পাইলাম। অবশেষে পাইলাম। কী পাইলাম? চোখের শান্তি পাইলাম। । মুভি দেখি আনন্দ পাওয়ার জন্য। অবশেষে পেলাম সেই আনন্দ এক ধামাকা থেকে যার নাম ‘Bang Bang’। হৃতিক রোশান পেল তার জায়গামত চরিত্র। হয়তো প্রথম কোন হিন্দী মুভি যাকে নকলের দোষ দেয়া যাবে না। কারণ মুভিটি আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১০ সালের Knight and Day মুভির পুনঃনির্মাণ।
কাহিনী একটু পেঁচানো। বিখ্যাত ঐতিহাসিক “কোহিনূর” হীরা চুরি হয়ে গেছে। চোর আমাদের হৃতিক বাবাজী । এত দামি জিনিস কারে বেচুম? আইসা পরে আমাদের ভিলেন ওমর জাফর ( Danny Denzongpa)। এদিকে শিমলার ঠান্ডায় এক ঠান্ডা সুন্দরী ব্যাংক রিসিপশনিস্ট হারলীন সাহানী ( Katrina Kaif)। জীবন পুরাই ঠান্ডা এবং একাকী। কী আর করা? ইন্টারনেটে TrueLuvv.com এ জীবনসাথী খোঁজার চেষ্টায় এক ভিকি নামক বান্দার সাথে ডেট ঠিক হয় রেস্টুরেন্টে খাওয়ার। হারলীন আছে বসে কিন্তু অন্য জনের খবর নেই। জীবনটা হয়তো এভাবে একাকী খাওয়ার টেবিলটার মতই থেকে যাবে। হঠাৎ একজনের আবির্ভাব। কিন্তু পরে জানা যায় যে সে তার “ভিকি” নয়। সে এক আন্তর্জাতিক চোর “রাজভীর নান্দা” ( Hrithik Roshan)। যার বর্তমান কাজ হারলিনকে ব্যবহার করে নিজের চুরির জিনিসটি অক্ষত রাখার চেষ্টা। জীবন পুরাটাই পাল্টে যায়। এক ব্যাংকের বোরিং চাকরী থেকে হঠাৎ এক অপরিচিত ব্যক্তির হাত ধরে ছুটে চলা এবং পিছনে পুলিশ এবং ওমর জাফরের লোকদের তাড়া খাওয়া। বিরাট এক বিপদে পড়ে যায় হারলিন। কি দোষ ছিল তার?
মুভিটিকে বিশ্লেষণের আগে এটির হলিউড সংস্করণ টম ক্রজ এবং ক্যামেরন ডায়াজ এর Knight and Day এর সাথে একটু তুলনা তো করতেই হয়। Knight and Day মুভিটি আসলে একটি অ্যাকশান-কমেডি মুভি। যেটি দেখতে গিয়ে মনে হয়েছে পুরাই হিন্দী মুভিই দেখলাম। এদিকে Bang Bang মুভিটি অ্যাকশান – কমেডি না বলে অ্যাকশান-রোমান্টিক বলতে হবে। ভারতীয় দর্শকদের কথা চিন্তা করে মুভিটির কাহিনী কিছুটা সহজ করা হয়েছে যেটি বেশ ভালো লেগেছে। নির্দেশক Siddharth Anand এর পরিচালনা আসলেই দারুন ।
মুভিটিকে ভালো লাগার জন্য একটি নামই আসে। সেটি Hrithik Roshan এর। অসাধারণ!! কীভাবে পারে? Tom Cruise এর সাথে তার তুলনা করাটা খুব একটা ঠিক হবে না কারণ এই মুভির চরিত্রটি Knight and Day এর Roy Miller এর থেকে সামান্য আলাদা। Tom Cruise কে যেখানে দুর্দান্ত লেগেছে হৃতিককে লেগেছে দুর্দান্তিস! প্রতিটি মুভির জন্য তার নিষ্ঠা এবং শ্রম তাক লাগানোর মত। কিন্তু এই মুভিতে একশান দৃশ্য দৃশ্যায়নকালীন বেচারার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ পর্যন্ত হয়ে গেছে। ব্রেন সার্জারীর পরও সে একশান দৃশ্য করতে স্টান্ট ব্যবহার করতে অপারগতা জানায়। এই মুভি ভারতের অন্য কোন অভিনেতা দ্বারা করা একেবারেই অসম্ভব। শুধু একশান নয়। হৃতিকের অভিনয়, চলাফেরা, ভাআআআবস, স্টাইল এবং সবশেষে নাচ সবই এক্কেবারে কেল্লা ফতে।
