এই অবস্থা! রুপাকে দেখে আমার খুব খারাপ লাগলো। কি দেখেছি, আর আজ কি অবস্থা!!
আমি রুপা আর রাজুকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে বসলাম তাদেরকে ভাত খাওয়ালাম। রুপা আমাকে সব ঘটনা বলল। আর এই ফাঁকে রাজু আমার সিগারেটের পেকেট থেকে একটার পর একটা সিগারেট শেষ করতে লাগল। আমি তাদের একটা বাড়ির ছাদে থাকার ব্যবস্থা করে দিলাম। ভাড়া পাঁচ হাজার টাকা। প্রথম মাসের টাকা আমিই দিয়ে দিলাম। রুপার হাতে কিছু টাকা দিলাম।
এই ঘটনার তিন দিন পর রুপা আমার বাসায় এসে হাজির। রাজুর একটা চাকরির ব্যবস্থা করেই দিতে হবে। রাজু ছেলেটাকে আমার ভালো মনে হয়নি। মনে হচ্ছে ছেলে অতি দুষ্ট। আর আমি অবশ্যই দুষ্টলোকের জন্য কিছু করি না। এদিকে সুরভির সাথে রুপার খুব খাতির হলো। সুরভি প্রায়ই রুপার সাথে মোবাইলে কথা বলে। রুপা বাসায় এসে থালা বাটি, গ্লাস, বালিশ কম্বল ইত্যাদি অনেক কিছু নিয়ে গেছে।
আমি সুরভিকে বললাম, তুমি এত সব দিতে গেলে কেন? সুরভি বলল, যা শীত পড়েছে, নতুন সংসার- কাথা বালিশ কিছুই নাই। পানি খাওয়ার গ্লাসও নাই। এত মায়া লাগলো।
রুপা আর রাজুর বর্তমান অবস্থা হলো- রাজু সারাদিন বাসায় বসে থাকে। রুপা তার অফিস শেষ করে, বাজার নিয়ে বাসায় ফিরে- রান্না করে। তারপর দু'জন মিলে খায়। বাজার বলতে মাছ মাংস না। আলু অথবা কলমি শাক। এক কেজি চাল। সুরভি প্রায়ই রান্না করে রুপাকে ফোন দেয়- রুপা বাসায় এসে দু'জনের ভাত তরকারি নিয়ে যায়। প্রায় ছয় মাস ধরে এই রকমই চলছে।
আমি সুরভিকে বললাম- আমার ধারনা রাজু রুপার সাথে আর বেশি দিন থাকবে না। আরও কিছু দিন যৌনতা উপভোগ করে ভাগবে। রুপা কাঁদবে। সারা জীবন কাঁদবে। রুপা নির্বোধ। বাবা মার বাসা থেকে বের হয়ে এই ছেলেকে বিয়ে করাটাই রুপার মস্ত বড় ভুল হয়েছে। রুপা ভুল মানূষকে ভালোবেসেছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৭