somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তির ১০ প্রাকৃতিক উপায়

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা প্রত্যেকেই কম-বেশি অম্লপিত্ত বা অ্যাসিডিটিতে ভুগী। পারিবারিক কোন অনুষ্ঠানে মিঠা-মণ্ডা খেয়েও এ সমস্যা হতে পারে, আবার চায়ের সঙ্গে সিঙ্গারা-সামুচা খেলেও আক্রান্ত করে এটি। আর আক্রান্ত হলে অ্যান্টাসিড খেয়ে এর থেকে পরিত্রাণ খুঁজি আমরা। কিন্তু আপনি কি জানেন, এর থেকে পরিত্রাণের জন্য চমৎকার সব প্রাকৃতিক বিকল্প আছে? যাতে নেই ওষুধের মতো কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এ রকম ১০টি প্রাকৃতিক উপায় তুলে ধরা হলো এখানে:

কলা: সহজলভ্য এ ফলটিতে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় পটাশিয়াম। পটাশিয়াম একটি ক্ষরযুক্ত খনিজ পদার্থ যাতে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় পিএইচ ভ্যালু। যে খাবারে পিএইচ ভ্যালু যত কম, সেই খাবারে অ্যাসিডিটির মাত্রাও তত কম। এ কারণে কলা অ্যাসিডিটির একটি দুর্দান্ত প্রতিষেধক। তা ছাড়া এতে এমন সব উপাদান আছে যা পাকস্থলিকে প্রতিরক্ষা করে এবং অধিক শ্লেষ্মা তৈরিতে সাহায্য করে। এই শ্লেষ্মা পাকস্থলির ভেতরের ক্ষারকে সুরক্ষা করে। এ ছাড়া অ্যাসিডিটির কারণে পাকস্থলির যে ক্ষতি হয় সে ক্ষতির মাত্রাকে হ্রাস করে। কলায় আছে অধিক হারে আঁশযুক্ত উপাদান যা হজমে সাহায্য করে এবং পুনরায় অ্যাসিডিটি সম্ভাবনা থাকে না। তবে ভাল ফল পেতে অধিক পাকা কলা খেতে হবে। কারণ কলা একটু বেশি পাকলে তাতে থাকে অধিক হারে পটাশিয়াম।

তুলশি: তুলশিতে রয়েছে যৌগ যা হজমে অত্যন্ত কার্যকরী। এটি পাকস্থলীতে অধিক হারে শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি থেকে নি:সৃত পিচ্ছিল পদার্থ তৈরি করে যা বায়ুনাশক হিসেবে কাজ করে। এতে আছে শক্তিশালী আলসাররোধী উপাদান। তুলসি পাতার রসে প্রচুর ক্লোরোফিল থাকায় নিয়মিত সেবনে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। তাই প্রতিদিন খাওয়ার পর ৫/৬টি তুলসি পাতা খান।

ঠাণ্ডা দুধ: দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা অ্যাসিডিটি থেকে আপনাকে রক্ষা করবে। ক্যালসিয়াম শরীরে অতিরিক্ত উৎপাদিত অ্যাসিড শুষে নেয়। কোন কারণে অ্যাসিডিটি সৃষ্টি হলে তাৎক্ষণিকভাবে স্বস্তি দেবে আপনাকে। তবে তা পান করতে হবে চিনি ছাড়াই। অ্যাসিডিটি রোধে আরো বেশি কার্যকরী ফল পেতে এক গ্লাস দুধ এক চামচ ঘি সহযোগে পান করুন।

মৌরি: মৌরি বায়ু নিঃসারক খনিজ লবণসমৃদ্ধ একটি বীজ। প্রাচীন গ্রিক ও রোমান সভ্যতায় মৌরিকে ওষুধ ও খাবার হিসেবে গ্রহণ করা হতো। পুষ্টি ও ওষধি গুণে সমৃদ্ধ এই বীজে রয়েছে অনেক গুনাগুন। এর মধ্যে হজমে সহযোগিতা অন্যতম। এ কারণে রেস্টুরেন্টে খাওয়ার পর মৌরি দেওয়া হয়। খাবার পর নিয়মিত খেলে বীজটি আপনাকে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেবে। এতে কপার, আয়রন, পটাসিয়াম, সেলেনিয়াম, জিংক ও ম্যাগনেসিয়াম প্রচুর পরিমাণে আছে। ৪/৫ গ্রাম মৌরি চূর্ণ করে দিনে দু'বার খাবারের পর সেবন করলে অ্যাসিডিটি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

