গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড় যে আমি দম বন্ধ হয়ে মরে যাবো। ভীড় আমি একদম সহ্য করতে পারি না। ট্রাফিক পুলিশ ঘুষ না খেলে এবং পাবলিক যদি নিয়ম মেনে চলতো তাহলে যানজট অনেক কমে যেতো। একথা সত্য ঢাকা শহরে সুন্দর ভাবে জীবনযাপন করা সম্ভব না। সরকার যতই বলুক দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে। আমিরা জানি, কি উন্নয়ন, কতটা উন্নয়ন। কার উন্নয়ন।
ইদকে সামনে রেখে চোর, ছিনতাইকারী আর পকেটমার বেশ তৎপর আছে।
প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের পকেটমার হচ্ছে। নিয়ে যাচ্ছে মোবাইল, ওয়ালেট। বিশেষ করে মিরপুর ১ এবং ১০ নম্বর, ফার্মগেট, মালিবাগ মৌচাক, কমলাপুর, গুলিস্তান আর সদর ঘাট, যাত্রাবাড়ী পকেটমারের জন্য আদর্শ জায়গা। হ্যা টহল পুলিশ আছে। তারা ডিউটি বাদ দিয়ে, এক কোনায় বসে মোবাইল টিপাটিপিতে ভীষণ ব্যস্ত। দেখার কেউ নেই। জবাবদিহিতা নেই। যুগ যুগ ধরে এভাবেই তো চলছে দেশ। দেশের সবাই যদি তাদের দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করতো তাহলে দেশ সত্যিই এগিয়ে যেতো। এই দেশের কোনো মানুষের মধ্যে সততা আশা করা ভুল। এদিকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ইফতার পার্টি করতে নিষেধ করেছেন। তবু সবাই ইফতার পার্টি করছে। দেশের প্রধানমন্ত্রীর কথা কেউ শুনছেন না! নিজের চোখে দেখেছি, ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়।
ইদকে সামনে রেখে ভিক্ষুকের সংখ্যা চার গুন বেড়েছে।
রমজান মাসে একজন কৃপন লোক পর্যন্ত দানখয়রাত করে। মানবিক কারণে লোকজন ভিক্ষা কম দেয়। বেশি দেয় ধার্মিক কারণে। দান করলে সোয়াব আছে। ধার্মিকরা সওয়াবের কাঙাল। ধার্মিকগণ ব্যস্ত ফজিলত, নেকী, সওয়াব আর আমল নিয়ে। মূলত দুনিয়াতে তার কোনো ফলাফল নেই। ধার্মিকগন মস্ত বড় ভুল লজিক নিয়ে জীবন পার করে দিচ্ছেন। সঠিক শিক্ষা পেলে তাদের চিন্তা ভাবনার পরিবর্তন হতো। ধার্মিকের সেই সামন্ত যুগেই পড়ে আছে। বিশ্ব এগিয়ে গেছে কিন্তু মুসলিম দেশ গুলো পেটেভাতে বেচে আছে। উন্নত দেশ গুলো দেখে মুসলিমরা শিক্ষা নেয় না। তারা বেসিনের উপর পা উঠিয়ে ওজু করে। তারা রাস্তা বন্ধ করে জুম্মার নামাজ পড়ে। ধার্মিকদের কর্মকাণ্ড হাস্যকর।
ভেবেছিলাম মেট্রোরেল হলে বাসে আর দাড়িয়ে থাকতে হবে না।
বসার জন্য সিট পাওয়া যাবে। না সেই আগের মতোই অবস্থা। বাসে সিট পাওয়া তো দূরের কথা বাস উঠাই বিরাট ভাগ্যের ব্যাপার। যখন ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ চলছিলো তখন ভেবেছিলাম যাক, এবার বুঝি জ্যাম কমবে। আরাম করে যাতায়াত করা যাবে। না মোটেই জ্যাম কমে নাই। পাতাল রেল, পাতাল সড়ক, উড়ন্ত সেতু ইত্যাদি কোনো কিছুতেই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। মনে হয় আমাদের উপর ঈশ্বরের অভিশাপ আছে। এখন যদি ৬২ জন নবী আমাদের দেশে আসে তবুও পরিবর্তন হবে না। অসুখী দেশে বাস করছি। গজবের দেশে বাস করছি। দুষ্ট লোক দিয়ে ভরা দেশে বাস করছি। দূর্নীতিবাজদের দেশে বাস করছি। মূর্খ ধার্মিকদের দেশে বাস করছি।
ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায়,
কিছু লোক মানুষের কান পরিস্কার করে দেয়। মাত্র বিশ টাকা। স্পেশাল ভাবে কান পরিস্কার করালে ৫০ টাকা। একবার দেখলাম ফার্মগেট সিটি করপোরেশনের বাথরুমের সামনে এক মেয়ে কান পরিস্কার করাচ্ছে। মেয়েটা আরামে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। লোকটা নিখুত ভাবে মেয়েটার কান পরিস্কার করে দিচ্ছে। বুঝা যাচ্ছে দুজনেই আরাম পাচ্ছে। আমার খুব ইচ্ছে একবার রাস্তায় কানটা পরিস্কার করাই। আমার মনে আছে, একবার আব্বা আর আমি রিকশা করে বংশাল যাচ্ছিলাম। গুলিস্তান পার্কের সামনে বেশ কয়েকজন কান পরিস্কারওলা বসে আছে। আব্বা বলল, তুই নিচে নেমে দাড়া। আব্বা রিকশায় বসে কান পরিস্কার করালেন। আব্বা একশ' টাকা দিলো। বলল, লোকটা দক্ষ। তুইও তোর কান পরিস্কার করে নে। এদের সব সময় পাওয়া যায় না। আমি বললাম, ওয়াক থু। আব্বা বলল, দূর বোকা ছেলে!
এই শহরে থেকে থেকে আমি আজকাল একজন অমানবিক মানুষে পরিনত হয়ে যাচ্ছি।
এখন বাসে মুরুব্বী বা কোনো মেয়ে মানুষ দেখলে লাফ দিয়ে সিট ছেড়ে দেই না। আরাম করে বসে পায়ের উপর পা তুলে মোবাইল চালাই। গেমস খেলি। হি হি। ভিক্ষুককে ভিক্ষা দেই না। বরং কঠিন ধমক দেই। অসহায় ও দরিদ্র মানুষ হাত পাতলে সাহায্য করি না। বলি, যাও যাও কাজ করো। কেউ কেউ হয়তো বলে, কাজ পাই না। তখন আমি তেজ দেখিয়ে বলি, রিকশা চালাও। কেউ কেউ বলে স্যার সকাল থেকে না খেয়ে আছি, আমি বলি যা ভাগ সামনে থেকে। দরিদ্র আত্মীয়স্বজনের সাথে যোগাযোগ রাখি না। ধনী আত্মীয়স্বজন কে বাসায় দাওয়াত করে খাওয়াই। আমার সমস্ত চিন্তা ভাবনা হয়ে গেছে আত্মকেন্দ্রিক। পরিবারের বাইরে কারো জন্য কিছু করতে ইচ্ছে করে না। ভাবতেও ইচ্ছে করে না। চিন্তা ভাবনা এই রকম হয়ে গেছে, শুধু আমার পরিবার ভালো থাকুক, বাকি সব জাহান্নামে যাক।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