somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

জীবন যাপন

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শাহেদ ডিগ্রী পাশ করে ঢাকায় এসেছে চাকরী করার উদ্দ্যেশে। এর আগে সে কখনও ঢাকা আসেনি। ঢাকা শহরে এসে তার মাথা পুরাই আউলায়ে গেছে। যা দেখে হা করে তাকিয়ে থাকে। রাস্তার যানজট, মানুষজন, ফুটপাতের দোকান, বড় বড় অট্রালিকা, শপিংমল যাই'ই দেখে সে মুগ্ধ হয়ে যায়। আজ তের দিন সে ঢাকা এসেছে। সে উঠেছে খিলগা এলাকার এক মেসে। এই মেসে তার দূরসম্পর্কের এক চাচা থাকেন। চাচার নাম মোতালেব। সবাই ডাকে হাজী মোতালেব। যদিও মোতালেব কখনও হজ্ব করেননি। সম্ভবত তার মুখ ভরতি হুজুরদের মতো দাড়ি দেখে সবাই তাকে হাজী মোতালেব চাচা বলে ডাকেন। মোতালেব তের বছর ধরে সিএনজি চালায়। শাহেদ তার মেসেই উঠে এসেছে।

সকাল দশটা। শাহেদ প্রায় এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে আছে ঢাকা মেডিকেল এর ইমারজেন্সী গেটে। এই ঘন্টা সে দেখলে প্রতি মিনিটে কোনো না কোনো রোগী আসছে। তাদের অবস্থা ভয়াবহ। কারো হাত ভেঙ্গে গেছে, কারো পায়ের উপর দিয়ে গাড়ি চলে গেছে, কেউ তিন তলার ছাদ থেকে পড়ে গেছে, কারো মাথা ফেটে ঘিলু বের হয়ে গেছে, কেউ স্ট্রোক করেছে, কেউ গুলি খেয়েছে, কাউকে আবার এলোপাতাড়ি কোবানো হয়েছে। শাহেদের কাছে খারাপ লাগলো এই সমস্ত রোগীরা সবাই দরিদ্র শ্রেনীর। দরিদ্ররাই কি বেশি অসুস্থ হয়? রোগীর সাথে আসা লোকজন চিৎকার করে কাঁদছে। হাসপাতালের ডাক্তার আর নার্স একেবারে নির্বিকার। যেন রোগ শোক, মানুষের কষ্ট তাদের কাছে কোনো ব্যাপারই না। এই সব দেখে দেখে শাহেদ বেশ ক্লান্ত। তার এখন বমি পাচ্ছে। সে সত্যি সত্যি রাস্তায় বমি করে দিল। সে মনে মনে ভাবলো আর কখনও ঢাকা মেডিকেল আসবে না।

শাহেদ চাকরির অনেক চেষ্টা করেছে। সে চাকরি পায়নি। বরং চাকরিদাতারা তার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে। চাকরির আর কোনো আশা নেই। চাকরির আশা সে বুড়িগঙ্গা নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে। সে সতের শ' টাকা নিয়ে ঢাকা এসেছে, তার কাছে এখন আছে তিন শ' বারো টাকা। মোতালেব চাচা তার জন্য যথেষ্ট করেছেন। তাকে থাকার জায়গা দিয়েছেন। এবং বলেছেন, যতদিন তার চাকরি না হবে ততদিন তার থাকা খাওয়ার জন্য কোনো টাকা পয়সা দিতে হবে না। শাহেদ মনে মনে ঠিক করে রেখেছে, তার যদি চাকরি না হয় তাহলে সে সিএনজি চালাবে। সে গ্রামে থাকতে কিছু দিন অটো চালিয়েছে। মোতালেব চাচা অবশ্যই তাকে একটা সিএনজি নিয়ে দিতে পারবেন। সিএনজি মালিক মোতালেব চাচাকে খুব পছন্দ করেন। সমস্যা হলো সে ঢাকা শহরের রাস্তা ঘাট কিছুই চিনে না। এই জন্য সে সারাদিন ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। এত গলি, এত রাস্তা। তার মাথা আউলায়ে যায়। তবে সে মোটামোটি অনেক জায়গা চিনে ফেলেছে। সে যখন এত আশা করে ঢাকা এসেছে, জয়ী না হয়ে সে ফিরবে না।

