somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজিন রিভিউ: The Imitation Game

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নীলক্ষেত থেকে ৮০ টাকা দিয়ে একটা বই কিনেছিলাম। বইটি ছিল Harry Lewis এবং Christos H. Papadimitriou রচিত “Elements of the Theory of Computation”। বইটির লেখক দুজন কিন্তু বইটির মলাটে ছিল একজনের ছবি। ভাবলাম কোন লেখকটি ইনি? পরে জানতে পারলাম ইনি লেখক নন, ইনি লেখকদের বসের বস। ছবিটি ছিল যার কারণে আমি একটি কম্পিউটার ব্যবহার করে মুভির রিভিউ লিখছি: বিখ্যাত গণিতবীদ এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানের জনক Dr. Alan Turing। তার জীবনের কিছু অংশ নিয়ে তৈরি হলো একটি মুভি আর সেখানে আছে Benedict Cumberbatch। মিস করি কীভাবে?

কাহিনী জানা যাক। ১৯৪০ সালের ইংল্যান্ড। যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে জার্মান নাৎসিরা বৃটিশদের দফারফা করে দিচ্ছে। অন্য কোন উপায় অবলম্বন করতে হবে। জার্মান নৌ-যুদ্ধ জাহাজগুলির অবস্থান রেডিও সিগন্যালের মাধ্যমে একে অপরকে জানানো হয়। কিন্তু সেই সিগন্যালের অর্থ বোঝা সম্ভব নয়। কারণ এনিগমা নামক এক যন্ত্রের মাধ্যমে আসল বার্তাকে পেঁচায়ে এক গোপন সংকেত বা কোড তৈরী করা হয়। সেই এনিগমার কোড ভাঙা অসম্ভব। আবির্ভাব হয় বিখ্যাত গণিতবীদ টিউরিং (Cumberbatch) এর। সাথে আরো কিছু গণিতবীদের দল। হাতে কলমে শুরু কোড ভাঙার লড়াই। কিন্তু টিউরিং হাতে কলমের লোক নন। কোনভাবে কি তার তাত্বিক টিউরিং মেশিন থেকে এক ব্যবহারিক যন্ত্র তৈরী করা সম্ভব নয়? মাঠে নেমে পরে টিউরিং। শুরু হয় তাঁর Christopher বানানোর যাত্রা। কিন্তু এই বিরক্তিকর লোকটাকে কে বিশ্বাস করবে?

মুভিটিকে আমি কিছুটা A Beautiful Mind ধরনের মনে করেছিলাম । কিন্তু মুভিটি সেরকম নয়। টিউরিং এর বুদ্ধিমত্তার চেয়ে তার কাজের প্রতি মাহাত্ম এবং একাগ্রতাকে তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু তখনকার বৃটিশ শাসন ব্যবস্থা কেবল মাত্র তার সমকামী হবার কারণে তাকে শাস্তি প্রদান করেন। টিউরিং এর অবদান সম্পর্কে সাধারণ মানুষের যা ধারণা তার থেকে অনেক সহস্রগুণ বেশী। কিন্তু শুধুমাত্র তিনি সমকামী ছিলেন , এই জন্য, শুধুমাত্র এইজন্য এক বিখ্যাত বিজ্ঞানীকে থামিয়ে দেয়া হলো।

মুভির মেকিং বলতে হবে চমৎকার। টিউরিং এর জীবনের ৩টি সময় দেখানো হয়েছে। প্রত্যেকটিতেই দর্শকেরা মূল চরিত্রের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবেন। Morten Tyldum এর প্রথম ইংরেজী ভাষার মুভিতে তার কাজ প্রশংসার দাবীদার।

অভিনয়ের ক্ষেত্রে টিউরিং চরিত্রে Benedict Cumberbatch পুরা ফাটায় ফেলসে। ভুলেই গেসিলাম এই লোকটা আমাদের সেই শার্লক। মনে হয় যেন অ্যালান টিউরিং ই কথা বলছেন। অসাধারণ। শেষের দিকের দৃশ্যগুলিতে তার কাজের প্রতি মায়া এবং জীবনযুদ্ধে ধীরে ধীরে হেরে যাওয়ার ব্যাপারটি চোখে পানি এনে দেয়। অস্কারের দৌড়ে বেশ জোড়েই দৌড়াচ্ছেন এই অভিনেতা।
এছাড়া Joan Clarke চরিত্রে Keira Knightley কে চরম লেগেছে। নায়িকা এবং অভিনেত্রীর পার্থক্যটি দারুণভাবে বোঝা যায় তার নৈপূণ্য দেখে।
Matthew Goode, Mark Strong, Rory Kinnear কে বেশ ভালো লেগেছে। Charles Dance কে দেখে সেই Game of Thrones এর বুইড়াই লাগসে। অভিনয়ে তেমন কোন নতুনত্ব পাইনি। কিশোর টিউরিং চরিত্রে Alex Lawther দারুণ করেছে।

মুভির খারাপ দিক নিয়ে কিছুটা বলা যাক। মুভিতে টিউরিং এর জীবনের তিনটি অধ্যায় দেখানো হয়েছে। প্রথমদিকে বোঝা গেলেও পরবর্তীতে কোন সময় কোন অধ্যায় চলছে সেটা বুঝতে একটু কষ্ট হয়। এছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অধ্যায়তে কীভাবে টিউরিং তার মেশিন বানানোর ধারণা পেলেন সেটা খুব একটা বোঝা যায়না। সোজা কথায় টিউরিং এর জিনিয়াসগিরিটা ঠিকমত ফুটিয়ে তোলা হয়নি। কিছুটা ইচ্ছাকৃতভাবেই সেটা করা হয়েছে কিন্তু টিউরিং বুদ্ধিমত্তার কিছু আলামত দেখাইলে সেরকম লাগতো। এছাড়া Bombe তৈরী করা মনে হয়েছে চেয়ার-টেবিল বানানো টাইপ কাজ। Bombe তৈরীর সময় Gordon Welchman কোন নাম নেওয়া হয়নি। Charles Dance এর চরিত্র Denniston কে Tywin Lannister এর মত দেখালেও আসল জীবনে তিনি বলে অত্যন্ত অমায়িক ব্যক্তি ছিলেন।

বড়দিনের রাতে থিয়েটারে গিয়ে দেখি, এত্ত এত্ত হিট খাওয়া , থ্রী-ডি মুভি বাদ দিয়ে শুধুমাত্র এই মুভিটিই “হাউসফুল”। তো কী হয়েছে ? পরের শো দেইখাই ছাড়মু। মুভিটি দেখে সত্যি যেন কিছু মুহূর্ত সাথে করে নিয়ে গেলাম।সবমিলিয়ে দুর্দান্তু।

রেটিং – ৪ / ৫
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:২৬
৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×