somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজিন রিভিউ: Whiplash

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্কুল জীবনের একটি দিনের কথা মনে পড়ে গেল। সকালবেলার এসেম্বলিতে জাতীয় সংগীত ও শপথবাক্য পাঠ শেষে ক্লাসরুমের দিকে সবাই হেঁটে চলছি। হঠাৎ করে সামনে এক বিভৎস দৃশ্য। আমাদের স্কুলের এক জনৈক শিক্ষক আমাদের অন্যতম বেশ ভালো ছাত্র হিসেবে পরিচিত এক ক্লাসমেটকে বেত দিয়ে পিটাইতেসে। পিটাইতেসে না বলে কোপাইতেসে বলা উচিত। পরে জানতে পেরেছিলাম অন্য কোন ছাত্রের অপরাধের কারণে আমাদের সহপাঠীটির এই শাস্তিভোগ। দৃশ্যটি যদি লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির চিত্রকলা হতো, তবে সেই চিত্রে দেখা যেত: শিক্ষকের তার সর্বশক্তি বেতের অগ্রে পুঞ্জীভূত করার চেষ্টা এবং আমাদের সহপাঠীর অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে নির্বাক এক প্রশ্ন: “কী দোষ আমার?”।

২০১৪ সালের অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র Whiplash দেখে আমার মত সবারই এরকমই কোন স্মৃতির কথা মনে পড়ে যাবে। দৃশ্যগুলি দেখে মনে পড়ে হয়তো বলেও উঠবেন: “আররে ... এইডা তো আমাগো সেই জাউড়া টিচার!”

কাহিনী জানা যাক। Andrew ( Miles Teller) এর স্বপ্ন Jazz Music এর ড্রামার হওয়া। পরিবারের বিভিন্ন সদস্য থেকে যথারীতি তাচ্ছিল্যের সুরে কথাবার্তা শুনতে হয়। “ হুমম... সংগীতশিল্পী হবা? যা গিয়া আগে ট্রাক চালানো শিইখা আয়, বালি টানতে কামে দিবো”। এন্ড্রু ভর্তি হয় এক সংগীত কলেজে। সেখানে আছেন জ্যাজ মিউজিকের বিখ্যাত শিক্ষক Fletcher ( J. K. Simmons) । কোন মতে ঐ টাকলুর ক্লাসে একবার ঢুকতে পারলে হইসে কাম। এন্ড্রু তার প্রতিভা দেখিয়েই ঢুকে পড়ে ফ্লেচারের ক্লাসে। তারপর শুরু হয় জাহান্নামের জীবন। জীন্দেগী ছাড়-খাড় করে দেয় ফ্লেচার। কিন্তু হার মানবার মানুষ এন্ড্রু নয়।

মুভিটি চরমভাবে তৈরী করা হয়েছে। একেবারে সাধারণ কাহিনীর মাধ্যমে কতটা অসাধারণভাবে দাঁত কামড়ানো রোমাঞ্চ সৃষ্টি করা সম্ভব সেটা এই মুভি না দেখে বোঝা যাবে না। মুভির নির্দেশক – লেখক Damien Chazelle আসলেই চরম এক ট্যালেন্ট। এত ট্যালেন্ট নিয়া ঘুমায় ক্যামনে?

অভিনয় দিয়ে যুদ্ধ দেখে সেরকম লেগেছে। Miles Teller এবং J.K. Simmons ,উভয়েরই সেরা অভিনয়। গালাগালি, ড্রাম বাজাতে বাজাতে রক্তারক্তি, চেয়ার ছুড়ে বকা এবং বকা খেয়ে কান্না সবকিছু দিয়েই পুরা বাজিমাত।

Jazz সংগীত সম্পর্কে আমার কোন ধরণের ধারণা ছিল না। কিন্তু এই মুভির প্রত্যেকটি সংগীত-সুর অত্যন্ত শ্রুতিমধুর লেগেছে। সংগীতগুলিকে পছন্দ করতে কোন রকমের Jazz ভক্ত হবার প্রয়োজন নেই।

মুভির খারাপ কোন দিক নেই। একেবারেই শূন্য। তবে প্রথমে আমার মনে হয়েছিল মুভিটি কি তাহলে “গাধা পিটায়ে মানুষ” করাকে সমর্থন করেছে? কিন্তু এই “গাধা পিটায়ে মানুষ” করার যুক্তিকে আমি মনে প্রাণে ঘৃণা করি। শিক্ষকের অতিরিক্ত শাসন কেবল ছাত্রকে অগ্রবর্তী হবার থেকে আটকিয়ে রাখে। যে মেধাবী সে তার পরিশ্রম দিয়ে সফল হয়। কারও বকা-ঝকা দিয়ে নয়। পরে ভেবে দেখলাম আরে মুভিটা আসলে তো সেটাই বলেছে! নাকি বলেনি? এই জায়গাটিতে মুভিটি সামান্য খটকা রেখে যায় যেটা আমার মতে রাখা উচিত নয়।
এছাড়া বিখ্যাত Jazz শিল্পী চার্লি পার্কার বিষয়ক একটি ঘটনার বর্ণনা করা হয়েছে যার মধ্য সত্যতা কিছুটা কম ছিল।

মুভিটি খুব বেশী গতিশীল না হলেও খুব বেশী বোরিং নয়। সব দৃশ্যে এক অন্য রকমের রোমাঞ্চ। শেষ দৃশ্য তো পুরাই বাজিমাত।

সবশেষে আমি আমার সবচেয়ে পছন্দের রিভিউয়ারদের ধন্যবাদ দিতে চাই যাদের সেরা তালিকা থেকে এই মুভির নাম জানতে পারি। তারা হলেন Chris Stuckmann, Jeremy Jahns এবং John Flickster। খুবই অদ্ভুত লেগেছে যে Golden Globes এ মাত্র একটি নমিনেশান পেয়েছে মুভিটি যেখানে নিঃসন্দেহে অস্কারের সেরা চলচ্চিত্রের দাবিদার।

সব মিলিয়ে অসাধারণ।

রেটিং – ৪.৫ /৫
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×