somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

অফিস ছুটির পরে

২০ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অফিস ছুটির পরে শাহেদ হেঁটে হেঁটেই বাসায় ফিরে।
যেদিন রাস্তায় জ্যাম থাকে না সেদিনও শাহেদ হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরে। ব্যাপারটা শাহেদের কাছে অনেক আনন্দময়। এরকম হেলে-দুলে বাসায় ফিরে। সকালে যেমন অফিসে সঠিক সময়ে যাওয়ার জন্য তাড়া থাকে, বিকেলে কোনো তাড়া থাকে না। দশ মিনিট দেরী হলেও বউ কঠিন চোখে তাকাবে না। অফিস থেকে বাসা পর্যন্ত হেঁটে আসতে তার সময় লাগে নব্বই মিনিট। হাঁটা মানে তো শুধু হাঁটা না, ব্যায়ামও হয়। এটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। অফিস থেকে বের হয়ে বড় রাস্তার মোড়ে আসতে তার সময় লাগে দশ মিনিট। এই মোড়ে রোজ এক বাদামওয়ালা বসে। শাহেদ প্রতিদিন তার কাছ থেকেই দশ টাকার বাদাম কিনে। বাদাম খেতে খেতে বাসায় ফিরে। ঠিক বাসার গেটের কাছে গিয়েই তার বাদাম শেষ হয়।

মগবাজার মোড় এসে শাহেদ খুব সাবধান হয়ে যায়।
চারদিক থেকে সমানে গাড়ি, বাস, সিএনজি আর মটরসাইকেল আসতেই থাকে। কেউই যেন নিয়ম মানতে চায় না। মগবাজার মোড়ে দশ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকলে পাগল হয়ে যেতে হয়। চারদিকে এত বিকট হর্ন। শুধু মগবাজার মোড় না, ঢাকা শহরের সব জায়গার একই অবস্থা। ফার্মগেট, খিলগা চৌরাস্তা, যাত্রাবাড়ি, মিরপুর-১০, গুলিস্তান, পল্টন, মহাখালি, এমনকি অলি গলির মধ্যেও ভয়াবহ অবস্থা। ঘর থেকে বের হলেই জীবনটা হাতে নিয়ে বের হতে হয়। শাহেদ জানে তার জন্য তার বউ বাচ্চা অপেক্ষা করে আছে তাই সে চারপাশে ভালো করে তাকিয়ে- চোখ কান খোলা রেখে খুব সাবধানে রাস্তায় চলাচল করে। আসলে শুধু সে সাবধান হলে হবে না, যারা গাড়িঘোড়া চালায় তাদের আরও বেশি সাবধান হতে হয়। বাসায় ফেরার পথে শাহেদকে দেখা যায় রোজ দুই হালি কলা কিনতে। কারন শাহেদ জানে কলা খাওয়া ভালো। রোজ কলা খেলে ডাক্তারের কাছে যেতে হয় না।

একটানা নব্বই মিনিট হাঁটা, তার উপর শাহেদ থাকে ছয় তালায়। নেই লিফট, সিড়ি গুলো কেমন খাড়া-খাড়া। পুরো ঘেমেটেমে একাকার। সেই ঘামের মধ্যেই নীলা আর তার মেয়ে জড়িয়ে ধরে। শাহেদ ফ্রেশ হতে হতে নীলা চা নাস্তা রেডি করে ফেলে। কোনো দিন নুডুলস, কোনোদিন পাকোড়া, কোনোদিন মুড়ি মাখা। আজ নীলা মোগলাই বানিয়েছে। নীলার হাতের মোগলাই সেই রকম স্বাদ হয়। শেষে চা। চা খেয়ে শাহেদ মেয়েকে পড়াতে বসায়। একসময় শাহেদ মেয়েকে রোজ গল্প শোনাতো এখন মেয়ে শাহেদকে গল্প শোনায়। সব তার স্কুলের গল্প, স্কুলের মিস আর বন্ধুদের গল্প। শাহেদ মুগ্ধ হয়ে মেয়ের গল্প শুনে। আর তার মনে হয় জীবনটা মন্দ নয়। কিছু সুন্দর মুহূর্তের জন্য অনেকদিন বেঁচে থাকা দরকার। শাহেদের খুব ইচ্ছা মেয়েটা ডাক্তার হোক, গরীব দুঃখী মানুষদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা করার। লেখা পড়ায় মেয়েটা খুব ভালো।

পরের দিন অফিসে গিয়ে শাহেদ জানতে পারলো তার চাকরিটি চলে গেছে। অপ্রত্যাশিত এই ঘটনায় শাহেদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরি যাওয়া কোনো ঘটনাই না। সমস্যা হলো- সে এখন একা না। তার বউ, বাচ্চা আছে। সংসারে অনেক খরচ। তার জমানো কোনো টাকা নেই। একবার চাকরি গেলে নতুন একটা চাকরি পাওয়া মূখের কথা নয়। ক্ষমতাবান মামা চাচা থাকলে ভিন্ন কথা। সমস্যা হলো শাহেদের তেমন কেউ নেই। শাহেদের চাকরিটা কেন গেল? শাহেদ অফিসের একজনকে বলেছে, ''আপনি কাজে ফাঁকি দেন। এটা ঠিক না। কাজে মন দেন। মাস শেষে যে টাকাটা পান সেটা হালাল করে নিন'' যাকে এই কথা শাহেদ বলেছে তার মামা আবার একজন সচিব। হয়তো এই সচিব মামা'র কারনেই শাহেদের চাকরি গেছে। কত তুচ্ছ কারনে যে মানুষের চাকরি যেতে পারে না দেখলে বিশ্বাস করা মুশকিল। এইসব শাহেদ দেখে দেখে অভ্যস্ত। ক্ষমতাবানদের বুঝা বেশ মুশকিল।

(শাহেদ কোনো গল্প উপন্যাসের চরিত্র না।
সে এই সমাজের একজন মানুষ। রক্ত মাংসের একজন মানুষ। সহজ সরল একজন ভালো মানুষ। আমি মনে প্রানে চাই শাহেদ একটা ভালো চাকরি পেয়ে যাক। সে তার বউ বাচ্চা নিয়ে সুখে থাকুক, আনন্দে থাকুক। এবার আমি একটু নিজের কথা বলি, গত চার মাস ধরে আমার কোনো চাকরি নাই। একদম বেকার বসে আছি। জমানো কিছু টাকা ছিল, সেই টাকা দিয়ে কোনো রকমে খেয়ে পড়ে বেঁচে আছি। হয়তো আরও দুই মাস চলতে পারবো। তারপর কি হবে, জানি না। চাকরির চেষ্টা অনেক করেছি, পাচ্ছি না। শাহেদের মতো আমারও কোনো ক্ষমতাবান মামা চাচা নেই। যেহেতু সারাদিন বাসায় শুয়ে বসে থাকি, তাই হাতে অনেক সময়। সময় কাটতে চায় না। তাই সারাদিন ব্লগে পড়ে থাকি। প্রচুর পোষ্ট পড়ি, প্রচুর মন্তব্য করি এবং প্রচুর লিখি। সব খারাপের কিছু ভালো দিক থাকে। আমি ব্লগে প্রচুর সময় দিতে পারছি।
সবাই ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। ভালোবাসা নিরন্তর।)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:১৩
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×