somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

মূসা (আঃ)

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৯:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মূসা (আঃ) নিয়ে দারুন সব ঘটনা আছে। আমার ভীষন প্রিয় দুইটা ঘটনা আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।

প্রথম ঘটনা
''হযরত মুসা আঃ আল্লাহ্ তায়ালাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্! জান্নাতে আমার সাথে কে থাকবে?
জবাবে বলা হলো, ওমুক কসাই!
কসাইয়ের নাম শুনে মুসা আঃ খুবই আশ্চর্য হলেন। অনেক খোঁজ করার পর মুসা আঃ তাকে বের করলেন। দেখলেন, কসাই গোস্ত বিক্রিতে ব্যস্ত! সবশেষে কসাই একটুকরো গোস্ত একটি কাপড়ে মুড়িয়ে নিলেন। অতঃপর বাড়ির দিকে রওয়ানা হলেন। মুসা আ: তাঁর সম্পর্কে আরো জানার জন্যে পিছুপিছু তাঁর বাড়ি গেলেন। কসাই বাড়ি পৌঁছে গোস্ত রান্না করলেন। অতপর রুটি বানিয়ে তা গোস্তের ঝোলে মেখে নরম করলেন। তারপর ঘরের ভিতরের কামরায় প্রবেশ করে শয়নরত এক বৃদ্ধাকে উঠিয়ে বসালেন। তারপর তার মুখে টুকরো টুকরো রুটি পুরে দিতে লাগলেন। খাওয়ার পর বৃদ্ধা কসাইকে কি যেন ফিসফিস করে বললেন। অমনি কসাই মুচকি হাসলেন। দূর থেকে মুসা আঃ সব-ই দেখছিলেন। কিন্তু কিছুই বুঝলেন না।
মুসা আঃ বৃদ্ধার পরিচয় এবং মুচকি হাসার বিষয়টি কসাইকে জিজ্ঞেস করলেন।
কসাই বললেন, ওনি আমার মা! আমি বাজার থেকে আসার পর সর্বপ্রথম আমার মাকে রান্না করে খাওয়াই। আর, মা খাওয়ার পর খুশি হয়ে আমার কানের কাছে এসে আল্লাহ্ তায়ালার কাছে এই বলে দোআ করেন, “আল্লাহ্ তায়ালা তোমাকে বেহেস্ত দান করুক এবং মুসা আঃ এর সাথে রাখুক”!
আমি এই দোআ শুনে এই ভেবে মুচকি হাসি যে, কোথায় মুসা আঃ আর কোথায় আমি।''

মুসা (আঃ) ১২০ বছর বেচে ছিলেন। হযরত মুসা (আঃ) এর সম্প্রদায়ের নাম ছিল বনী-ইসরাঈল। প্রাচীন মিসরের রাজধানী ছিল পেন্টাটিউক। নীল নদের তীরে এই নগরে বাস করতেন মিসরের ‘ফেরাউন’ রামেসিস। নগরের শেষ প্রান্তে ইহুদিদের বসতি। হামান ছিলেন ফেরাউনের মন্ত্রী।
একদিন রাজপথ দিয়ে যাচ্ছিলেন মুসা। এমন সময় তার চোখে পড়ল এক হতভাগ্য ইহুদিকে নির্মমভাবে প্রহার করছে তার মিসরীয় মনিব। এই দৃশ্য দেখে আর স্থির থাকতে পারলেন না মুসা। তিনি সেই ইহুদিকে উদ্ধার করার জন্য নিজের হাতে তরবারি দিয়ে আঘাত করলেন মিসরীর মনিবকে। সেই আঘাতে মারা গেল মিসরীয় লোকটি। ইহুদি লোকটি চারদিকে এ কথা প্রকাশ করে দিল। গুপ্তচররা ফেরাউনকে গিয়ে সংবাদ দিতেই ক্রোধে ফেটে পড়লেন ফেরাউন।

চমকে উঠলেন মুসা। কেউ তাঁরই নাম ধরে ডাকছে। তৎক্ষণাৎ সাড়া দিলেন, কে আপনি আমায় ডাকছেন? সেই অলৌকিক কণ্ঠস্বর বলে উঠল, আমি তোমার ও তোমার পূর্বপুরুষদের একমাত্র ঈশ্বর।
ঈশ্বর তাঁর সাথে কথা বলছেন, এ যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না মুসা। ভীত হয়ে মাটিতে নতজানু হয়ে বসে পড়লেন। আমার কাছে আপনার কী প্রয়োজন প্রভু? দৈব কণ্ঠস্বর বলল, তুমি আমার প্রতিনিধি হিসেবে মিসরে যাও। সেখানে ইহুদিরা অমানুষিক নির্যাতন ভোগ করছে। তুমি ইহুদিদের মুক্ত করে নতুন দেশে নিয়ে যাবে। মুসা বললেন, আমি কেমন করে তাদের মুক্তি দেব?