দুপুর দুইটা। শাহেদ দাঁড়িয়ে আছে বিমান বন্দর। এমন অদ্ভুত জায়গা সে তার জীবনে দেখেনি। যারা বিদেশ থেকে আসছে তারা নামছে নিচতালা দিয়ে। তাদের নিতে আসছে পরিবার পরিজন। তারা কি খুশি! এয়ারপোর্টের বাইরে এসেই ছেলে তার বাবাকে বুকে জড়িয়ে ধরেছে। কি কান্না দু'জনের। আনন্দের কান্না। সৌদি থেকে এক শ্রমিক এসেছে। সে তার ছোট বাচ্চাকে আজই প্রথম দেখল। বাচ্চাকে বুকে নিয়ে আনন্দে কাঁদছে। একজনকে নিতে এসেছে সাত আট জন লোক। পুরো জায়গা মানুষে গিজগিজ করছে। নিরাপত্তা কর্মীরা প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে বাশি বাজিয়ে যাচ্ছে। তাদের হাতে আবার লাঠি। হাতে লাঠি কেন তা শাহেদের কাছে পরিস্কার না। সবাই পাঁচ ছয়টা করে বড় বড় লাগেজ নিয়ে এসেছে। আত্মীয় স্বজনরা সেসব লাগেজ এক আকশ আগ্রহ নিয়ে মাইক্রোতে তুলছেন। একটা পরিবার এসেছে চাঁদপুর থেকে। তাদের লোক প্লেন থেকে নামবে সন্ধ্যা ছয়টায়। কিন্তু তারা সকাল দশটা থেকে এসে বসে আছে। তাদের একজন একটু পরপর দায়িত্বরত গার্ডকে জিজ্ঞেস করছে, ভাই সাহেব দুবাই থেকে এমিরাটসের বিমানটা কি নেমেছে? তারা দুইটা বড় মাইক্রো ভাড়া করে নিয়ে এসেছে। একটাতে যাবে মালপত্র আরেকটা সবাই মিলে গল্প করতে করতে যাবে।
শাহেদ দোতলায়ও অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থাকলো। যারা দেশ ছাড়ছেন তাদের মিলনমেলা দোতলায়। একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে কি কান্না। তাদের কান্না দেখে শাহেদের চোখেও পানি এসে গেল।

ইস্কাটন এসে শাহেদ একটা অদ্ভুত ব্যাপার দেখলো। একটা ছেলে মেয়ে রিকশায় বসে খুব চুমুটুমু খাচ্ছে। ছেলেটার হাত মেয়েটার বুকে। তাদের মধ্যে কোনো লজ্জার বালাই নেই। বরং শাহেদ নিজেই লজ্জা পেল। গতকাল সে পার্কে দেখেছে, ছেলে মেয়েরা জড়াজড়ি করে বসে আছে। ছেলেটা এখানে সেখানে হাত দিচ্ছে। মেয়েটা তা খুব উপভোগ করছে। এক ছেলে বিনা দ্বিধায় মেয়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। একটু পরপর মেয়ে নিজেই ছেলেটার ঠোঁটে চুমু দিচ্ছে। আশেপাশে কে আছে অথবা কে দেখলো, না দেখলো তা যেন তাদের কাছে কোনো ঘটনাই না! শাহেদ মনে মনে ভাবলো, আচ্ছা, এই ছেলে মেয়ে গুলোর বাবা মা কি জানে না- তাদের আদরের সন্তান পার্কে বসে চুমাচুমি করছে। বাবা মার উচিত ছেলে মেয়েদের উপর খুব নজর রাখা। এটা অবশ্যই তাদের দায়িত্ব। যদি বাবা মা সঠিক দায়িত্ব পালন না করেন তাহলে তারা ছেলে মেয়ে জন্ম দিতে গেলো কেন? শাহেদের মেজাজ চরম খারাপ হলো যখন দেখলে, স্কুলের ইউনিফর্ম পরা ছেলে মেয়েরা পার্কে বসে আছে বিশ্রী ভঙ্গিতে।

শাহেদ ঢাকা শহর মোটামোটি চিনে ফেলেছে। হাজী মোতালেব চাচা তাকে সিএনজির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। প্রতিদিন জমা আট শ' টাকা। সে সকাল থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত সিএনজি চালায়। সে কখনও বাড়তি টাকা চায় না যাত্রীদের কাছ থেকে। সব সময় মিটারে চালায়। কোনো কোনো যাত্রী খুশি হয়ে তাকে বিশ টাকা, পঞ্চাশ টাকা বেশি দেয়। সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করার পর সে রাতে খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ে। বিছানায় শোয়া মাত্রই সে গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়। ঘুমের মধ্যে সে স্বপ্নে দেখে তার নিজের একটা সিএনজি হয়েছে। সিএনজি'তে করে সে নীলাকে নিয়ে ঢাকা শহরে খুব ঘুরে বেড়ায়। নীলা যা দেখে, প্রচন্ড অবাক হয়ে যায়। লাল বাগের কেল্লার সামনে দাঁড়িয়ে নীলা আর শাহেদ ফুচকা খায়। নিউ মার্কেট এর সামনে থেকে খায় আখের রস। কল্পনায় সব সম্ভব। বাস্তব অবশ্যই অন্য রকম। বাস্তবে নীলা জেলা পরিষদ সদস্যের ছেলের বউ।
ফযরের আযানের পরপর'ই শাহেদের ঘুম ভেঙ্গে যায়।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ২:০৪
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×