সময় তখন ১৯২৭ সাল।
বাইগার নদী এঁকেবেঁকে গিয়ে মিশেছে মধুমতী নদীতে। বাইগার নদীর তীর ঘেঁষে ছবির মতো সাজানো গোছানো সুন্দর একটি গ্রাম আছে। পুরো গ্রাম জুড়ে আজ সুন্দর ঝকঝকে সকাল। চারিদিকে স্বচ্ছ রোদ। রোদের তাপ নেই। গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আজ একটা ছোট্র ছেলে প্রথম ক্লাশ করতে যাচ্ছে। বালকের পূর্বপুরুষদেরই গড়ে তোলা গিমাডাঙ্গা টুঙ্গিপাড়া স্কুল।
হাসি খুশি প্রানবন্ত বালকটির বয়স ছয়-সাত বছর হবে।
বাবা মা আদর করে বালকটিকে 'খোকা' বলে ডাকেন। খোকাকে স্কুলে নিয়ে এসেছে- তার বড় বোন ফাতেমা বেগম। ভাইকে সে ভীষন ভালোবাসে। খোকাটি হাসি মুখে ক্লাশে রুমে ঢুকে প্রথম বেঞ্চে বসল কোনো রকম সংকোচ ছাড়াই। অন্য ছেলেদের মতন সে কোনো কান্নাকাটি করল না। বরং স্কুলে এসে তার আনন্দ হচ্ছে। এই সাহসী ছেলেটির মায়ের নাম সায়েরা খাতুন।
স্কুল ছুটির পর খোকা একাএকা হেঁটে বাসায় ফিরল।
প্রায় সোয়া কিলোমিটার দূরত্ব। মাটর রাস্তা। খোকার মেজ বোন আছিয়া বেগম ভাইকে আনতে স্কুলে যেতে চেয়েছিল- কিন্তু খোকা চিৎকার করে বলেছে- আমি একাই আসতে পারব- এতটুকু পথ মাত্র। পথ আমার চেনা। প্রতিদিন বিকেলে খোকা খুব ফুটবল খেলতেন, দোয়েল ও বাবুই পাখি ভীষণ ভালোবাসতেন। বাড়িতে শালিক ও ময়না পুষতেন। আবার নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতার কাটতেন। বানর ও কুকুর পুষতেন বোনদের নিয়ে। গাছপালা, পাখি আর জীবজন্তুর প্রতি ছিল গভীর মমতা। মাছরাঙা পাখি ঢুব দিয়ে কীভাবে মাছ ধরে তাও খোকা খেয়াল করতেন খালের পাড়ে বসে বসে।
খোকার মনটা ছিল আকাশের মতো উদার।
তখনকার দিনে স্কুলে তার অনেক গরিব বন্ধু ছিল যারা ভালো করে পেটপুরে খেতে পারতো না। খোকা ওইসব গরীব ছাত্রদের বাড়িতে নিয়ে আসতেন। মাকে বলে দুধ ভাত খেতে দিতেন। এভাবেই দিন যাচ্ছিলো খোকার। খোকা বড় হতে থাকলো। একদিন গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় খোকা স্কুলের শিক্ষক বসুরঞ্জন সেনগুপ্তের বাসায় প্রাইভেট পড়তেন। একদিন সকালে তাঁর বাড়ি থেকে পড়া শেষ করে আসার পথে এক খালি গা বালককে দেখলেন। জিজ্ঞেস করলে ছেলেটি বললো, এই শীতে তার গায়ে দেয়ার মতো কিছু নেই। সঙ্গে সঙ্গে খোকা গায়ের গেঞ্জি খুলে ওই ছেলেকে দিয়ে দেন। খোকা বাড়ি ফিরে আসেন খালি গায়ে।
বয়স খোকার যখন চৌদ্দ বছর-
তখন সপ্তম শ্রেণীতে পড়াকালীন খোকার চোখে সমস্যা দেখা দেয়। অনেক চিকিৎসা চলে। কিন্তু চোখ ভালো হয় না। এ কারণে তাঁর লেখাপড়া সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়। তিন বছর পর আবার সুস্থ হয়ে তিনি অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হন। এই খোকা ১৯৩৮ সনে আঠারো বছর বয়সে ফজিলাতুন্নেসা নামক এক তরুনীকে বিয়ে করেন। এই দম্পতির ঘরে দুই কন্যা এবং তিন পুত্রের জন্ম হয়। কন্যারা হলেন শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২