দৈববাণী বলল, আমি অদৃশ্যভাবে তোমাকে সাহায্য করব। তুমি ফ্যারাওয়ের কাছে গিয়ে বলবে, আমিই তোমাকে প্রেরণ করেছি। সকলেই যেন তোমার আদেশ মেনে চলে। মুসা বললেন, কিন্তু যখন তারা জিজ্ঞেস করবে ঈশ্বরের নাম, তখন কী জবাব দেব? প্রথমে ঈশ্বর তাঁর নাম প্রকাশ না করলেও পরে বললেন তিনিই এই বিশ্বজগতের স্রষ্টা আল্লাহ। (এই বিষয় নিয়ে অন্য কোনো সময় লিখব।)


দ্বিতীয় ঘটনা
হযরত মুসা (আঃ) একবার আল্লাহ তা’য়ালার কাছে আরজ করলেন, “হে দয়াময় প্রভু! আমার উম্মতের মধ্যে কে সবচেয়ে খারাপ ব্যক্তি, আমাকে দেখিয়ে দাও”।
অদৃশ্য থেকে আওয়াজ এলো, “ঠিক আছে, আগামীকাল সকালে তুমি পথের ধারে বসে থেকো। যে ব্যক্তি সর্বপ্রথম এই পথ অতিক্রম করবে, সে ব্যক্তিই হলো তোমার উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ”।
হযরত মুসা আঃ ঠিক সময়মত নির্দিষ্ট স্থানে বসলেন। কিছুক্ষণ পর দেখলেন এক ব্যাক্তি একটি ছোট ছেলেকে কোলে করে তাঁকে অতিক্রম করলো। হযরত মুসা আঃ তাকে দেখে মনে মনে বললেন, ওহ্ এই ব্যাক্তিটি'ই তাহলে আমার উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ।

কিছুক্ষণ পর হযরত মুসা আঃ এর ইচ্ছা হলো, তাঁর উম্মতের সবচেয়ে ভালো ব্যাক্তিকে দেখতে। আল্লাহর নিকট এবার আরজ করলেন, “হে দয়াময় প্রভু! এবার আমার উম্মতের মধ্যে কে সবচেয়ে ভালো ব্যাক্তি আমাকে দেখিয়ে দাও”।
আওয়াজ এলো, “হে মুসা! পথের ধারে বসো, সন্ধ্যা বেলায় যে ব্যাক্তি সর্বপ্রথম আসবে, সে-ই হলো তোমার উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে ভালো”।

সন্ধ্যাবেলায় হযরত মুসা আঃ নির্দিষ্ট স্থানে বসলেন। কিছুক্ষণ পর দেখলেন সকালের সে ব্যাক্তিই ছোট ছেলেকে কোলে করে ফিরতি পথে আসছে। তাকে দেখে হযরত মুসা আঃ অত্যন্ত অবাক হলেন এবং গভীর চিন্তায় পড়ে গেলেন। তিনি আল্লাহর নিকট আবার আরজ করলেন, “হে দয়াময় প্রভু! আমি এ কি দেখছি! সকালে যে সবচেয়ে খারাপ ছিলো, সন্ধ্যায় সে কিভাবে সবচেয়ে ভালো হয়ে গেলো”?

অদৃশ্য থেকে মহান স্রষ্টা আল্লাহ উত্তর দিলেন, হে- মুসা! সকালে যখন এই ব্যাক্তি ছেলেকে সাথে নিয়ে তোমাকে অতিক্রম করে জঙ্গলে প্রবেশ করলো, তখন ছেলে তাকে প্রশ্ন করে ছিলো, বাবা! এই জঙ্গল কত বড়? সে ব্যক্তি উত্তরে বলেছিলো, অনেক বড়।
ছেলে আবার প্রশ্ন করলো, বাবা! জঙ্গল থেকে কি বড় কোনো কিছু আছে?
তখন বাবা বলেছিলো, হ্যাঁ বাবা! ঐ পাহাড়গুলো জঙ্গল থেকে বড়।
ছেলে পুনরায় প্রশ্ন করলো,পাহাড় থেকে কি বড়কিছু আছে?
বাবা বললো, আছে, এই আকাশ।
ছেলে আবার প্রশ্ন করলো, আকাশ থেকে কি বড় কিছু আছে?
সেই ব্যক্তি বললো, হ্যাঁ, আমার পাপ এই আকাশ থেকেও বড়।
ছেলে বাবার এ উত্তর শোনে বললো, বাবা! তোমার পাপ থেকে বড় কি কোনো কিছু নেই?
তখন সেই ব্যক্তি চিৎকার দিয়ে কান্না করে লজ্জিত হয়ে গম্ভীর সুরে বললো, আছে বাবা! আমার পাপ থেকেও আল্লাহ'র রহমত অনেক বড়।

হে মুসা! এই ব্যক্তির পাপের অনুভূতি ও অনুশোচনা আমার এতো পছন্দ হয়েছে যে, আমি তাঁকে তোমার উম্মতের সবচেয়ে খারাপ ব্যক্তিকে সবচেয়ে ভালো ব্যক্তি বানিয়ে দিয়েছি।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৯:৩৯
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×