মুভিটি পুরোপুরি নায়ক প্রধান হলেও Katrina Kaif এর চরিত্রটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুণ লেগেছে ক্যাটরিনাকে। হৃতিক-ক্যাটরিনার জুটির রসায়ন দেখে পুরাই টাশকি খাইসি। এতদিন লাগলো এই দুজনকে একই সাথে পুরোপুরি নায়ক-নায়িকা হিসেবে দেখতে? এই মুভি যেমন হৃতিক ছাড়া চিন্তা করা যায় না তেমনি ক্যাটরিনা ছাড়াও অসম্ভব। হৃতিকের পাশে আর কোন ভারতীয় নায়িকা যেন মানাবেই না। এর জন্য ক্যাটরিনার প্রশংসা না করে পারা যায় না। সাধারণ এক শিমলার নিষ্পাপ মেয়ে বলুন কিংবা শেষ দৃশ্যে দুর্দান্ত নাচ সবকিছুতেই অপূর্ব ক্যাটরিনা। হৃতিক – ক্যাটরিনার আরো মুভি এখন সময়ের দাবি।
হলিউড সংস্করণ থেকে অন্যতম পরিবর্তন ছিল ভিলেন ওমর জাফরের চরিত্রটি যেটি Danny বেশ ভালোভাবেই করেছেন। এছাড়া অন্যান্য চরিত্রে Pawan Malhotra, Kanwaljit Singh, Deepti Naval, Jimmy Shergill কে ভালোই লেগেছে। Jaaved Jaffrey’র চরিত্রটি পুরোপুরি অপচয় বলে মনে হয়েছে। দারুন লেগেছে ক্যাটরিনার দাদী চরিত্রে Kamlesh Gill কে।
সংগীতের কথায় আসি। মাত্র ৪ টা গান আছে। সবগুলিই বেশ ভালো। Vishal-Shekhar এর কাজ বরাবরের মতই দারুন। “তু মেরি” , “ব্যাং ব্যাং” গান দুটিতে হৃতিক নাইচা কোপায় ফেলসে। ক্যাটরিনাও কম যায় না। তবে “মেহেরবান” গানটিতে দুজনকে ফাটাফাটি লেগেছে। দারুন দৃশ্যায়ন।
একশান নিয়ে আর কী বলবো। ফ্লাইবোর্ড, রেস কার কোনটিই Knight and Day তে ছিলনা। নতুন একশান সংযোজন গুলি দেখে মুখ আসলেই হা হয়েছিল।
মুভিটির একটি খারাপ দিক বলা যেতে পারে সেটি হল আবহ সংগীত। একশান মারামারি চলতেসে আর পিছনে ফ্যাচফ্যাচে শব্দ শুনতে খুব একটা ভালো লাগেনি। Selim Sulaiman থেকে আরো একটু বেশী আশা করা যায়।
Knight and Day মুভিটি অত্যন্ত নান্দনিক। যারা হিন্দী মুভির ভক্ত তাদের আরো নান্দনিক লাগবে Bang Bang। আর হৃতিকের ভক্ত হলে তো কথাই নেই।
সব মিলিয়ে ধামাকা মুভি।
রেটিং – ৪ / ৫
আলোচিত ব্লগ
মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ



ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন
মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন
তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।
দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।