somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

জরুরী মিটিং

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাংলাদেশে চাকরি পাওয়া যেমন কঠিন, চাকরি পাওয়ার পর চাকরি টিকিয়ে রাখা আরও বেশি কঠিন। তবে সরকারি চাকরি পাওয়ার পর আর কোনো ভয় নেই। একদম জমিদারি চাকরি। বিশ্বাস না হলে সরকারি অফিস গুলোতে গিয়ে নিজের চোখে দেখে আসুন। আমি ১০০% নিশ্চিত কোনো বেসরকারি চাকরিজীবি ভালো নেই। দশ মিনিট লেট করলে, উদ্ধতন কর্মকর্তা এমন ভাবে তাকায় যেন ভয়াবহ অপরাধ হয়ে গিয়েছে। অনেক অফিস দেরী করে আসার জন্য মাস শেষে বেতন থেকে টাকা কেটে নেয়। কিন্তু যারা সকালে বাসে করে অফিস যায় তারা বুঝে কত ধানে কত চাল। অফিসে চাকরি টিকিয়ে রাখার জন্য ইচ্ছার বিরুদ্ধে কত রকমের যে তেলামি করতে হয় তার ইয়ত্তা নেই।

সকাল থেকেই শাহেদ আছে ভয়াবহ টেনশনে। আজ লাঞ্চের পর তাদের মিটিং। এই মিটিং এ থাকবেন স্বয়ং চেয়ারম্যান সাহেব। চেয়ারম্যান সাহেব ভয়াবহ রাগী মানুষ। তিনি হুট করে ভয়ঙ্কর রেগে যান। তখন কেউ পার পায় না। কানাঘুষা শোনা গেছে আজ কয়েকজনের চাকরি যাবে। এই মিটিংটা গত মাসে হওয়ার কথা ছিল কিন্তু চেয়ারম্যান স্যার হঠাৎ এক জরুরী কাজে লন্ডন চলে যান। স্যারের পিএ আজ জানিয়ে দিয়েছে, লাঞ্চের পর চেয়ারম্যান সাহেব সবাইকে নিয়ে মিটিং এ বসবেন। অফিসের সব স্টাফ প্রচন্ড ভয়ে আছে। না জানি কি হয়! সুযোগ পেলে সব চান্দুই অফিসে ফাঁকি দেয়। কিন্তু শাহেদ কখনও ফাঁকি দেয় না। এই কারনে যারা অফিসে ফাঁকি দেয় তারা শাহেদের উপর খুব রাগ।

শাহেদ তার সব কাজের একটা সামারি করেছে। গত এক মাস সে কি কি কাজ করেছে। তার প্রাপ্তি, ব্যর্থতা এবং এই প্রতিষ্ঠান নিয়ে তার পরিকল্পনা সব সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছে। চেয়ারম্যান স্যার যদি দেখতে চায় তাহলে তার হাতে দিবে, না চাইলেও দিবে। কোনো কারনে যদি চাকরিটা চলেই যায় তাহলে শাহেদ ভয়াবহ বিপদে পড়বে। সামনের মাসে তার অনেক খরচ। মেয়েকে স্কুলে ভরতি করবে। মেয়েকে পড়ারনোর জন্য বাসায় টিচার রাখতে হবে। গ্রামে মাকে টাকা পাঠাতে হবে। মা অসুস্থ। ছোট শালার বিয়ে, বিয়েতে অবশ্যই ভালো কিছু দিতে হবে- নীলা এই কথা তিন মাস আগে থেকেই বলে রেখেছে। এদিকে বাড়িওয়ালা বাড়ি ভাড়া আবার বাড়িয়েছে। আসলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে পরিবারের সবার মুখে হাসি ফুটানো যায় না। দিন আনি, দিন খাই অবস্থা। সরকারি চাকরিতে ঘুষ খাওয়ার সুযোগ আছে।

মিটিং শুরু। যদিও মিটিং তিন টায় শুরু হবার কথা ছিল, সেই মিটিং শুরু হলো বিকেল সাড়ে পাঁচ টায়। চেয়াম্যান স্যার মিটিং এর মধ্যমনি। মধ্য বয়স্ক হাসি খুশি একজন মানুষ। প্রতিটা স্টাফ মুখটুখ ধুয়ে, চুল আচড়ে একদম পরিপাটি। কনফারেন্স রুমে এসি ছাড়া তবু শাহেদ ঘামছে। ঘটনা চক্রে তাকে বসতে হয়েছে চেয়ারম্যান স্যারের পাশে। চেয়ারম্যান হাসি মুখে বললেন, তোমাদের খবর কি? তোমরা সবাই ভালো তো? আসলে ঘনঘন মিটিং হওয়া দরকার। খুব দরকার। মিটিংয়ে অনেক সমস্যা উঠে আসে এবং সে গুলো একসাথে সবাই মিলে সমাধান করা যায়। আমি ব্যস্ততার কারনে তোমাদের সময় দিতে পারি না। তোমরা নিজেরা নিয়মিত বসবা। আলাপ আলোচনা করবা। হঠাৎ চেয়ারম্যান স্যার শাহেদের দিকে তাকিয়ে বললেন, শাহেদ প্যান্টের চেনটা লাগাও। এই কথা বলতেই সবাই শাহেদের দিকে তাকালো। শাহেদ এক আকাশ লজ্জায় মাটিতে মিশে গেল।

চেয়ারম্যান স্যার সবার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন- তোমরা সবাই ক্রিকেট খেলা দেখো। আচ্ছা, বলতো একজন ব্যাটসম্যান কয়টি কারণে আউট হয়? কেউই উত্তর দিতে পারলো না। তারপর চেয়ারম্যান স্যার বলতে শুরু করলেন, হিসাব করলে দেখা যাবে প্রায় প্রতিটা মানুষ তার নিজ নিজ অবস্থান নিয়ে অসন্তুষ্ট। তারা হতাশ হতে পছন্দ করে। হতাশা কাটিয়ে উঠতে পছন্দ করে না। তারা negative চিন্তা করতে পছন্দ করে, positive চিন্তা করতে পছন্দ করে না। তারা ভাগ্যকে বিলিভ করে, কিন্তু নিজের হাতে ভাগ্য পরিবর্তন করতে চায় না। তারা পরিস্থিতিকে দোষারোপ করতে পছন্দ করে, কিন্তু পরিস্থিতিকে নিজের অনুকূলে আনার চেষ্টাই করে না।

সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:২০
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×