somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাস্তার পাশের চায়ের দোকান

২১ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সময় সকাল দশটা।
এয়ারপোর্টের ঠিক উল্টো পাশে এক চায়ের দোকানে আমি বসে আছি। অলরেডি দুই কাপ চা খেয়ে ফেলেছি। কই যাবো, কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। চায়ের দোকানের মালিক মাঝারি বয়সের হবে। চারপাশ থেকে লোকজন পাগলের মতো এসে চা খেয়ে চলে যাচ্ছে। আমি সবার ব্যস্ততা দেখছি। আমার কোনো ব্যস্ততা নেই। ঠিক এসময় চৌদ্দ পনের বছরের এক ছেলে চায়ের দোকানের সামনে আসতেই চায়ের দোকানের মালিক চোখ মুখ খিচিয়ে বলে উঠলো- কি রে শালার ব্যাটা, ফোন ধরিস না ক্যান? জমিদার হয়ে গেছিস? তারপর কুৎসিত দুইটা গালি দিল।
গালি খেয়ে ছেলেটা বলল, আব্বা তুমি ফোন দিছো আমি বুঝতেই পারি নাই। শুনি নাই।
বুঝবা না ক্যান, মিসকল উঠে নাই? মোবাইল চেক করো নাই? তারপর আবার দুইটা কুৎসিত গালি। শোনো দুইটা কথা মনে রাখবা, ফোন দিলে যারা ফোন ধরে না তারা অমানুষের বাচ্চা। যদি কোনো কারনে ফোন না-ই ধরতে পারো, (এমনই হতে'ই পারে) কিন্তু পরে মিসকল দেখা মাত্র কল ব্যাক করবা। এটা ভদ্রতা। আর যদি মোবাইলের সঠিক ব্যবহার না'ই করো তাহলে দরকার নাই তোমার মোবাইল ব্যবহারের।

সময় দুপুর বারোটা পাঁচ।
বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নতি, মহাকাশ বিজয়, গ্লোবাল ওমেন্স লিডারশীপ এওয়ার্ড ও আসানসোল কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডি লিট অর্জন করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কন্যা, মাদার অব হিউমিনিটি, দেশরত্ন শেখ হাসিনার গণসংবর্ধনা ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। যেখানেই থাকি না কেন দেশের খবর রাখতে চেষ্টা করি। এটা আমার দায়িত্ব। খিলক্ষেত রেল লাইনের পাশে একটা চায়ের দোকানে বসে আছি। এই চায়ের দোকানে টক শো বসেছে। উপস্থাপক হচ্ছেন চায়ের দোকানের মালিক। আর কাস্টমার'রা হচ্ছেন আলোচক। প্রচুর দর্শকও উপস্থিত।
একজন চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর স্যাটালাইট আমাদের কি উপকার দিবে? এখন কি রাস্তায় যানজট হবে না?
তার কথা শুনে আরেকজন বলছে, হাসিনার বিদেশের ড্রিগ্রী দিয়ে আমরা কি করবো? তাতে কি চালের দাম কমবে?
একজন ড্রাইভার বলছে, ভাই যত যাই হোক, দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে চলে যাক- আমদের কোনো লাভ নাই। আমাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কাজ করেই ভাত খেতে হবে। কাজেই স্যাটালাইট বা ডিগ্রী দিয়ে আমাদের কিছু হবে না। শুনেন, গরীব মাইনষের কথার তো কোনো দাম নাই তবু একটা কথা কই- দলের লোকজন তাকে খুশি রাখতে চায়। উনিও খুশি হইতে চান।

সময় দুপুর দুইটা।
এখন আমি আছি বসুন্ধরা। কোনো কাম কাজ নাই। সারাদিন রাস্তায় টোটো করে ঘুরি। বেকার মানুষ বাসায় বসে থাকতে লজ্জাবোধ করে। প্রচন্ড ক্ষিদে পেয়েছে। সকাল থেকে কয়েক কাপ চা ছাড়া আর কিছুই খাইনি। এখানে একটা পুরান ঢাকার হাজীর বিরানীর শাখা আছে। বিরানীর দোকানে বসলাম। প্রচন্ড ভিড়। এখানেও প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা নিয়ে আলোচনা চলছে।
একজন বলছে, আজ প্রধানমন্ত্রীর জন্য ঢাকা শহরে গজব অবস্থা।
অন্যজন বলল, এই অনুষ্ঠানটা যদি রাত বারোটার পর করতো তাহলে শহরের মানুষের কষ্ট হতো না।
পাশের টেবিল থেকে এক বয়স্ক লোক বললো, এই সংবর্ধনা থেকে দেশ ও দেশের মানূষ কি পাবে?
অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পর বসার সুযোগ পেলাম। একটা প্লেটে অল্প একটূ খাবার দেয়, দাম নিচ্ছে ১৬০ টাকা! দুপুরবেলা এতটূকু খাবারে পোষায়? এত কম খাবার, তিন প্লেট খেতে পারলে মোটামোটি পোষায়। কোক ফানটা না হয় বাদ'ই দিলাম। একটা পানির বোলত কিনতে হয় ১৫ টাকা দিয়ে। টিপস দিতে হয় কমপক্ষে ১০ টাকা। খাওয়া শেষে একটা সিগারেট তো খেতেই হয়। সব মিলিয়ে দুই শ' টাকার মামলা। যদিও দুই শ' টাকা আহামরি কিছু না। কিন্তু পকেটে টাকা না থাকলে দুই শ' টাকাই অনেক টাকা। যাই হোক, আমি আধা পেট খেয়ে উঠলাম।