জিরা: জিরা মুখের লালা উৎপাদনে সাহায্য করে যা হজম প্রক্রিয়া ও বিপাক ক্রিয়ায় সাহায্য করে। এ ছাড়া অ্যাসিডিটি ও গ্যাস্ট্রিক সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র মতে, পাকস্থলি কোন কারণে উদ্দিপ্ত হলে তা শীতল করতে সাহায্য করে এটি। এ ছাড়া পেটের আলসার দূর করতেও কাজ করে জিরা। আপনার পেটে যখনই বায়ুর উদ্রেক হবে তখনই কয়েকটি জিরা চিবিয়ে অথবা পানিতে সেদ্ধ করে পানিসহ খেয়ে ফেলুন- অ্যাসিডিটি থাকবে না।

লবঙ্গ: ভারতীয় উপমহাদেশের খাবারে দীর্ঘদিন ধরে লবঙ্গ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। লবঙ্গ থেকে উৎপাদিত তেলের মূল উপাদান ইউজেনল" (Eugenol) নামের যৌগ। যৌগটি একটি অন্যতম বায়ুনাশকারী উপাদান। পাকস্থলীর রস-ক্রিয়ায় ভূমিকা রেখে খাদ্যনালীকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে এটি। খাবার হজমেও রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তবে অম্লপিত্ত বা অ্যাসিডিটিতে লবঙ্গ একটি ভাল উপাদান। খাওয়ার পর দুপুরে ও রাতে একটি করে লবঙ্গ চিবিয়ে খেলে এর থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

এলাচ: সুগন্ধিযুক্ত এ মসলায় রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়াম। এটি খাবার হজমে সাহায্য করে। পাকস্থলিতে এক ধরনের পিচ্ছিল আবরণ তৈরি করে অ্যাসিডিটির প্রভাব থেকে রক্ষা করে। ছোট এলাচের দুইটি দানা গুঁড়ো করে পানিতে ফুটিয়ে তা ঠাণ্ডা হলে পান করুন, অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি পাবেন।

পুদিনা পাতা: প্রধানত খাবার সুশোভিত করতে ব্যবহৃত হয় এটি। তবে দীর্ঘদিন ধরে মুখের বিশুদ্ধিকারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এ ছাড়া অ্যাসিডিটির চিকিৎসায় আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে পাতাটি ব্যবহৃত হয়। পেটে বায়ু জমলে কিংবা কোষ্ঠবদ্ধতায় অরুচি আসলে পুদিনার সরবত ( পুদিনার রস ২ চা চামচ, সামান্য লবণ, কাগজি লেবুর রস ৮/১০ ফোটা, হালকা গরম পানি পোয়া খানিক একত্রে মিশিয়ে) দিনে দুই বার ৫/৭ দিন খেলে অরুচিতে উপকার পাওয়া যায়। পুদিনা পাতা বেটে পানিতে গুলে শরবত করা যায়। সে ক্ষেত্রে কাঁচা পাতা ৮/১০ গ্রাম নিতে হবে।

আদা: উপমহাদেশে রান্নার কাজে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আদা। এটি মুখের লালা বা স্যালাইভা উৎপাদন করে। এই লালা খাবার হজমে সাহায্য করে। আদা চিবিয়ে কিংবা লবণ-পানির সঙ্গে মিশিয়ে পান করলে খাবার তাড়াতাড়ি হজম হয়। কোষ্ঠবদ্ধতা দূর হয় এবং অ্যাসিডিটি রোধ করে। কাঁচা আদা চিবিয়ে খেতে অসুবিধা হলে কিছুটা আদা পানিতে সিদ্ধ করে পান করলেও উপকার পাওয়া যায়।

আমলকি: প্রচুর ভিটামিন 'সি' রয়েছে দেখতে লোভনীয় এ ফলটিতে। এ ছাড়া এতে রয়েছে খনিজ, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি। আমলকি নানাভাবে খাওয়া যায়। আমলকি খেলে মুখে রুচি বাড়ে। এ ছাড়া পেটের পীড়া, সর্দি, কাশি ও রক্তহীনতার জন্যও খুবই উপকারি। তবে অ্যাসিডিটির সমস্যা কম রাখতে সাহায্য করে এটি। প্রতিদিন এক চা চামচ আমলকির গুঁড়ো দুইবার খেলে অম্লপিত্ত বা অ্যাসিডিটি থাকবে না। টাইমস অব ইন্ডিয়া
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৭
১৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×