somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজিন রিভিউ: The Martian

১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মানুষ। অদ্ভুত একটি প্রাণী। পৃথিবীর একমাত্র প্রাণী যে কিনা নিজের মনের কথা ভাষার মাধ্যমে অন্যের কাছে প্রকাশ করে। সেটা সংবাদপত্র প্রথম আলো হোক কিংবা সামাজিক মাধ্যমগুলিতে ডাকফেইস ও হ্যাশট্যাগে। কিন্তু কেমন হবে যদি কথা বলার কেউ না থাকে? তাও আবার সেটা ঘটে মঙ্গল গ্রহে? তাইলে তো হইসে কাম। এরকম ভয়ংকর পরিস্থিতিতে পড়া এক নভোচারীর কাহিনী “দ্য মার্শান”। এ্যান্ডি ওয়েরের সেই উপন্যাস এখন মুভির রুপালী পর্দায়।

এধরনের মুভি দেখতে ভালো লাগার কথা না। একজন বেচারা এমন এক ভেজালে পড়সে যে কোন উপায় নাই। এই দুঃখের কাহিনী দেইখা কী করুম? পরে তো দেখি টাশকি! মুভির নায়ক যখন বলে ওঠে :”আমি এই মঙ্গল গ্রহে বইসা বিজ্ঞানের মায়রে-বাপ কইরা ছাড়ুম।“, তখনই বোঝাই যায় যে মুভিটি দুর্দান্ত হবে।

কাহিনী জানা যাক। মঙ্গল গ্রহ মানুষ অনেক আগেই জয় করেছে। মঙ্গলগ্রহে মানবধারী ৩য় মিশনের অন্যতম সদস্য মার্ক ওয়াটনি ( ম্যাট ডেমন) । মঙ্গল গ্রহে তাদের মিশন চলাকালীন এক ভয়ংকর ঝড়ের কারণে তাদের মিশনকে বাতিল ঘোষনা করা হয় এবং তৎক্ষণাত সকল সদস্যদের পৃথিবীতে ফেরত আসার নির্দেশ দেয়া হয়। এমনই গ্যান্জাইমা ঝড়ে মার্ক ওয়াটনির দিকে একটি যন্ত্রের টুকরা এসে তাকে উড়ায়ে নিয়ে যায়। মার্ক নিশ্চয়ই মারা গেছে। না হলে কথার উত্তর দিচ্ছে না কেন? মার্ক বাদে সবাই রওনা দেয়।
এদিকে মার্ক বেঁচে আছে। যে যন্ত্রটি তাকে উড়ায়ে নিয়ে গেছিল সেটা আবার পৃথিবীতে যোগাযোগ করার মাধ্যম। সুতরাং এই গ্রহে সে একা এবং পৃথিবীর সাথে তার কোন যোগাযোগ নেই। এই অবস্থায় সে কী ভিডিও বানাবে? :“হাত ভেঙে গেছে ... ঠিক হয়ে যাবে, Pray for me।“
নাহ। বাঁচার জন্য একজন মানুষ আশা না হারিয়ে কত কিছু যে করতে পারে সেটার জন্যই এই মুভিটি দেখা আবশ্যক।

মুভিটির কাহিনী সায়েন্স ফিকশান ধরনের হলেও মুভিটি মূলত একজন মানুষের বেঁচে থাকবার সংগ্রাম নিয়েই । তার উপর নির্দেশক রিডলি স্কট। পুরাই কোপায় দিসে। দারুণ পরিচালনা, দারুণ দৃশ্যায়ন। মঙ্গলগ্রহকে এত দারুনভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যে ভাবাই যায় না।