বিকেল চারটা।
আমি তখন রুপসী বাংলা (শেরাটন) হোটেলের সামনে। মনে মনে চিন্তা করছি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান যাবো কিনা। শুনেছি ত্রিশ হাজার চেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বসার জায়গা নিশ্চয়'ই পাবো। অবশ্য আয়োজকরা আশা করছেন কমপক্ষে তিন লক্ষ লোকের আগমন ঘটবে। সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। কি করব! গান বাজনার ব্যবস্থাও আছে। অনেকদিন গান বাজনা শুনি না। এদিকে আমি বড্ড ক্লান্ত। মন স্থির করে ফেললাম, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য টিভিতে শুনে নিবো অথবা আগামীকাল খবরের কাগজে পড়ে নিব। আবার হঠাত মনে হলো- প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য আমার শুনেই বা কি হবে? অথবা না শুনেই বা কি হবে? তখন কি আমি তিন প্লেট বিরানী খেতে পারবো? বুঝতে পারছি আমি হাস্যকর চিন্তা করছি। এইসব ছেলেমানুষী চিন্তা বাদ দিয়ে বাস্তবে ফিরে আসা দরকার। এখন বাসায় যাবো। সুগন্ধি সাবান দিয়ে ভালো করে ডলা দিয়ে গোছল করতে হবে।
হেঁটেই বাসায় ফিরতে হবে। আমার ছোট্র মেয়েটা আমার অপেক্ষায় আছে। এদিকে রাস্তার অবস্থা ভয়াবহ খারাপ। চারিদিকে ভয়াবহ জ্যাম। বাস মটরসাইকেল, গাড়ি, রিকশা সব কিছু থেমে আছে। বাসের ভিতর যাত্রীরা বিমর্ষ অবস্থায়। বাসের কয়েকজন যাত্রী আওয়ামীলীগকে কুৎসিত গালাগাল দিল। অসংখ্য মানুষ বাস থেকে নেমে হাঁটা শুরু করেছে। সবাই আমার মতো ক্লান্ত, বিধস্ত। আজ যারা বাইরে বের হয়েছে তাদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।

এখন, রাত সাড়ে আটটা।
বাসা থেকে বের হয়েছিলাম সকাল সাড়ে আটটায়। টোটাল বারো ঘন্টা আমি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। মোবাইল ফোনটাও নষ্ট। আমি আমার বাসার গলির মুখে ডুকতেই মুদি দোকানদার জাফর ভাই ডাক দিলেন- এই যে সাংবাদিক ভাই। উনি কেন আমার নাম দিয়েছেন সাংবাদিক ভাই কে জানে! অথচ আমার নাম শাহেদ। আমার সাথে দেখা হলেই জাফর ভাই রাজনৈতিক আলাপ শুরু করেন। দেশ নিয়ে কঠিন সব মন্তব্য করেন। জাফর ভাই বললেন, দেশ নাকি বদলে গেছে? দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে? কথা কি সত্য?
আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না।
জাফর ভাই বললেন, একদিন রাতে ঢাকা শহরের রাস্তায় হেঁটে দেইখেন কত লোক রাস্তায় ঘুমায়। কত লোক না খেয়ে আছে। দেশে কম করে হলেও চার কোটি বেকার আছে। রাস্তাঘাট ভাঙ্গা। ফুটপাত দিয়েও শান্তিতে হাঁটা যায় না। চুরী ছিনতাই- আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। সরকারি হাসপাতালের বেহাল অবস্থা। এইসব হিসাব আছে আপনাগো কাছে? গ্রামে বিদ্যুতের খবর জানেন? এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকলেও বাসে উঠা যায় না। বাসে উঠলে সিট পাওয়া যায় না। বানরের মতো ঝুলে থাকতে হয়। বাজারে গেলে মাথা ঘুরে মাটিতে পরে যেতে হয় জিনিসপত্রের দাম শুনে। সরকারি হাসপাতালে গেলে কান্না পায়। আর আপনারা কন দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে। এইসব ফাজলামো বাদ দেন। তলা ছাড়া বাক্সের মতো অবস্থা হয়েছে দেশের। আবার বড় বড় কথা কন মিয়াঁ।
আমি কি বলব বুঝতে পারছি না। বাঁচি না নিজের জ্বালায়। সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মেয়েটা বলেছিল বাবা আসার সময় আনার নিয়ে এসো। এদিকে পকেটে নাই টাকা। জাফর ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম, জাফর ভাই আমি যাই। পরে আবার আপনার সাথে কথা বলব।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:৫১
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×