somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

টাকা আছে, টাকা নাই

২৬ শে মে, ২০১৮ দুপুর ১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে এক শ্রেণীর মানুষের হাতে অনেক টাকা এসেছে। তারা এত টাকা পেয়ে পাগল হয়ে গেছে। সেই টাকা দিয়ে ছাগলের মতো কাজ কারবার শুরু করেছে। গাড়ি কিনছে, ফ্ল্যাট কিনছে, বাইক কিনছে, সাত তালা বাড়ি করছে, ইউরোপ ভ্রমনে যাচ্ছে, নামে বেনামে জমি কিনছে। তাদের স্ত্রীরা পাগলের মতো বড় বড় শপিংমল থেকে কেনাকাটা করছে। গত দশ বছরে যত বাড়ি হয়েছে, গাড়ি কেনা হয়েছে, বাইক কেনা হয়েছে, এবং ব্যাংকে যে পরিমান টাকা নামে বেনামে জমা করা হয়েছে এবং যতলোক চিকিৎসার নাম দিয়ে বিনা কারনে বিদেশ ভ্রমন করেছে- এর আগের কোনো সরকারের আমলে এমনটা হয়নি। গত দশ বছরে ধনীলোকের স্ত্রীরা যে পরিমান টাকা পার্লারের পেছনে খরচ করেছে সেই টাকা দিয়ে তিন লক্ষ পরিবার সুন্দরভাবে তিনবেলা খেতে পারতো অন্তত পাঁচ সাত বছর।

গত দশ বছরে দেশে অসংখ্য বড় বড় শপিং মল হয়েছে, অসংখ্য নামী দামী রেস্টুরেন্ট হয়েছে। এসব রেস্টুরেন্টে গেলে মানুষের ভিড়ে পা দেওয়া যায় না। তিনজন মানুষ একবেলা খেয়ে যে পরিমান বিল দেয়, সেই টাকা দিয়ে আমার সংসার একমাস চলে যাবে হেসে খেলে। ইদানিং খুব লক্ষ্য করা যাইতেছে যে, এক শ্রেণির মানুষের হাতে এত টাকা হয়েছে, তারা উন্মাদের মতো টাকা খরচ করছে- দুই হাতে না পঞ্চাশ হাতে খরচ করছে। অফুরান টাকা। বেসুমার টাকা। দশ বছর আগে যে লোক বাজার থেকে ছোট মাছ কিনতো, এখন সেই ব্যাক্তি বাজার থেকে সবচেয়ে বড় মাছ কিনে। যে লোক চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে ছুটতো- এখন সে যায় বিদেশ। দশ বছর আগে যে পাঁচ হাজার টাকা ভাড়া বাসায় থাকতো, এখন সে পয়ত্রিশ হাজার টাকা ভাড়া বাসায় থাকে। যে লোকের গ্রামে টিনের ঘর ছিল, এখন সে সেখানে তিনতালা ডুপ্লেক্স বাড়ি করেছে। দেশ আসলেই উন্নয়নের মহাসড়কে। ভালো ফুটপাত ভেঙ্গে আবার নতুন করে করা হচ্ছে। কাজেই দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে।

আবার গত দশ বছরে এক শ্রেণীর মানুষের কোনো উন্নতি'ই হয়নি। যে রাস্তায় ঘুমাতো- আজও সে রাস্তায় ঘুমায়। যে রিকশা চালাতো আজও সে রিকশা চালায়। দশ বছর আগেও কিছু মানুষ চিকিৎসার অভাবে মারা যেত, আজও যায়। দশ বছর আগেও অসংখ্য গ্রামের রাস্তা কাচা ছিল, আজ কাচা। বাশের সাঁকো ছিল, আজও তাই। দশ বছর আগে অসংখ্য প্রাইমারী স্কুল ঘরের অবস্থা খারাপ ছিল, আজও তাই। দশ বছর আগেও গ্রামে গ্রামে ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকতো না, আজও তাই। দশ বছর আগে চালের কেজি ছিল পঁচিশ টাকা, আজ ৬৫ টাকা। দশ বছর আগে পাসপোর্ট করতে পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য টাকা দিতে হতো দুই শ', আর এখন দিতে হয় এক হাজার টাকা। সরকারী এমন কোনো প্রতিষ্ঠান কি আছে যেখানে ঘুষ দিতে হয় না? আগে লেখা পড়ার মান ভালো ছিল। এখন লেখা পড়ার মান প্রচন্ড খারাপ। আমার নিজের চোখে দেখা- গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করা একটি ছেলে সঠিকভাবে তিন লাইন ইংরেজি লিখতে পারে না, বলতেও পারে না।

