বাসে করে যাচ্ছি, ভাগ্য বেশ ভালো সিট পেলাম। হঠাৎ একজন তরুনী মেয়ে উঠলো কিন্তু আর সিট নেই। মেয়েটি খুব সুন্দর।
আমি লাফ দিয়ে উঠে বললাম, আসসালামুয়ালাইকুম, নিন এইখানে বসুন। মেয়েটি হাসি মুখে আমার সিটে বসল। বলল, আপনি কি সব সময় মেয়েদের এই রকম সিট ছেড়ে দেন? আমি বললাম জ্বী ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু আমাকে দেখে কেউ কোনোদিন সিট ছেড়ে দেয়নি।
ঘটনা চক্রে আমরা একই জাগায় দু'জন নামলাম। মেয়েটি বলল, আমার খুব ইচ্ছা করছে আপনাকে একটা বার্গার আর কোক খাওয়াই। আমি বললাম চলুন। ঠিক মাথার উপরে সূর্য। কড়া রোদ। একেবারে স্বচ্ছ কাচের মতোন রোদ। আমরা একটা ফাস্টফুডে ঢুকলাম। দোকানে ঢুকার সাথে সাথে সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল। এইসব দোকান গুলোতে সারাক্ষন এসি ছাড়া থাকে। হালকা মিউজিক বাজতে থাকে। বেশ ভালৈ লাগে।
আমি আরাম করে বার্গার আর কোক খেলাম। বেশ ক্ষিধে পেয়েছিল। মেয়েটি কিভাবে বুঝলো কে জানে! মেয়েটি কিছুই খেল না। বলল, আপনার হাতে কাজ না থাকলে আমার সাথে চলুন। সন্ধ্যা পর্যন্ত আমরা একসাথে ছিলাম। মেয়েটির সাথে আমার খুব ভাব হয়ে গেল। মনে হয় আমার মধ্যে একটা সহজ সরল ব্যাপার আছে, খুব অল্প সময়ের মধ্যে আন্তরিকতা হয়ে যায়। গতমাসে মেয়েটি আমস্টারডাম গিয়েছিল। অনেকদিন পর আজ বিকেলে মেয়েটির সাথে দেখা হবে।
মানুষের সাথে মানুষের ঠিক এভাবেই পরিচয় হয়। কেউ কেউ এই পরিচয় শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে পারে, কেউ পারে না। আমার সাথেও দীর্ঘদিন কারো সম্পর্ক থাকে না। কিন্তু এই মেয়েটির সাথে যোগাযোগ এখনও আছে। এটা অবশ্যই মেয়েটির গুন। মেয়েটির নাম লীনা। বাবা মার একমাত্র সন্তান। কোনো মেয়ের সাথে গভীর সম্পর্ক হয়ে গেল- তারপর হয় শারীরিক সম্পর্ক। নীলার সাথে আমার গভীর সম্পর্ক। কিন্তু আমি কখনও সেদিকে যাইনি। আমরা কেউ কাউকে ভালোবাসার কথা বলি নাই।
অনেকবার দুইজন পাশাপাশি শুয়েছি। কিন্তু ওই ব্যাপারটা ঘটতে দেইনি। নীলা বেশ কয়েকবার দুর্বল হয়ে পড়লেও- আমি তাকে শিখিয়েছি কিভাবে সংযম ধরে রাখতে হয়। অতি তুচ্ছ ঘটনার মধ্যে দিয়ে আমাদের পরিচয়। নীলার সাথে আমারও আমস্টারডাম যাওয়ার কথা ছিল। ভিসা জটিলতার কারনে যেতে পারিনি। আমস্টারডামের পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাটের চেয়ে, আমাদের দেশের মাটির খানা-খন্দে ভরা পথ আমার বেশি ভালো লাগে। একদিন ভোরে আমি আর লীনা হেঁটে যাচ্ছিলাম। পথে অসংখ্য শিউলী ফুল পড়েছিল। লীনা বলল, আসো তাড়াতাড়ি ফুল গুলো কুঁড়িয়ে নিই। একটু পরেই মানূষ পা দিয়ে মাড়িয়ে ফুল গুলো নষ্ট করে দিবে। আমি সব গুলো শিউলী কুঁড়িয়ে লীনার আঁচলে তুলে দেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:১৫