লায়লা রাত তিনটায় আম গাছের সাথে গলায় ফাঁস নিয়ে মারা গেল। গলায় ফাঁস নেওয়ার আগে সে গোছল করে নামাজ পড়েছে। তারপর তার তিন বছরের মেয়েকে কোলে নিয়ে কিছুক্ষন কেঁদেছে। এক আকশ ভালোবাসা নিয়ে ঘুমন্ত মেয়ের কপালে চুমু দিয়েছে। তারপর সে পৃথিবী থেকে বিদায় নিলো। মানুষের জীবন বহমান। জীবনের গতি আছে, স্রোত আছে, বেগ আছে, আবেগ আছে। বহমান নদীর মতোই মানুষের জীবন, তাই নয় কি? নদীরও গতি আছে, স্রোত আছে, বেগ আছে, কিন্তু আবেগ নেই। তবে মানুষের জীবনে আরো কিছু প্রভেদ রয়েছে। লায়লা কেন ফাঁস নিলো তা জানার আগে আসুন তেলাপিয়া মাছটি সম্পর্কে কিছু জেনে নিই। কারন তার মৃত্যুর সাথে তেলাপিয়া মাছের সম্পর্ক আছে।
মাছ হিসেবে তেলাপিয়া এখন খুবই জনপ্রিয়। এর কারণ হলো, এই মাছটি দামে সস্তা, রান্না করা সহজ এবং এর কাঁটা কম। চাষ করা সহজ এবং খরচ কম বলেই তেলাপিয়া মাছ খাদ্য হিসেবে দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তেলাপিয়া মাছে অনেক কম পরিমাণ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আছে। রক্তে কোলোস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে রাখার মতো উপকারি উপাদানও রয়েছে। চাহিদা বেশি বলে তেলাপিয়া এখন খামারে চাষ করা হয়। একেকটা খামারে বিপুল মাছ চাষ করা হয়ে থাকে। কিন্তু এদের খাবার হিসেবে বাজারের বিক্রি হওয়া কোনো মাছের খাবার দেওয়া হয় না। খাবার হিসেবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যা দেওয়া হয় তা হলো, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা। তেলাপিয়া খাওয়া মানেই হার্ট অ্যাটাকের পথ সুগম করা।
এখন আমি মুল গল্পে প্রবেশ করবো। লায়লার স্বামী নজরুল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী। নজরুল বাজার থেকে তেলাপিয়া মাছ কিনে আনে। মাসের শেষ, হাতে টাকা নেই। তাই সে ১৮০ টাকা দিয়ে এক কেজি তেলাপিয়া মাছ, আর আলু কিনে বাসায় ফিরে। তেলাপিয়া মাছ দেখেই লায়লার মাথায় আগুন ধরে যায়। সে তার স্বামীকে বলল, কোন আক্কেলে তুমি এই মাছ আনলে? তাও আবার কেটে আনো নাই!
নজরুল বলল, মাছ কেটেই আনতাম, কিন্তু এত ভিড় ছিল তাই না কেটেই নিয়ে আসছি। এই মাছ কাটা তো খুব সোজা। তিনটা মাছ কাটতে দশ মিনিটও লাগবে না। নজরুলের কথা শুনে লায়লার মাথায় আগুন ধরে যায়।
লায়লা চিৎকার করে বলল, এই মাছ তুই কাটবি। তুই রান্না করবি।
নজরুল বলল, এত সামান্য বিষয় নিয়ে তুই তুকারি করছো কেন? তোমার বাবা মা তোমাকে এই শিক্ষা দিয়েছে? ছিঃ।
লায়লা হঠাৎ খুব বেশি রেগে গিয়ে, তার স্বামী নজরুলকে তরকারির চামুচ উড়িয়ে মারলো। স্টীলের চামুচটি এসে নজরুলের বা হাতে লাগে। তবুও লায়লার রাগ কমলো না। তারপর সে চুলায় থাকা গরম ভাতের পাতিলটি ফ্লোরে ফেলে দেয়। এবং নজরুলের দিকে তাকিয়ে বলে, কুত্তার বাচ্চা।
এবার নজরুল তার রাগ আর সামলাতে পারলো না। সে লায়লার চুলের মুঠি ধরে ঠাস ঠাস দুই টা থাপ্পড় দেয়। তারপর শরীরের সব শক্তি দিয়ে লায়লাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে বলল, যা বলার আমাকে বলো। আমার বাবাকে কেন টেনে আনলে? ছোটলোক কোথাকার।
লায়লা আর নজরুলের মেয়ে মিশু এসবের কিছুই দেখলো না। তখন সে পাশের ফ্লাটে খেলতে গিয়েছিল।
এই ঘটনার পর লায়লা থানায় যায়, পুলিশ নিয়ে এসে স্বামীকে ধরিয়ে দেয়। নজরুল পুলিশকে বুঝিয়ে বলে, তার স্ত্রী লায়লা মানসিকভাবে অসুস্থ। কি বলতে কি বলে, সে নিজেই জানে না। নজরুল একরাত হাজতবাসের পর থানা থেকে ছাড়া পায়। পরের দিন সকালে নজরুল বাসায় ফিরে দেখে লায়লা ও তার মেয়ে নেই। তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। সে লায়লার মোবাইলে ফোন দেয় কিন্তু লায়লা ফোন ধরে না। শেষ গ্রামের বাড়িতে ফোন দিয়ে নজরুল জানতে পারে তারা গ্রামে গিয়েছে।
সাত দিন পার হয়ে যায়। নজরুলের ফোন লায়লা ধরে না। নজরুল তার শ্বশুরকে ফোন দেয়। শ্বশুর রেগেমেগে তাকে খারাপ গালাগালি দিয়ে ফোন রেখে দেয়। কোনো উপায় না দেখে, নজরুল লায়লার মোবাইলে একটা ম্যাসেজ দেয়, ''আসলে তোমাকে থাপ্পড় দেওয়া আমার মোটেই ঠিক হয়নি। আমি খুব দুঃখিত। বাকি জীবনে তোমার গায়ে আর হাত দিব না। কথা দিলাম। আমি কথা দিলে, কথা রাখি। লায়লা মেয়েটাকে কতদিন হয়ে গেল দেখি না। আমার বুকের মধ্যে কেমন করে বুঝ? তোমরা কাল সকালে প্রথম বাসে করে ঢাকা চলে আসো। প্লীজ প্লীজ। অনেক ভালোবাসি তোমাদের''।
কিন্তু অভিমানী লায়লা আত্মহত্যা করে ফেলল। লায়লার বাবা নজরুলের বিরুদ্ধে তিনটা মামলা করলো। নজরুল এখন পলাতক। পুলিশ তাকে খুঁজছে। একই গ্রামে তাদের বাড়ি। দুই পরিবারের সম্মতিতে তাদের ধুমধাম করে বিয়ে হয়। সারা গ্রামের মানুষ বিয়েতে এসেছিল।
(সত্য ঘটনা অবলম্বনে। এ মাসেই এই ঘটনাটি ঘটে।)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:০১