বাস্তব জীবনে মেসি একজন সহজ সরল ভালো মানুষ। মানুষের জন্য তার সীমাহীন ভালোবাসা রয়েছে। বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার ভক্ত আছে প্রায় ১০ কোটি। বর্তমান সময়ের সেরা এবং সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার মেসি। অনেকেই বলেছেন, মেসির মস্তিষ্কে ঢুকে দেখতে চাই সে আর্জেন্টিনা ও বার্সেলোনার হয়ে এত চাপ কি ভাবে সামলায়? মেসির বর্তমান বয়স ৩০। এ পর্যন্ত মেসি কম করে হলেও ৬০০ টির বেশি গোল করেছে। মেসির বাবা ইস্পাতের কারখানায় কাজ করতেন। মেসির বড় দুই ভাই এবং এক ছোট বোন রয়েছে।
পাঁচ বছর বয়স থেকে মেসি স্থানীয় ক্লাবে ফুটবলখেলা শুরু করে। তার বাবা'ই ছিলেন তখন তার কোচ। ১১ বছর বয়সে মেসির পায়ে এক ভয়াবহ সমস্যা দেখা দেয়। সমস্যা সমাধানের জন্য প্রতিমাসে ৯০০ মার্কিন ডলারের প্রয়োজন পড়ে। এদিকে তার বাবা মায়ের এত টাকা নেই যে ছেলের চিকিৎসা করাবে। আর এখন মেসি ১১০ মিলিয়ন ইউএস ডলারের মাইল। ২০১১ সালের এপ্রিলে, মেসি তার ফেসবুক পাতা চালু করেন। মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই পাতার অনুসারীর সংখ্যা ৬০ লক্ষ ছাড়িয়ে যায়। আর বর্তমানে প্রায় ১০ কোটির বেশি।
মেসির প্রেমিকার নাম আন্তনেলা। দুইজন দু'জনকে অসম্ভব ভালোবাসে। মেসি যাকে ভালোবেসেছে তাকেই বিয়ে করেছে। গত বছর খুব ধূমধাম করে তাদের বিয়ে হয়। মেসির বড় ছেলের নাম থিয়াগো। থিগোর জন্মের পর মেসি তার ফেসবুকে লিখেন- ''আজ আমি বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মানুষ, আমার সন্তান জন্মগ্রহন করেছে এবং এই উপহারের জন্য সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ।'' হরমোনের ঘাটতি, বাবা-মায়ের দারিদ্য- কোনকিছুই তাঁকে রুখতে পারেনি সেরা হওয়া থেকে। মেসি কোনোদিনও কারো সাথে ঝগড়া করেনি। কারো নিন্দা করেনি। সারা পৃথিবীর প্রতিটা মানুষের প্রতি তার সীমাহীন ভালোবাসা।
২০০৭ সালে, মেসি প্রতিষ্ঠা করেন ‘‘লিও মেসি ফাউন্ডেশন’’। তার ফাউন্ডেশন থেকে প্রতি বছর সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের রক্ষানাবেক্ষন করা হয়। অসুস্থ শিশুদের উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হয়। বিভিন্ন মানব কল্যাণকর কাজে মেসি সাহায্য সহযোগিতা করে থাকেন নিয়মিত। ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত আমাদের মেসি। আফ্রিকার দরিদ্র দেশ গুলোতে মেসি নিজে যান এবং শিশুদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এবং মেসি তার জন্মভূমি আর্জেন্টিনার রোজারিওতে একটি শিশু হাসপাতালে ৬০০,০০০ ইউরো দান করেছেন। যশ তাঁকে ছোঁয়নি, অহমিকা তাঁকে আঁকড়ে ধরেনি। এত যশ, এত বিত্তের মালিক হয়েও উদ্দাম জীবনযাপন তাঁকে টানেনি।
২০১২ সাথে মেসিকে তুর্কিশ এয়ারলাইন্সের ব্র্যান্ড অ্যাম্ব্যাসাডর করা হয়। মেসিকে দিয়ে একটি টিভি বিজ্ঞাপনে কাজ করানো হয়। জাপান ও চীন একটি বিজ্ঞাপন করায় মেসিকে দিয়ে। বিজ্ঞাপন থেকে প্রাপ্ত অর্থ মেসি দরিদ্র দেশের শিশুদের কল্যানে খরচ কোরে। রোনালদো মেসি সম্পর্কে বলেছেন- ''সকল দৃষ্টিকোণ থেকেই আমরা আলাদা। কিন্তু বর্তমানে মেসি'ই বিশ্বের সেরা।’’ ২০১১ সালে মেসি বাংলাদেশে আসেন। সেদিন তাকে দেখতে লক্ষ লক্ষ মানুষ এয়ারপোর্টে ভিড় করেছিল। ঢাকার উচ্ছ্বাস দেখে অভিভূত মেসি। দুই/তিন হাজার টাকা দিয়ে টিকিট কেটে মানুষ মেসিকে দেখতে স্টেডিয়ামে ভিড় করে। পৃথিবীর অনেক ফুটবল বোদ্ধারা বলেছেন, আমাদের যদি একটা মেসি থাকতো! মেসি আবার বাংলাদেশে আসবেন।
মেসি আগামী বিশ্বকাপও খেলবেন এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। মেসির গত ম্যাচটা খারাপ খেলার কারন- হচ্ছে সে প্রচন্ড ক্লান্ত। ডান পায়ের মাংসপেশিতে বেশ চোট রয়েছে, যার কারণে দৌড়ানো ও গতি পরিবর্তন করতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে তার। ফিলিস্তিন এবং আমাদের দেশে থাকা রোহিঙ্গা শিশুদের নিয়ে মেসি প্রচন্ড চিন্তিত। মেসি মাঠে নামার আগে জানতে পারে, তার বড় ছেলে থিয়াগোর প্রচন্ড জ্বর। এবং ছোট মেয়েটার শরীরও ভালো না। এরকম বেশ কয়েকটা চিন্তায় মেসি মাঠে তার নৈপুণ্য দেখাতে পারেনি। আমি মোটেও হতাশ হইনি। ২য় রাউন্ডে যাওয়ার সম্ভবনা এখনও আছে। যদিও সমীকরনটা বেশ কঠিন।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০১৮ রাত ৯:৪৭