somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

মানুষ ভীষন একা

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মানুষের জীবন আসলেই খুব দুর্বোধ্য।
সত্য তো সত্যই, সোজাবাঁকা, সাদাকালো যেমন হোক তার স্বরূপ। সত্যকে সত্য বলেই প্রকাশের একটা তাগিদ বা তাড়না থাকা উচিত। জন্ম-প্রক্রিয়ায় যে লক্ষ-কোটি স্পার্ম আপনাকে পরাজিত করতে পারতো, তাদেরকে পরাস্ত করে আপনার জন্ম। সুতরাং পৃথিবীতে আপনার আসার নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে। নিশ্চয়ই আপনার জীবনের কোন উদ্দেশ্য আছে!

একদিন শিশুটি জন্মগ্রহণ করে একা,
ভালোবাসার উষ্ণতা ছড়াতে শুরু করে চারপাশ জুড়ে মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজন, সীমাহীন ভালোবাসা নিয়ে পরম মমতায় ছোট্ট শিশুটিকে সারাক্ষণ আগলে রাখেন, শিশুটি বড় হয় আদরে, আনন্দে, স্বপ্নরা জাল বুনে প্রতিনিয়ত। একদিন দিনের শেষে মানুষ বুঝতে পারে- মানুষ একা, একদম একা। অথচ মাঝের পরিজন-পারিপার্শ্বের সাহচর্যময় মধুর সময়গুলো সত্যিই মানুষের জীবন চক্রের এক মহা মূল্যবান অধ্যায়। শেষ বয়সে মানুষ বাস করতে চায় অতীতের সুখচিন্তায়, ভবিষ্যতের কল্পনায়। বর্তমানে কেউ বাস করতে চায় না।


শশীভূষন প্রতিদিন রাতে ঘুমোবার আগে এক ঘন্টা নিয়ম করে ডায়েরী লিখেন।
তিনি ডায়েরীতে প্রতিদিনকার ঘটনা লিখেন না। নিজের মতন করে লিখেন, অতীত দিনের দুঃখ-কষ্ট এবং আনন্দের কথা। শশীভূষনের একমাত্র মেয়ে অলকা স্কলারশীপ পেয়ে মাইক্রোবায়োলজি পড়তে আমেরিকা গিয়েছে। অলকা নিয়মিত তার বাবার খোঁজ খবর রাখছে চিঠির মাধ্যমে। শশীভূষন মনে করেন তার স্ত্রী অপলা বেঁচে থাকলে অলকার মতন এত নজদারী করতো না। মাঝে মাঝে তার খুব রাগ হয় মেয়ের উপর। অলকা বলে দিয়েছে, শশীভুষন যেন রাত এগারোটার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুম না এলেও যেন চোখ বন্ধ করে ভেড়া গুনেন। শশীভূষন ভেড়া না গুনে এলোমেলো কথা ডায়েরীতে লিখতে বসেন। একটানা লিখতে পারেন না চোখের সমস্যার কারনে এবং কোমরে বেশ ব্যথা। ডায়েরী লেখা বন্ধ রেখে একটু পরপর ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখেন। অতীতের টুকরো টূকরো নানান রকম কথা তার মনে পড়ে।

শশীভূষনের জন্ম ভারতের আসাম রাজ্যে।
সেই সময় আসামে অনেক চা বাগান ছিল। আসামের চা বাগান গুলোতে তার অনেক স্মৃতি জড়িত। তখন চা বাগানের পাশ দিয়ে সব সময় হাতী চলাচল করত। কতদিন সে নিজে একাই হাতীর পিঠে চড়েছেন। দেশ ভাগের পর অধুনা বাংলাদেশে চলে আসতে বাধ্য হোন। দেশ বিভাগের পর লাখ লাখ উদ্বাস্তু মানুষ যখন দেশ ছাড়ছিল, তখন হেলিকপ্টার থেকে দেখে জিন্নাহ কপাল চাপড়ে বলেছিলেন, এ তিনি কী করলেন!

আসাম বাংলাদেশের একেবারেই সীমান্তঘেঁষা এলাকা।
আসামের বেশীর ভাগ মানুষই হিন্দু ধর্মের। সেই সময় আসামে জাতি, ধর্মবর্ন নির্বিশেষে 'বিহু' নামে উৎসব পালন করতো। আসামের বাঙালি বিদ্বেষী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে ১৯৬০ সালে। ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর আসাম রাজ্যের অর্থনৈতিক সমস্যা প্রকট হতে শুরু করেছিল। পূর্ব বাংলাকে দুর্বল অংশে পরিণত করার সুদূরপ্রসারী চক্রান্ত দেশভাগে সম্পন্ন করেছিল অবাঙালি পাকিস্তানিরা। দেশ ভাগের অনেক আগে থেকেই অবিভক্ত বাংলা থেকে দলে দলে বাঙ্গালিরা আসামে যায়; সেখানে চাষবাস শুরু করে, ক্রমশ ব্যবসা আর চাকরিতে তারা অগ্রসর হয়ে ওঠে। ইংরেজ বিদায় নেয়ায় দেশভাগে আসামে বাঙালিরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে। ১৮২৬ সালে প্রথম বার্মিজ যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে আসাম প্রথম ব্রিটিশ আশ্রিত রাজ্যে পরিণত হয়।

শশীভূষন তার ডায়েরীতে লিখতে শুরু করলেন-
'জাতিসত্তার প্রধান উপাদান ভাষা। দেশবিভাগ ছিলো এমন একটি পরিণতি, যা ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও মেনে নিতে হয়েছিলো অধিকাংশ মানুষকে। একই আকাশ, একই বাতাস, দু’বাংলার মানুষের ভাষাও এক। রাজনৈতিক নিপীড়নের স্বীকার হয়ে জান-মাল-ইজ্জতের নিরাপত্তাহীনতার কারণে নিরূপায় হয়ে অনেক সময় মানুষ যুগ যুগ ধরে এক দেশ থেকে অন্য দেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। দেশ ভাগের সময়ে সে দেশের বড় বড় হিন্দু জমিদারেরা লক্ষ লক্ষ বর্গ একর জমি ছেড়ে ভারতে চলে আসেন। তখন সেই জমির অধিকার পান দরিদ্র মুসলিম চাষিরা। এভাবে পূর্ব পাকিস্তানে কোনও আইন বা আন্দোলন ছাড়াই ভূমি সংস্কার হয়ে যায়। ভারত উপমহাদেশে ব্রিটিশদের শাসনের সূত্রপাত হয় ১৭৫৭ সালে। এরপর থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত নানা ষড়যন্ত্র ও কৌশলে ব্রিটিশরা তাদের আধিপত্য ধরে রাখে'

...শশীভূষন লেখা বন্ধ করে আবার ব্যালকনিতে গিয়ে দাড়ালেন।
কিছুক্ষন আকাশ দেখবেন বলে। আকশের দিকে তাকিয়ে থাকতে তার ভীষন ভালো লাগে। তার বন্ধু তাকে প্রায়ই বলতেন- সময় পেলেই আকাশ দেখবি।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×