মুভিটির ট্রেলারে ম্যাট ডেমনকে দেখে কিছুটা মর্মাহত হয়েছিলাম। আবার সেই ইন্টারস্টেলারের বদ বিজ্ঞানীরে দেখতে হবে? কিন্তু ম্যাট ডেমন আসলেই দেখায় দিছে যে সে কোন গ্রহের মাটির তৈরী। পুরাই কোপা অভিনয়। বিশেষ করে ভিডিও ব্লগিংয়ের দৃশ্যগুলি মারাত্মক। ম্যাট ডেমনের অন্যতম সেরা নৈপূণ্য। অস্কারের নমিনেশান আশা করা যায়।

অন্যান্য চরিত্রের মধ্যে জেসিকা চ্যাসট্যাইন, চিউয়িতেল এজিওফোর (উচ্চারণ করতে গেলে দাঁত ভাইঙ্গা যাবো), মাইকেল পেনা এবং জেফ ড্যানিয়েলসকে দারুন লেগেছে। সন বিনের চরিত্রটি কেন জানি গেইম অব থ্রোনসের নেড স্টার্কের মতই। সবাই আছে ঝামেলায়, আর উনি আছেন তার সত্যবাদীতা নিয়ে। “স্যার ইলিন, ব্রিং মি হিস হেড!”

মুভিটির কাহিনী বেশ সিরিয়াস হওয়ার পরেও যথেষ্ট হাস্যরসাত্মকভাবে বানানো হয়েছে। কিছুক্ষণ পরপর মুখে একটি হাসি লেগেই থাকে। এর সবই কৃতিত্ব ম্যাট ডেমনের চরিত্রটির।

মুভিটির খারাপ দিক হিসেবে বলবো শেষের দিকে নাসা সংক্রান্ত কিছু ঝামেলা নিয়ে মুভিটি বেশ বোরিং হয়ে যায়। এছাড়া আমার কাছে মনে হয়েছে মার্ক ওয়াটনির সংগ্রামটি আরও কঠিনভাবে দেখানো যেত।

স্বাভাবিকভাবেই Gravity এবং Interstellar এর সাথে তুলনা চলেই আসে। আগেই বলে নেই, তিনটি মুভিই দারুন। দৃশ্যায়নের দিক দিয়ে গ্রাভিটি বেশ ভালো হলেও কেন জানি সম্পূর্ণ তৃপ্তিটা পাওয়া যায়নি। ইন্টারস্টেলার আমার ব্যক্তিগত পছন্দ হলেও মানতে হবে মুভিটি প্রথম দেখাতে কিছুই বুঝি নাই। একটি মুভি দেখবো, সেটা বোঝার জন্য আবার পড়াশোনা করবো, তারপর আবার দেখবো এটা আসলে ভালো মুভির বৈশিষ্ট্যে আসে না। সেকারণে “The Martian” মুভিটি তিনটি মুভির মধ্যে সবচাইতে এগিয়ে।

মুভিটির বৈজ্ঞানিক সঠিকতা নিয়েও প্রশ্ন আসতেই পারে। মুভিটির কাহিনীর সূত্রপাত একটি ঝড় নিয়ে। সেইখানেই বড় খটকা, কারণ মঙ্গল গ্রহের বায়ুমন্ডল এতটাই পাতলা যে ঐরকম ঝড় হওয়া অসম্ভব। কিন্তু সবচাইতে বড় বৈজ্ঞানিক ভুলটি ধরিয়ে দিয়েছেন পদার্থ বিজ্ঞানী ড: ক্লিফর্ড জনসন। সেটি হলো: “ মুভি শেষ, কিন্তু সন বিন মরে নাই? ক্যামনে কী?”

মুভিটি অত্যন্তু ব্যবসা সফল হয়েছে সেটা একটি আশার বিষয়। আবার হতাশার বিষয় হচ্ছে যে অনেকের ধারণা মুভিটি সত্য কাহিনী অবলম্বনে তৈরী ( মাইনষে পারেও!) । এখন পর্যন্ত ২০১৫ সালের সেরা মুভি।

রেটিং – ৪.০/ ৫.০
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:০২
৯টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×