টিভি চ্যানেল এবং পত্রপত্রিকা দিয়ে ভরে গেছে দেশ। এক শ্রেণীর মানুষের কাছে এত টাকা হয়েছে, তারা কি করবে ভেবে পায় না। তখন তারা টিভি চ্যানেল দেয়, পত্রিকা বের করে। এবং নিজেদের পত্রিকায় নিজেদের গুনগান করে। বাংলাদেশে যত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে সেগুলো কাদের? খোজ নিলে জানা যাবে বাংলাদেশের সমস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কোনো না কোনো মন্ত্রী, এমপি অথবা তাদের আত্মীয় স্বজনদের। আর কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পাওয়া যাবে, এগুলোর মালিক রাজনীতিবিদদের ছত্রছায়ায় থাকা মানুষজনের। বেশ কিছু ছাত্রলীগের পোলাপান আছে তারা এই বয়সেই লক্ষ কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে। তাদের গাড়ি, বাড়ি, ফ্ল্যাট, জমি- কি নেই? তারা স্বপরিবারে বেড়াতে যায় থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর আর ইন্দোনেশিয়া। আর বিয়ে জন্মদিন বা ঈদের শপিং করতে যায় কোলকাতা। দশ বছর আগে আমার দেখা একলোক তার পরিবার নিয়ে সাত হাজার টাকা ভাড়া বাসায় থাকতো। এখন শুনছি সে গাজীপুর থেকে এমপি ইলেকশন করবে। সে দু কোটি টাকা নিয়ে মাঠে নেমেছে। তার বউ বলে বেড়াচ্ছে, আর কিছুদিন পর আমি হবো এমপি'র বউ।

আমি সারাটি জীবন ঢাকা পার করে দিলাম- আমার তো কোনো পরিবর্তন হলো না। গাড়ি হলো না, বাড়ি হলো না, আধা কাঠা জমিও হলো না। বাজারে গেলে টাকার অভাবে মনের মতো বাজারও করতে পারি না। বিদেশ তো দূরের কথা, সিলেট বা বান্দারবানও যেতে পারি না। পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে সস্তার হাসপাতাল খুঁজি। কিছু কেনাকাটা করতে হলে, সস্তার মার্কেট খুঁজি। বাজারে গেলে বড় বড় মাছের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘনিশ্বাস চেপে ছোট মাছ, তেলাপিয়া অথবা পাংগাস মাছ নিয়ে বাসায় ফিরি। মূরগী খাই ফার্মের। গত দশ বছরে একটা দেশী মূরগী কিনতে পারি নাই। জামা কাপড় জুতো সব'ই কমদামী কিনি। জুতো নিয়ে কিছুদিন পরপর ছুটতে হয় মুচির কাছে। কেউ কোনো অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিলেই ভয় পাই। পঞ্চাশ টাকা বাচানোর জন্য এক ঘন্টা হাটি তবু রিকশায় উঠি না। অভাব অনটন আর এক আকাশ দ্রারিদ্রতা নিয়ে জীবন পার করে দিচ্ছি। আর অমানুষের বাচ্চারা চোখের সামনে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছে।

