somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিন্দী মুভি বাংলা রিভিউ- “Guzaarish”

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ১১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই প্রথম কোন মুভির রিভিউ লিখছি চোখ ভেজা অবস্হায়। যখন কোন মুভি মানুষের আবেগকে নাড়া দিয়ে সারা জীবনের জন্য মনে বাসা বেঁধে রাখে তখনই সে মুভিকে বলা হয় “Masterpiece “। এক অসাধারণ মুভির জন্ম দিলেন বলিউডের অন্যতম সেরা পরিচালক Sanjay Leela Bhansali । এই মুভির মাধ্যমে তিনি হিন্দী মুভিকে এক অসাধারণ উচ্চতায় নিয়ে গেছেন যার কারণে তাকে আমি শুধু পরিচালক না বলে একজন চলচ্চিত্র শিল্পী বলতে চাই।
Ethan Mascarenhas ( Hrithik Roshan) একজন পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তি। এক কালের দুনিয়ার সেরা জাদু শিল্পী। কিন্তু ১৪ বছর আগে এক দুর্ঘটনার কারণে তার অঙ্গগুলি থেকে সব ধরণের অনুভূতি চলে যায়। শুধুমাত্র মাথাটি সামান্য নাড়াতে পারে। এমনকি মল-মূ্ত্র বের হওয়ার সময়ও তার কোন অনুভুতি থাকে না। তখন থেকেই তার জীবন চলে একটি হুইল চেয়ারে। তবে সে সমাজে কোন শাক সবজির মত বেঁচে নেই। সে বর্তমানে গোয়ায় এক রেডিও শো এর রেডিও জকি হিসেবে কাজ করে। শো এর নাম “Radio ZindegI”। যেখানে সে মানুষকে জীবনকে কী তা জানতে শেখায়। গত ১২ বছর ধরে তার সেবা যত্ন করে আসছে তার সেবিকা Sofia ( Aishwarya Rai) । এভাবেই চলে যাচ্ছে জীবন।
একদিন Ethan তার আইনজ্ঞ বন্ধু Devyani ( Shernaz Patel) কে তার জীবনের শেষ গুজারিশ বা অনুরোধ জানাতে চায়। Ethanআদালত থেকে স্বেচ্ছায় মৃত্যু বা Euthanasia ‘র প্রার্থনা করে। কিন্তু ভারতীয় সংবিধানে এর কোন নিয়ম নেই। প্রথম দফায় খারিজ হয় তার আপিল। কিন্তু Ethan তার রেডিও সাহায্যে লোকজনের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করে। মুভিতে নতুন এক চরিত্রের আবির্ভাব হয়। Omar Siddique ( Aditya Roy Kapoor) আসে Ethan এর নিকট জাদুবিদ্যা শিখতে। এভাবে সে Ethan এর জীবনে জায়গা করে নেয়। এদিকে যথেষ্ট জনসমর্থন পাওয়ার পর দ্বিতীয় দফায় Ethan নিজেই বাসা থেকে বের হয়ে Court এ হাজির হয়। এভাবেই চলতে থাকে মামলা। মুভিতে ধীরে ধীরে বের হয়ে আসে Ethan কে ঘিরে সকল মানুষের ভালোবাসা এবং অনুভূতি। স্বেচ্ছায় মৃত্যুকে কেউ সমর্থন প্রথমত না করলেও ধীরে ধীরে Ethan এর কষ্টের সীমা দেখার পর সকল দর্শকই সজল চোখে তার সিদ্ধান্ত সঠিক বলেই মেনে নিবেন। একদিন আদালতের রায় চলে আসে । তবে সেটি সকলের জন্য সুখকর হয় না।
হিন্দী মুভি আমরা দেখতে বসি Hrithik এর মুভি , Aish এর মুভি দেখতেই হবে। তবে একবারের জন্যও মনে হয়নি যে আমি Hrithik বা Aish এর কোন মুভি দেখছি। সবসময় মনে হয়েছে যেন মুগ্ধ নয়নে একটি চিত্রকর্ম দেখছি যেটিতে এক পঙ্গু ব্যক্তি হুইল চেয়ারে জানালার দিকে তাকিয়ে অপেক্ষায় করছে মুক্তির। অসাধারণ মুভি মেকিংএ মন্ত্রমুগ্ধ হতে বাধ্য হয়েছি।
মুভিটি শুধু এবং শুধুমাত্রই Sanjay Leela Bhansali’র। সাধারণ থেকে সাধারণ দৃশ্য যেন এক জাদুর প্রয়োগে সকলের চোখে পানি এনে দেয়। Black মুভিটির মাধ্যমে হিন্দী মুভিকে এক দারুণ উচ্চতায় নিয়ে যাবার পর যখন Saawariya সকলকে হতাশ করেছিল তখন Guzaarish এরই দরকার ছিল তার শিল্পকর্মকে সঠিক মর্যাদা দেবার জন্য। জেনে রাখা ভালো যে মুভিটির জন্ম মূলত Saawariya’র পরবর্তী সময়ে Bhansali’র প্রতি মানুষের আচরণ থেকেই।
এক দৃশ্যে Omar যখন Ethan কে বলে:” তো আপনার প্রথম জাদু ছিল Raining Coins??” তখন Ethan জবাব দেয়: “ না! আমার জাদুটি ছিল আমার মায়ের হাসি।“ তখন কেন জানি এক অদ্ভুত অনুভূতির স্বাদ পাওয়া যায়।
অভিনয়ের ব্যাপারে সকলে Hrithik এর প্রশংসা করাটাই স্বাভাবিক কারণ Hrithik ছিল মূল চরিত্র। কিন্তু আমার মতে সকলের অভিনয় ছিল দুর্দান্ত। Hrithik পুনরায় প্রমাণ করেছে তার মত অভিনেতা বলিউডে নেই। বলে রাখা ভালো যে Ethan এর সাথে Koi Mil Gaya’র Rohit এর কোন মিলই পাওয়া যাবে না। Aishwarya’র চরিত্রের গুরুত্ব কিছুটা কম হলেও তাকে ছাড়া এই মুভি হওয়া সম্ভব ছিল না। এছাড়া Omar চরিত্রে Aditya, Devyani চরিত্রে Shernaz Patel, Dr. Nayak চরিত্রে Suhel Seth, Ethan এর মায়ের চরিত্রে Nafisa Ali দারুন অভিনয় করেছেন।
মুভিটির সংগীত পরিচালক আশ্চর্যজনকভাবে Bhansali নিজেই। সংগীত অসাধারণ না হলেও মুভিটির জন্য মানানসই। খুব দুঃখজনক ঘটনা হলো যে মুভিটি বক্স অফিসে ব্যবসা করতে পারে নি। তবে আমার বিশ্বাস সকলেই মুভিটিকে প্রশংসার মাধ্যমে সেরা মুভির তালিকায় রাখবেন। দয়া করে মুভিটি সবাই দেখবেন। এটাই আমার প্রতি সকলের Guzaarish।
রেটিং- ৪.৫/৫


১৭টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×