গতকালের কথা। শুক্রবার ছিল। বিকেল থেকেই বৃষ্টি পড়ছিল। আমার অফিস ছুটি। সুরভি বলল, চলো আজ বাইরে ইফতারি করি। মাসের শেষ হাত খালি। তবু সুরভি'র মুখের দিকে তাকিয়ে রাজি হলাম। পকেটে এক হাজার টাকা নিয়ে বের হলাম। বেইলী রোডের ফখরুদ্দিনে গেলাম। তারা ইফতার মেন্যু দেখালো একজনের, দাম ৪৯৯ টাকা। আমি বললাম একটা দিন। একটাই আমরা দু'জন মিলে খাবো। তারা বললেন, আপনার দু'টা নিতে হবে। দাম পড়বে ৯৯৮ টাকা। ভ্যাট আলাদা। আমি বললাম, একটা দেন। একটাই আমরা দু'জন মিলে খাবো। তারা বললেন, না আমাদের নিয়ম হলো দু'জন দু'টা নিতে হবে। তাদের বুঝিয়ে বললাম, বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে, আর ইফতারীর সময়ও ঘনিয়ে এসেছে। তারা আমার কোনো কথাই শুনলো না। মাথাটা নিচু করে ফখরুদ্দিন থেকে বের হলাম। তখনও বৃষ্টি সমানতালে পড়েই যাচ্ছে। ওদের ইফতার মেন্যুতে আহামরি কিছু ছিল না। ১টা করে জিলাপী, খেজুর, পিয়াজু, আলুর চপ, বেগুনী, একটা রোস্ট আর হাফ প্লেট কাচ্চি।

শেষে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে গেলাম বুমারসে। সেখানে গিয়ে দেখি, ভয়াবহ ভিড়। মানুষজন ছাগলের মতো ইফতার কিনছে। যে খাবার বাইরে থেকে কিনলে আড়াই শ' টাকা লাগতো, সেই খাবার কিনছে সাতশ'/আটশ' টাকা দিয়ে। সাথে ভ্যাট তো আছেই। আচ্ছা, এই ভ্যাটের টাকা কি সরকার পায়? আমি সুরভিকে এক কোনায় কোনো রকমে বসিয়ে, খাবার সংগ্রহ করতে গেলাম। ওদের সেলফ সার্ভিস। আমি অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে আছি। মানুষজন পাগলের মতো কিনছে। কিনেই যাচ্ছে। তাদের কত টাকা! আমার মাথাই কাজ করছে না। পকেটে এক হাজার টাকা থেকে আছে নয় শ' পঞ্চাশ টাকা। পঞ্চাশ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়েছি। দেখতে দেখতে আযান শুরুর বিশ মিনিট আগেই সব ইফতার শেষ। একজন আমাকে বলল, আপনাকে মিলিয়ে টিলিয়ে কিছু দেই। আমি বললাম, দেন। লোকটা দুই প্লেটে দু'টা চিকেন ফ্রাই, দু'টা জিলাপী, দু'টুকরো নান রুটি, দুই টুকরো শশা দিল। আর দুই বোতল পানি। টাকা দিতে হলো সাত শ' নব্বই (ভ্যাট সহ)। এক গ্লাস জুস নিলাম এক শ' আশি টাকা দিয়ে। খাবারের মান খুব বাজে। আমাদের সাত শ' টাকার খাবার বেশির ভাগ'ই প্লেটেই পড়ে থাকলো। জুসটা আরও বেশি বাজে। নাম দিয়েছে ম্যাংগো। কিন্তু আমের বংশও নেই।

ইফতারী শেষে ভালো করে চারিদিকে তাকিয়ে দেখলাম, যে পরিমান খাবার নষ্ট হয়েছে- সেই খাবার দিয়ে অন্তত তিন শ' ক্ষুধার্ত মানূষ খেতে পারবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০১৮ দুপুর ১:৫৯
৪৫টি মন্তব্য ৪৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×